‘আমার কাছে চান কীভাবে, বলেন তো?

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় যা করার ছিল, তা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন বাকিটা ‘আইনের ব্যাপার’।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। এ নিয়ে আলোচনা চলছে, সে প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তিনি বিশেষ কোন পদক্ষেপ নেবেন কিনা।

তার উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিচ্ছি, চিকিৎসা করতে দিছি, এটাই কি বেশি না?

‘আপনাকে যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করতো, আপনি কি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে? বা আপনার পরিবারকে কেউ যদি হত্যা করতো, আর সেই হত্যাকারীর যদি কেউ বিচার না করে, পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত, তাদের জন্য আপনারা কী করতেন?,’ প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর।

‘খালেদা জিয়ার জন্য দয়া দেখাতে আমাকে এই প্রশ্ন করলে আপনাদের একটু লজ্জা হওয়া উচিত। যারা আমার বাবা-মা-ভাই, আমার ছোট ভাই রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যে এতবড় অমানবিক, তাকে আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান? আমাকে বলেন।’

বার বার তাকে হত্যা চেষ্টার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে? আর মারে আল্লাহ রাখে কে? দেখেন আমার বেলা সেটা হচ্ছে যে, রাখে আল্লাহ মারে কে?

‘তারপরেও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে, আমি সেটুকু দিয়ে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’

‘এখন সে (খালেদা জিয়া) অসুস্থ। ওই যে বললাম না, রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে? সেটি মনে করে বসে থাকেন। এখানে আমার কিছু করার নাই। আমার যেটা করার ছিল করেছি। বাকিটা আইনের ব্যাপার।’

পরিবারের আবেদনে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সরকার নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে গত বছর মুক্তি দিয়েছে। সেই মুক্তির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। ৭৬ বছর বয়েসী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন বলে তার চিকিৎসকরা বলছেন। তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আছেন।

চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে নিতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, যেহেতু দণ্ড স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। তবে তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে বলে গত মঙ্গলবার সংসদে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এর প্রেক্ষিতেই গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটি ওঠে। আর তখন শেখ হাসিনা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড, খুনিদের পুরস্কৃত করা এবং ২০০৪ এর ২১ আগস্ট তার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়া, তার স্বামী সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও তাদের সরকারের সময়কার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের বিচারের পথ যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, সে কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। পরে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়াও যে একই পথে হেঁটেছেন, সে কথা বলেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিষয়ে খালেদা জিয়া সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি থাকতে হত্যাকারীকে ১৫ ফেব্রুয়ারির ৯৬ সালের ইলেকশনে ভোট দিয়ে পার্লামেন্টে বসানো- যেখানে আমি বিরোধী দলের নেতা ছিলাম, সেখানে বসানো হলো কর্নেল রশিদকে (খন্দকার আবদুর রশিদ)।’

‘খায়রুজ্জামান আসামি। তার মামলার রায় হবে। চাকরি নাই। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই আসামিকে চাকরি দিল ফরেন মিনিস্ট্রিতে। রাষ্ট্রদূত করে পাঠালো। বাশার একজন খুনি, মারা গেছে। মৃত ব্যক্তিকে প্রমোশন দিয়ে সে সেনাবাহিনীর অফিসার ছিল। তার সমস্ত অবসর ভাতা সব দিয়ে দিল।’

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ওপর গ্রেনেড হামলা করার পর কী বললো? আমি ভ্যানেটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে নিজে নিজেই আত্মহত্যা করতে নিজেকে মেরেছিলাম।

‘কোটালিপাড়ার হামলার আগে তার (খালেদা জিয়া) বক্তৃতা কী ছিল? ‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরের কথা কোনদিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না’। সেই কথাও বলেছিল। ভেবেছিল- মরেই তো যাব।’

সাবেক বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই গ্রেনেড হামলার পরে আমরা এতজন আহত, ২২ জন মানুষ মারা গেছে। একদিন পার্লামেন্টে আলোচনা পর্যন্ত করতে দেয়নি। আমরা এ বিষয়টা নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনাও করতে পারিনি।

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১২ রবিউস সানি ১৪৪৩

‘আমার কাছে চান কীভাবে, বলেন তো?

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় যা করার ছিল, তা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন বাকিটা ‘আইনের ব্যাপার’।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। এ নিয়ে আলোচনা চলছে, সে প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তিনি বিশেষ কোন পদক্ষেপ নেবেন কিনা।

তার উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিচ্ছি, চিকিৎসা করতে দিছি, এটাই কি বেশি না?

‘আপনাকে যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করতো, আপনি কি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে? বা আপনার পরিবারকে কেউ যদি হত্যা করতো, আর সেই হত্যাকারীর যদি কেউ বিচার না করে, পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত, তাদের জন্য আপনারা কী করতেন?,’ প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর।

‘খালেদা জিয়ার জন্য দয়া দেখাতে আমাকে এই প্রশ্ন করলে আপনাদের একটু লজ্জা হওয়া উচিত। যারা আমার বাবা-মা-ভাই, আমার ছোট ভাই রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যে এতবড় অমানবিক, তাকে আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান? আমাকে বলেন।’

বার বার তাকে হত্যা চেষ্টার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে? আর মারে আল্লাহ রাখে কে? দেখেন আমার বেলা সেটা হচ্ছে যে, রাখে আল্লাহ মারে কে?

‘তারপরেও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে, আমি সেটুকু দিয়ে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’

‘এখন সে (খালেদা জিয়া) অসুস্থ। ওই যে বললাম না, রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে? সেটি মনে করে বসে থাকেন। এখানে আমার কিছু করার নাই। আমার যেটা করার ছিল করেছি। বাকিটা আইনের ব্যাপার।’

পরিবারের আবেদনে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সরকার নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে গত বছর মুক্তি দিয়েছে। সেই মুক্তির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। ৭৬ বছর বয়েসী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন বলে তার চিকিৎসকরা বলছেন। তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আছেন।

চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে নিতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, যেহেতু দণ্ড স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। তবে তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে বলে গত মঙ্গলবার সংসদে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এর প্রেক্ষিতেই গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটি ওঠে। আর তখন শেখ হাসিনা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড, খুনিদের পুরস্কৃত করা এবং ২০০৪ এর ২১ আগস্ট তার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়া, তার স্বামী সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও তাদের সরকারের সময়কার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের বিচারের পথ যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, সে কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। পরে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়াও যে একই পথে হেঁটেছেন, সে কথা বলেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিষয়ে খালেদা জিয়া সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি থাকতে হত্যাকারীকে ১৫ ফেব্রুয়ারির ৯৬ সালের ইলেকশনে ভোট দিয়ে পার্লামেন্টে বসানো- যেখানে আমি বিরোধী দলের নেতা ছিলাম, সেখানে বসানো হলো কর্নেল রশিদকে (খন্দকার আবদুর রশিদ)।’

‘খায়রুজ্জামান আসামি। তার মামলার রায় হবে। চাকরি নাই। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই আসামিকে চাকরি দিল ফরেন মিনিস্ট্রিতে। রাষ্ট্রদূত করে পাঠালো। বাশার একজন খুনি, মারা গেছে। মৃত ব্যক্তিকে প্রমোশন দিয়ে সে সেনাবাহিনীর অফিসার ছিল। তার সমস্ত অবসর ভাতা সব দিয়ে দিল।’

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ওপর গ্রেনেড হামলা করার পর কী বললো? আমি ভ্যানেটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে নিজে নিজেই আত্মহত্যা করতে নিজেকে মেরেছিলাম।

‘কোটালিপাড়ার হামলার আগে তার (খালেদা জিয়া) বক্তৃতা কী ছিল? ‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরের কথা কোনদিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না’। সেই কথাও বলেছিল। ভেবেছিল- মরেই তো যাব।’

সাবেক বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই গ্রেনেড হামলার পরে আমরা এতজন আহত, ২২ জন মানুষ মারা গেছে। একদিন পার্লামেন্টে আলোচনা পর্যন্ত করতে দেয়নি। আমরা এ বিষয়টা নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনাও করতে পারিনি।