হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের
গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হয়নি। তাই এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রী ও বাস স্টাফদের মধ্যে বাগবিত-া হচ্ছে। ওয়েবিলের মাধ্যমে স্বল্প দূরত্বে যাত্রীদের কাছ থেকেও বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সর্বনি¤œ ১০ টাকা, একটু দূরত্বে নেয়া হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের এই নৈরাজ্যের প্রতিবাদে হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকালও রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও সায়েন্সল্যাবসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে ছাত্রছাত্রীরা।
অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার দায়ে গতকাল ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে অভিযান চালিয়ে ৫৬টি বাসকে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বাস কোম্পানি ওয়েবিলের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া করছে। সিটিং সার্ভিসের নামের আগে যে ভাড়া নেয়া হতো বর্তমানে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করেও একই ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হলেও কোন কোন রুটে এখনও সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে বাস স্টাফদের তর্কবিতর্ক হচ্ছে। অনেক বাস ভাড়া চার্ট টানানো থাকলেও সেই অনুপাতে ভাড়া নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ওসমান গনি নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে যেসব গাড়ি সাইনবোর্ড, শনিরআখড়া, কাঁচপুর ও ডেমরা রুটে চলাচল করে সব বাসেই সর্ব নি¤œভাড়া নেয়া হয় ২৫-৩০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। ওয়েবিলের কারণে গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ীর ভাড়া নেয়া হয় ৩০ টাকা। অথচ যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের কম। ওয়েবিলের কারণে বেশি ও স্বল্প দূরত্বে যাত্রীদের কাছ থেকে একই ভাড়া আদায় করছে তারা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করা হলে বাস স্টাফরা দুর্ব্যবহার করে বলে জানান তিনি।
হাফ ভাড়া দাবি সড়ক অবরোধ
বাসে অর্ধেক ভাড়া বা হাফ পাস চালুর দাবিতে গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে সায়েন্সল্যাব মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর দু’টার দিকে দাবি মানার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয় বলে পুলিশ সূত্র জানায়।
গতকাল বেলা পৌনে ১১টা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের আল্লাহ করিম জামে মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা হাফ পাস ভাড়ার দাবিতে স্লোগান দেয়। শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় বাসস্ট্যান্ডের তিন দিকের সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে প্রচ- যানজটের সৃষ্টি হয় ওই এলাকায়। তবে ওষুধ কোম্পানির গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়ি চলাচল করতে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর দুটার দিকে স্থানীয় ছাত্রলীগের পক্ষ দাবি মানার আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. মাছুদুল আলম বলেন, ‘দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করা হয়েছে। পরে স্থান ফাঁকা করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।’
ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় বাস আটকে রাখে ঢাকা কলেজে
গতকাল সোমবার বিকেলে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় তরঙ্গ প্লাস কোম্পানির দুটি বাস আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা।
মারধরের শিকার ঢাকা কলেজের ওই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার সকাল দশটার দিকে সাত কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় শাহবাগ এলাকায় তরঙ্গ প্লাস বাসের হেলপারের মারধরের শিকার হন তিনি। তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাইলে তার কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন বাসের হেলপার। পরে ভাড়ার তালিকা দেখতে চাইলে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন হেলপার। একপর্যায়ে মারধর করে আমার টি-শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন।’
তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে আমি বাস থেকে নেমে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ বক্সে জানাই। এরপর কলেজে এসে ছেঁড়া টি-শার্ট গায়েই পরীক্ষা দিই। তাদের মারধরের কারণে আমার চোখের নিচে ও হাতে ব্যথা পেয়েছি। কয়েক জায়গায় কেটেও গিয়েছে।’
বিষয়টি সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আটক হওয়া দুই বাসের চালক ও সহকারীরা। বাসের চালক রায়হান বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে সায়েন্সল্যাব মোড় দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিছু ছাত্র গাড়িতে উঠে যাত্রী নামিয়ে গাড়ি ঘোরাতে বলে। পরে ঢাকা কলেজের পাশের নায়েমের গলিতে এনে গাড়ি থামিয়ে বসে থাকতে বলে। এখন গাড়ি নিয়ে এখানেই বসে আছি। আমরা কিছু জানি না। বিষয়টি আমরা মালিকপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আসছেন। এলে হয়তো আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হবে।
মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৩
হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হয়নি। তাই এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রী ও বাস স্টাফদের মধ্যে বাগবিত-া হচ্ছে। ওয়েবিলের মাধ্যমে স্বল্প দূরত্বে যাত্রীদের কাছ থেকেও বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সর্বনি¤œ ১০ টাকা, একটু দূরত্বে নেয়া হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের এই নৈরাজ্যের প্রতিবাদে হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকালও রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও সায়েন্সল্যাবসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে ছাত্রছাত্রীরা।
অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার দায়ে গতকাল ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে অভিযান চালিয়ে ৫৬টি বাসকে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বাস কোম্পানি ওয়েবিলের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া করছে। সিটিং সার্ভিসের নামের আগে যে ভাড়া নেয়া হতো বর্তমানে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করেও একই ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হলেও কোন কোন রুটে এখনও সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে বাস স্টাফদের তর্কবিতর্ক হচ্ছে। অনেক বাস ভাড়া চার্ট টানানো থাকলেও সেই অনুপাতে ভাড়া নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ওসমান গনি নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে যেসব গাড়ি সাইনবোর্ড, শনিরআখড়া, কাঁচপুর ও ডেমরা রুটে চলাচল করে সব বাসেই সর্ব নি¤œভাড়া নেয়া হয় ২৫-৩০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। ওয়েবিলের কারণে গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ীর ভাড়া নেয়া হয় ৩০ টাকা। অথচ যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের কম। ওয়েবিলের কারণে বেশি ও স্বল্প দূরত্বে যাত্রীদের কাছ থেকে একই ভাড়া আদায় করছে তারা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করা হলে বাস স্টাফরা দুর্ব্যবহার করে বলে জানান তিনি।
হাফ ভাড়া দাবি সড়ক অবরোধ
বাসে অর্ধেক ভাড়া বা হাফ পাস চালুর দাবিতে গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে সায়েন্সল্যাব মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর দু’টার দিকে দাবি মানার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয় বলে পুলিশ সূত্র জানায়।
গতকাল বেলা পৌনে ১১টা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের আল্লাহ করিম জামে মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা হাফ পাস ভাড়ার দাবিতে স্লোগান দেয়। শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় বাসস্ট্যান্ডের তিন দিকের সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে প্রচ- যানজটের সৃষ্টি হয় ওই এলাকায়। তবে ওষুধ কোম্পানির গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়ি চলাচল করতে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর দুটার দিকে স্থানীয় ছাত্রলীগের পক্ষ দাবি মানার আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. মাছুদুল আলম বলেন, ‘দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করা হয়েছে। পরে স্থান ফাঁকা করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।’
ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় বাস আটকে রাখে ঢাকা কলেজে
গতকাল সোমবার বিকেলে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় তরঙ্গ প্লাস কোম্পানির দুটি বাস আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা।
মারধরের শিকার ঢাকা কলেজের ওই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার সকাল দশটার দিকে সাত কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় শাহবাগ এলাকায় তরঙ্গ প্লাস বাসের হেলপারের মারধরের শিকার হন তিনি। তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাইলে তার কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন বাসের হেলপার। পরে ভাড়ার তালিকা দেখতে চাইলে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন হেলপার। একপর্যায়ে মারধর করে আমার টি-শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন।’
তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে আমি বাস থেকে নেমে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ বক্সে জানাই। এরপর কলেজে এসে ছেঁড়া টি-শার্ট গায়েই পরীক্ষা দিই। তাদের মারধরের কারণে আমার চোখের নিচে ও হাতে ব্যথা পেয়েছি। কয়েক জায়গায় কেটেও গিয়েছে।’
বিষয়টি সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আটক হওয়া দুই বাসের চালক ও সহকারীরা। বাসের চালক রায়হান বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে সায়েন্সল্যাব মোড় দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিছু ছাত্র গাড়িতে উঠে যাত্রী নামিয়ে গাড়ি ঘোরাতে বলে। পরে ঢাকা কলেজের পাশের নায়েমের গলিতে এনে গাড়ি থামিয়ে বসে থাকতে বলে। এখন গাড়ি নিয়ে এখানেই বসে আছি। আমরা কিছু জানি না। বিষয়টি আমরা মালিকপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আসছেন। এলে হয়তো আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হবে।