কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি ৩০০ টাকার দলিল রেজিস্ট্রি করতে ১৬শ’ টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন কোন দলিলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এর চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি অর্থ আদায়ের তথ্য মিলেছে। দলিল প্রতি অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেয়া এ অর্থের ভাগ বাটোয়ারা হয় সাব-রেজিস্ট্রার, রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় প্রশাসন, রেজিস্ট্রি অফিসের ক্লার্ক, দলিল লেখক ও স্থানীয় ক্যাডার বাহিনী।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ্র হস্তক্ষেপে কয়েক মাস দুর্নীতির মাত্রা কমে আসলেও সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের জিম্মী করে এ চাঁদাবজি আবার শুরু হয়েছে ।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সম্প্রতি এ চাঁদাবজির সিন্ডিকেটে দলিল লেখকদের দুই গ্রুপ নিজেদের স্বার্থেই একত্রিত হন। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ক্লার্ক জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নি এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। তাকে সহায়তা করছেন দলিল লেখক পরিচালনা সমিতির সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আরজ উল্লাহ, দলিল লেখক হামিদুল ও জহুরুল। এবং স্থানীয় দু’ই ক্যাডার বাহিীনীর যোগসাজসে চলছে এ চাঁদাবাজি। তারা দলিল প্রতি সরকার নির্ধারিত ফিস্ বাদে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা আদায় করছেন। জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা সাধারণ মানুষ এই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা দিয়েই তাদের জমি রেজিস্ট্রি করছেন বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন ।
এছাড়া রেজিস্ট্রিশনের সময় ক্রেতা-বিক্রেতার টিপসহি নেবার সময় জমি বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে দেড়শ থেকে দুইশ দলিল রেজিস্ট্রি বাবদ সমস্ত টাকা জমা হয় ক্লার্ক জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নির কাছে। সেখান থেকে সরকারি খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন তারা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দলিল প্রতি যে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয় সেটা ৮-১০টি খাতে ব্যয় দেখানো হয়। এর মধ্যে সাব-রেজিষ্টার ৫শ’, ক্লার্ক মুন্নী ১শ’, উপজেলা যুবলীগের প্রভাবশালী নেতাদের ৩শ’, স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজের নামে ৫০, মসজিদ ৫০, সাংবাদিকদের নামে ৫০, নকল নবিসদের নামে ১০০ ও মাস্তান বাহিনীর নামে ৫০ টাকা করে রাখা হয়।
সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ক্লার্ক জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নি বলেন, দৌলতপুর রেজিস্ট্রি অফিসের পরিবেশ দিন দিন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। জমি রেজিস্ট্রিতে কয়েকগুণ বাড়তি টাকা ও নিয়মবহির্ভূতভাবে টিপ সহিতে ১৫০ টাকা করে আদায় করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি অফিসে আসেন এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলি। এরপর তিনি দলিল লেখক সমিতির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে কথিত দলিল লেখক পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার অন্যান্য উপজেলার চাইতে আমরা তুলনামূলক টাকা কম তুলি। যে অভিযোগ উঠেছে কিংবা শুনেছেন, তা মিথ্যা বলে তিনি জানান। এপর্যায়ে তিনি তার সাথে দেখা করার জন্য বলেন। সম্প্রতি মিরপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিক দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে সপ্তাহে দুই দিন বুধবার ও বৃহষ্পতিবার জমি রেজিস্ট্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সাব-রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, যেহেতু উপজেলাটি বড় তাই এখানে দালাল সিন্ডিকেট কাজ করতে পারে।
বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১২ রবিউস সানি ১৪৪৩
প্রতিনিধি, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি ৩০০ টাকার দলিল রেজিস্ট্রি করতে ১৬শ’ টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন কোন দলিলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এর চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি অর্থ আদায়ের তথ্য মিলেছে। দলিল প্রতি অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেয়া এ অর্থের ভাগ বাটোয়ারা হয় সাব-রেজিস্ট্রার, রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় প্রশাসন, রেজিস্ট্রি অফিসের ক্লার্ক, দলিল লেখক ও স্থানীয় ক্যাডার বাহিনী।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ্র হস্তক্ষেপে কয়েক মাস দুর্নীতির মাত্রা কমে আসলেও সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের জিম্মী করে এ চাঁদাবজি আবার শুরু হয়েছে ।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সম্প্রতি এ চাঁদাবজির সিন্ডিকেটে দলিল লেখকদের দুই গ্রুপ নিজেদের স্বার্থেই একত্রিত হন। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ক্লার্ক জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নি এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। তাকে সহায়তা করছেন দলিল লেখক পরিচালনা সমিতির সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আরজ উল্লাহ, দলিল লেখক হামিদুল ও জহুরুল। এবং স্থানীয় দু’ই ক্যাডার বাহিীনীর যোগসাজসে চলছে এ চাঁদাবাজি। তারা দলিল প্রতি সরকার নির্ধারিত ফিস্ বাদে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা আদায় করছেন। জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা সাধারণ মানুষ এই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা দিয়েই তাদের জমি রেজিস্ট্রি করছেন বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন ।
এছাড়া রেজিস্ট্রিশনের সময় ক্রেতা-বিক্রেতার টিপসহি নেবার সময় জমি বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে দেড়শ থেকে দুইশ দলিল রেজিস্ট্রি বাবদ সমস্ত টাকা জমা হয় ক্লার্ক জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নির কাছে। সেখান থেকে সরকারি খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন তারা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দলিল প্রতি যে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয় সেটা ৮-১০টি খাতে ব্যয় দেখানো হয়। এর মধ্যে সাব-রেজিষ্টার ৫শ’, ক্লার্ক মুন্নী ১শ’, উপজেলা যুবলীগের প্রভাবশালী নেতাদের ৩শ’, স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজের নামে ৫০, মসজিদ ৫০, সাংবাদিকদের নামে ৫০, নকল নবিসদের নামে ১০০ ও মাস্তান বাহিনীর নামে ৫০ টাকা করে রাখা হয়।
সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ক্লার্ক জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নি বলেন, দৌলতপুর রেজিস্ট্রি অফিসের পরিবেশ দিন দিন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। জমি রেজিস্ট্রিতে কয়েকগুণ বাড়তি টাকা ও নিয়মবহির্ভূতভাবে টিপ সহিতে ১৫০ টাকা করে আদায় করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি অফিসে আসেন এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলি। এরপর তিনি দলিল লেখক সমিতির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে কথিত দলিল লেখক পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার অন্যান্য উপজেলার চাইতে আমরা তুলনামূলক টাকা কম তুলি। যে অভিযোগ উঠেছে কিংবা শুনেছেন, তা মিথ্যা বলে তিনি জানান। এপর্যায়ে তিনি তার সাথে দেখা করার জন্য বলেন। সম্প্রতি মিরপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিক দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে সপ্তাহে দুই দিন বুধবার ও বৃহষ্পতিবার জমি রেজিস্ট্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সাব-রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, যেহেতু উপজেলাটি বড় তাই এখানে দালাল সিন্ডিকেট কাজ করতে পারে।