চাকরির প্রলোভন : নারী প্রতারক গ্রেপ্তার

বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতো সোশ্যাল মিডিয়ায়

চাকরির প্রলোভনে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে মোসা. সালমা আক্তার মুন্নি নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)। গত ১৬ নভেম্বর রাতে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয় উত্তরা এলাকা থেকে। র‌্যাবের দাবি, গ্রেপ্তার মুন্নি বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ করার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিত। এরপর প্রতারণা করে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত।

র‌্যাব বলছে, অভিযুক্ত মোসা. সালমা আক্তার মুন্নির পৈত্রিক নিবাস মাদারীপুর। অতি সাধারণ ঘরের একজন স্বল্প আয়ের কর্মজীবীর মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও সে চরম উচ্চাভিলাসী। মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে প্রতারণার উদ্দেশে ২০২০ সালের শুরু থেকে এন এইচ সিকিউরিটি লি. নামক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন এবং চাকরি প্রত্যাশী দরিদ্র ছাত্রছাত্রী-জনগণকে টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছেন।

র‌্যাবের ভাষ্য, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র দীর্ঘদিন যাবত ডিজিটাল প্লাটফর্মে চাকরি দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসছিল। বিভিন্ন বাসাবাড়ির ম্যানেজার, কেয়ারটেকার, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার, সিকিউরিটি গার্ড, সাবেক আর্মি আমর্স বডিগার্ড নিয়োগ করা সংক্রান্ত অনলাইন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়। তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের এমএলএম কোম্পানির বিভিন্ন প্রজেক্টে সাধারণ মানুষকে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

গত ১৬ নভেম্বর রাতে র‌্যাব-১ খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২-এর ১৩ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাসায় অভিযান চালায়। সেখানে এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লি. নামে একটি অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের সদস্য মোসা. সালমা আক্তার মুন্নিকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্রের নথিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার মুন্নি জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি একটি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। প্রতারক চক্রটি ডিজিটাল প্লাটফর্মে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। বিডি জবস বিডি নামে একটি ফেইজবুক পেইজ আছে তাদের। দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের সাধারণ মানুষের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে তাদেরকে চাকরি দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, এনইচস সিকিউরিটি সার্ভিস মূলত একটি এমএলএম কোম্পানি। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় তাদের অফিস। তাদের অফিস হতে চাকরি প্রার্থীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে এসে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য বলা হয়। পরবর্তীতে চাকরি প্রার্থীরা ইন্টারভিউয়ের জন্য অফিসে আসার পর তাদের কাছ হতে ফরম বাবদ ৫০০ টাকা নেয়া হয়। তারপর চাকরি প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়ে তাদের চাকরি নিশ্চিত হয়েছে মর্মে জানিয়ে দেয়া হয়। চাকরি প্রার্থীদের চাকরিতে যোগদানের পূর্বে পদ অনুসারে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা জামানত বাবদ আদায় করা হতো এবং তাদের জানানো হতো পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন প্রদান করা হবে। সিকিউরিটি অফিসে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো প্রতি মাসে অন্তত ১০ জন নতুন চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকরি প্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে তাদের বেতন প্রদান করা হবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করা হতো। ভিকটিমরা কোম্পানিটির প্রতারণার বিষয়ে বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে এবং টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানো হতো। গ্রেপ্তার মুন্নি ৬ মাসে প্রায় ১২৩৯ জন চাকরি প্রার্থীকে তাদের কোম্পানির নিয়োগ ফরম পূরণ করত তাদের কাছ হতে ১১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। সিকিউরিটির গার্ড নিয়োগের নামে কোম্পানি চলছিলো কিন্তু গত ৬ মাসে তারা কোন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিয়েছে মর্মে কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১২ রবিউস সানি ১৪৪৩

চাকরির প্রলোভন : নারী প্রতারক গ্রেপ্তার

বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতো সোশ্যাল মিডিয়ায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চাকরির প্রলোভনে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে মোসা. সালমা আক্তার মুন্নি নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)। গত ১৬ নভেম্বর রাতে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয় উত্তরা এলাকা থেকে। র‌্যাবের দাবি, গ্রেপ্তার মুন্নি বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ করার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিত। এরপর প্রতারণা করে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত।

র‌্যাব বলছে, অভিযুক্ত মোসা. সালমা আক্তার মুন্নির পৈত্রিক নিবাস মাদারীপুর। অতি সাধারণ ঘরের একজন স্বল্প আয়ের কর্মজীবীর মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও সে চরম উচ্চাভিলাসী। মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে প্রতারণার উদ্দেশে ২০২০ সালের শুরু থেকে এন এইচ সিকিউরিটি লি. নামক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন এবং চাকরি প্রত্যাশী দরিদ্র ছাত্রছাত্রী-জনগণকে টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছেন।

র‌্যাবের ভাষ্য, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র দীর্ঘদিন যাবত ডিজিটাল প্লাটফর্মে চাকরি দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসছিল। বিভিন্ন বাসাবাড়ির ম্যানেজার, কেয়ারটেকার, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার, সিকিউরিটি গার্ড, সাবেক আর্মি আমর্স বডিগার্ড নিয়োগ করা সংক্রান্ত অনলাইন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়। তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের এমএলএম কোম্পানির বিভিন্ন প্রজেক্টে সাধারণ মানুষকে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

গত ১৬ নভেম্বর রাতে র‌্যাব-১ খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২-এর ১৩ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাসায় অভিযান চালায়। সেখানে এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লি. নামে একটি অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের সদস্য মোসা. সালমা আক্তার মুন্নিকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্রের নথিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার মুন্নি জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি একটি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। প্রতারক চক্রটি ডিজিটাল প্লাটফর্মে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। বিডি জবস বিডি নামে একটি ফেইজবুক পেইজ আছে তাদের। দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের সাধারণ মানুষের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে তাদেরকে চাকরি দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, এনইচস সিকিউরিটি সার্ভিস মূলত একটি এমএলএম কোম্পানি। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় তাদের অফিস। তাদের অফিস হতে চাকরি প্রার্থীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে এসে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য বলা হয়। পরবর্তীতে চাকরি প্রার্থীরা ইন্টারভিউয়ের জন্য অফিসে আসার পর তাদের কাছ হতে ফরম বাবদ ৫০০ টাকা নেয়া হয়। তারপর চাকরি প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়ে তাদের চাকরি নিশ্চিত হয়েছে মর্মে জানিয়ে দেয়া হয়। চাকরি প্রার্থীদের চাকরিতে যোগদানের পূর্বে পদ অনুসারে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা জামানত বাবদ আদায় করা হতো এবং তাদের জানানো হতো পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন প্রদান করা হবে। সিকিউরিটি অফিসে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো প্রতি মাসে অন্তত ১০ জন নতুন চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকরি প্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে তাদের বেতন প্রদান করা হবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করা হতো। ভিকটিমরা কোম্পানিটির প্রতারণার বিষয়ে বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে এবং টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানো হতো। গ্রেপ্তার মুন্নি ৬ মাসে প্রায় ১২৩৯ জন চাকরি প্রার্থীকে তাদের কোম্পানির নিয়োগ ফরম পূরণ করত তাদের কাছ হতে ১১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। সিকিউরিটির গার্ড নিয়োগের নামে কোম্পানি চলছিলো কিন্তু গত ৬ মাসে তারা কোন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিয়েছে মর্মে কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।