কমছে না বায়ুদূষণ দিল্লিতে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দিল্লির বাতাসে ক্রমশ বেড়েই চলেছে বিষের মাত্রা। বায়ুদূষণে ওষ্ঠাগত দিল্লির মানুষের প্রাণ। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে, তখনই আবার বন্ধের নোটিশ দিতে হলো বায়ুদূষণের দাপটে। মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দিল্লি ও এর আশপাশের স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও দিল্লির বেসরকারি সংস্থাগুলোর ৫০ শতাংশ কর্মীকে বাসা থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।

দীপাবলির সময়ে বাজি পোড়ানো, শিল্পাঞ্চল ও গাড়ি থেকে দূষণ এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানোর জেরে যে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের সৃষ্টি হয়েছে, তার জেরে বিগত ১০ দিন ধরেই বিষাক্ত ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দিল্লি-এনসিআর অঞ্চল। দিল্লিতে বাতাসের গুণমান বিপজ্জনক পর্যায়েই ছিল। আগামী তিন দিনও দূষিত বাতাসে কোনো প্রকার উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলেই জানানো হয়েছে। কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের তরফে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

দিল্লি ছাড়া হরিয়ানা, রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশ সরকারকেও এই নির্দেশ মানতে হবে বলে জানানো হয়েছে। দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে দূষণ নিয়ন্ত্রণে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসঙ্গে উল্লিখিত প্রত্যেকটি রাজ্য সরকারকে আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এনসিআরের অন্তর্ভুক্ত রাজ্যগুলোকে (দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ) তাদের সরকারি কর্মীদের অন্তত ৫০ শতাংশ ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িতে থেকে যেন কাজ করেন।

বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও একই নির্দেশনা পালনে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। কেউ রাস্তায় আবর্জনা বা নির্মাণসামগ্রী জড়ো করলে জরিমানা করতে বলা হয়েছে। রেল, মেট্রো, প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত কাজ বাদ দিয়ে সব নির্মাণ ও ইমারত ভাঙার কাজ ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

জরুরি পণ্য পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো ট্রাককে ২১ নভেম্বর অবধি দিল্লিতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলোয় ২১ নভেম্বর অবধি সমস্ত ধরনের নির্মাণকাজে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে, রেল পরিষেবা বা স্টেশন তৈরির কাজ, মেট্রো রেল করপোরেশনের কাজ, বিমানবন্দর ও আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনাল তৈরি এবং জাতীয় সুরক্ষা বা প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রকল্পের কাজে ছাড় দেয়া হয়েছে।

দূষণ রোধে দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরেই মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে দিল্লি ও তার পাশের রাজ্যগুলোকে দৃশ্যমান দূষণকারী গাড়ি ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট ছাড়া গাড়িগুলোকে আটক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।একইসঙ্গে ট্রাফিক বিভাগকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে যথাসম্ভব কম যানজট হয় এবং গাড়ির যাতায়াত সুগম হয়। এরফলে দূষণের মাত্রা আরও কিছুটা কমানো যাবে, কারণ ট্রাফিক সিগনালেও একাধিক গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকায় দূষণ ছড়ায়।

দিল্লির সীমানার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে যে ১১টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট রয়েছে, তাদের মধ্যে ৬টি প্ল্যান্ট আপাতত দূষণ নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এগুলো আগামী ৩০ নভেম্বর অবধি বন্ধ থাকবে বলে জানা

গেছে। বায়ুদূষণ সম্পর্কিত একটি মামলার শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। আদালত আরও কিছু নির্দেশ দিতে পারে দূষণ নিয়ন্ত্রণে। বায়ুর মান সেখানে ৫০০ স্কোর ছাড়ায়। যাকে খুবই শোচনীয় অবস্থা বলে জানায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স।

বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার সুপ্রিমকোর্ট স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়। প্রয়োজনে লকডাউন দিয়ে বাতাসের মানের উন্নতি করতে ব্যবস্থা নিতে বলে। সাধারণত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ১ থেকে ৫০ অবস্থানে থাকা এলাকাকে ভালো বলা হয়। ১০০ পর্যন্ত সন্তোষজনক, ১০১-২০০ মাঝারি, ২০১-৩০০ খারাপ, ৪০০ পর্যন্ত বেশি খারাপ এবং ৫০০ মাত্রার ওপরে উঠলে সেটাকে বলা হয় গুরুতর।

এর আগে দিল্লি রাজ্য সরকার বায়ুদূষণ কমাতে অন্তত সপ্তাহান্তে লকডাউন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাতেও দূষণ না কমলে টানা সাত দিন লকডাউনের কথা ভাবতে বলেছিল অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রশাসন। চলতি বছর এই দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে দূষিত বায়ু রেকর্ড হয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতির কারণে দিল্লিবাসীকে ঘরে থাকার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

image

করোনা মহামারীর পর মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের কারণে দিল্লির স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধ ঘোষণা -এনডিটিভি

আরও খবর
পাঁচ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করলো ভারত
সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলে সম্মত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র
আফগানিস্তানে ১৩০ নারীকে বিক্রির অভিযোগ

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১২ রবিউস সানি ১৪৪৩

কমছে না বায়ুদূষণ দিল্লিতে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

image

করোনা মহামারীর পর মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের কারণে দিল্লির স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধ ঘোষণা -এনডিটিভি

দিল্লির বাতাসে ক্রমশ বেড়েই চলেছে বিষের মাত্রা। বায়ুদূষণে ওষ্ঠাগত দিল্লির মানুষের প্রাণ। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে, তখনই আবার বন্ধের নোটিশ দিতে হলো বায়ুদূষণের দাপটে। মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দিল্লি ও এর আশপাশের স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও দিল্লির বেসরকারি সংস্থাগুলোর ৫০ শতাংশ কর্মীকে বাসা থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।

দীপাবলির সময়ে বাজি পোড়ানো, শিল্পাঞ্চল ও গাড়ি থেকে দূষণ এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানোর জেরে যে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের সৃষ্টি হয়েছে, তার জেরে বিগত ১০ দিন ধরেই বিষাক্ত ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দিল্লি-এনসিআর অঞ্চল। দিল্লিতে বাতাসের গুণমান বিপজ্জনক পর্যায়েই ছিল। আগামী তিন দিনও দূষিত বাতাসে কোনো প্রকার উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলেই জানানো হয়েছে। কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের তরফে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

দিল্লি ছাড়া হরিয়ানা, রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশ সরকারকেও এই নির্দেশ মানতে হবে বলে জানানো হয়েছে। দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে দূষণ নিয়ন্ত্রণে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসঙ্গে উল্লিখিত প্রত্যেকটি রাজ্য সরকারকে আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এনসিআরের অন্তর্ভুক্ত রাজ্যগুলোকে (দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ) তাদের সরকারি কর্মীদের অন্তত ৫০ শতাংশ ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িতে থেকে যেন কাজ করেন।

বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও একই নির্দেশনা পালনে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। কেউ রাস্তায় আবর্জনা বা নির্মাণসামগ্রী জড়ো করলে জরিমানা করতে বলা হয়েছে। রেল, মেট্রো, প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত কাজ বাদ দিয়ে সব নির্মাণ ও ইমারত ভাঙার কাজ ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

জরুরি পণ্য পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো ট্রাককে ২১ নভেম্বর অবধি দিল্লিতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলোয় ২১ নভেম্বর অবধি সমস্ত ধরনের নির্মাণকাজে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে, রেল পরিষেবা বা স্টেশন তৈরির কাজ, মেট্রো রেল করপোরেশনের কাজ, বিমানবন্দর ও আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনাল তৈরি এবং জাতীয় সুরক্ষা বা প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রকল্পের কাজে ছাড় দেয়া হয়েছে।

দূষণ রোধে দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরেই মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে দিল্লি ও তার পাশের রাজ্যগুলোকে দৃশ্যমান দূষণকারী গাড়ি ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট ছাড়া গাড়িগুলোকে আটক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।একইসঙ্গে ট্রাফিক বিভাগকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে যথাসম্ভব কম যানজট হয় এবং গাড়ির যাতায়াত সুগম হয়। এরফলে দূষণের মাত্রা আরও কিছুটা কমানো যাবে, কারণ ট্রাফিক সিগনালেও একাধিক গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকায় দূষণ ছড়ায়।

দিল্লির সীমানার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে যে ১১টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট রয়েছে, তাদের মধ্যে ৬টি প্ল্যান্ট আপাতত দূষণ নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এগুলো আগামী ৩০ নভেম্বর অবধি বন্ধ থাকবে বলে জানা

গেছে। বায়ুদূষণ সম্পর্কিত একটি মামলার শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। আদালত আরও কিছু নির্দেশ দিতে পারে দূষণ নিয়ন্ত্রণে। বায়ুর মান সেখানে ৫০০ স্কোর ছাড়ায়। যাকে খুবই শোচনীয় অবস্থা বলে জানায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স।

বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার সুপ্রিমকোর্ট স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়। প্রয়োজনে লকডাউন দিয়ে বাতাসের মানের উন্নতি করতে ব্যবস্থা নিতে বলে। সাধারণত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ১ থেকে ৫০ অবস্থানে থাকা এলাকাকে ভালো বলা হয়। ১০০ পর্যন্ত সন্তোষজনক, ১০১-২০০ মাঝারি, ২০১-৩০০ খারাপ, ৪০০ পর্যন্ত বেশি খারাপ এবং ৫০০ মাত্রার ওপরে উঠলে সেটাকে বলা হয় গুরুতর।

এর আগে দিল্লি রাজ্য সরকার বায়ুদূষণ কমাতে অন্তত সপ্তাহান্তে লকডাউন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাতেও দূষণ না কমলে টানা সাত দিন লকডাউনের কথা ভাবতে বলেছিল অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রশাসন। চলতি বছর এই দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে দূষিত বায়ু রেকর্ড হয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতির কারণে দিল্লিবাসীকে ঘরে থাকার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।