আবুল কাসেম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
তেতাল্লিশ
ভালোবাসা হচ্ছে শুধুই যাতনা। মুরাসাকির উপন্যাসের এ কথাটা ইঝোমি বারবার মনে করছেন। পাঁচটি কবিতা যেন শুধুই কবিতা। দ্বিতীয় কবিতাটির দিকে চোখ গেল আবার। শিশির জীবন শীঘ্রই শেষ হতে যাচ্ছে/আত্মবিস্মরণে ঝুলে থাকা দীর্ঘ স্থবিরতা/দীর্ঘ প্রস্ফুটিত ক্রাই সানথ্যমম ফুল।
এসব কবিতার অর্থ কি? আরেকজনের সঙ্গে তার গোপন অন্তরঙ্গতা রয়েছে। সে নারী প্রদেশে চলে যাচ্ছে, তার জন্য কবিতা লিখে দিতে হবে। তিনি লিখতে পারছেন না? ওই নারীর জন্য তার অন্তরে কী ব্যথা তা ইঝোমি বুঝবেন কী করে। ব্যাপারটা সহ্য করা কঠিন। তবুও তিনি এ সময়ে প্রিন্সকে রাগাতে চাইলেন না। পরে প্রিন্সের লেখা পত্রটি আবার পড়লেন। লেখা আছে, ‘আমি তাকে একটি কবিতা পাঠাতে চাই; যা তার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করবে। তোমার লেখা সমস্ত কিছুই আমাকে স্পর্শ করে। ইঝোমি প্রথমে লিখলেন, আমি কীভাবে আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারি?
কবিতা :
আক্ষেপের অশ্রুতে
আপনার প্রতিচ্ছবি দীর্ঘকাল রবে
হিমেল শরৎ চলে যাবার পরেও।
টোকায় ইঝোমি লিখলেন, আপনার জায়গায় হৃদয়গ্রাহী পত্র লেখা আমার পক্ষে বেদনাদায়ক। মার্জিনে লিখলেন:
আপনাকে ছেড়ে সে কোথায় যাবে?
আমার জন্য আর কোনো জীবন নেই।
ব্যাপারটা ইঝোমির খুব খারাপই লাগলো। পত্র পাঠিয়ে নিজের জীবনের কথা ভাবলেন। বারবার ভালোবাসার কাছে প্রতারিত হয়েছেন তিনি। অন্যরকম কোনো পরিকল্পনা কি করবেন? এখন আর কী করবেন তিনি, পেছনের দিকে যাওয়া সম্ভব নয়। দেখা যাক। প্রিন্সের এক ভালোবাসা প্রদেশে চলে গেছে। এটা তার ভালোবাসার দুর্বল দিক, ঐশ্বর্যের দিক নয়।
তিনি কি তাকে পরীক্ষা করছেন? না হয়, কেউ নিজের গোপন সম্পর্কের কথা কি প্রিয়জনকে জানায়? দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন ইঝোমি। ইমনকে কি জানাবেন? না, তা ঠিক হবে না। নিজের দুর্বলতার কথা অন্যকে জানিয়ে লাভ কী। তার চেয়ে ভালো নীরবে সব সয়ে গিয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা, আর পর্যবেক্ষণ করা প্রিন্সের প্রতিক্রিয়া।
কোনো কথা গোপন থাকে না। তাকে এক মেজর জেনারেল জানালেন, প্রিন্স সানজু হতে যাচ্ছেন পরবর্তী সম্রাট। হেইয়ান আর্মি ইন্টেলিজেন্সের সংবাদ এটি। মিচিনাগার ঘন ঘন রেইঝেই-এর কাছে আসা যাওয়া সামুরাই সেনাদের কৌতূহল বাড়িয়ে দেয়। এদের কেউ বলেনি, পর্যবেক্ষণের আলামত বিশ্লেষণ করে এরা এ সিদ্ধান্তে এসেছে।
ইঝোমি ভাবলেন, তা হলে প্রিন্স অতসুমিচি কেন নয়? আগে হলে সরাসরি রেইঝেই এর কাছে চলে যেতেন এবং হাঁটু গেড়ে আবেদন জানাতেন। এখন রেইঝেই-এর কাছে তার সেই অবস্থাও নেই।
তিনি সরাসরি চলে গেলেন মিচিনাগার কাছে। মিচিনাগা তার আবদার শুনে হাসলেন। বললেন, তুমি এই আজগুবি কথা কোথায় শুনলে?
আমি যেখান থেকেই শুনি, আপনি প্রিন্স অতসুমিচিকেই সম্রাট করবেন, প্রিন্স সানজুকে নয়।
অতসুমিচি তোমাকে পাঠিয়েছে, না?
তিনি এখনো তা জানেনই না।
তুমি জানো কি করে?
সূত্র বলা যাবে না।
আগে জানতাম ভ্রমর ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়, তোমার বেলায় দেখছি ফুল ভ্রমরের দ্বারে দ্বারে ঘোরে।
কথা সত্য এবং একজন কবিই সত্য কথা বলতে পারে। শত বাধা সত্ত্বেও একজন নারী কবি সত্য কথা বলে। এখানে দোষ কোথায়? আপনিও কবি, কিন্তু সত্যটা বলতে কুণ্ঠিত। বলেই হাসলেন ইঝোমি।
তোমার প্রতিভা আছে। তা কাজে লাগালে না, শুধু ভোগ-উপভোগের দিকে ছুটে বেড়ালে।
ভোগের মধ্যেই আমি অস্তিত্ববান হতে চাই, দুর্ভোগ বা ত্যাগের মধ্যে নয়। আর ব্যক্তিটি পছন্দ করব আমি, কোনো পুরুষ নয়।
তোমার মঙ্গল হোক।
হতে দিলেন কোথায়? প্রিন্স সানজুকে ভবিষ্যৎ সম্রাট নির্বাচন করছেন।
এসব নিয়ে ভাববার সময় এখনো হয়নি।
ইঝোমি মিচিনাগার কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। সরাসরি প্রিন্স অতসুমিচির দরবারে চলে গেলেন।
ক্রমশ...
বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৩
আবুল কাসেম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
তেতাল্লিশ
ভালোবাসা হচ্ছে শুধুই যাতনা। মুরাসাকির উপন্যাসের এ কথাটা ইঝোমি বারবার মনে করছেন। পাঁচটি কবিতা যেন শুধুই কবিতা। দ্বিতীয় কবিতাটির দিকে চোখ গেল আবার। শিশির জীবন শীঘ্রই শেষ হতে যাচ্ছে/আত্মবিস্মরণে ঝুলে থাকা দীর্ঘ স্থবিরতা/দীর্ঘ প্রস্ফুটিত ক্রাই সানথ্যমম ফুল।
এসব কবিতার অর্থ কি? আরেকজনের সঙ্গে তার গোপন অন্তরঙ্গতা রয়েছে। সে নারী প্রদেশে চলে যাচ্ছে, তার জন্য কবিতা লিখে দিতে হবে। তিনি লিখতে পারছেন না? ওই নারীর জন্য তার অন্তরে কী ব্যথা তা ইঝোমি বুঝবেন কী করে। ব্যাপারটা সহ্য করা কঠিন। তবুও তিনি এ সময়ে প্রিন্সকে রাগাতে চাইলেন না। পরে প্রিন্সের লেখা পত্রটি আবার পড়লেন। লেখা আছে, ‘আমি তাকে একটি কবিতা পাঠাতে চাই; যা তার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করবে। তোমার লেখা সমস্ত কিছুই আমাকে স্পর্শ করে। ইঝোমি প্রথমে লিখলেন, আমি কীভাবে আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারি?
কবিতা :
আক্ষেপের অশ্রুতে
আপনার প্রতিচ্ছবি দীর্ঘকাল রবে
হিমেল শরৎ চলে যাবার পরেও।
টোকায় ইঝোমি লিখলেন, আপনার জায়গায় হৃদয়গ্রাহী পত্র লেখা আমার পক্ষে বেদনাদায়ক। মার্জিনে লিখলেন:
আপনাকে ছেড়ে সে কোথায় যাবে?
আমার জন্য আর কোনো জীবন নেই।
ব্যাপারটা ইঝোমির খুব খারাপই লাগলো। পত্র পাঠিয়ে নিজের জীবনের কথা ভাবলেন। বারবার ভালোবাসার কাছে প্রতারিত হয়েছেন তিনি। অন্যরকম কোনো পরিকল্পনা কি করবেন? এখন আর কী করবেন তিনি, পেছনের দিকে যাওয়া সম্ভব নয়। দেখা যাক। প্রিন্সের এক ভালোবাসা প্রদেশে চলে গেছে। এটা তার ভালোবাসার দুর্বল দিক, ঐশ্বর্যের দিক নয়।
তিনি কি তাকে পরীক্ষা করছেন? না হয়, কেউ নিজের গোপন সম্পর্কের কথা কি প্রিয়জনকে জানায়? দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন ইঝোমি। ইমনকে কি জানাবেন? না, তা ঠিক হবে না। নিজের দুর্বলতার কথা অন্যকে জানিয়ে লাভ কী। তার চেয়ে ভালো নীরবে সব সয়ে গিয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা, আর পর্যবেক্ষণ করা প্রিন্সের প্রতিক্রিয়া।
কোনো কথা গোপন থাকে না। তাকে এক মেজর জেনারেল জানালেন, প্রিন্স সানজু হতে যাচ্ছেন পরবর্তী সম্রাট। হেইয়ান আর্মি ইন্টেলিজেন্সের সংবাদ এটি। মিচিনাগার ঘন ঘন রেইঝেই-এর কাছে আসা যাওয়া সামুরাই সেনাদের কৌতূহল বাড়িয়ে দেয়। এদের কেউ বলেনি, পর্যবেক্ষণের আলামত বিশ্লেষণ করে এরা এ সিদ্ধান্তে এসেছে।
ইঝোমি ভাবলেন, তা হলে প্রিন্স অতসুমিচি কেন নয়? আগে হলে সরাসরি রেইঝেই এর কাছে চলে যেতেন এবং হাঁটু গেড়ে আবেদন জানাতেন। এখন রেইঝেই-এর কাছে তার সেই অবস্থাও নেই।
তিনি সরাসরি চলে গেলেন মিচিনাগার কাছে। মিচিনাগা তার আবদার শুনে হাসলেন। বললেন, তুমি এই আজগুবি কথা কোথায় শুনলে?
আমি যেখান থেকেই শুনি, আপনি প্রিন্স অতসুমিচিকেই সম্রাট করবেন, প্রিন্স সানজুকে নয়।
অতসুমিচি তোমাকে পাঠিয়েছে, না?
তিনি এখনো তা জানেনই না।
তুমি জানো কি করে?
সূত্র বলা যাবে না।
আগে জানতাম ভ্রমর ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়, তোমার বেলায় দেখছি ফুল ভ্রমরের দ্বারে দ্বারে ঘোরে।
কথা সত্য এবং একজন কবিই সত্য কথা বলতে পারে। শত বাধা সত্ত্বেও একজন নারী কবি সত্য কথা বলে। এখানে দোষ কোথায়? আপনিও কবি, কিন্তু সত্যটা বলতে কুণ্ঠিত। বলেই হাসলেন ইঝোমি।
তোমার প্রতিভা আছে। তা কাজে লাগালে না, শুধু ভোগ-উপভোগের দিকে ছুটে বেড়ালে।
ভোগের মধ্যেই আমি অস্তিত্ববান হতে চাই, দুর্ভোগ বা ত্যাগের মধ্যে নয়। আর ব্যক্তিটি পছন্দ করব আমি, কোনো পুরুষ নয়।
তোমার মঙ্গল হোক।
হতে দিলেন কোথায়? প্রিন্স সানজুকে ভবিষ্যৎ সম্রাট নির্বাচন করছেন।
এসব নিয়ে ভাববার সময় এখনো হয়নি।
ইঝোমি মিচিনাগার কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। সরাসরি প্রিন্স অতসুমিচির দরবারে চলে গেলেন।
ক্রমশ...