স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণায় এমপি টুকু বাধা দিচ্ছেন কিনা, জানতে চায় হাইকোর্ট

পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা বাধাগ্রস্ত করছেন কিনা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাবনা জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। গতকাল বেড়া পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও টুকুর ভাই মো. আবদুল বাতেনের দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আবদুল বাতেনের পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. খুরশিদ আলম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন, অ্যাড. খুরশিদ আলম খান ও মুহাম্মদ সাইফুল আলম। অ্যাড. সাইফুল আলম জানান, বেড়া পৌর নির্বাচনে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর বড় ছেলে আসিফ শামস রঞ্জন নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন। নিজের ছেলেকে জেতাতে সংসদ সদস্য টুকু আচরণ বিধি ভেঙে এলাকায় অবস্থান করে নির্বাচনী সভায় অংশ নিচ্ছেন।

স্থানীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই জানিয়ে নির্বাচন কমিশন গত ১৪ নভেম্বর চিঠি দেয়ার পরেও তিনি এলাকা ছাড়েননি। নির্বাচনী সভায় তার উপস্থিতিতে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আবদুল বাতেনের সমর্থক ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এমনকি তিনি নিজেও আবদুল বাতেনের সমর্থকদের দয়ামায়া না করে পিষে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। যার ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে হাইকোর্ট বেড়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমানকে গত ১৪ নভেম্বর সংসদ সদস্য টুকুকে এলাকা ত্যাগের অনুরোধে দেয়া পত্রের অগ্রগতি সম্পর্কে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৫ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

পাশাপাশি সংসদ সদস্য টুকু ও তার ছেলের সমর্থকদের ধারাবাহিক হুমকি ও হামলায় আবদুল বাতেন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তা চেয়ে তার আবেদনের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান সাইফুল ইসলাম।

পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সংসদ সদস্য টুকুর ছোট ভাই আবদুুল বাতেন, বড় ভাইয়ের মেয়ে এস এম সাদিয়া আলম, এইচ এম ফজলুর রহমান মাসুদ ও কে এম আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় সংসদ সদস্য টুকুকে নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে যাবার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৪ নভেম্বর চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তিনি অসুস্থতার অজুহাতে এলাকা না ছাড়লেও, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকাশ্যে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশকে প্রভাবিত করছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানের বিষয়ে সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাকে চিঠি দিয়ে বলেছে যে, ‘আমি যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলি, আর সম্ভব হলে যেন এলাকার বাইরে থাকি।’ কিন্তু আমি তো এলাকার মানুষ, আমি যাব কোথায়? আমি এখানকার ভোটার। আমি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কোন কাজ করছি না।’ বেড়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনার পত্র হাতে এসে পৌঁছলে আমরা আদালতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই উত্তর জানাব। প্রার্থীদের নিরাপত্তার আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশকে জানানো হয়েছে।

পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, প্রার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে জেলা পুলিশ যা যা করণীয় তাই করবে।

মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

ব্ড়ো পৌর নির্বাচন

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণায় এমপি টুকু বাধা দিচ্ছেন কিনা, জানতে চায় হাইকোর্ট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা বাধাগ্রস্ত করছেন কিনা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাবনা জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। গতকাল বেড়া পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও টুকুর ভাই মো. আবদুল বাতেনের দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আবদুল বাতেনের পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. খুরশিদ আলম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন, অ্যাড. খুরশিদ আলম খান ও মুহাম্মদ সাইফুল আলম। অ্যাড. সাইফুল আলম জানান, বেড়া পৌর নির্বাচনে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর বড় ছেলে আসিফ শামস রঞ্জন নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন। নিজের ছেলেকে জেতাতে সংসদ সদস্য টুকু আচরণ বিধি ভেঙে এলাকায় অবস্থান করে নির্বাচনী সভায় অংশ নিচ্ছেন।

স্থানীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই জানিয়ে নির্বাচন কমিশন গত ১৪ নভেম্বর চিঠি দেয়ার পরেও তিনি এলাকা ছাড়েননি। নির্বাচনী সভায় তার উপস্থিতিতে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আবদুল বাতেনের সমর্থক ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এমনকি তিনি নিজেও আবদুল বাতেনের সমর্থকদের দয়ামায়া না করে পিষে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। যার ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে হাইকোর্ট বেড়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমানকে গত ১৪ নভেম্বর সংসদ সদস্য টুকুকে এলাকা ত্যাগের অনুরোধে দেয়া পত্রের অগ্রগতি সম্পর্কে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৫ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

পাশাপাশি সংসদ সদস্য টুকু ও তার ছেলের সমর্থকদের ধারাবাহিক হুমকি ও হামলায় আবদুল বাতেন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তা চেয়ে তার আবেদনের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান সাইফুল ইসলাম।

পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সংসদ সদস্য টুকুর ছোট ভাই আবদুুল বাতেন, বড় ভাইয়ের মেয়ে এস এম সাদিয়া আলম, এইচ এম ফজলুর রহমান মাসুদ ও কে এম আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় সংসদ সদস্য টুকুকে নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে যাবার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৪ নভেম্বর চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তিনি অসুস্থতার অজুহাতে এলাকা না ছাড়লেও, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকাশ্যে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশকে প্রভাবিত করছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানের বিষয়ে সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাকে চিঠি দিয়ে বলেছে যে, ‘আমি যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলি, আর সম্ভব হলে যেন এলাকার বাইরে থাকি।’ কিন্তু আমি তো এলাকার মানুষ, আমি যাব কোথায়? আমি এখানকার ভোটার। আমি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কোন কাজ করছি না।’ বেড়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনার পত্র হাতে এসে পৌঁছলে আমরা আদালতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই উত্তর জানাব। প্রার্থীদের নিরাপত্তার আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশকে জানানো হয়েছে।

পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, প্রার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে জেলা পুলিশ যা যা করণীয় তাই করবে।