কারণ নিবন্ধন জটিলতাসহ নানা অব্যবস্থা
নিবন্ধন ‘জটিলতায়’ ধীরগতিতে এগুচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা কর্মসূচি। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের ‘পূর্ণাঙ্গ’ ও ‘সঠিক’ ডাটা বা তথ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) দিতে পারছে না। অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য দেয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানেই দু’বার-তিনবার তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আবার নিবন্ধনের জন্য যেসব শিক্ষার্থীর তালিকা আইসিটি বিভাগে পাঠানো হয়েছে তাদের সবার নাম ‘সুরক্ষা অ্যাপে’ অন্তর্ভুক্তিতেও বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ‘টিকা পাওয়ার’ উপযোগী তাদের শিক্ষার্থীদের তালিকাই প্রণয়ন করতে পারেনি।
১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।
তিনি গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘টিকা পেতে শিক্ষার্থীদেরও সুরক্ষা ‘অ্যাপে’ নিবন্ধন করতে হয়। শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন যদি আমরা সেন্ট্রালি (কেন্দ্রীয়ভাবে) করতে পারতাম তাহলে শিক্ষার্থীদের টিকা পেতে সহজ হতো। বর্তমানে লক্ষ্য লক্ষ্য শিক্ষার্থীর ডাটা আগে সুরক্ষা অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করতে হচ্ছে। এতে সুরক্ষা অ্যাপের ওপরও লোড (চাপ) বেড়েছে।’
শাহেদুল খবির চৌধুরী জানান, মাউশির আওতায় ঢাকা মহানগরীসহ ৩৫ জেলায় এ পর্যন্ত মোট দুই ১১ হাজার ৩৮৬ জন শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে। ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হচ্ছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, টিকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। মাদ্রাসাগুলোও নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের তথ্য দিতে বিলম্ব করছে।
গত ১ নভেম্বর থেকে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান শুরু হয়। এরপর ১৩ নভেম্বর থেকে শুধুমাত্র এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়। ২৫ নভেম্বরের মধ্যে ৩৫ জেলায় পরীক্ষার্থীদের টিকা কর্মসূচি শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে মাউশি। এরপর জেলা পর্যায়ে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সবস্তরের শিক্ষার্থী মিলিয়ে এ পর্যন্ত মাত্র তিন লাখ ১৫ হাজার ৮৯২ জন শিক্ষার্থী করোনার টিকা নিয়েছে। অথচ শুধুমাত্র ঢাকায় দৈনিক ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকাদানের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। আর এখন ঢাকাসহ ৩৬ জেলায়ও দৈনিক ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকাদান সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০ নভেম্বর সারাদেশে ৪৮ হাজার ৯৭৩ জন শিক্ষার্থী করোনার টিকা নিয়েছে। ওইদিন পর্যন্ত সারাদেশে মোট তিন লাখ ১৫ হাজার ৮৯২ জন শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। আর এ পর্যন্ত ১৮৫ জন শিক্ষার্থী টিকার দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে।
শিক্ষার্থীদের টিকায় ‘ধীরগতির’ বিষয়ে অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘স্কুল-কলেজ থেকে প্রতিদিন আমাদের কাছে যেসব ডাটা পাঠাচ্ছে তাতে অনেক ডাটাই সঠিক আসছে না। এজন্য বারবার ডাটা চাওয়া হচ্ছে, যাচাই বাছাই করতে হচ্ছে। আবার সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতেও কিছুটা জটিলতা হচ্ছে, সময় লাগছে।’
তিনি আশা করেন, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে ৩৫টি জেলায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ করা সম্ভব হবে। এরপর বাকি জেলাগুলোতেও শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হবে।
সরকার স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবিত ‘ফাইজার’র টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ের অর্থাৎ ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়। এরপর গত ১ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীতে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়।
মাউশি জানিয়েছে, ঢাকায় টিকাদানের লক্ষে মাউশির পক্ষ্য থেকে ইতোমধ্যে চার লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য সরকারের আইসিটি ও স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে, এসব শিক্ষার্থীর নিবন্ধন চলমান রয়েছে। এছাড়াও মাদ্রাসা ও কারিগরি কলেজের শিক্ষার্থী মিলিয়ে ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখের মতো হতে পারে বলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামসুল হক সম্প্রতি এক বুলেটিনে বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের (১২-১৭ বছর বয়সী) এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নেই, তারা বার্থ রেজিস্ট্রেশন বা জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে এ তালিকায় (টিকাদান কর্মসূচি) অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।
সোমবার, ২২ নভেম্বর ২০২১ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৬ রবিউস সানি ১৪৪৩
কারণ নিবন্ধন জটিলতাসহ নানা অব্যবস্থা
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
নিবন্ধন ‘জটিলতায়’ ধীরগতিতে এগুচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা কর্মসূচি। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের ‘পূর্ণাঙ্গ’ ও ‘সঠিক’ ডাটা বা তথ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) দিতে পারছে না। অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য দেয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানেই দু’বার-তিনবার তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আবার নিবন্ধনের জন্য যেসব শিক্ষার্থীর তালিকা আইসিটি বিভাগে পাঠানো হয়েছে তাদের সবার নাম ‘সুরক্ষা অ্যাপে’ অন্তর্ভুক্তিতেও বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ‘টিকা পাওয়ার’ উপযোগী তাদের শিক্ষার্থীদের তালিকাই প্রণয়ন করতে পারেনি।
১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।
তিনি গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘টিকা পেতে শিক্ষার্থীদেরও সুরক্ষা ‘অ্যাপে’ নিবন্ধন করতে হয়। শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন যদি আমরা সেন্ট্রালি (কেন্দ্রীয়ভাবে) করতে পারতাম তাহলে শিক্ষার্থীদের টিকা পেতে সহজ হতো। বর্তমানে লক্ষ্য লক্ষ্য শিক্ষার্থীর ডাটা আগে সুরক্ষা অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করতে হচ্ছে। এতে সুরক্ষা অ্যাপের ওপরও লোড (চাপ) বেড়েছে।’
শাহেদুল খবির চৌধুরী জানান, মাউশির আওতায় ঢাকা মহানগরীসহ ৩৫ জেলায় এ পর্যন্ত মোট দুই ১১ হাজার ৩৮৬ জন শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে। ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হচ্ছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, টিকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। মাদ্রাসাগুলোও নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের তথ্য দিতে বিলম্ব করছে।
গত ১ নভেম্বর থেকে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান শুরু হয়। এরপর ১৩ নভেম্বর থেকে শুধুমাত্র এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়। ২৫ নভেম্বরের মধ্যে ৩৫ জেলায় পরীক্ষার্থীদের টিকা কর্মসূচি শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে মাউশি। এরপর জেলা পর্যায়ে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সবস্তরের শিক্ষার্থী মিলিয়ে এ পর্যন্ত মাত্র তিন লাখ ১৫ হাজার ৮৯২ জন শিক্ষার্থী করোনার টিকা নিয়েছে। অথচ শুধুমাত্র ঢাকায় দৈনিক ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকাদানের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। আর এখন ঢাকাসহ ৩৬ জেলায়ও দৈনিক ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকাদান সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০ নভেম্বর সারাদেশে ৪৮ হাজার ৯৭৩ জন শিক্ষার্থী করোনার টিকা নিয়েছে। ওইদিন পর্যন্ত সারাদেশে মোট তিন লাখ ১৫ হাজার ৮৯২ জন শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। আর এ পর্যন্ত ১৮৫ জন শিক্ষার্থী টিকার দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে।
শিক্ষার্থীদের টিকায় ‘ধীরগতির’ বিষয়ে অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘স্কুল-কলেজ থেকে প্রতিদিন আমাদের কাছে যেসব ডাটা পাঠাচ্ছে তাতে অনেক ডাটাই সঠিক আসছে না। এজন্য বারবার ডাটা চাওয়া হচ্ছে, যাচাই বাছাই করতে হচ্ছে। আবার সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতেও কিছুটা জটিলতা হচ্ছে, সময় লাগছে।’
তিনি আশা করেন, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে ৩৫টি জেলায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ করা সম্ভব হবে। এরপর বাকি জেলাগুলোতেও শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হবে।
সরকার স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবিত ‘ফাইজার’র টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ের অর্থাৎ ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়। এরপর গত ১ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীতে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়।
মাউশি জানিয়েছে, ঢাকায় টিকাদানের লক্ষে মাউশির পক্ষ্য থেকে ইতোমধ্যে চার লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য সরকারের আইসিটি ও স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে, এসব শিক্ষার্থীর নিবন্ধন চলমান রয়েছে। এছাড়াও মাদ্রাসা ও কারিগরি কলেজের শিক্ষার্থী মিলিয়ে ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখের মতো হতে পারে বলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামসুল হক সম্প্রতি এক বুলেটিনে বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের (১২-১৭ বছর বয়সী) এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নেই, তারা বার্থ রেজিস্ট্রেশন বা জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে এ তালিকায় (টিকাদান কর্মসূচি) অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।