চট্টগ্রাম ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় একের পর এক দুর্নীতি ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। এবার ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখার আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে। ওই ঘটনায় সুমন চৌধুরী নামে একজন এখনও পলাতক আছেন। আটক দুজন হলেন- ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) শাহাদাত হোসেন (৪৫) ও অফিস সহায়ক এমদাদ। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।
জানা যায়, ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তহসিলদার শাহাদাত হোসেন ও অফিস সহায়ক এমদাদকে আটক করে। পরে শাহাদাতকে পুলিশের হাতে ও অফিস সহায়ক এমদাদকে দুদকের কাছে তুলে দেয়া হয়। এর আগে গত গত ৯ নভেম্বর জোহুরা নামে এক মহিলাকে দিয়ে ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নি তৈরি করে ২ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের চেক নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে।
এদিকে চট্টগ্রাম এলএ শাখায় বিভিন্ন প্রকল্পে কানুনগো সার্ভেয়ার কেরানি চেইনম্যান এবং ব্যাংক ম্যানেজার এলাকার বিভিন্ন প্রোজেক্টের চেয়ারম্যান এবং দালালদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভূমির মালিকরা দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সেক্টরে অভিযোগ দিয়ে আসছে। এসব অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন হলেন বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন ওয়াজেদিয়া মাদ্রাসাস্থ নেজামে হামছা গ্রামের মৃত হাজী ওবাইদুল হকের পুত্র মো. হোসেন।
বিভাগী কমিশনারের কাছে প্রেরিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, (মামলা নং-০৮/২০০১-২০০২) অক্সিজেন কুয়াইশ সংযোগ সড়কের জন্য সরকার বেশ কিছু জায়গা অধিগ্রহণ এবং এর পাশে অন্যন্য প্রকল্পও অধিগ্রহণ করা হয়। এ দুই প্রকল্প থেকে তিনি এবং তার এলাকার লোকজনসহ সবাই কোটি কোটি টাকা এলএ অফিসের কানুনগো সার্ভেয়ার চেইনম্যান, দালাল ও ম্যানেজারদের দিয়ে এসেছেন। এজন্য ২০০২ সালে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকেন। বিশেষ করে কানুনগো জয় প্রকাশ চাকমা, সার্ভেয়ার আবু ইউছুপ ইফতেখার আহমেদ দীপুু সব সার্ভেয়ারদের মূল হোতা। হিসাবরক্ষক কেরানি মো. আলী, কেরানি সোয়াইব মো. দুলু, কেরানি আনোয়ার, কেরানি মোজাফ্ফর সব কেরানির মূল হোতা হিসাবরক্ষক কেরানি মো. আলী এবং সবাই একই সুতায় গাঁথা। চেইনম্যানের মধ্যে নজরুল এবং ইসলাম, টাইপম্যান আকবর তারা কয়েক জন মিলে একটি সিন্ডিকেট। সাবেক এলও এবং এডিসি এলএসহ যোগসাজসে এই দুর্নীতি চালিয়ে যেত। ২০১৪ সালে ৫৮ লাখ টাকা আদালত ভবনে আনার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। গোপন সূত্রে জানা গেছে, সেই টাকাগুলো সাবেক এডিসির। গত ৯ নভেম্বর জোহুরা নামে এক মহিলাকে দিয়ে ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নি তৈরি করে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের চেক নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে। এইভাবে প্রত্যেক প্রকল্প থেকে ভুয়া পাওয়ার তৈরি করে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া অনন্যা প্রকল্প থেকে কানুনগো জয় প্রকাশ চাকমা, সার্ভেয়ার মো. রফিক ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নি তৈরি করে আমিনুল হক নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ২১ কোটি ৩ লাখ ৮৫০ টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া মামলা নং-৪/২০০৬-২০০৭ অনন্যা প্রকল্প এর ওয়াডিয় বি.এস দাগ নং-৪০৩ ১৫ শতক জমির এই ২১ কোটি ৩২ লাখ ৮৫০ টাকা জোগসাজসে উত্তোলন করেন। সার্ভেয়ার রফিককে দোহাজারী রেলওয়ে প্রকল্প হইতে দুর্নীতির জন্য বদলি করা হয়। তবে সে তদবির করে আবার পুনরায় এলএ শাখায় যোগদান করেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, মিরেসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প এলাকা প্রকল্প থেকে সার্ভেয়ার ইব্রাহিম ও আরও কয়েকজনকে দুর্নীতির জন্য বদলি করা হয়। বর্তমান সার্ভেয়ার দীপু পুরো এলএ অফিস তার নিয়ন্ত্রণে। দীপুর সঙ্গে বাইরের দালাল জড়িত। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় ২ কোটি টাকার চেকসহ ৩ দালালকে মো. হোসেন হাতেনাতে ডিবিকে ধরিয়ে দেন। দালাল আবদুল্লা ভূইয়া, দালাল মো. আইয়ুব আলী, দালাল তপন কুমার নন্দী এমন কী ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখার দুজনকে আটকের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যেখানেই দুর্নীতির বিষয়টি পাওয়া যাচ্ছে ও যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এলএ শাখায় দুর্নীতি করার কারণে দুই দালালসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এর আগে ৫ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। অনেককে বরখাস্ত করা হয়েছে ও দুর্গম এলাকায় বদলি করা হয়েছে। আমাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১২ রবিউস সানি ১৪৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় একের পর এক দুর্নীতি ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। এবার ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখার আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে। ওই ঘটনায় সুমন চৌধুরী নামে একজন এখনও পলাতক আছেন। আটক দুজন হলেন- ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) শাহাদাত হোসেন (৪৫) ও অফিস সহায়ক এমদাদ। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।
জানা যায়, ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তহসিলদার শাহাদাত হোসেন ও অফিস সহায়ক এমদাদকে আটক করে। পরে শাহাদাতকে পুলিশের হাতে ও অফিস সহায়ক এমদাদকে দুদকের কাছে তুলে দেয়া হয়। এর আগে গত গত ৯ নভেম্বর জোহুরা নামে এক মহিলাকে দিয়ে ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নি তৈরি করে ২ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের চেক নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে।
এদিকে চট্টগ্রাম এলএ শাখায় বিভিন্ন প্রকল্পে কানুনগো সার্ভেয়ার কেরানি চেইনম্যান এবং ব্যাংক ম্যানেজার এলাকার বিভিন্ন প্রোজেক্টের চেয়ারম্যান এবং দালালদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভূমির মালিকরা দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সেক্টরে অভিযোগ দিয়ে আসছে। এসব অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন হলেন বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন ওয়াজেদিয়া মাদ্রাসাস্থ নেজামে হামছা গ্রামের মৃত হাজী ওবাইদুল হকের পুত্র মো. হোসেন।
বিভাগী কমিশনারের কাছে প্রেরিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, (মামলা নং-০৮/২০০১-২০০২) অক্সিজেন কুয়াইশ সংযোগ সড়কের জন্য সরকার বেশ কিছু জায়গা অধিগ্রহণ এবং এর পাশে অন্যন্য প্রকল্পও অধিগ্রহণ করা হয়। এ দুই প্রকল্প থেকে তিনি এবং তার এলাকার লোকজনসহ সবাই কোটি কোটি টাকা এলএ অফিসের কানুনগো সার্ভেয়ার চেইনম্যান, দালাল ও ম্যানেজারদের দিয়ে এসেছেন। এজন্য ২০০২ সালে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকেন। বিশেষ করে কানুনগো জয় প্রকাশ চাকমা, সার্ভেয়ার আবু ইউছুপ ইফতেখার আহমেদ দীপুু সব সার্ভেয়ারদের মূল হোতা। হিসাবরক্ষক কেরানি মো. আলী, কেরানি সোয়াইব মো. দুলু, কেরানি আনোয়ার, কেরানি মোজাফ্ফর সব কেরানির মূল হোতা হিসাবরক্ষক কেরানি মো. আলী এবং সবাই একই সুতায় গাঁথা। চেইনম্যানের মধ্যে নজরুল এবং ইসলাম, টাইপম্যান আকবর তারা কয়েক জন মিলে একটি সিন্ডিকেট। সাবেক এলও এবং এডিসি এলএসহ যোগসাজসে এই দুর্নীতি চালিয়ে যেত। ২০১৪ সালে ৫৮ লাখ টাকা আদালত ভবনে আনার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। গোপন সূত্রে জানা গেছে, সেই টাকাগুলো সাবেক এডিসির। গত ৯ নভেম্বর জোহুরা নামে এক মহিলাকে দিয়ে ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নি তৈরি করে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের চেক নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে। এইভাবে প্রত্যেক প্রকল্প থেকে ভুয়া পাওয়ার তৈরি করে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া অনন্যা প্রকল্প থেকে কানুনগো জয় প্রকাশ চাকমা, সার্ভেয়ার মো. রফিক ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নি তৈরি করে আমিনুল হক নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ২১ কোটি ৩ লাখ ৮৫০ টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া মামলা নং-৪/২০০৬-২০০৭ অনন্যা প্রকল্প এর ওয়াডিয় বি.এস দাগ নং-৪০৩ ১৫ শতক জমির এই ২১ কোটি ৩২ লাখ ৮৫০ টাকা জোগসাজসে উত্তোলন করেন। সার্ভেয়ার রফিককে দোহাজারী রেলওয়ে প্রকল্প হইতে দুর্নীতির জন্য বদলি করা হয়। তবে সে তদবির করে আবার পুনরায় এলএ শাখায় যোগদান করেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, মিরেসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প এলাকা প্রকল্প থেকে সার্ভেয়ার ইব্রাহিম ও আরও কয়েকজনকে দুর্নীতির জন্য বদলি করা হয়। বর্তমান সার্ভেয়ার দীপু পুরো এলএ অফিস তার নিয়ন্ত্রণে। দীপুর সঙ্গে বাইরের দালাল জড়িত। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় ২ কোটি টাকার চেকসহ ৩ দালালকে মো. হোসেন হাতেনাতে ডিবিকে ধরিয়ে দেন। দালাল আবদুল্লা ভূইয়া, দালাল মো. আইয়ুব আলী, দালাল তপন কুমার নন্দী এমন কী ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখার দুজনকে আটকের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যেখানেই দুর্নীতির বিষয়টি পাওয়া যাচ্ছে ও যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এলএ শাখায় দুর্নীতি করার কারণে দুই দালালসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এর আগে ৫ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। অনেককে বরখাস্ত করা হয়েছে ও দুর্গম এলাকায় বদলি করা হয়েছে। আমাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।