প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩৫ মন্ত্রণালয় কাজ করলেও বাজেট বরাদ্দ শূন্য

কর্মপরিকল্পনা আছে, বরাদ্দ নেই

‘দেশে কসমেটিক উন্নয়ন চাই না। সঠিক ও সার্বিক উন্নয়ন চাই। দেশের একটা বড় অংশ প্রতিবন্ধী, সব অচলায়তন ভেঙে এগিয়ে যেতে হলে এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের সঙ্গে নিয়ে এগুতে হবে, তবেই প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে বলা যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক ইন অডিটোরিয়ামে বেসরকারি সংস্থা ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (ডিআরআরএ) আয়োজিত ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেটে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও অবস্থান শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘গত যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান সরকার অনেক বেশি প্রতিবন্ধীবান্ধব। আমরা প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করছি। সীমিত সম্পদের মধ্যেও ক্রমান্বয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে এটা ছড়ানো-ছিটানোভাবে করা হচ্ছে, সুনির্দিষ্টভাবে এখনও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে অবশ্যই আলাদা করে বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। আমরা কসমেটিক উন্নয়ন চাই না। আমরা চাই সর্বত্র মানুষের উন্নয়ন হোক।’

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ক্যাবিনেটে পাশ হয়েছে ২০১৮ সালে। ১৮টি কর্মক্ষেত্রে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট কাজ ধরা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি ও চলমান হিসেবে কাজ ভাগ করা হয়েছে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের পর তিনটি অর্থ বাজেট পেরিয়ে গেলেও, সরকার প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে এক টাকাও বরাদ্দ দেয়নি।

সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. নাফিসুর রহমান। বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুসারে বাংলাদেশে আনুমানিক দেড় কোটি প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে। তবে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসেবে দেশে প্রতিবন্ধী রয়েছে ২৭ লাখ। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে কেবল সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায়।

বর্তমানে ১৪৩ স্কিমের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৭টি, যা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাজেটের মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য মাসিক বরাদ্দ মাত্র ৫৪২ টাকা। দৈনিক মাথাপিছু বরাদ্দ ২১ টাকা, যা ডলারের হিসেবে শূন্য দশমিক ২৫ সেন্ট। কিন্তু, প্রতিদিন মাথাপিছু ব্যয় হচ্ছে ১ দশমিক ২৫ ডলার। ফলে দৈনিক ব্যয়ের বাকি এক ডলার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিজেই জোগাড় করতে হচ্ছে।’

ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিআরআরএ) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে ২৫ বছর ধরে কাজ করছে ডিআরআরএ। দেশের প্রায় ১৫ লাখ প্রতিবন্ধী মানুষ সরাসরি সহযোগিতা পেয়েছে। পরোক্ষভাবে পেয়েছে প্রায় ৩০ লাখ প্রতিবন্ধী মানুষ।’ ‘সরকারি কর্মকর্তা হয়ে উপস্থিত আলোচকরা যেভাবে অধিকারের কথা বলেছেন, এতেই বোঝা যায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়ে কার্যকরী উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য জরিপ করে সঠিক পরিসংখ্যান তৈরি করা জরুরি।’ যে সব প্রতিষ্ঠান এ ধরনের সেবামূলক কাজ করছে তাদের অর্থায়ন করে কাজের সুযোগ করে দেয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।

ডিআরআরএ এর উপদেষ্টা স্বপনা রেজার উপস্থাপনায় এ আলোচনায় আরও অংশ নেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শিবানী ভট্টাচার্য, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের (এনডিডিপি) চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কে এম আলী রেজা প্রমুখ।

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১২ রবিউস সানি ১৪৪৩

প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩৫ মন্ত্রণালয় কাজ করলেও বাজেট বরাদ্দ শূন্য

কর্মপরিকল্পনা আছে, বরাদ্দ নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

প্রতিবন্ধীদের জন্য সংসদে আসনের দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার মানববন্ধন-সংবাদ

‘দেশে কসমেটিক উন্নয়ন চাই না। সঠিক ও সার্বিক উন্নয়ন চাই। দেশের একটা বড় অংশ প্রতিবন্ধী, সব অচলায়তন ভেঙে এগিয়ে যেতে হলে এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের সঙ্গে নিয়ে এগুতে হবে, তবেই প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে বলা যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক ইন অডিটোরিয়ামে বেসরকারি সংস্থা ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (ডিআরআরএ) আয়োজিত ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেটে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও অবস্থান শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘গত যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান সরকার অনেক বেশি প্রতিবন্ধীবান্ধব। আমরা প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করছি। সীমিত সম্পদের মধ্যেও ক্রমান্বয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে এটা ছড়ানো-ছিটানোভাবে করা হচ্ছে, সুনির্দিষ্টভাবে এখনও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে অবশ্যই আলাদা করে বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। আমরা কসমেটিক উন্নয়ন চাই না। আমরা চাই সর্বত্র মানুষের উন্নয়ন হোক।’

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ক্যাবিনেটে পাশ হয়েছে ২০১৮ সালে। ১৮টি কর্মক্ষেত্রে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট কাজ ধরা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি ও চলমান হিসেবে কাজ ভাগ করা হয়েছে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের পর তিনটি অর্থ বাজেট পেরিয়ে গেলেও, সরকার প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে এক টাকাও বরাদ্দ দেয়নি।

সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. নাফিসুর রহমান। বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুসারে বাংলাদেশে আনুমানিক দেড় কোটি প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে। তবে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসেবে দেশে প্রতিবন্ধী রয়েছে ২৭ লাখ। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে কেবল সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায়।

বর্তমানে ১৪৩ স্কিমের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৭টি, যা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাজেটের মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য মাসিক বরাদ্দ মাত্র ৫৪২ টাকা। দৈনিক মাথাপিছু বরাদ্দ ২১ টাকা, যা ডলারের হিসেবে শূন্য দশমিক ২৫ সেন্ট। কিন্তু, প্রতিদিন মাথাপিছু ব্যয় হচ্ছে ১ দশমিক ২৫ ডলার। ফলে দৈনিক ব্যয়ের বাকি এক ডলার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিজেই জোগাড় করতে হচ্ছে।’

ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিআরআরএ) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে ২৫ বছর ধরে কাজ করছে ডিআরআরএ। দেশের প্রায় ১৫ লাখ প্রতিবন্ধী মানুষ সরাসরি সহযোগিতা পেয়েছে। পরোক্ষভাবে পেয়েছে প্রায় ৩০ লাখ প্রতিবন্ধী মানুষ।’ ‘সরকারি কর্মকর্তা হয়ে উপস্থিত আলোচকরা যেভাবে অধিকারের কথা বলেছেন, এতেই বোঝা যায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়ে কার্যকরী উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য জরিপ করে সঠিক পরিসংখ্যান তৈরি করা জরুরি।’ যে সব প্রতিষ্ঠান এ ধরনের সেবামূলক কাজ করছে তাদের অর্থায়ন করে কাজের সুযোগ করে দেয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।

ডিআরআরএ এর উপদেষ্টা স্বপনা রেজার উপস্থাপনায় এ আলোচনায় আরও অংশ নেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শিবানী ভট্টাচার্য, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের (এনডিডিপি) চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কে এম আলী রেজা প্রমুখ।