করোনাকালে দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বেড়েছে সরকারি পরিসংখ্যান

সরকারি হিসাবেই করোনাকালে দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বেড়েছে। গত এক বছরে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে তিন হাজার ২৮৭টি। শতাংশের হারে এক বছরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে এক বছরে ধর্ষণ ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং নির্যাতন ১৫ দশমিক ০৬ শতাংশ বেড়েছে।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে নারী নির্যাতনের এই চিত্র উঠে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের গত ৩০ জুন পর্যন্ত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের এই তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা বেশি হয়েছে। তবে হত্যাকা-, ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে মামলা কিছুটা কমেছে। সার্বিকভাবে, এক বছরে মামলার পরিমাণ কমেছে ৯১ হাজারের বেশি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মোট ঘটনা ছিল ২১ হাজার ৭৮৯টি; যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ১৮ হাজার ৫০২টি। সে হিসাবে মহামারীতে এক বছরে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে তিন হাজার ২৮৭টি। শতাংশের হিসাবে এক বছরে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, গত অর্থবছরে ধর্ষণ মামলা ছিল পাঁচ হাজার ৮৪২টি, এ বছরে হয়েছে সাত হাজার ২২২টি। অর্থাৎ এক বছরে ধর্ষণের মামলা বেড়েছে এক হাজার ৩৮০টি। আর গত অর্থবছরে দেশে নারী নির্যাতনের মামলা ছিল ১২ হাজার ৬৬০টি, এবার বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫৬৭টি। অর্থাৎ এক বছরে নারী নির্যাতনের ঘটনা এক হাজার ৯০৭টি বেড়েছে।

নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়লেও অন্য অপরাধ কিছুটা কমেছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘গত অর্থবছরে মোট মামলার সংখ্যা ছিল ছয় লাখ ৬১ হাজার। চলতি অর্থবছরের শেষে এসে দেখা যায়, পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬২টি মামলা হয়েছে। মামলা কমেছে প্রায় ৯১ হাজার।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত অর্থবছরে ডাকাতির মামলা ছিল ৩৩৬টি, এ বছরে হয়েছে ৩২১টি। মামলা কমেছে ১৫টি। রাহাজানির মামলা ছিল ৯১৯টি, এ বছরে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪৮টি। অস্ত্র আইনে মামলা ছিল দুই হাজার ১৬৭টি; এ বছর এক হাজার ৭৪৭টি। খুনের মামলা ছিল তিন হাজার ৪৮৫টি, এ বছর খুন হয়েছেন তিন হাজার ৪৫৮টি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সচিব জানান, ৩০ জুন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রিপোর্ট সরকারের কাছে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ছয় লাখ ৬১ হাজার মামলা ছিল উল্লেখ করে সচিব বলেন, যা গত জুন মাসের শেষে কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬২টিতে। এই হিসাবে এক বছরে প্রায় ৯১ হাজারের মতো মামলা কমেছে।

মামলা কমার কারণ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে নিষ্পত্তি বাড়ায় এক বছরে মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর ডিজিটাল কোর্ট হওয়ার ফলে আইনজীবী যারা আছেন, তারা বাসা থেকে বা এক শহর থেকে অন্য শহরে থাকলেও তারা অনলাইনে মামলাগুলো পরিচালনা করতে পারছেন, তাই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেছে।’

মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

করোনাকালে দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বেড়েছে সরকারি পরিসংখ্যান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সরকারি হিসাবেই করোনাকালে দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বেড়েছে। গত এক বছরে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে তিন হাজার ২৮৭টি। শতাংশের হারে এক বছরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে এক বছরে ধর্ষণ ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং নির্যাতন ১৫ দশমিক ০৬ শতাংশ বেড়েছে।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে নারী নির্যাতনের এই চিত্র উঠে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের গত ৩০ জুন পর্যন্ত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের এই তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা বেশি হয়েছে। তবে হত্যাকা-, ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে মামলা কিছুটা কমেছে। সার্বিকভাবে, এক বছরে মামলার পরিমাণ কমেছে ৯১ হাজারের বেশি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মোট ঘটনা ছিল ২১ হাজার ৭৮৯টি; যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ১৮ হাজার ৫০২টি। সে হিসাবে মহামারীতে এক বছরে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে তিন হাজার ২৮৭টি। শতাংশের হিসাবে এক বছরে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, গত অর্থবছরে ধর্ষণ মামলা ছিল পাঁচ হাজার ৮৪২টি, এ বছরে হয়েছে সাত হাজার ২২২টি। অর্থাৎ এক বছরে ধর্ষণের মামলা বেড়েছে এক হাজার ৩৮০টি। আর গত অর্থবছরে দেশে নারী নির্যাতনের মামলা ছিল ১২ হাজার ৬৬০টি, এবার বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫৬৭টি। অর্থাৎ এক বছরে নারী নির্যাতনের ঘটনা এক হাজার ৯০৭টি বেড়েছে।

নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়লেও অন্য অপরাধ কিছুটা কমেছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘গত অর্থবছরে মোট মামলার সংখ্যা ছিল ছয় লাখ ৬১ হাজার। চলতি অর্থবছরের শেষে এসে দেখা যায়, পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬২টি মামলা হয়েছে। মামলা কমেছে প্রায় ৯১ হাজার।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত অর্থবছরে ডাকাতির মামলা ছিল ৩৩৬টি, এ বছরে হয়েছে ৩২১টি। মামলা কমেছে ১৫টি। রাহাজানির মামলা ছিল ৯১৯টি, এ বছরে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪৮টি। অস্ত্র আইনে মামলা ছিল দুই হাজার ১৬৭টি; এ বছর এক হাজার ৭৪৭টি। খুনের মামলা ছিল তিন হাজার ৪৮৫টি, এ বছর খুন হয়েছেন তিন হাজার ৪৫৮টি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সচিব জানান, ৩০ জুন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রিপোর্ট সরকারের কাছে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ছয় লাখ ৬১ হাজার মামলা ছিল উল্লেখ করে সচিব বলেন, যা গত জুন মাসের শেষে কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬২টিতে। এই হিসাবে এক বছরে প্রায় ৯১ হাজারের মতো মামলা কমেছে।

মামলা কমার কারণ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে নিষ্পত্তি বাড়ায় এক বছরে মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর ডিজিটাল কোর্ট হওয়ার ফলে আইনজীবী যারা আছেন, তারা বাসা থেকে বা এক শহর থেকে অন্য শহরে থাকলেও তারা অনলাইনে মামলাগুলো পরিচালনা করতে পারছেন, তাই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেছে।’