যত খুশি গালি দিতে পারেন আমি আইন মোতাবেক চলব

বিএনপিকে আইনমন্ত্রী

যেখানে আইনের শাসন আছে, সেখানে তিনি আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংসদ সদস্য জি এম (গোলাম মোহাম্মদ) সিরাজের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনের বইয়ে নেই। উনারা (বিএনপি) আমাকে যত খুশি গালি দিতে পারেন। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আইন মোতাবেক চলব।’

পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে চাই, মানবিক কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুয়েকদিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশে পাঠানো হোক। বেগম জিয়াকে বিদেশ পাঠানো না হলে এবং অবস্থা চরম হলে বিএনপির পক্ষে এই সংসদে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না। খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায়ভার আওয়ামী লীগকে আজীবন বহন করতে হবে।’

১৭ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জি এম সিরাজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন, রাগ-বিরাগের বশবর্তী হবেন না। কিন্তু ওনার গতকালের (বুধবার) বক্তব্যের সঙ্গে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক। এটা কি ঠিক না বেঠিক?’

বুধবার প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর প্রসঙ্গে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জন্য আমি আমার নির্বাহী ক্ষমতা বলে যা করতে পারি তাই করেছি, আইন পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।’

৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় টেনে এনে জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করার পরও তার সরকার খালেদা জিয়াকে মানবতা দেখিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমার বাবা, মা, ভাই এমনকি ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তারপরও তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। কারণ আমরা অমানুষ নই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে চান কিভাবে, খালেদা জিয়াকে যে বাসায় থাকতে এবং চিকিৎসা করার সুযোগ দিয়েছি সেটাই কি বেশি নয়।’

বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘দ-প্রাপ্ত হয়ে জামিন নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার নজির আছে। আ স ম আবদুর রব চিকিৎসার জন্য ১৯৭৯ সালে জার্মানি গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা নাসিম দুদকের মামলায় দ-প্রাপ্ত হয়ে ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পান।’

জি এম সিরাজের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি তো দেখিয়েছি যে বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। ওনারা যদি এটা দেখাতে পারেন, তাহলে তো আমরা এটা বিবেচনা করতে পারি।’

৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার।

কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, যেহেতু দ- স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে।

পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আইনের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। মানবিক কারণে দ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত রেখে ছয় মাস পরে বাড়ানো হয়েছে।’

কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়ার বিধান ‘আইনে নেই’, মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমিতো দেখিয়েছি যে বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। উনারা যদি এটা দেখাতে পারেন, তাহলেতো আমরা এটা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নাই। উনারও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনার প্রশ্ন আসে না।’ এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তার এই বক্তব্যে সমর্থন দেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়েছে, এটা অসত্য। প্রধানমন্ত্রী কখনও সাজাপ্রাপ্ত হননি। আ স ম আবদুর রবকে যখন পাঠানো হয়েছিল তখন দেশে ছিল মার্শাল ল। মাশাল ল’র ধারা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারার সঙ্গে চলে না। উনারা যথেচ্ছ করেছেন। আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে আমি যথেচ্ছ করতে পারি না। এটা হচ্ছে প্রকৃত ঘটনা।’

খালেদা জিয়াকে ‘সঠিকভাবে’ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত ৪০১ ধারায় কোন সুযোগ নেই নিষ্পত্তিকৃত আবেদন আবার বিবেচনা করার।

আরও খবর
দুই বিচারপতির মতবিরোধ, এজলাস ছাড়লেন একজন
গৌরব ও ঐতিহ্যের ৫৬ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
খালেদার চিকিৎসার সঙ্গে রাজনীতিকে না মেলানোর আহ্বান মির্জা ফখরুলের
৩৩ বছরেও হয়নি টিএসসি, আক্ষেপ তথ্যমন্ত্রীর
নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক
সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
নেত্রকোনায় ফ্ল্যাটে বাবা ও শিশুপুত্রের লাশ
স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত
নরসিংদীতে দেড় বছর পর হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন
আহসানিয়া মিশনের প্রিন্টিং প্রেস থেকে ফাঁস হতো ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন
আপনজন ফিরে পেল ছয় পরিবার

শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর ২০২১ , ৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৩

যত খুশি গালি দিতে পারেন আমি আইন মোতাবেক চলব

বিএনপিকে আইনমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

যেখানে আইনের শাসন আছে, সেখানে তিনি আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংসদ সদস্য জি এম (গোলাম মোহাম্মদ) সিরাজের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনের বইয়ে নেই। উনারা (বিএনপি) আমাকে যত খুশি গালি দিতে পারেন। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আইন মোতাবেক চলব।’

পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে চাই, মানবিক কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুয়েকদিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশে পাঠানো হোক। বেগম জিয়াকে বিদেশ পাঠানো না হলে এবং অবস্থা চরম হলে বিএনপির পক্ষে এই সংসদে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না। খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায়ভার আওয়ামী লীগকে আজীবন বহন করতে হবে।’

১৭ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জি এম সিরাজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন, রাগ-বিরাগের বশবর্তী হবেন না। কিন্তু ওনার গতকালের (বুধবার) বক্তব্যের সঙ্গে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক। এটা কি ঠিক না বেঠিক?’

বুধবার প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর প্রসঙ্গে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জন্য আমি আমার নির্বাহী ক্ষমতা বলে যা করতে পারি তাই করেছি, আইন পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।’

৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় টেনে এনে জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করার পরও তার সরকার খালেদা জিয়াকে মানবতা দেখিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমার বাবা, মা, ভাই এমনকি ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তারপরও তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। কারণ আমরা অমানুষ নই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে চান কিভাবে, খালেদা জিয়াকে যে বাসায় থাকতে এবং চিকিৎসা করার সুযোগ দিয়েছি সেটাই কি বেশি নয়।’

বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘দ-প্রাপ্ত হয়ে জামিন নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার নজির আছে। আ স ম আবদুর রব চিকিৎসার জন্য ১৯৭৯ সালে জার্মানি গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা নাসিম দুদকের মামলায় দ-প্রাপ্ত হয়ে ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পান।’

জি এম সিরাজের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি তো দেখিয়েছি যে বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। ওনারা যদি এটা দেখাতে পারেন, তাহলে তো আমরা এটা বিবেচনা করতে পারি।’

৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার।

কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, যেহেতু দ- স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে।

পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আইনের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। মানবিক কারণে দ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত রেখে ছয় মাস পরে বাড়ানো হয়েছে।’

কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়ার বিধান ‘আইনে নেই’, মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমিতো দেখিয়েছি যে বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। উনারা যদি এটা দেখাতে পারেন, তাহলেতো আমরা এটা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নাই। উনারও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনার প্রশ্ন আসে না।’ এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তার এই বক্তব্যে সমর্থন দেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়েছে, এটা অসত্য। প্রধানমন্ত্রী কখনও সাজাপ্রাপ্ত হননি। আ স ম আবদুর রবকে যখন পাঠানো হয়েছিল তখন দেশে ছিল মার্শাল ল। মাশাল ল’র ধারা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারার সঙ্গে চলে না। উনারা যথেচ্ছ করেছেন। আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে আমি যথেচ্ছ করতে পারি না। এটা হচ্ছে প্রকৃত ঘটনা।’

খালেদা জিয়াকে ‘সঠিকভাবে’ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত ৪০১ ধারায় কোন সুযোগ নেই নিষ্পত্তিকৃত আবেদন আবার বিবেচনা করার।