মানব পাচারকারী চক্র লিবিয়ার গোপন আস্তানায় (টর্চার সেলে) ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক যুবকদের আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন করছে। ওই নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও মোবাইলে নির্যাতনের শব্দ বাড়িতে বাবা মায়ের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করছে।
মুক্তিপণের টাকা যারা দিতে অস্বীকার করছেন, তাদের লিবিয়ার টর্চার সেল থেকে তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকেই ট্রলারযোগে উত্তাল সাগর পার হতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন।
গত কয়েক বছরে মাদারীপুর জেলাসহ আশপাশের এলাকার ১শ’র বেশি যুবক ইউরোপে যাওয়ার সময় সাগরে ডুবে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে ইউরোপে যাওয়ার পথে মাদারীপুর জেলার আরও দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মানব পাচারকারী দালাল চক্র তাদের পরিবারের কাছ থেকে নির্যাতনের শব্দ মুঠোফোনে শুনিয়ে ১০ লাখ টাকা করে নেয়ার পর তাদের সাগরে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছেন বলে পরিবার অভিযোগ করেছেন।
পরিবারের দাবি, সরকার যেন, ছেলের লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন। ছেলের দাফনটা বাড়িতেই করতে চান পরিবার। এ আকুতি করে কান্না করছেন পরিবারের সদস্যরা। এলাকা জুড়ে এখন শোকের মাতম। এর আগেও গত জুলাই মাসে মাদারীপুরের আরও পাঁচ যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক বছরে শুধু মাদারীপুরসহ আশপাশের এলাকায় ১শ’ জন ভূমধ্যসাগর পারাপারের সময় ডুবে মারা গেছেন।
মাদারীপুর থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম খাগদী এলাকার আবুল কালাম খানের ছেলে সাব্বির খান। উন্নত জীবনের আশায় দালালকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্য রওনা হন। পরিবারের দাবি, কয়েক দফায় সাব্বিরকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। একই ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার বড়াইলবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে সাকিব তালুকদারের (২০) ক্ষেত্রেও। তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবিতে মাদারীপুরের ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
গত শনিবার রাতে পরিবারের লোকজন জানতে পারে দুইজনই লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে শনিবার রাত আনুমানিক ৯টার (বাংলাদেশি সময়) দিকে ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবিতে মারা গেছেন সাব্বির ও সাকিব।
গত রোববার সকালে দুই তরুণের মৃত্যুর খবর বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে আসলে দুই পরিবারেই শুরু হয় শোকের মাতম। এই ঘটনায় দালালদের বিচার দাবি করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহতের স্বজনরা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম খাগদী গ্রামের সাব্বির খান ও বড়াইলবাড়ী গ্রামের সাকিব তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন ৬ মাস আগে ইতালি যাবার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়।
ইতালি যাওয়ার জন্য সদর উপজেলার চর-নাচনা গ্রামের দালালচক্রের সক্রিয় সদস্য সেকেন মোড়লের ছেলে আতিবর মোড়ল ও কাশেম মোড়ল এবং বড়াইলবাড়ী গ্রামের কবির মীরার ছেলে সবুজ মীরা ও সুমন আহমেদ ইতালি নেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের পরিবারের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা করে নেয়।
নিহত সাব্বিরের বাবা আবুল কালাম খান জানান, আমার ছেলেকে লিবিয়ায় গত ৬ মাস আটকে রেখে দালালরা কয়েক দফায় আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। টাকা না দিলে ওরা আমার ছেলেকে লিবিয়াতে আটকে রেখে নির্যাতন করতো। নির্যাতনের কল রেকর্ড বাবা মাকে শুনিয়ে কয়েক দফায় ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। আরো ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল।
ছেলেকে বাঁচনোর জন্য পরিবারের সদস্যরা দালালদের বলেছে, ইতালি পৌঁছে দিলে বাকি টাকা দেবো। সব টাকা না দেয়ায় ওরা আমার ছেলেকে ভূমধ্যসাগরে ফেলে দিয়ে ইচ্ছে করেই মেরে ফেলেছে, বলে ধারণা করছেন পরিবার।
নিহত সাকিবের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, তার ছেলেকে ওরা জোর করে ট্রলারে তুলে দিয়েছে। সেই ট্রলার ডুবেই মারা গেছে। সরকারের কাছে আমার দাবি, আমার ছেলের লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়। আমার ছেলের দাফনটা আমার বাড়িতেই করতে চাই।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, আমারা বিভিন্ন সময়ে মানব পাচারকারী এই চক্রের হোতাদের গ্রেপ্তার করেছি। তবে, এই ঘটনায় যদি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়, তাহলে ওই সব দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে ১৭ বাংলাদেশির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জনের বাড়ি মাদারীপুরে। এই পাঁচজন হলেন রাজৈর উপজেলার জিন্নাত শেখ (২৫), সাধন মল্লিক (১৯), হৃদয় কাজী (২১), সাগর শিকদার (২২) ও মো. সাকিল (১৮)।
নিহত তরুণদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে দালালদের মাধ্যমে লিবিয়া পৌঁছান তারা। লিবিয়ায় প্রায় আড়াই মাস একটি টর্চার সেলে তাদের আটকে রাখার পর তাদের ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ভূমধ্যসাগরের মাঝ পথে তাদের সলিলসমাধি হয়।
দেড় বছরে ৩৮ মামলা :
মাদারীপুরের পাঁচটি থানায় গত দেড় বছরে মানবপাচার আইনে ৩৮টি মামলা হলেও দালাল চক্রের মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকেই আবার জামিনে বের হয়ে এই চক্রে জড়িয়ে পড়ছে।
জেলা পুলিশের সূত্র বলছে, ৩৮টি মামলায় ১৯৬ জনকে আসামি করা হলেও গ্রেপ্তার হয়েছে ৪২ জন। ৩৮টি মামলার মধ্যে ২০টি মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ২০টির মধ্যে ১০টি মামলা আদালতেই নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি ১৮টির মধ্যে এখনও তদন্ত পর্যায়ে আছে ৮টি মামলা। ১০টি মামলার অধিকতর তদন্ত করছেন সিআইডি পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের ধরা হবে। এরপরও দেখা যায় ভুক্তভোগীরা মামলা দিতে আসতে চান না। মামলা করতে গড়িমসি করছেন।
গতকাল ইমিগ্রেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ইউরোপে মানবপাচার ঠেকাতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরপরও অনেকেই নানাভাবে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারত ও দুবাইতে যান। সেখান থেকে তারা লিবিয়া হয়ে ইউরোপে সাগরপথে পাড়ি দেন। তখন সমুদ্রে ডুবে মারা যান।
অনেক সময় সন্তানকে অবৈধভাবে বিদেশ পাঠাতে পরিবার সহায়তা করে। তারা যেনে-শুনে ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে যেতে চায়। তখন পথে-পথে হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন বিমান বন্দরে আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এ দিকে মানবপাচার প্রতিরোধে সিআইডি ও র্যাবের পক্ষ থেকে কাজ করছেন। মানবপাচার প্রতিরোধে ও পাচারকারী চক্রকে গ্রেপ্তারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। সিআইডির বিশেষ টিম মানবপাচারের একাধিক মামলা তদন্ত করছেন। অনেক মামলার আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন।
মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৩
বাকী বিল্লাহ, ঢাকা ও রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর
মানব পাচারকারী চক্র লিবিয়ার গোপন আস্তানায় (টর্চার সেলে) ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক যুবকদের আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন করছে। ওই নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও মোবাইলে নির্যাতনের শব্দ বাড়িতে বাবা মায়ের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করছে।
মুক্তিপণের টাকা যারা দিতে অস্বীকার করছেন, তাদের লিবিয়ার টর্চার সেল থেকে তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকেই ট্রলারযোগে উত্তাল সাগর পার হতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন।
গত কয়েক বছরে মাদারীপুর জেলাসহ আশপাশের এলাকার ১শ’র বেশি যুবক ইউরোপে যাওয়ার সময় সাগরে ডুবে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে ইউরোপে যাওয়ার পথে মাদারীপুর জেলার আরও দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মানব পাচারকারী দালাল চক্র তাদের পরিবারের কাছ থেকে নির্যাতনের শব্দ মুঠোফোনে শুনিয়ে ১০ লাখ টাকা করে নেয়ার পর তাদের সাগরে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছেন বলে পরিবার অভিযোগ করেছেন।
পরিবারের দাবি, সরকার যেন, ছেলের লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন। ছেলের দাফনটা বাড়িতেই করতে চান পরিবার। এ আকুতি করে কান্না করছেন পরিবারের সদস্যরা। এলাকা জুড়ে এখন শোকের মাতম। এর আগেও গত জুলাই মাসে মাদারীপুরের আরও পাঁচ যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক বছরে শুধু মাদারীপুরসহ আশপাশের এলাকায় ১শ’ জন ভূমধ্যসাগর পারাপারের সময় ডুবে মারা গেছেন।
মাদারীপুর থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম খাগদী এলাকার আবুল কালাম খানের ছেলে সাব্বির খান। উন্নত জীবনের আশায় দালালকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্য রওনা হন। পরিবারের দাবি, কয়েক দফায় সাব্বিরকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। একই ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার বড়াইলবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে সাকিব তালুকদারের (২০) ক্ষেত্রেও। তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবিতে মাদারীপুরের ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
গত শনিবার রাতে পরিবারের লোকজন জানতে পারে দুইজনই লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে শনিবার রাত আনুমানিক ৯টার (বাংলাদেশি সময়) দিকে ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবিতে মারা গেছেন সাব্বির ও সাকিব।
গত রোববার সকালে দুই তরুণের মৃত্যুর খবর বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে আসলে দুই পরিবারেই শুরু হয় শোকের মাতম। এই ঘটনায় দালালদের বিচার দাবি করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহতের স্বজনরা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম খাগদী গ্রামের সাব্বির খান ও বড়াইলবাড়ী গ্রামের সাকিব তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন ৬ মাস আগে ইতালি যাবার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়।
ইতালি যাওয়ার জন্য সদর উপজেলার চর-নাচনা গ্রামের দালালচক্রের সক্রিয় সদস্য সেকেন মোড়লের ছেলে আতিবর মোড়ল ও কাশেম মোড়ল এবং বড়াইলবাড়ী গ্রামের কবির মীরার ছেলে সবুজ মীরা ও সুমন আহমেদ ইতালি নেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের পরিবারের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা করে নেয়।
নিহত সাব্বিরের বাবা আবুল কালাম খান জানান, আমার ছেলেকে লিবিয়ায় গত ৬ মাস আটকে রেখে দালালরা কয়েক দফায় আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। টাকা না দিলে ওরা আমার ছেলেকে লিবিয়াতে আটকে রেখে নির্যাতন করতো। নির্যাতনের কল রেকর্ড বাবা মাকে শুনিয়ে কয়েক দফায় ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। আরো ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল।
ছেলেকে বাঁচনোর জন্য পরিবারের সদস্যরা দালালদের বলেছে, ইতালি পৌঁছে দিলে বাকি টাকা দেবো। সব টাকা না দেয়ায় ওরা আমার ছেলেকে ভূমধ্যসাগরে ফেলে দিয়ে ইচ্ছে করেই মেরে ফেলেছে, বলে ধারণা করছেন পরিবার।
নিহত সাকিবের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, তার ছেলেকে ওরা জোর করে ট্রলারে তুলে দিয়েছে। সেই ট্রলার ডুবেই মারা গেছে। সরকারের কাছে আমার দাবি, আমার ছেলের লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়। আমার ছেলের দাফনটা আমার বাড়িতেই করতে চাই।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, আমারা বিভিন্ন সময়ে মানব পাচারকারী এই চক্রের হোতাদের গ্রেপ্তার করেছি। তবে, এই ঘটনায় যদি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়, তাহলে ওই সব দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে ১৭ বাংলাদেশির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জনের বাড়ি মাদারীপুরে। এই পাঁচজন হলেন রাজৈর উপজেলার জিন্নাত শেখ (২৫), সাধন মল্লিক (১৯), হৃদয় কাজী (২১), সাগর শিকদার (২২) ও মো. সাকিল (১৮)।
নিহত তরুণদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে দালালদের মাধ্যমে লিবিয়া পৌঁছান তারা। লিবিয়ায় প্রায় আড়াই মাস একটি টর্চার সেলে তাদের আটকে রাখার পর তাদের ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ভূমধ্যসাগরের মাঝ পথে তাদের সলিলসমাধি হয়।
দেড় বছরে ৩৮ মামলা :
মাদারীপুরের পাঁচটি থানায় গত দেড় বছরে মানবপাচার আইনে ৩৮টি মামলা হলেও দালাল চক্রের মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকেই আবার জামিনে বের হয়ে এই চক্রে জড়িয়ে পড়ছে।
জেলা পুলিশের সূত্র বলছে, ৩৮টি মামলায় ১৯৬ জনকে আসামি করা হলেও গ্রেপ্তার হয়েছে ৪২ জন। ৩৮টি মামলার মধ্যে ২০টি মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ২০টির মধ্যে ১০টি মামলা আদালতেই নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি ১৮টির মধ্যে এখনও তদন্ত পর্যায়ে আছে ৮টি মামলা। ১০টি মামলার অধিকতর তদন্ত করছেন সিআইডি পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের ধরা হবে। এরপরও দেখা যায় ভুক্তভোগীরা মামলা দিতে আসতে চান না। মামলা করতে গড়িমসি করছেন।
গতকাল ইমিগ্রেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ইউরোপে মানবপাচার ঠেকাতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরপরও অনেকেই নানাভাবে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারত ও দুবাইতে যান। সেখান থেকে তারা লিবিয়া হয়ে ইউরোপে সাগরপথে পাড়ি দেন। তখন সমুদ্রে ডুবে মারা যান।
অনেক সময় সন্তানকে অবৈধভাবে বিদেশ পাঠাতে পরিবার সহায়তা করে। তারা যেনে-শুনে ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে যেতে চায়। তখন পথে-পথে হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন বিমান বন্দরে আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এ দিকে মানবপাচার প্রতিরোধে সিআইডি ও র্যাবের পক্ষ থেকে কাজ করছেন। মানবপাচার প্রতিরোধে ও পাচারকারী চক্রকে গ্রেপ্তারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। সিআইডির বিশেষ টিম মানবপাচারের একাধিক মামলা তদন্ত করছেন। অনেক মামলার আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন।