ভারতে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা

মমতা বললেন, সামনে ৫ রাজ্যে নির্বাচনে ভরাডুবির ভয়ে এই পদক্ষেপ, বিরোধীরা বললেন, উপায় ছিল না

ভারতে জারি করা বহু বিতর্কিত কৃষি আইন শেষপর্যন্ত প্রত্যাহার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে নতুন ওই কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গোটা দেশ সরগরম হয়ে ওঠে। রাজধানী দিল্লি থেকে পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে চলে দিনের পর দিন আন্দোলন । আন্দোলোনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু লোকের মৃত্যু ঘটে। উত্তাল হয়েছে লোকসভা থেকে রাজ্যসভা। তবে শুক্রবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন য়া আন্দোলনকারীদের কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের মাঠে ফেরার বার্তা দিয়ে আজ এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। কৃষকদের দুর্দশা দূর করতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে, কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে দাবি, এই সিদ্ধান্তের পিছনে অন্যতম কারণ, দেশের নিরাপত্তা। তবে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দাবি করেছে, সামনে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে, ভরাডুবির ভয়ে কৃত আইন প্রত্যাহার করা হয়।

গতকাল সকালে গুরু নানকের জয়ন্তী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে সকলকে চমকে দিয়ে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যেই আন্দোলনকারী কৃষক থেকে শুরু করে বিরোধী দলগুলি সবাই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি জানান, কৃষকদের পরিশ্রম, দুর্দশা, নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কৃষকদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

সূত্রের খবর, কৃষক আন্দোলনের আড়ালে ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছিল দেশ-বিরোধী শক্তি। কৃষক আন্দোলনের নাম করে দেশের মাটিতে চলছিল সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। গোয়েন্দা সূত্রেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই খবর আসতে শুরু করেছিল বলে জানা গিয়েছে। তাই দেশের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তড়িঘড়ি এমন সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। গোয়েন্দাদের তরফ থেকে কেন্দ্রকে জানানো হয়েছিল যে, কৃষক আন্দোলনের নামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্রোহের বীজ বপণ করার চেষ্টা করছিল একটি মহল। তাই প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই নেয়া হয়েছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই ঘোষণার পর কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আরএসএসের শাখা সংগঠন ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ’। তাদের তরফেও দাবি করা হয়েছে, কৃষক আন্দোলনে প্রবেশ করছিল ভারত-বিরোধী শক্তি। তাই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নতুন দিশা দেখাবে বলে মনে করছে তারা।

বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষের টুইটেও ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। এ দিন প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন, সেই বক্তব্যের একটি লাইন উদ্ধৃত করে বিএল সন্তোষ লিখেছেন, ‘এই আইন শত্রু ও মিত্র উভয়েই চিরকাল মনে রাখবে, যা করেছিলাম, কৃষকদের কথা ভেবেই, আর আজ যা প্রত্যাহার করছি, তা দেশের কথা ভেবে।’ ইতিহাস এই প্রধানমন্ত্রীর এই বাক্যটা দেশের মানুষ সব সময় মনে রাখবে বলে বিএল সন্তোষ মনে করছেন।। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি নেতা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে দেশের সুরক্ষাই আইন প্রত্যাহারের মূল কারণ।

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন বা বারংবার আলোচনাতেও সমাধান সূত্র না মেলার জন্য কৃষকদের দোষারোপ করেননি প্রধানমন্ত্রী। বরং তাদের কৃষি আইনের সুফল বোঝাতে না পারায় নিজেই এদিন ক্ষমা চেয়ে নেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১ , ৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

ভারতে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা

মমতা বললেন, সামনে ৫ রাজ্যে নির্বাচনে ভরাডুবির ভয়ে এই পদক্ষেপ, বিরোধীরা বললেন, উপায় ছিল না

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

ভারতে জারি করা বহু বিতর্কিত কৃষি আইন শেষপর্যন্ত প্রত্যাহার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে নতুন ওই কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গোটা দেশ সরগরম হয়ে ওঠে। রাজধানী দিল্লি থেকে পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে চলে দিনের পর দিন আন্দোলন । আন্দোলোনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু লোকের মৃত্যু ঘটে। উত্তাল হয়েছে লোকসভা থেকে রাজ্যসভা। তবে শুক্রবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন য়া আন্দোলনকারীদের কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের মাঠে ফেরার বার্তা দিয়ে আজ এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। কৃষকদের দুর্দশা দূর করতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে, কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে দাবি, এই সিদ্ধান্তের পিছনে অন্যতম কারণ, দেশের নিরাপত্তা। তবে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দাবি করেছে, সামনে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে, ভরাডুবির ভয়ে কৃত আইন প্রত্যাহার করা হয়।

গতকাল সকালে গুরু নানকের জয়ন্তী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে সকলকে চমকে দিয়ে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যেই আন্দোলনকারী কৃষক থেকে শুরু করে বিরোধী দলগুলি সবাই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি জানান, কৃষকদের পরিশ্রম, দুর্দশা, নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কৃষকদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

সূত্রের খবর, কৃষক আন্দোলনের আড়ালে ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছিল দেশ-বিরোধী শক্তি। কৃষক আন্দোলনের নাম করে দেশের মাটিতে চলছিল সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। গোয়েন্দা সূত্রেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই খবর আসতে শুরু করেছিল বলে জানা গিয়েছে। তাই দেশের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তড়িঘড়ি এমন সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। গোয়েন্দাদের তরফ থেকে কেন্দ্রকে জানানো হয়েছিল যে, কৃষক আন্দোলনের নামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্রোহের বীজ বপণ করার চেষ্টা করছিল একটি মহল। তাই প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই নেয়া হয়েছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই ঘোষণার পর কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আরএসএসের শাখা সংগঠন ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ’। তাদের তরফেও দাবি করা হয়েছে, কৃষক আন্দোলনে প্রবেশ করছিল ভারত-বিরোধী শক্তি। তাই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নতুন দিশা দেখাবে বলে মনে করছে তারা।

বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষের টুইটেও ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। এ দিন প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন, সেই বক্তব্যের একটি লাইন উদ্ধৃত করে বিএল সন্তোষ লিখেছেন, ‘এই আইন শত্রু ও মিত্র উভয়েই চিরকাল মনে রাখবে, যা করেছিলাম, কৃষকদের কথা ভেবেই, আর আজ যা প্রত্যাহার করছি, তা দেশের কথা ভেবে।’ ইতিহাস এই প্রধানমন্ত্রীর এই বাক্যটা দেশের মানুষ সব সময় মনে রাখবে বলে বিএল সন্তোষ মনে করছেন।। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি নেতা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে দেশের সুরক্ষাই আইন প্রত্যাহারের মূল কারণ।

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন বা বারংবার আলোচনাতেও সমাধান সূত্র না মেলার জন্য কৃষকদের দোষারোপ করেননি প্রধানমন্ত্রী। বরং তাদের কৃষি আইনের সুফল বোঝাতে না পারায় নিজেই এদিন ক্ষমা চেয়ে নেন প্রধানমন্ত্রী।