ভোলায় পুষ্টিহীনতায় ভুগছে ৩৮ ভাগ মানুষ

ভোলায় বছরে ৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকার পর ৩৮ ভাগ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৪২ ভাগ নারী রক্ত স্বল্পতায় রয়েছেন। ৫ বছরের নীচের ৩৮ ভাগ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। গত সোমবার জেলার বার্ষিক পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও মনিটরিং বিষয়ক দুই দিনের কর্মশালার সমাপনীতে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি’)র মহাপরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান ও গবেষকরা জেলার তথ্য তুলে ধরে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এর কারণ অনুসন্ধান করে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাবও করা হয় ওই বৈঠকে।

কৃষি, প্রানিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের তথ্যে ২০ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণের পর চালে উদ্বৃত্ত ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন, সবজিতে ৪৮ হাজার মে. টন, ডাল জাতীয় খাদ্যে ১০ হাজার মে. টন। মাছে উদ্ধৃত্ত ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন । মাংসে উদ্ধৃত্ত ৫ হাজার ২শ মেট্রিক টন । ডিম ও দুধে সমান অবস্থান ।

ভোলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবু মোহাম্মদ এনায়েতউল্লাহ জানান, জেলার ২০ লাখ মানুষের চাহিদার তুলনায় চাল, ডাল জাতীয় ও সবজিতে উদ্বৃত্ত উৎপাদন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ পুষ্টিহীনতায় থাকার কথা নয়। এখন প্রয়োজন খাদ্যভাস্যের পরিবর্তন করা ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা। তেল জাতীয় খাদ্যে ভেজাল থাকায় নানা রোগ দেখা দিচ্ছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা জানান ৮০ ভাগ মানুষ গ্যাস্টিক জনিত সমস্যায় রয়েছে। ফলে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ারও দাবি জানান কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম জানান, শুধু ভোলা জেলা নয় দেশে ইলিশ উৎপাদনের ৩৪ ভাগ উৎপাদন হচ্ছে ভোলায়। প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ মন্ডল জানান, মাংসে জেলার চাহিদা পূরনের পর ভোলা থেকে গরু ছাগল এখন দেশের অন্য জেলার চাহিদা পূরণ হচ্ছে । ডিম উৎপাদনেও জেলার অবস্থান এখন চাহিদার প্রায় সমান। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবদুল মমিন টুলু জানান, বেশিরভাগ খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত হওয়ার পর জেলার মানুষ পুষ্টিহীনতায় থাকবে এটা মানা যাচ্ছে না। সরকারিভাবে দরিদ্র্য পরিবারের জন্য আর্থিকসহ নানা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ওই কারনে দারিদ্র্যতা দুর হলেও খাদ্যাভাস্যের পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। নারীরা এখনও পুষ্টিমানের খাদ্য গ্রহণ করেন না । এমন তথ্য তুলে ধরেন এনএনসি’র উপ-পরিচালক ডাঃ ফারজানা রহমান, উপ-পরিচালক ডাঃ জুবাইদা নাসরীন, উপ-পরিচালক ডাঃ আকতার ইমাম। ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক - ই - লাহী চৌধুরী জানান, পুষ্টির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ন। খাদ্যের ৬টি মান এতে নিহত রয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে এই সব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ভোলার সিভিল সার্জস ডা. কেএম শাফিকুজ্জামান জানান, পুষ্টি’র জন্য গর্ভাবস্থা থেকে শিশুদের খাততি দেখা দেয়। এমনকি সন্তান ধারণক্ষম মায়েরা থাকেন ঝুঁকির মধ্যে। তাই পুষ্টি জনিত খাদ্য আমাদের নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। কর্মশালায় অংশ নেয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ও সমাজ সেবাসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ভেজাল খাদ্য বাজারজাতকারীদের বিষয়ে কঠোর আইনী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।

অপরদিকে কৃষি উৎপাদনে কীটনাশক জাতীয় বিষ ও ক্যামিকেল জাতীয় সার ব্যবহার বন্ধেরও প্রস্তাব করা হয়। সরকারিভাবে পুষ্টি জনিত বিশুদ্ধ তেল বাজারজাত করার দাবি জানান , ভোলার নাগরিক কমিটির সহসভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর দুলাল চন্দ্র ঘোষ । অপরদিকে স্থানীয় অনুসন্ধানে লক্ষ্যনীয় ২০ ভাগ মানুষ স্থানীয় উৎপাদিত চাল (খাদ্য) খান না। এরা বাজারজাত করা মিনিকেটসহ কৃত্রিম প্যাকেজজাত চালের উপর নির্ভরশীল।

ওই সব চালের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় ওই কর্মশালায়। আমাদের রক্ত স্বপ্লতা, পুষ্টিহীনতার জন্য উৎপাদিত খাদ্যের চেয়ে ভেজাল খাদ্য বেশি দায় বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১২ রবিউস সানি ১৪৪৩

ভোলায় পুষ্টিহীনতায় ভুগছে ৩৮ ভাগ মানুষ

প্রতিনিধি, ভোলা

ভোলায় বছরে ৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকার পর ৩৮ ভাগ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৪২ ভাগ নারী রক্ত স্বল্পতায় রয়েছেন। ৫ বছরের নীচের ৩৮ ভাগ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। গত সোমবার জেলার বার্ষিক পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও মনিটরিং বিষয়ক দুই দিনের কর্মশালার সমাপনীতে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি’)র মহাপরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান ও গবেষকরা জেলার তথ্য তুলে ধরে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এর কারণ অনুসন্ধান করে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাবও করা হয় ওই বৈঠকে।

কৃষি, প্রানিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের তথ্যে ২০ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণের পর চালে উদ্বৃত্ত ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন, সবজিতে ৪৮ হাজার মে. টন, ডাল জাতীয় খাদ্যে ১০ হাজার মে. টন। মাছে উদ্ধৃত্ত ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন । মাংসে উদ্ধৃত্ত ৫ হাজার ২শ মেট্রিক টন । ডিম ও দুধে সমান অবস্থান ।

ভোলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবু মোহাম্মদ এনায়েতউল্লাহ জানান, জেলার ২০ লাখ মানুষের চাহিদার তুলনায় চাল, ডাল জাতীয় ও সবজিতে উদ্বৃত্ত উৎপাদন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ পুষ্টিহীনতায় থাকার কথা নয়। এখন প্রয়োজন খাদ্যভাস্যের পরিবর্তন করা ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা। তেল জাতীয় খাদ্যে ভেজাল থাকায় নানা রোগ দেখা দিচ্ছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা জানান ৮০ ভাগ মানুষ গ্যাস্টিক জনিত সমস্যায় রয়েছে। ফলে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ারও দাবি জানান কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম জানান, শুধু ভোলা জেলা নয় দেশে ইলিশ উৎপাদনের ৩৪ ভাগ উৎপাদন হচ্ছে ভোলায়। প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ মন্ডল জানান, মাংসে জেলার চাহিদা পূরনের পর ভোলা থেকে গরু ছাগল এখন দেশের অন্য জেলার চাহিদা পূরণ হচ্ছে । ডিম উৎপাদনেও জেলার অবস্থান এখন চাহিদার প্রায় সমান। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবদুল মমিন টুলু জানান, বেশিরভাগ খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত হওয়ার পর জেলার মানুষ পুষ্টিহীনতায় থাকবে এটা মানা যাচ্ছে না। সরকারিভাবে দরিদ্র্য পরিবারের জন্য আর্থিকসহ নানা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ওই কারনে দারিদ্র্যতা দুর হলেও খাদ্যাভাস্যের পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। নারীরা এখনও পুষ্টিমানের খাদ্য গ্রহণ করেন না । এমন তথ্য তুলে ধরেন এনএনসি’র উপ-পরিচালক ডাঃ ফারজানা রহমান, উপ-পরিচালক ডাঃ জুবাইদা নাসরীন, উপ-পরিচালক ডাঃ আকতার ইমাম। ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক - ই - লাহী চৌধুরী জানান, পুষ্টির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ন। খাদ্যের ৬টি মান এতে নিহত রয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে এই সব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ভোলার সিভিল সার্জস ডা. কেএম শাফিকুজ্জামান জানান, পুষ্টি’র জন্য গর্ভাবস্থা থেকে শিশুদের খাততি দেখা দেয়। এমনকি সন্তান ধারণক্ষম মায়েরা থাকেন ঝুঁকির মধ্যে। তাই পুষ্টি জনিত খাদ্য আমাদের নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। কর্মশালায় অংশ নেয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ও সমাজ সেবাসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ভেজাল খাদ্য বাজারজাতকারীদের বিষয়ে কঠোর আইনী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।

অপরদিকে কৃষি উৎপাদনে কীটনাশক জাতীয় বিষ ও ক্যামিকেল জাতীয় সার ব্যবহার বন্ধেরও প্রস্তাব করা হয়। সরকারিভাবে পুষ্টি জনিত বিশুদ্ধ তেল বাজারজাত করার দাবি জানান , ভোলার নাগরিক কমিটির সহসভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর দুলাল চন্দ্র ঘোষ । অপরদিকে স্থানীয় অনুসন্ধানে লক্ষ্যনীয় ২০ ভাগ মানুষ স্থানীয় উৎপাদিত চাল (খাদ্য) খান না। এরা বাজারজাত করা মিনিকেটসহ কৃত্রিম প্যাকেজজাত চালের উপর নির্ভরশীল।

ওই সব চালের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় ওই কর্মশালায়। আমাদের রক্ত স্বপ্লতা, পুষ্টিহীনতার জন্য উৎপাদিত খাদ্যের চেয়ে ভেজাল খাদ্য বেশি দায় বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।