বিন্নি ধানের খই

বিন্নি ধানের খই আর মৌলি ধানের মুড়ি; উড়ো খই গোবিন্দায় নমো; খইয়ের মতো বুলি ফুটেছে- খই নিয়ে বাংলাদেশে এমন অনেক প্রবাদ আছে। আবার পল্লী কবি জসীমউদ্দীন তার এক কবিতায় লিখেছেন - ‘শালি ধানের চিঁড়ে দেব, বিন্নি ধানের খই।’

সরাসরি ধান থেকে যা পাওয়া যায়, তা হলো খই। সাধারণত কাঠের উনুনে মাটির খোলা পাত্রে, কোথাও কোথাও অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে গরম বালির ওপর দিয়ে ধান নাড়াচাড়া করলেই মুহূর্তের মধ্যে ধানের ভেতরের চাল গরম হয়ে ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধানের খোসা ফাটিয়ে বেরিয়ে আসে খই। মুড়ির মতো মসৃণ হয় না, একটু এবড়োখেবড়ো হয়। সাধারণত দুধ অথবা দইয়ের সঙ্গে খই খাওয়া হয়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিষ্টি মোয়া খই দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া গুড় মাখিয়ে মুড়কি, সন্দেশ, ছানা মিশিয়ে নানা ধরনের মিষ্টি তৈরি করা হয় খই দিয়েই। বিভিন্ন উৎসবে, বিশেষ করে পূজা পার্বণে খইয়ের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত লক্ষ্মীপুজোর সময় খই দিয়ে তৈরি মুড়কি আর লাড্ডুর প্রয়োজন হয়।

আধুনিকতার যুগে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে কাঠের উনুনের ব্যবহার অনেকটাই কমে গিয়েছে। মুড়িও ভাজা হয় না আর। মুড়ির চাহিদা পূরণ করতে মুড়ি মিলের সংখ্যা বেড়েছে গত কয়েক দশকেই। সেই নিরিখে খই ভাজার প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে। শুধু সামাজিক রীতিনীতি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান-পুজোপার্বণের জন্যই এখন খইয়ের ব্যবহার দেখা যায় হঠাৎ হঠাৎ। তাই, একদিকে খইয়ের উপকারিতা থেকে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হতে চলেছে, তেমনই খই নিয়ে নানা প্রচলিত প্রবাদও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবে আগামী দিনে।

লিয়াকত হোসেন খোকন

রূপনগর, ঢাকা

রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১ , ৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

বিন্নি ধানের খই

বিন্নি ধানের খই আর মৌলি ধানের মুড়ি; উড়ো খই গোবিন্দায় নমো; খইয়ের মতো বুলি ফুটেছে- খই নিয়ে বাংলাদেশে এমন অনেক প্রবাদ আছে। আবার পল্লী কবি জসীমউদ্দীন তার এক কবিতায় লিখেছেন - ‘শালি ধানের চিঁড়ে দেব, বিন্নি ধানের খই।’

সরাসরি ধান থেকে যা পাওয়া যায়, তা হলো খই। সাধারণত কাঠের উনুনে মাটির খোলা পাত্রে, কোথাও কোথাও অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে গরম বালির ওপর দিয়ে ধান নাড়াচাড়া করলেই মুহূর্তের মধ্যে ধানের ভেতরের চাল গরম হয়ে ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধানের খোসা ফাটিয়ে বেরিয়ে আসে খই। মুড়ির মতো মসৃণ হয় না, একটু এবড়োখেবড়ো হয়। সাধারণত দুধ অথবা দইয়ের সঙ্গে খই খাওয়া হয়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিষ্টি মোয়া খই দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া গুড় মাখিয়ে মুড়কি, সন্দেশ, ছানা মিশিয়ে নানা ধরনের মিষ্টি তৈরি করা হয় খই দিয়েই। বিভিন্ন উৎসবে, বিশেষ করে পূজা পার্বণে খইয়ের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত লক্ষ্মীপুজোর সময় খই দিয়ে তৈরি মুড়কি আর লাড্ডুর প্রয়োজন হয়।

আধুনিকতার যুগে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে কাঠের উনুনের ব্যবহার অনেকটাই কমে গিয়েছে। মুড়িও ভাজা হয় না আর। মুড়ির চাহিদা পূরণ করতে মুড়ি মিলের সংখ্যা বেড়েছে গত কয়েক দশকেই। সেই নিরিখে খই ভাজার প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে। শুধু সামাজিক রীতিনীতি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান-পুজোপার্বণের জন্যই এখন খইয়ের ব্যবহার দেখা যায় হঠাৎ হঠাৎ। তাই, একদিকে খইয়ের উপকারিতা থেকে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হতে চলেছে, তেমনই খই নিয়ে নানা প্রচলিত প্রবাদও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবে আগামী দিনে।

লিয়াকত হোসেন খোকন

রূপনগর, ঢাকা