ড্যাপের নতুন পরিকল্পনায় ঢাকায় যুক্ত হচ্ছে আরও তিন জেলা

ডিটেইল এরিয়া প্লান (ড্যাপ) এর পরিকল্পনায় ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ঢাকার পাশের তিন এলাকা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কেরানীগঞ্জের কিছু এলাকা। যা যুক্ত হলে ঢাকার নতুন আয়তন হবে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার। সেমিনারে চূড়ান্ত খসড়ার প্লানে বলা হয়, ২০১১-এর বিবিএস সার্ভে অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন প্রায় ১৫.৫ মিলিয়ন মানুষ। ২০৩৫ নাগাদ যা পৌঁছাতে পারে প্রায় ২৬ মিলিয়নে।

গতকাল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে জাতীয় সেমিনারে এসব জানানো হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আশরাফুল ইসলাম।

পরিকল্পনায় যুক্ত রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার সীমানা ও ব্যাপ্তি অনুযায়ী ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এই তিনটি সিটি করপোরেশন ও পাঁচটি পৌররসভা যুক্ত হচ্ছে। সেগুলো হলো, সাভার, তারাবো, কালীগঞ্জ (আংশিক), সোনারগাঁও (আংশিক) এবং কাঞ্চন (আংশিক)। এতে যুক্ত হবে তিন জেলার ৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদ।

ড্যাপের সীমানা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ড্যাপে উত্তরে সমগ্র গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা যা ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বেষ্টিত, পশ্চিমে সাভারের বংশী নদী এবং পূর্বে কালীগঞ্জ-রূপগঞ্জ যা শীতলক্ষ্যা নদী এবং দক্ষিণপশ্চিমে কেরানীগঞ্জ দ্বারা বেষ্টিত রাখা হয়েছে।

ড্যাপে ভূমি ব্যবহার প্রস্তাবনায় ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে নগর ধরা হয়েছে ৬০ শতাংশ এলাকাকে। এতে আবাসিক এলাকা ৪.৩৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক প্রধান) ৩২.৫০ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক-বাণিজ্যিক) ০.৪৫ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকা ০.১৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (বাণিজ্যিক প্রধান) ১.৪৩ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (শিল্প প্রধান) ৭.৯০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা ৪.০১ শতাংশ, ভারী শিল্প এলাকা ১.৬৩ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (বিদ্যমান) ৫.২৫ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (প্রস্তাবিত) ২.৩৫ শতাংশ, কৃষি এলাকা ২৯.২২ শতাংশ, জলাশয় ৭.৯৫ শতাংশ, বনাঞ্চল ১.৪১ শতাংশ, উন্মুক্ত স্থান ১.৩৮ শতাংশ রাখা হয়েছে।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা ২০৩৫-এ ঢাকা কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেটা বিবেচনা করে প্লান সাজিয়েছি। কোন এলাকায় যেন সুযোগ-সুবিধার তুলনায় অধিক জনবসতি তৈরি না হয় সেজন্য আমাদের পরিকল্পনায় রাস্তার প্রশস্তের আলোকে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকাকে আর কোনভাবেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। একই সঙ্গে ড্যাপ চূড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, নগর পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অবাসযোগ্য নগরীতে রূপান্তর করতে পারি না। সব আর্থসামাজিক শ্রেণীপেশার মানুষের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও মৌলিক বিষয়গুলো এবারের ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, পেশাজীবী, পরিবেশবাদী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া, পরিকল্পনা তৈরির সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উচ্চপর্যায়ে নীতিমালার পরিকল্পনাগুলো বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ঢাকাকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন, বসবাসযোগ্য করতে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শহর তৈরির লক্ষ্যে পরিকল্পনায় অনেকগুলো বৃহত্তম, জলকেন্দ্রিক ও ইকো পার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ এবং রিং রোডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

ড্যাপের আহ্বায়ক জানান, আমরা কেউ সুউচ্চ ভবনের বিপক্ষে নই। এমনকি আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেও উঁচু ভবনের পক্ষে। কিন্তু এটি করার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে ইউটিলিটি সার্ভিস, রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খেলার মাঠ ও বিনোদনকেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে করতে হবে।

পাঁচ-সাত কাঠা জমির উপর উঁচু ভবন এবং যেগুলো নিয়ে অসামঞ্জস্য রয়েছে সেগুলো নিয়ে রিভিউ করা হবে। আর এ পরিমাণ জায়গাতে কতটুকু ভবন করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আমরা শহরটাকে বসবাসের অযোগ্য বানাতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, যে সব আবাসিক এলাকায় পূর্বেই শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলো যদি পরিবেশবান্ধব হয়, জনমানুষের ভোগান্তির কারণ না হয় তাহলে সেই এলাকাকে মিশ্র এলাকা হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হবে। শুধু তাই নয় এসব এলাকায় অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

ড্যাপ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে আজকের এই সেমিনারে সব পক্ষের এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা বসবো এবং যৌক্তিক বিষয়গুলো অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এসব পরামর্শ ও মতামত আমাদের আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে এবং কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশের সব গুণী মানুষের মেধা-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকলে বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেকে আসতে চায় কিন্তু ড্যাপ ফাইনাল না হওয়ার কারণে তারা আসতে চায় না।’

‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে তাহলে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা কমে যাবে’ বলেও জানান তিনি।

ড্যাপ সফল করতে হলে রাজউক কী রেগুলেটরি বডি, না ইম্লিমেন্টরি বড়ি সেটি নিশ্চিত করা অতি জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি। তিনি মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ডিটেইল এরিয়া প্লান- ড্যাপ বাস্তবায়নের আগে ড্যাপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর অবস্থান নিশ্চিত করুন।’

আইভি বলেন, নগরীর দুর্ভোগের জবাব দিতে হয় জনপ্রতিনিধিদের। তাই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে তাদের প্রাধান্য নিশ্চিত করা অতি জরুরি। এজন্য সিটি ও পৌর মেয়রদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের মতকে প্রাধান্য দিতে হবে

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজউক ও সিটি করপোরেশনগুলোর সমন্বয় না করে ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে সিটি করপোরেশনগুলোর কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দেশের শীর্ষস্থানীয় নগর পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতি, পরিবেশবিদ, প্রকৌশলী, এফবিসিসিআই সভাপতি সেমিনারে অংশ নেন।

রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১ , ৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

ড্যাপের নতুন পরিকল্পনায় ঢাকায় যুক্ত হচ্ছে আরও তিন জেলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ডিটেইল এরিয়া প্লান (ড্যাপ) এর পরিকল্পনায় ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ঢাকার পাশের তিন এলাকা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কেরানীগঞ্জের কিছু এলাকা। যা যুক্ত হলে ঢাকার নতুন আয়তন হবে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার। সেমিনারে চূড়ান্ত খসড়ার প্লানে বলা হয়, ২০১১-এর বিবিএস সার্ভে অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন প্রায় ১৫.৫ মিলিয়ন মানুষ। ২০৩৫ নাগাদ যা পৌঁছাতে পারে প্রায় ২৬ মিলিয়নে।

গতকাল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে জাতীয় সেমিনারে এসব জানানো হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আশরাফুল ইসলাম।

পরিকল্পনায় যুক্ত রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার সীমানা ও ব্যাপ্তি অনুযায়ী ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এই তিনটি সিটি করপোরেশন ও পাঁচটি পৌররসভা যুক্ত হচ্ছে। সেগুলো হলো, সাভার, তারাবো, কালীগঞ্জ (আংশিক), সোনারগাঁও (আংশিক) এবং কাঞ্চন (আংশিক)। এতে যুক্ত হবে তিন জেলার ৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদ।

ড্যাপের সীমানা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ড্যাপে উত্তরে সমগ্র গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা যা ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বেষ্টিত, পশ্চিমে সাভারের বংশী নদী এবং পূর্বে কালীগঞ্জ-রূপগঞ্জ যা শীতলক্ষ্যা নদী এবং দক্ষিণপশ্চিমে কেরানীগঞ্জ দ্বারা বেষ্টিত রাখা হয়েছে।

ড্যাপে ভূমি ব্যবহার প্রস্তাবনায় ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে নগর ধরা হয়েছে ৬০ শতাংশ এলাকাকে। এতে আবাসিক এলাকা ৪.৩৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক প্রধান) ৩২.৫০ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক-বাণিজ্যিক) ০.৪৫ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকা ০.১৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (বাণিজ্যিক প্রধান) ১.৪৩ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (শিল্প প্রধান) ৭.৯০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা ৪.০১ শতাংশ, ভারী শিল্প এলাকা ১.৬৩ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (বিদ্যমান) ৫.২৫ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (প্রস্তাবিত) ২.৩৫ শতাংশ, কৃষি এলাকা ২৯.২২ শতাংশ, জলাশয় ৭.৯৫ শতাংশ, বনাঞ্চল ১.৪১ শতাংশ, উন্মুক্ত স্থান ১.৩৮ শতাংশ রাখা হয়েছে।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা ২০৩৫-এ ঢাকা কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেটা বিবেচনা করে প্লান সাজিয়েছি। কোন এলাকায় যেন সুযোগ-সুবিধার তুলনায় অধিক জনবসতি তৈরি না হয় সেজন্য আমাদের পরিকল্পনায় রাস্তার প্রশস্তের আলোকে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকাকে আর কোনভাবেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। একই সঙ্গে ড্যাপ চূড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, নগর পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অবাসযোগ্য নগরীতে রূপান্তর করতে পারি না। সব আর্থসামাজিক শ্রেণীপেশার মানুষের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও মৌলিক বিষয়গুলো এবারের ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, পেশাজীবী, পরিবেশবাদী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া, পরিকল্পনা তৈরির সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উচ্চপর্যায়ে নীতিমালার পরিকল্পনাগুলো বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ঢাকাকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন, বসবাসযোগ্য করতে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শহর তৈরির লক্ষ্যে পরিকল্পনায় অনেকগুলো বৃহত্তম, জলকেন্দ্রিক ও ইকো পার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ এবং রিং রোডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

ড্যাপের আহ্বায়ক জানান, আমরা কেউ সুউচ্চ ভবনের বিপক্ষে নই। এমনকি আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেও উঁচু ভবনের পক্ষে। কিন্তু এটি করার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে ইউটিলিটি সার্ভিস, রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খেলার মাঠ ও বিনোদনকেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে করতে হবে।

পাঁচ-সাত কাঠা জমির উপর উঁচু ভবন এবং যেগুলো নিয়ে অসামঞ্জস্য রয়েছে সেগুলো নিয়ে রিভিউ করা হবে। আর এ পরিমাণ জায়গাতে কতটুকু ভবন করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আমরা শহরটাকে বসবাসের অযোগ্য বানাতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, যে সব আবাসিক এলাকায় পূর্বেই শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলো যদি পরিবেশবান্ধব হয়, জনমানুষের ভোগান্তির কারণ না হয় তাহলে সেই এলাকাকে মিশ্র এলাকা হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হবে। শুধু তাই নয় এসব এলাকায় অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

ড্যাপ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে আজকের এই সেমিনারে সব পক্ষের এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা বসবো এবং যৌক্তিক বিষয়গুলো অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এসব পরামর্শ ও মতামত আমাদের আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে এবং কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশের সব গুণী মানুষের মেধা-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকলে বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেকে আসতে চায় কিন্তু ড্যাপ ফাইনাল না হওয়ার কারণে তারা আসতে চায় না।’

‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে তাহলে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা কমে যাবে’ বলেও জানান তিনি।

ড্যাপ সফল করতে হলে রাজউক কী রেগুলেটরি বডি, না ইম্লিমেন্টরি বড়ি সেটি নিশ্চিত করা অতি জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি। তিনি মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ডিটেইল এরিয়া প্লান- ড্যাপ বাস্তবায়নের আগে ড্যাপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর অবস্থান নিশ্চিত করুন।’

আইভি বলেন, নগরীর দুর্ভোগের জবাব দিতে হয় জনপ্রতিনিধিদের। তাই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে তাদের প্রাধান্য নিশ্চিত করা অতি জরুরি। এজন্য সিটি ও পৌর মেয়রদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের মতকে প্রাধান্য দিতে হবে

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজউক ও সিটি করপোরেশনগুলোর সমন্বয় না করে ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে সিটি করপোরেশনগুলোর কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দেশের শীর্ষস্থানীয় নগর পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতি, পরিবেশবিদ, প্রকৌশলী, এফবিসিসিআই সভাপতি সেমিনারে অংশ নেন।