জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের অভিযোগে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করে দেয়া জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যসম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় এবং মেয়রের পদত্যাগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
তীব্র সমালোচনার মুখে পরে আরেক ভিডিও বার্তায় মেয়র দাবি করেছিলেন, ফেসবুকের ভিডিওটি সুপার এডিট করে প্রচার করে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। তিনি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।
পরে গত ৩ অক্টোবর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে দলের ‘স্বার্থ পরিপন্থী’ কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে এ শোকজ করা হয়। শোকজ নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে এর জবাব দিতে বলা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত আপনার বক্তব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে, যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। এটি সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মেয়র সে নোটিশের জবাব দিলে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তার (মেয়র জাহাঙ্গীর) শোকজের জবাব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম। জবাব আমাদের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। অনেকটা দায়সারা মনে হয়েছে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। একইসঙ্গে মেয়র পদটি নিয়েও ভাবা হচ্ছে।’
নোটিশের জবাবে মেয়র কী লিখেছেন- জানতে চাইলে ওই বোর্ড সদস্য বলেন, ‘জাহাঙ্গীর চিঠিতে দাবি করেছেন, তার বক্তব্যগুলো জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সবশেষে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।’
কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পর ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারাই একটি কথাকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিট করে ভিন্নভাবে ফেসবুকে দিচ্ছে। সেজন্য দল আমাকে সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অবশ্যই আমি সেটা মাথা পেতে নেব। আমি জানি, আমি কোন অন্যায় করিনি, আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচারের এটা আরেকটা ষড়যন্ত্র।’
তিনি বলেন, ‘যার মাধ্যমে আমি স্বাধীন দেশ ও সবুজ একটি পতাকা পেয়েছি সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্র রাজনীতি থেকে আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। আমি এ দলের সঙ্গে, আমার নেতৃত্বের সঙ্গে এবং জাতির পিতার সঙ্গে কোন ধরনের কটূক্তি করতে পারি না। আমি আশা করবো, যারা অপপ্রচার, মিথ্যাচার করছে- তারা নিজেরাই অবশ্যই সংশোধন হবেন। আমার কাছে জাতির পিতা এবং আওয়ামী লীগ আমার প্রাণ।’
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দলের সিদ্ধান্ত মেনে দলের কাছে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জবাব দেবেন বলেও জানান তিনি। দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গাজীপুরের ধারাবাহিক উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পক্ষ এসব ষড়যন্ত্র করছে বলেও দাবি করেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীর আলম ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি তৎকালীন গাজীপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হলে নাগরিক কমিটির ব্যানারে আনারস প্রতীকে মেয়র প্রার্থী হন জাহাঙ্গীর। নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান তিনি। এরপর ২০১৬ সালে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা মহানগরের প্রথম সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন তাকে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর।
শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১ , ৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের অভিযোগে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করে দেয়া জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যসম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় এবং মেয়রের পদত্যাগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
তীব্র সমালোচনার মুখে পরে আরেক ভিডিও বার্তায় মেয়র দাবি করেছিলেন, ফেসবুকের ভিডিওটি সুপার এডিট করে প্রচার করে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। তিনি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।
পরে গত ৩ অক্টোবর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে দলের ‘স্বার্থ পরিপন্থী’ কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে এ শোকজ করা হয়। শোকজ নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে এর জবাব দিতে বলা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত আপনার বক্তব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে, যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। এটি সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মেয়র সে নোটিশের জবাব দিলে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তার (মেয়র জাহাঙ্গীর) শোকজের জবাব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম। জবাব আমাদের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। অনেকটা দায়সারা মনে হয়েছে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। একইসঙ্গে মেয়র পদটি নিয়েও ভাবা হচ্ছে।’
নোটিশের জবাবে মেয়র কী লিখেছেন- জানতে চাইলে ওই বোর্ড সদস্য বলেন, ‘জাহাঙ্গীর চিঠিতে দাবি করেছেন, তার বক্তব্যগুলো জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সবশেষে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।’
কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পর ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারাই একটি কথাকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিট করে ভিন্নভাবে ফেসবুকে দিচ্ছে। সেজন্য দল আমাকে সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অবশ্যই আমি সেটা মাথা পেতে নেব। আমি জানি, আমি কোন অন্যায় করিনি, আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচারের এটা আরেকটা ষড়যন্ত্র।’
তিনি বলেন, ‘যার মাধ্যমে আমি স্বাধীন দেশ ও সবুজ একটি পতাকা পেয়েছি সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্র রাজনীতি থেকে আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। আমি এ দলের সঙ্গে, আমার নেতৃত্বের সঙ্গে এবং জাতির পিতার সঙ্গে কোন ধরনের কটূক্তি করতে পারি না। আমি আশা করবো, যারা অপপ্রচার, মিথ্যাচার করছে- তারা নিজেরাই অবশ্যই সংশোধন হবেন। আমার কাছে জাতির পিতা এবং আওয়ামী লীগ আমার প্রাণ।’
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দলের সিদ্ধান্ত মেনে দলের কাছে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জবাব দেবেন বলেও জানান তিনি। দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গাজীপুরের ধারাবাহিক উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পক্ষ এসব ষড়যন্ত্র করছে বলেও দাবি করেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীর আলম ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি তৎকালীন গাজীপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হলে নাগরিক কমিটির ব্যানারে আনারস প্রতীকে মেয়র প্রার্থী হন জাহাঙ্গীর। নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান তিনি। এরপর ২০১৬ সালে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা মহানগরের প্রথম সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন তাকে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর।