নরসিংদীতে দেড় বছর পর হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন

হত্যায় অংশ নেয় ৭ জনস, প্রেমিক হত্যা করে অন্তঃসত্ত্বা নিপাকে

দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় পর মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। নরসিংদীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই ছবির মেয়েটির নাম লিপা আক্তার নিপা (২২)। পিবিআই তদন্তে বেরিয়ে এসেছে নিপা হত্যাকা-ের রহস্য। বিয়ের পরে পুরানো প্রেমিক আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিরুলের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ হয় নিপার। তাদের সম্পর্কের একপর্যায়ে নিপা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে আমিনুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় নিপা। একদিন রাতে বিয়ের কথা বলে নিপাকে ঘর থেকে নিয়ে যায় আমিনুল। মঘনা নদীর মাঝে নৌকায় নিপাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে। আমিনুলসহ এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় মোট ৭ জন। এদিকে নিপার মা কোহিনুর বেগম মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে আসামিদের হুমকির কারণে বাড়িছাড়া হয়েছেন।

গত বছরের ২৬ এপ্রিল মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাত অবস্থায় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে পুলিশের সহায়তায় পরিবার নিশ্চিত হয় মরদেহটি লিপা আক্তার নিপার। অজ্ঞাত হিসেবে লাশ দাফন করা নিপার মৃত্যুর ঘটনায় নরসিংদী সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলাও দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে নিহত নিপার মা কোহিনুর বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি প্রথমে নৌপুলিশ তদন্ত করলেও কোন অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে আমিনুলের বন্ধু সুজন মিয়া ও চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। প্রধান আসামি আমিনুল পলাতক রয়েছেন আর বাকি চারজন বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান। গ্রেপ্তার দুইজনের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমিনুলের সঙ্গে নিপার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমিনুলের বাবা তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি, বরং নিপার বাবাকে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে দিতে সহায়তা করেন। সেখানে নিপা এক বছর সংসার করার পর তার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

একপর্যায়ে আমিনুল নিপার স্বামীকে তাদের অতীতের প্রেমের কাহিনী বলে। এতে নিপার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে নিপাকে সন্তানসহ বাবার বাড়িতে রেখে আসেন। এরমধ্যে নিপার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে ফেলেন এবং নিপার সঙ্গে আবার আমিনুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে নিপা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। আমিনুল নিপার বাচ্চাটি নষ্ট করার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলে, এটি সম্ভব হবে না বলে জানায় চিকিৎসক। সে সময় নিপা চার থেকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। পরে আমিনুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন নিপা। এরমধ্যে আমিনুল অন্য সহযোগীদের নিয়ে নিপাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত বছরের ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর নিপাকে বিয়ের কথা বলে নৌকাযোগে মেঘনা নদীতে নিয়ে যায়। মাঝ নদীতে নিয়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং কাঠ দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে নিপার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা।

তিনি বলেন, নিপাকে হত্যার পর চরের কোথাও লাশটি চাপা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু নদীর সবদিকে জেলেদের উপস্থিতি থাকায় উপায় না দেখে নিপার মরদেহ লাশটি নদীতে ভাসিয়ে দেয় তারা এবং হত্যায় ব্যবহৃত গামছা ও তাদের সঙ্গে থাকা কোদাল নদীতে ফেলে দেয়। এমনকি নৌকাটিও অন্যত্র বিক্রি করে দেয় জড়িতরা। পরে নৌকাটিকে আলামত হিসেবে সংগ্রহ করতে পেরেছে পিবিআই।

ভাসমান মরদেহটি ২৬ এপ্রিল ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুলের সহায়তায় মরদেহটি দাফন করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে পরিবার গিয়ে নিপাকে শনাক্ত করে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করতে গিয়ে পরিবার নানা ধরনের ভয়ভীতির সম্মুখীন হয়। পরে নিপার মা কোহিনুর বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআই’র এসপি এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, প্রধান অভিযুক্ত আমিনুল বিদেশে পলাতক বলে শোনা যাচ্ছে, কিন্তু বিষয়টি আমরা এখনও নিশ্চিত নই, আমরা তাকে খুঁজছি। এছাড়া, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি চারজন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

আরও খবর
যত খুশি গালি দিতে পারেন আমি আইন মোতাবেক চলব
দুই বিচারপতির মতবিরোধ, এজলাস ছাড়লেন একজন
গৌরব ও ঐতিহ্যের ৫৬ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
খালেদার চিকিৎসার সঙ্গে রাজনীতিকে না মেলানোর আহ্বান মির্জা ফখরুলের
৩৩ বছরেও হয়নি টিএসসি, আক্ষেপ তথ্যমন্ত্রীর
নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক
সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
নেত্রকোনায় ফ্ল্যাটে বাবা ও শিশুপুত্রের লাশ
স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত
আহসানিয়া মিশনের প্রিন্টিং প্রেস থেকে ফাঁস হতো ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন
আপনজন ফিরে পেল ছয় পরিবার

শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর ২০২১ , ৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৩

মেঘনা নদী থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

নরসিংদীতে দেড় বছর পর হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন

হত্যায় অংশ নেয় ৭ জনস, প্রেমিক হত্যা করে অন্তঃসত্ত্বা নিপাকে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় পর মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। নরসিংদীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই ছবির মেয়েটির নাম লিপা আক্তার নিপা (২২)। পিবিআই তদন্তে বেরিয়ে এসেছে নিপা হত্যাকা-ের রহস্য। বিয়ের পরে পুরানো প্রেমিক আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিরুলের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ হয় নিপার। তাদের সম্পর্কের একপর্যায়ে নিপা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে আমিনুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় নিপা। একদিন রাতে বিয়ের কথা বলে নিপাকে ঘর থেকে নিয়ে যায় আমিনুল। মঘনা নদীর মাঝে নৌকায় নিপাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে। আমিনুলসহ এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় মোট ৭ জন। এদিকে নিপার মা কোহিনুর বেগম মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে আসামিদের হুমকির কারণে বাড়িছাড়া হয়েছেন।

গত বছরের ২৬ এপ্রিল মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাত অবস্থায় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে পুলিশের সহায়তায় পরিবার নিশ্চিত হয় মরদেহটি লিপা আক্তার নিপার। অজ্ঞাত হিসেবে লাশ দাফন করা নিপার মৃত্যুর ঘটনায় নরসিংদী সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলাও দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে নিহত নিপার মা কোহিনুর বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি প্রথমে নৌপুলিশ তদন্ত করলেও কোন অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে আমিনুলের বন্ধু সুজন মিয়া ও চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। প্রধান আসামি আমিনুল পলাতক রয়েছেন আর বাকি চারজন বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান। গ্রেপ্তার দুইজনের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমিনুলের সঙ্গে নিপার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমিনুলের বাবা তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি, বরং নিপার বাবাকে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে দিতে সহায়তা করেন। সেখানে নিপা এক বছর সংসার করার পর তার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

একপর্যায়ে আমিনুল নিপার স্বামীকে তাদের অতীতের প্রেমের কাহিনী বলে। এতে নিপার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে নিপাকে সন্তানসহ বাবার বাড়িতে রেখে আসেন। এরমধ্যে নিপার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে ফেলেন এবং নিপার সঙ্গে আবার আমিনুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে নিপা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। আমিনুল নিপার বাচ্চাটি নষ্ট করার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলে, এটি সম্ভব হবে না বলে জানায় চিকিৎসক। সে সময় নিপা চার থেকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। পরে আমিনুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন নিপা। এরমধ্যে আমিনুল অন্য সহযোগীদের নিয়ে নিপাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত বছরের ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর নিপাকে বিয়ের কথা বলে নৌকাযোগে মেঘনা নদীতে নিয়ে যায়। মাঝ নদীতে নিয়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং কাঠ দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে নিপার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা।

তিনি বলেন, নিপাকে হত্যার পর চরের কোথাও লাশটি চাপা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু নদীর সবদিকে জেলেদের উপস্থিতি থাকায় উপায় না দেখে নিপার মরদেহ লাশটি নদীতে ভাসিয়ে দেয় তারা এবং হত্যায় ব্যবহৃত গামছা ও তাদের সঙ্গে থাকা কোদাল নদীতে ফেলে দেয়। এমনকি নৌকাটিও অন্যত্র বিক্রি করে দেয় জড়িতরা। পরে নৌকাটিকে আলামত হিসেবে সংগ্রহ করতে পেরেছে পিবিআই।

ভাসমান মরদেহটি ২৬ এপ্রিল ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুলের সহায়তায় মরদেহটি দাফন করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে পরিবার গিয়ে নিপাকে শনাক্ত করে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করতে গিয়ে পরিবার নানা ধরনের ভয়ভীতির সম্মুখীন হয়। পরে নিপার মা কোহিনুর বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআই’র এসপি এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, প্রধান অভিযুক্ত আমিনুল বিদেশে পলাতক বলে শোনা যাচ্ছে, কিন্তু বিষয়টি আমরা এখনও নিশ্চিত নই, আমরা তাকে খুঁজছি। এছাড়া, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি চারজন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।