পতনের দ্বারপ্রান্তে আফগান ব্যাংকিং ব্যবস্থা : জাতিসংঘ

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক সংকটের ব্যাপারে আবারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, দেশটির অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। আর তাই মানবিক ও আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে আফগান ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

জরুরি পদক্ষেপ ছাড়া কয়েক মাসের মধ্যে আফগান ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেও সতর্কতা উচ্চারণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সোমবার নিউইয়র্কে বলেন, আফগানিস্তানের ক্রেডিট মার্কেটে অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ বহুগুণে বেড়েছে। দেশটিতে অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালে যেখানে ছিল শতকরা ২০ ভাগ, সেটি চলতি বছরে ৫৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনডিপি। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

ডুজারিক জানান, ইউএনডিপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- আফগানিস্তানের ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকরা তাদের পুঁজি তুলে ফেলছেন যা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ব্যাংকে জনগণের গচ্ছিত অর্থ শতকরা ৪০ ভাগ কমে যাবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মুখপাত্র আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের জন্য সাহায্যের আবেদনে যে সাড়া পাওয়া গেছে তাতে ৬০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল সংগৃহীত হয়েছে এবং এই অর্থ দিয়ে আফগানিস্তানের এক কোটি ১০ লাখ মানুষকে সেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আফগানিস্তানে আসন্ন শীতকালকে সামনে রেখে দেশটির দারিদ্র্য ও বেকারত্ব ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শীতকালে দেশটির কোন কোন এলাকার তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে চলে যায় এবং এ সময় সেখানকার মানুষের তেমন কোন কাজ থাকে না বললেই চলে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য বিশ্বের কোনো দেশই এখনও তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করেছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে এবং প্রচ- শীতের মধ্যে লাখ লাখ আফগান অনাহারের মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইরাস মহামারী, চলমান খাদ্য সংকট এবং শীত মৌসুমের শুরু আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে।

আফগানিস্তানকে ৩ কোটি ডলার

সহায়তা দেবে পাকিস্তান

আফগানিস্তানকে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারের মানবিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে চিকিৎসা, খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক চাহিদা মেটানোর জন্য এই অর্থ দিচ্ছে প্রতিবেশী পাকিস্তান। তাছাড়া পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় খাদ্য সহায়তা আফগানিস্তানে পরিবহনেরও অনুমোদন দিয়েছে ইমরান খানের সরকার। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ইমরান খান সোমবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আফগানিস্তানে পাঁচ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি অর্থাৎ দুই কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের মানবিক সহায়তা পাঠানোর নির্দেশ দেন। এসব সহায়তার মধে ৫০ হাজার টন গম, জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ, শীত নিবারণ সামগ্রী ও অন্যান্য সহায়তা রয়েছে। ইমরান খানের সঙ্গে দেশটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান সরকার আফগানিস্তানে পণ্য রপ্তানির ওপর শুল্ক কমিয়ে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ৩১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে টানা কয়েক মাস ধরে চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশটিতে গুলিতে, বোমা বিস্ফোরণে মারা যান শতাধিক মানুষ। ভিটেছাড়া হন বহু দোভাষী। ভেঙে পড়ে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা। এরই মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে নতুন সরকার গঠন করে তালেবান। তবে এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি তারা।

image

তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই ক্রমশ খারাপ হচ্ছে আফগানিস্তানের অর্থ ব্যবস্থা। টাকা তুলতে ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ লাইন -রয়টার্স

আরও খবর
বুলগেরিয়ায় চলন্ত বাসে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৫
১০০ দূষিত শহরের ৯৪টিই ভারত, চীন ও পাকিস্তানের
ইউক্রেন সংকটে পাশ্চাত্যকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি
২০২৪ সালের নির্বাচনেও লড়তে চান বাইডেন
ভারতে বন্যায় মৃত বেড়ে ৩৪

বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১ , ৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৩

পতনের দ্বারপ্রান্তে আফগান ব্যাংকিং ব্যবস্থা : জাতিসংঘ

image

তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই ক্রমশ খারাপ হচ্ছে আফগানিস্তানের অর্থ ব্যবস্থা। টাকা তুলতে ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ লাইন -রয়টার্স

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক সংকটের ব্যাপারে আবারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, দেশটির অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। আর তাই মানবিক ও আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে আফগান ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

জরুরি পদক্ষেপ ছাড়া কয়েক মাসের মধ্যে আফগান ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেও সতর্কতা উচ্চারণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সোমবার নিউইয়র্কে বলেন, আফগানিস্তানের ক্রেডিট মার্কেটে অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ বহুগুণে বেড়েছে। দেশটিতে অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালে যেখানে ছিল শতকরা ২০ ভাগ, সেটি চলতি বছরে ৫৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনডিপি। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

ডুজারিক জানান, ইউএনডিপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- আফগানিস্তানের ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকরা তাদের পুঁজি তুলে ফেলছেন যা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ব্যাংকে জনগণের গচ্ছিত অর্থ শতকরা ৪০ ভাগ কমে যাবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মুখপাত্র আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের জন্য সাহায্যের আবেদনে যে সাড়া পাওয়া গেছে তাতে ৬০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল সংগৃহীত হয়েছে এবং এই অর্থ দিয়ে আফগানিস্তানের এক কোটি ১০ লাখ মানুষকে সেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আফগানিস্তানে আসন্ন শীতকালকে সামনে রেখে দেশটির দারিদ্র্য ও বেকারত্ব ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শীতকালে দেশটির কোন কোন এলাকার তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে চলে যায় এবং এ সময় সেখানকার মানুষের তেমন কোন কাজ থাকে না বললেই চলে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য বিশ্বের কোনো দেশই এখনও তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করেছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে এবং প্রচ- শীতের মধ্যে লাখ লাখ আফগান অনাহারের মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইরাস মহামারী, চলমান খাদ্য সংকট এবং শীত মৌসুমের শুরু আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে।

আফগানিস্তানকে ৩ কোটি ডলার

সহায়তা দেবে পাকিস্তান

আফগানিস্তানকে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারের মানবিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে চিকিৎসা, খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক চাহিদা মেটানোর জন্য এই অর্থ দিচ্ছে প্রতিবেশী পাকিস্তান। তাছাড়া পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় খাদ্য সহায়তা আফগানিস্তানে পরিবহনেরও অনুমোদন দিয়েছে ইমরান খানের সরকার। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ইমরান খান সোমবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আফগানিস্তানে পাঁচ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি অর্থাৎ দুই কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের মানবিক সহায়তা পাঠানোর নির্দেশ দেন। এসব সহায়তার মধে ৫০ হাজার টন গম, জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ, শীত নিবারণ সামগ্রী ও অন্যান্য সহায়তা রয়েছে। ইমরান খানের সঙ্গে দেশটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান সরকার আফগানিস্তানে পণ্য রপ্তানির ওপর শুল্ক কমিয়ে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ৩১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে টানা কয়েক মাস ধরে চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশটিতে গুলিতে, বোমা বিস্ফোরণে মারা যান শতাধিক মানুষ। ভিটেছাড়া হন বহু দোভাষী। ভেঙে পড়ে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা। এরই মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে নতুন সরকার গঠন করে তালেবান। তবে এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি তারা।