শিক্ষক সংকট, বন্ধের পথে শেবাচিমের ডেন্টাল শিক্ষা

চিকিৎসা ইউনিটও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে

শিক্ষক সংকটের কারণে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ডেন্টাল চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি এখন বন্ধের পথে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৮ জন সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন। এর বাইরে আরও দুজন ওএসডি শিক্ষককে এখানে নিয়োগ দেয়া হলেও অনুমোদিত ৩৮ শিক্ষকের মধ্যে ৩২টিতেই কোন জনবল নেই। ফলে এখানে ডেন্টাল শিক্ষার ছাত্রÑছাত্রীদের লেখাপড়ার মানসহ শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটে চিকিৎসা ব্যবস্থাও অনেকটাই সংকটাপন্ন। অথচ ঢাকা ডেন্টাল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন ডেন্টাল ইউনিটে একটি পদের বিপরীতে নানা কৌশলে ও তদবিরের কারণে একাধিক শিক্ষক-চিকিৎসক কর্মরত আছেন বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রÑছাত্রীরা।

অথচ প্রতিবছর শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ৫০ জন ছাত্রÑছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এখান থেকে ৫টি ব্যাচে বিপুল সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রী বিডিএস পাস করে বের হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক স্বল্পতায় একজনকেই একাধিক বিষয়ে পাঠদান করতে গিয়ে নানামুখী সংকট তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি একই কারণে একদিকে ছাত্রÑছাত্রীরা যেমন অনেক বিষয়ে সঠিক জ্ঞান আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি হাসপাতালটির রোগীরাও সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা না পাবারও অভিযোগ রয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলে দন্ত চিকিৎসাবিদ্যার একমাত্র এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ডেন্টিস্ট্রি, সাইন্স অব ডেন্টাল মেটারিয়ালস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেন্টাল ফার্মাকোলজি, পেরিওডন্টোলজি, ওরাল মাইক্রোবায়োলজি, ওরাল সার্জারি, রিমোভেবল প্রস্থোরডন্টিক্স এবং ডেন্টাল রেডিওলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকসহ কোন শিক্ষকই নেই।

এছাড়া ডেন্টাল পাবলিক হেলথ বিভাগে একজন প্রভাষক থাকলেও কোন সহকারী অধ্যাপক নেই। ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি ও কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক থাকলেও কোন প্রভাষক নেই। চিলড্রেন ডেন্টিস্ট্রি বিভাগে একজন প্রভাষক থাকলেও কোন সহকারী অধ্যাপক নেই। এমনকি ডেন্টাল জুরিস্ট ল অ্যান্ড ইথিক্স বিভাগের একমাত্র প্রভাষক পদেও কোন শিক্ষক নেই।

এ ব্যাপারে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. মুনিরুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি কলেজের ডেন্টাল শাখায় শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে নিয়মিতভাবেই যোগাযোগ রাখছি। উচ্চ পর্যায় থেকেও চেষ্টা চলছে এখানে শূন্য পদগুলো পূরণ করার। আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে কিছু শূন্য পদ পূরণেরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে ডেন্টাল ইউনিটের সঙ্গে সংযুক্ত শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এ পর্যন্ত মাত্র ৮ বেডের একটি ইউনিট চালু থাকায় সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা সৃষ্টি করা যায়নি। তেমনি চিকিৎসক সংকটেও ভর্তিকৃত রোগীরা সুষ্ঠু চিকিৎসা পাচ্ছেন না। উপরন্তু ডেন্টাল ইউনিটের ছাত্রÑছাত্রীরাও হাতে-কলমে চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক ছাত্রÑছাত্রী অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক সংকট দূর করার পাশাপাশি হাসপাতালটির ডেন্টাল ইউনিটটি ২৫ শয্যায় উন্নীতকরণসহ এখানে অত্যাধুনিক ডেন্টাল ইকুইপমেন্ট স্থাপনের, বিশেষ করে ওরাল সার্জন পদে পদায়নের দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১২ রবিউস সানি ১৪৪৩

শিক্ষক সংকট, বন্ধের পথে শেবাচিমের ডেন্টাল শিক্ষা

চিকিৎসা ইউনিটও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

শিক্ষক সংকটের কারণে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ডেন্টাল চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি এখন বন্ধের পথে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৮ জন সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন। এর বাইরে আরও দুজন ওএসডি শিক্ষককে এখানে নিয়োগ দেয়া হলেও অনুমোদিত ৩৮ শিক্ষকের মধ্যে ৩২টিতেই কোন জনবল নেই। ফলে এখানে ডেন্টাল শিক্ষার ছাত্রÑছাত্রীদের লেখাপড়ার মানসহ শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটে চিকিৎসা ব্যবস্থাও অনেকটাই সংকটাপন্ন। অথচ ঢাকা ডেন্টাল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন ডেন্টাল ইউনিটে একটি পদের বিপরীতে নানা কৌশলে ও তদবিরের কারণে একাধিক শিক্ষক-চিকিৎসক কর্মরত আছেন বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রÑছাত্রীরা।

অথচ প্রতিবছর শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ৫০ জন ছাত্রÑছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এখান থেকে ৫টি ব্যাচে বিপুল সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রী বিডিএস পাস করে বের হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক স্বল্পতায় একজনকেই একাধিক বিষয়ে পাঠদান করতে গিয়ে নানামুখী সংকট তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি একই কারণে একদিকে ছাত্রÑছাত্রীরা যেমন অনেক বিষয়ে সঠিক জ্ঞান আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি হাসপাতালটির রোগীরাও সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা না পাবারও অভিযোগ রয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলে দন্ত চিকিৎসাবিদ্যার একমাত্র এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ডেন্টিস্ট্রি, সাইন্স অব ডেন্টাল মেটারিয়ালস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেন্টাল ফার্মাকোলজি, পেরিওডন্টোলজি, ওরাল মাইক্রোবায়োলজি, ওরাল সার্জারি, রিমোভেবল প্রস্থোরডন্টিক্স এবং ডেন্টাল রেডিওলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকসহ কোন শিক্ষকই নেই।

এছাড়া ডেন্টাল পাবলিক হেলথ বিভাগে একজন প্রভাষক থাকলেও কোন সহকারী অধ্যাপক নেই। ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি ও কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক থাকলেও কোন প্রভাষক নেই। চিলড্রেন ডেন্টিস্ট্রি বিভাগে একজন প্রভাষক থাকলেও কোন সহকারী অধ্যাপক নেই। এমনকি ডেন্টাল জুরিস্ট ল অ্যান্ড ইথিক্স বিভাগের একমাত্র প্রভাষক পদেও কোন শিক্ষক নেই।

এ ব্যাপারে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. মুনিরুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি কলেজের ডেন্টাল শাখায় শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে নিয়মিতভাবেই যোগাযোগ রাখছি। উচ্চ পর্যায় থেকেও চেষ্টা চলছে এখানে শূন্য পদগুলো পূরণ করার। আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে কিছু শূন্য পদ পূরণেরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে ডেন্টাল ইউনিটের সঙ্গে সংযুক্ত শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এ পর্যন্ত মাত্র ৮ বেডের একটি ইউনিট চালু থাকায় সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা সৃষ্টি করা যায়নি। তেমনি চিকিৎসক সংকটেও ভর্তিকৃত রোগীরা সুষ্ঠু চিকিৎসা পাচ্ছেন না। উপরন্তু ডেন্টাল ইউনিটের ছাত্রÑছাত্রীরাও হাতে-কলমে চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক ছাত্রÑছাত্রী অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক সংকট দূর করার পাশাপাশি হাসপাতালটির ডেন্টাল ইউনিটটি ২৫ শয্যায় উন্নীতকরণসহ এখানে অত্যাধুনিক ডেন্টাল ইকুইপমেন্ট স্থাপনের, বিশেষ করে ওরাল সার্জন পদে পদায়নের দাবি জানিয়েছেন।