দিনে তারা কেউ লেগুনা, অটোচালক, কেউ দোকানের কর্মচারী বা নির্মাণকর্মী। স্কুলের গ-ি পার হতে না পারা এ কিশোররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের একাধিক ভাষায় পারদর্শী হিসেবে পরিচয় দিতো। পাশাপাশি টিকটক ভিডিও বানাত। যেখানে সশস্ত্র চিত্র ধারণ করা হতো।

রাতে তারা ছিনতাইয়ে নেমে পড়তো। প্রায় ১৫-২০ জন মিলে গড়ে ওঠা এ চক্রটির সদস্যরা সবাই ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। গত দুই-তিন বছর ধরে রাজধানী মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, বসিলা ও রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র মহড়া দিতো। এছাড়া ভাড়ায় শোডাউন করতো চক্রটি।

গত সোমবার রাতে চক্রটির ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ভাইব্বা ল কিং গ্যাংয়ের প্রধান শরীফ ওরফে মোহন (১৮), সদস্য মো. উদয় (১৯), মো. শাকিল (১৯), মো. নয়ন (১৮), মো. জাহিদ (১৮), মো. নাঈম (১৪), মো. রুমান (১৮), মো. তামিম খাঁন (১৪) ও মো. সজীব (১৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি লোহার দেশীয় তৈরি ছুরি, একটি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, গাঁজা ৫০ পুরিয়া, দুটি স্টিলের ছুরি, একটি স্টিলের হোল্ডিং চাকু, একটি প্লাস্টিকের পিস্তল সদৃশ্য, ৬৫ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জাম এবং তিনটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানী ঢাকার বেশকিছু এলাকাকে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান ও বসিলা ও রায়েরবাজার এলাকা অন্যতম। এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকা- সম্পর্কে তথ্য পায় র‌্যাব। গত সোমবার রাত ৯টায় ঢাকা উদ্যানের সামনে থেকে র‌্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে ছিনতাইয়ের খপ্পরে পড়ার তথ্য জানিয়ে সহযোগিতা চান এক দম্পতি। র‌্যাব-২ এর গোয়েন্দা ও টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর রায়েরবাজার এলাকা থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই করা ভ্যানিটি ব্যাগ।

রাতেই র‌্যাবের টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে চাঁদ উদ্যানসংলগ্ন সাত মসজিদ হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং চক্রটির প্রধান মোহনসহ আরও পাঁচ সদস্যকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারাল অস্ত্র, পিস্তল সদৃশ্য ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সদস্য। চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। দলের লিডার মোহনের নেতৃত্বে দুই/তিন বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এরা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এ গ্রুপের সদস্যরা আগে লেবেল হাই গ্যাং-এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্তকোন্দলে যা ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও টিকটকে সক্রিয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের গ্যাং সংক্রান্ত বিভিন্ন ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রচারণা পাওয়া যায়, যেমন- ‘মোহাম্মদপুরের পোলাপান যা করি তা টোকেন ছাড়াই ওপেন’, ‘মোহাম্মদপুরের পোলা বাজান, আমি একাই একশ, গেঞ্জাম করার আগে ভাইব্বা লইও’।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, দুই/তিন বছর ধরে কিশোর গ্যাং চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি ও আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তারা ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তাররা জানায়, তাদের ভাষায় ‘ভাইব্বা ল কিং’ মানে তাদের সদস্যদের যেই অবস্থায় থাকুক না কেন তারা মোহাম্মদপুরের কিং। অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। তারা বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নিয়ে গ্রাহকদের টার্গেট করতো। ‘ভাইব্বা ল কিং’ চক্রটিকে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পেছন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করা হয়েছে। চক্রে জড়িত পলাতকসহ পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।