আর কত ভর্তুকি দেব : প্রধানমন্ত্রী 

সম্প্রতি ডিজেলের দাম যে বাড়ানো হয়েছে তা কমানো হবে কিনা- এই প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেব? বাজেটের সব টাকা তাহলে ভর্তুকিতে দিয়ে দেব। তাহলে কিন্তু সব উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে।’

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বেড়েছে এবং বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে জানিয়ে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ডিজেলের দাম কমানোর কোন পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না? তা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গতকাল যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো, লন্ডন ও ফ্রান্সের প্যারিস সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, ১৯৭৭ সালের সামরিক ক্যু, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, অর্থনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। দেড় ঘণ্টার বেশি স্থায়ী এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।

সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, ‘বলেনতো প্রতিবছর আমাদের কত টাকা ভর্তুকি দিতে হয়?’ এ সময় কিছুক্ষণ কেউ কোন উত্তর দেয়নি। পরে একজন সাংবাদিক বলেন, ১৯ হাজার কোটি টাকা।

তার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেবল জ্বালানি তেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খাতের ভর্তুকির হিসাব করলে তা ৫৩ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করে। কৃষকের কথা মাথায় রেখে ডিজেল, সার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি কম খরচায় দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেব? বাজেটের সব টাকা তাহলে ভর্তুকিতে দিয়ে দেব। তাহলে কিন্তু সব উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা সবসময় সচেতন। করোনার মধ্যে এমন কোন শ্রেণীপেশার মানুষ নাই, যাদের আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করি নাই। একবার না বার বার দিয়েছি। আমাদের উপায়টা কী? উপার্যনটা কী? আমাদের কী সম্পদ আছে? উন্নত দেশে যান, খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপার মার্কেট খালি, খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে তো খাদ্যের অভাব হয় নাই।

কর না দেয়া এবং কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যাক্সটা ফাঁকি দেয়ার দিকেই সবার নজর। তাহলে টাকাটা আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে?

গ্যাসের সংকট মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানি করছে এবং সেখানেও বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ক্যু’র নামে ‘সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা হত্যা’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে বিদ্রোহের নামে সামরিক আদালত বসিয়ে ১১ জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে ফাঁসি দেয়া হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চান এক সাংবাদিক।

তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময়ে (১৯৭৫ সালের পর) ১৯টা ক্যু হয়েছিল। প্রতিটি ক্যুতে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত ছিল। তার নির্দেশে প্রহসনের বিচারের জন্য সামরিক আদালত বসানো হয়েছিল। কত মানুষ মারা গিয়েছিলেন তার প্রকৃত সংখ্যা বের করা যায়নি।

তিনি বলেন, ওই সময় আমার ফুফাতো ভাই ফিরোজ কবির চৌধুরী, যিনি ক্যামেরাম্যান ছিলেন, তাকেও হত্যা করা হয়। ওই সময় তাদের হত্যা করে বিলের পানিতে ফেলে দেয়া হয়। জেলখানায় যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদের হয়তো খোঁজ পাব। কিন্তু কত জনকে যে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে, জানি না। তবে আমরা তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিব। স্বজনদের হারিয়ে অসহায়দের অবস্থা আমি জানি। আমিও তো আপনজন হারিয়েছি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের কিছুটা হলেও চেতনা ফিরেছে। কথাটা এখন? তুলেছেন। আশা করি, এ ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করবেন, কীভাবে জিয়াউর রহমান এই দেশের মানুষেকে হত্যা করেছে।

ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে, মারামারি ও উস্কানিও তারা দিচ্ছে

ইউনিয়ন পরিষদে প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন করায় সহিংসতা বেশি হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনে সহিংসতা, কোন নির্বাচনে কবে না হয়েছে... সেটা হলো বাস্তব। তবে এটা ঠিক যে, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে, এর আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। কিন্তু সেটা আমরা চাই না। হানাহানি হোক এটা আমাদের কাছে কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, আমরা শুধু চেয়ারম্যান (নির্বাচনের) প্রতীক দিচ্ছি, কিন্তু সেখানে মেম্বারদেরও নির্বাচন হয়। সেখানে কোন প্রতীক থাকে না। আপনারা ঘটনাগুলো দেখেন, সেখানে মেম্বারদের মধ্যেও গোলমাল। তাদের মধ্যেও মারামারি কাটাকাটি। আবার তৃণমূলে এমনও হচ্ছে, নমিনেশন একজনকে দিচ্ছি, আরও হয়তো অনেকের আকাক্সক্ষা থাকে তারাও নির্বাচনে যায়। নির্বাচন সবাই করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি দলের নাম ছাড়া করছে। অন্যান্য দলও করছে। করছে না তা নয়। তারা সিদ্ধান্তই নিয়েছে দল নিয়ে করবে না। হানাহানি মারামারিটা ঠিক কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে, সেটা আপনারা (সাংবাদিক) দেখেন। আমার দলের মধ্যে যেগুলো হচ্ছে সেগুলো অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এর বাইরে যারা হানাহানি করলো, তাদের ব্যাপারে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যেহেতু দলীয়ভাবে নির্বাচন করছে না, তাই তাদের দলের নাম আসছে না। সেদিক থেকে তাদের চালাকিটা ভালোই। ভালো একটা চালাকি তারা করে দিয়েছে। ইলেকশনও করছে, আবার মারামারিও করছে। আবার উস্কিয়েও দিচ্ছে। আমাদের বিদ্রোহীদেরও হয়তো সমর্থন দিয়ে উস্কিয়ে দিচ্ছে। আমরা কোন রকম প্রাণহানি হোক এটা চাই না। তাই যেখানে যেখানে ঘটনাগুলো হচ্ছে সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে, হচ্ছে।

পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার প্রসঙ্গে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকারের জন্য শরীয়াহ আইন পরিবর্তন না করে উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে কীভাবে সমান অধিকার দেয়া যায় এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সব ছোট পরিবার। অনেক সময় দুটো মেয়ে থাকে। আসলে মানুষ সম্পত্তির জন্য অনেক সময় অন্ধ হয়ে যায়। বাবা মারা যাওয়ার পরপরই চাচারা এসে জুড়ে বসে, বের করে দেয় বাড়ি থেকে। এই ধরনের অনেক ঘটনা ঘটে সেজন্য আমি বলেছিলাম যে, অন্তত দাদার সম্পত্তিতে তো সবার ভাগ থাকবে কিন্তু যেটা নিজের বাবার উপার্জিত সেখানে মেয়ের অধিকারটা যেন নিশ্চিত করা হয়। তাদের যেন এসে ঠেলে বের করে দিতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যেমন ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়া হয়ে যারা জন্মগ্রহণ করে তার যে অধিকার- সব সন্তানের মতো তার অধিকারটা যেন থাকে সেটা কিন্তু মোটামুটি আমরা নিশ্চিত করার একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনিতে ধর্ম কে কতটুকু মানুক না মানুক সেটা জানি না কিন্তু সম্পত্তি দখল নেয়ার সময় শরীয়া আইনটা খুব ভালোভাবে মেনে নেয়। এটা হলো বাস্তব কথা।

তিনি বলেন, আমরা যেমন ভূমি আইনটা করেছি সেই ফরমেও কিন্তু ছেলে, মেয়ে ও হিজড়া সন্তানদের অধিকারটা যেন থাকে, সেটি দেখা হয়েছে। সেটা কিন্তু আমাদের ধর্মেও আছে। যে ট্রান্সজেন্ডার তার মধ্যে মেয়েলি আচরণ বেশি থাকে তাহলে সে মেয়ের ভাগ পাবে, যদি ছেলের আচরণ বেশি থাকে তাহলে ছেলের ভাগ পাবে। সে যেভাবে নিজেকে প্রকাশ করবে সেভাবেই সে ভাগটা পাবে। সে জায়গাগুলোও কিন্তু আমরা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, এখন শরীয়া আইন আছে বলে আসলে সেখানে হাত দেয়াও কতটুকু সমীচীন, সেটা তো বিশেষ ব্যাপার। তারপরেও আমি আমাদের যারা অনেক ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ তাদেরও আমি বলেছি বিষয়টা দেখার জন্য। তাদের অনেকেরই তো শুধু মেয়েই আছে, তাদের যে সম্পত্তি তাদের আবার ভাইরা তো এসে দখল করে নিয়ে যাবে। নিজের সন্তান কিছুই পাবে না। আর যেটুকু পাওয়ার কথা সেটুকুও তো দেয় না। এটা তো বাস্তব কথা।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই যে এখানে পুরুষের সংখ্যাই তো বেশি। তারা কি সবাই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে যে, তারা সম্পত্তিতে বোনের অংশটা সবাই দিয়েছেন? ভালো ভালো বক্তৃতা দিবেন, লিখবেন, কিন্তু দেবার সময় কি সবাই দেয়? কয়টা ভাই আছে বোনদের অধিকারটা ঠিকমতো সংরক্ষণ করে? করে না। আর কয়টা চাচা আছে- যে ভাই মরে গেল ভাইয়ের মেয়েদের সম্পত্তিটা রাখার ব্যবস্থা করে দেয়? সেটাও করে না। এটা তো বাস্তব কথা। আমি নিজেই এমন বহু দেখছি। আমি তাৎক্ষণিক চেষ্টা করেছি এগুলো সেসময় সমাধান করে যাতে পেয়ে যায়, যেটুকু আমার হাতে ছিল। আসলে জাতীয়ভাবে একটা ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

সংগঠনই নেই ইলেকশন করবে কীভাবে?

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি ইলেকশন নিয়ে প্রশ্ন করে কীভাবে। জিয়া হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এসেছে। এরপর তার অন্য নির্বাচনগুলো কি নির্বাচন ছিল? ১৯৮১ সালে নির্বাচনে কি হয়েছিল, তা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলে? ইলেকশন কীভাবে করবে তারা। করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, তা তো তাদের নাই। তৃণমূলে এমনভাবে উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ তাতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কীভাব তারা ক্ষমতায় যাবে। তারা গ্রেনেড হামলা, গুপ্ত হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা ক্ষমতায় এসেছে অস্ত্রের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের নেতারা।

উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে যুবসমাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন আর শুধু চাকরি নয়, যুবসমাজ গড়ে উঠবে উদ্যোক্তা হিসেবে। তারা চাকরি না খুঁজে চাকরি দেয়ার সক্ষমতা নিয়ে গড়ে উঠবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সে সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে দেশের যুবসমাজের প্রতি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার যুবসমাজের সৃজনশীল বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তরুণ সংসদ সদস্য ও নেতৃত্ব একটা দিকনির্দেশনা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে দেশের ডিজিটাল রূপান্তর হয়েছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা আউটসোর্সিং করে আয় করছে। তারা ফ্রিল্যান্সিং করছে। শুধু দেশে নয়, ঘরে বসেই তারা সারা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এতে নয়টি ভাষা শেখার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এগুলোর সুবিধা এরই মধ্যে তরুণ-যুবারা নিতে শুরু করেছেন। তারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যুবসমাজ চাকরি খুঁজবে না শুধু, তারা চাকরি দেবে। তারা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে চায় ফ্রান্স

প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্মেলনের এক ফাঁকে গত ৯ নভেম্বর তিনি ফ্রান্স সফর করেন। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভবন এলিজি প্যালেসে আমন্ত্রিত হন তিনি। সেখানে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্?যাপন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ নানা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান তিনি।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক সংলাপ শুরুর জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে দুই দেশের কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন তিনি। একই দিনে ফরাসি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল দেয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে ছয়টি বহুপক্ষীয় ও পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এসব বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১২ রবিউস সানি ১৪৪৩

আর কত ভর্তুকি দেব : প্রধানমন্ত্রী 

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সম্প্রতি ডিজেলের দাম যে বাড়ানো হয়েছে তা কমানো হবে কিনা- এই প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেব? বাজেটের সব টাকা তাহলে ভর্তুকিতে দিয়ে দেব। তাহলে কিন্তু সব উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে।’

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বেড়েছে এবং বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে জানিয়ে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ডিজেলের দাম কমানোর কোন পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না? তা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গতকাল যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো, লন্ডন ও ফ্রান্সের প্যারিস সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, ১৯৭৭ সালের সামরিক ক্যু, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, অর্থনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। দেড় ঘণ্টার বেশি স্থায়ী এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।

সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, ‘বলেনতো প্রতিবছর আমাদের কত টাকা ভর্তুকি দিতে হয়?’ এ সময় কিছুক্ষণ কেউ কোন উত্তর দেয়নি। পরে একজন সাংবাদিক বলেন, ১৯ হাজার কোটি টাকা।

তার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেবল জ্বালানি তেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খাতের ভর্তুকির হিসাব করলে তা ৫৩ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করে। কৃষকের কথা মাথায় রেখে ডিজেল, সার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি কম খরচায় দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেব? বাজেটের সব টাকা তাহলে ভর্তুকিতে দিয়ে দেব। তাহলে কিন্তু সব উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা সবসময় সচেতন। করোনার মধ্যে এমন কোন শ্রেণীপেশার মানুষ নাই, যাদের আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করি নাই। একবার না বার বার দিয়েছি। আমাদের উপায়টা কী? উপার্যনটা কী? আমাদের কী সম্পদ আছে? উন্নত দেশে যান, খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপার মার্কেট খালি, খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে তো খাদ্যের অভাব হয় নাই।

কর না দেয়া এবং কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যাক্সটা ফাঁকি দেয়ার দিকেই সবার নজর। তাহলে টাকাটা আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে?

গ্যাসের সংকট মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানি করছে এবং সেখানেও বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ক্যু’র নামে ‘সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা হত্যা’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে বিদ্রোহের নামে সামরিক আদালত বসিয়ে ১১ জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে ফাঁসি দেয়া হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চান এক সাংবাদিক।

তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময়ে (১৯৭৫ সালের পর) ১৯টা ক্যু হয়েছিল। প্রতিটি ক্যুতে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত ছিল। তার নির্দেশে প্রহসনের বিচারের জন্য সামরিক আদালত বসানো হয়েছিল। কত মানুষ মারা গিয়েছিলেন তার প্রকৃত সংখ্যা বের করা যায়নি।

তিনি বলেন, ওই সময় আমার ফুফাতো ভাই ফিরোজ কবির চৌধুরী, যিনি ক্যামেরাম্যান ছিলেন, তাকেও হত্যা করা হয়। ওই সময় তাদের হত্যা করে বিলের পানিতে ফেলে দেয়া হয়। জেলখানায় যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদের হয়তো খোঁজ পাব। কিন্তু কত জনকে যে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে, জানি না। তবে আমরা তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিব। স্বজনদের হারিয়ে অসহায়দের অবস্থা আমি জানি। আমিও তো আপনজন হারিয়েছি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের কিছুটা হলেও চেতনা ফিরেছে। কথাটা এখন? তুলেছেন। আশা করি, এ ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করবেন, কীভাবে জিয়াউর রহমান এই দেশের মানুষেকে হত্যা করেছে।

ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে, মারামারি ও উস্কানিও তারা দিচ্ছে

ইউনিয়ন পরিষদে প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন করায় সহিংসতা বেশি হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনে সহিংসতা, কোন নির্বাচনে কবে না হয়েছে... সেটা হলো বাস্তব। তবে এটা ঠিক যে, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে, এর আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। কিন্তু সেটা আমরা চাই না। হানাহানি হোক এটা আমাদের কাছে কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, আমরা শুধু চেয়ারম্যান (নির্বাচনের) প্রতীক দিচ্ছি, কিন্তু সেখানে মেম্বারদেরও নির্বাচন হয়। সেখানে কোন প্রতীক থাকে না। আপনারা ঘটনাগুলো দেখেন, সেখানে মেম্বারদের মধ্যেও গোলমাল। তাদের মধ্যেও মারামারি কাটাকাটি। আবার তৃণমূলে এমনও হচ্ছে, নমিনেশন একজনকে দিচ্ছি, আরও হয়তো অনেকের আকাক্সক্ষা থাকে তারাও নির্বাচনে যায়। নির্বাচন সবাই করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি দলের নাম ছাড়া করছে। অন্যান্য দলও করছে। করছে না তা নয়। তারা সিদ্ধান্তই নিয়েছে দল নিয়ে করবে না। হানাহানি মারামারিটা ঠিক কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে, সেটা আপনারা (সাংবাদিক) দেখেন। আমার দলের মধ্যে যেগুলো হচ্ছে সেগুলো অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এর বাইরে যারা হানাহানি করলো, তাদের ব্যাপারে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যেহেতু দলীয়ভাবে নির্বাচন করছে না, তাই তাদের দলের নাম আসছে না। সেদিক থেকে তাদের চালাকিটা ভালোই। ভালো একটা চালাকি তারা করে দিয়েছে। ইলেকশনও করছে, আবার মারামারিও করছে। আবার উস্কিয়েও দিচ্ছে। আমাদের বিদ্রোহীদেরও হয়তো সমর্থন দিয়ে উস্কিয়ে দিচ্ছে। আমরা কোন রকম প্রাণহানি হোক এটা চাই না। তাই যেখানে যেখানে ঘটনাগুলো হচ্ছে সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে, হচ্ছে।

পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার প্রসঙ্গে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকারের জন্য শরীয়াহ আইন পরিবর্তন না করে উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে কীভাবে সমান অধিকার দেয়া যায় এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সব ছোট পরিবার। অনেক সময় দুটো মেয়ে থাকে। আসলে মানুষ সম্পত্তির জন্য অনেক সময় অন্ধ হয়ে যায়। বাবা মারা যাওয়ার পরপরই চাচারা এসে জুড়ে বসে, বের করে দেয় বাড়ি থেকে। এই ধরনের অনেক ঘটনা ঘটে সেজন্য আমি বলেছিলাম যে, অন্তত দাদার সম্পত্তিতে তো সবার ভাগ থাকবে কিন্তু যেটা নিজের বাবার উপার্জিত সেখানে মেয়ের অধিকারটা যেন নিশ্চিত করা হয়। তাদের যেন এসে ঠেলে বের করে দিতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যেমন ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়া হয়ে যারা জন্মগ্রহণ করে তার যে অধিকার- সব সন্তানের মতো তার অধিকারটা যেন থাকে সেটা কিন্তু মোটামুটি আমরা নিশ্চিত করার একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনিতে ধর্ম কে কতটুকু মানুক না মানুক সেটা জানি না কিন্তু সম্পত্তি দখল নেয়ার সময় শরীয়া আইনটা খুব ভালোভাবে মেনে নেয়। এটা হলো বাস্তব কথা।

তিনি বলেন, আমরা যেমন ভূমি আইনটা করেছি সেই ফরমেও কিন্তু ছেলে, মেয়ে ও হিজড়া সন্তানদের অধিকারটা যেন থাকে, সেটি দেখা হয়েছে। সেটা কিন্তু আমাদের ধর্মেও আছে। যে ট্রান্সজেন্ডার তার মধ্যে মেয়েলি আচরণ বেশি থাকে তাহলে সে মেয়ের ভাগ পাবে, যদি ছেলের আচরণ বেশি থাকে তাহলে ছেলের ভাগ পাবে। সে যেভাবে নিজেকে প্রকাশ করবে সেভাবেই সে ভাগটা পাবে। সে জায়গাগুলোও কিন্তু আমরা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, এখন শরীয়া আইন আছে বলে আসলে সেখানে হাত দেয়াও কতটুকু সমীচীন, সেটা তো বিশেষ ব্যাপার। তারপরেও আমি আমাদের যারা অনেক ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ তাদেরও আমি বলেছি বিষয়টা দেখার জন্য। তাদের অনেকেরই তো শুধু মেয়েই আছে, তাদের যে সম্পত্তি তাদের আবার ভাইরা তো এসে দখল করে নিয়ে যাবে। নিজের সন্তান কিছুই পাবে না। আর যেটুকু পাওয়ার কথা সেটুকুও তো দেয় না। এটা তো বাস্তব কথা।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই যে এখানে পুরুষের সংখ্যাই তো বেশি। তারা কি সবাই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে যে, তারা সম্পত্তিতে বোনের অংশটা সবাই দিয়েছেন? ভালো ভালো বক্তৃতা দিবেন, লিখবেন, কিন্তু দেবার সময় কি সবাই দেয়? কয়টা ভাই আছে বোনদের অধিকারটা ঠিকমতো সংরক্ষণ করে? করে না। আর কয়টা চাচা আছে- যে ভাই মরে গেল ভাইয়ের মেয়েদের সম্পত্তিটা রাখার ব্যবস্থা করে দেয়? সেটাও করে না। এটা তো বাস্তব কথা। আমি নিজেই এমন বহু দেখছি। আমি তাৎক্ষণিক চেষ্টা করেছি এগুলো সেসময় সমাধান করে যাতে পেয়ে যায়, যেটুকু আমার হাতে ছিল। আসলে জাতীয়ভাবে একটা ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

সংগঠনই নেই ইলেকশন করবে কীভাবে?

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি ইলেকশন নিয়ে প্রশ্ন করে কীভাবে। জিয়া হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এসেছে। এরপর তার অন্য নির্বাচনগুলো কি নির্বাচন ছিল? ১৯৮১ সালে নির্বাচনে কি হয়েছিল, তা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলে? ইলেকশন কীভাবে করবে তারা। করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, তা তো তাদের নাই। তৃণমূলে এমনভাবে উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ তাতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কীভাব তারা ক্ষমতায় যাবে। তারা গ্রেনেড হামলা, গুপ্ত হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা ক্ষমতায় এসেছে অস্ত্রের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের নেতারা।

উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে যুবসমাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন আর শুধু চাকরি নয়, যুবসমাজ গড়ে উঠবে উদ্যোক্তা হিসেবে। তারা চাকরি না খুঁজে চাকরি দেয়ার সক্ষমতা নিয়ে গড়ে উঠবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সে সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে দেশের যুবসমাজের প্রতি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার যুবসমাজের সৃজনশীল বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তরুণ সংসদ সদস্য ও নেতৃত্ব একটা দিকনির্দেশনা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে দেশের ডিজিটাল রূপান্তর হয়েছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা আউটসোর্সিং করে আয় করছে। তারা ফ্রিল্যান্সিং করছে। শুধু দেশে নয়, ঘরে বসেই তারা সারা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এতে নয়টি ভাষা শেখার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এগুলোর সুবিধা এরই মধ্যে তরুণ-যুবারা নিতে শুরু করেছেন। তারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যুবসমাজ চাকরি খুঁজবে না শুধু, তারা চাকরি দেবে। তারা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে চায় ফ্রান্স

প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্মেলনের এক ফাঁকে গত ৯ নভেম্বর তিনি ফ্রান্স সফর করেন। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভবন এলিজি প্যালেসে আমন্ত্রিত হন তিনি। সেখানে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্?যাপন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ নানা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান তিনি।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক সংলাপ শুরুর জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে দুই দেশের কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন তিনি। একই দিনে ফরাসি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল দেয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে ছয়টি বহুপক্ষীয় ও পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এসব বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।