সাময়িকী কবিতা

তারিখের অঙ্ক

প্রাণজি বসাক

তারিখ বদলে গেলে কেউ কেউ ছিঁড়ে ফেলে

আয়ুহীন ক্যালেন্ডারের পাতা

পরবর্তী মাসের পাতাটি পতপত করে দেয়ালে

প্রতিদিন কত না হিসেবের অঙ্ক রাত জাগে

জেগে থাকে উনিশ-কুড়ি শেষ রাতের আলাপে

মুখোমুখি প্রশস্ত মাঠ কথা বলে শেষ বেলায়

কখনও মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে যাও

মুখ ফুটে বলো না একটিও কথা

না-বলা কথারা সঙ্গ ছাড়ে না

মাঠপ্রান্তে শীর্ণকায় নদীর কাছে যাও

জলের আয়নায় দেখ জীবনের ক্যালেন্ডার

ভাঙা চাঁদ ভাসে- একটিও পাতা বাকি নেই আর

আমার সময়

কুমার দীপ

আমার সময়

বুনো শূকরের মতো চষে বেড়াচ্ছে সমস্ত পৃথিবীকে;

তার পক্ষপাত

অশ্রু, রক্ত, মৃত্যু আর সীমাহীন বিনষ্টির দিকে।

আমার সময়

ধূর্ত বহুরূপী; কোনোভাবেই তার রঙ যায় না ধরা

যেখানেই থাকে

নিপুণ অভিনয়ে ধরে রাখে মোহন পরম্পরা।

আমার সময়

ক্ষমতা-ভৃত্য; ক্ষমতার গন্ধ যদি মেলে

মুক্তকচ্ছ হয়ে ছোটে

পুরাতন স্মৃতি, পুরানো বন্ধনগুলো ফেলে।

আমার সময়

অন্ধকারের নেকড়ে; ছোটে উদ্ধত থাবা নিয়ে

আলো হাতে যে এগোতে চায়

পায়ে বেড়ি বাঁধে, মুখ বাঁধে নিষেধের ফিতে দিয়ে

আমার সময়

দুর্বিনীত; বুনো জানোয়ার

প্রবল পশুত্ব ব্যতীত কোনো কিছুতে

কোথাও পরোয়া নেই তার।

অনেকেই ওকে ছেড়ে দিয়েছেন অবাধ প্রান্তরে

কেউ কেউ স্রোতের শ্যাওলা, অনুগমনে ধন্য;

উজানে আগ্রহী যে দু-একজন

পৃথিবী তাদের কাছে হয়ে ওঠে জান্তব অরণ্য।

ভয়াবহ চোরাবালি বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এই সময়

আমার নয়; আমারই মতো দেখতে অন্য কারো

এই সময়টাকে হ্যাঁচকা টানে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে

নতুন কোনো সময়- আনতে কি কেউ পারো?

পরাস্ত ফসিল

মনজুর শামস

চাতক

আরেক নাম পাপিয়া

এ দেশে বেড়াতে আসে দগদগে গ্রীষ্মে

আকাশের ছাদ ঘেঁষে ওদের দলবেঁধে উড়তে দেখে

পোড়-খাওয়া ঝানু চাষি স্বস্তিতে বুঝে যায়- এবার নামবে বৃষ্টি

কদিন পর সত্যি সত্যি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে, গাছ ভেজে, মাটি ভেজে

আর চাতক, বা নজরুলের বড় আদরের পাপিয়া বুকে বিয়েবাড়ির বাদ্যি বাজাতে বাজাতে

উড়ে উড়ে, উড়ে উড়ে, উড়ে উড়ে রসগোল্লার মতো গপাগপ খেতে থাকে গোল গোল বৃষ্টির ফোঁটা

তো সে চাতক পাখিই বলি, বা পাপিয়া, নয়তো বৃষ্টির পূর্বাভাস- এবারো এসেছিল পিপাসা-তাড়নায়

সাদা বুক, কালো পিঠ, কালো ঝুঁটি, কালো ডানা- রাগী মুখে ঘুরে ঘুরে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছিল

লাল পিঁপড়ে, কালো পিঁপড়ে, শুঁয়োপোকা, ঘাসফড়িং, লতাগুল্মের পেলব কচিপাতা

শুধু জল পড়ছিল না পেটে- পিপাসায় বুক যাচ্ছিল ফেটে, কর্কশ হচ্ছিল স্বর

তবুও জল পানের উপায় ছিল না; পায়াভারী মেঘ গলে বাতাসের চতুর্মুখী

চাপে গোল হওয়া বৃষ্টির জল পেলেও ঠোঁটে চোষার উপায় ছিল না-

আসলে তা যে ছিল আবিশ্ব ঘায়ে ঘায়ে পিষ্ট মানবতার পরাস্ত

ফসিল

চিহ্ন কিংবা ক্ষত

সিদ্ধার্থ অভিজিৎ

কাল রাতে নানাবিধ সরল অঙ্ক শেষে

তুমি পায়ের ছাপে এঁকে গেলে ছাপমালা

পেলব মাটির সংসারে। ধূলিকণা ব্যস্ততায় তৎপর।

আঁতুরে-ঘ্রাণ মাখা কুহেলিকা

বিনা বাঁধায় জয় করে নিল পদ্মার বুক।

অগ্রিম অভিবাদন শেষে পরিণতি হলো বেয়াড়া...

নবান্নের দেশে জয়নুলের কেন প্রয়োজন হলো!

হিসেব মেলে না হরিদার। হর্নে কুকুর ঘোরে।

খই-মুড়কির অন্তর্ভেদী সাদা দাঁত জয়োল্লাসে বিক্ষিপ্ত।

কিসের উল্লাস? করোটির সনাতনী বিকেল জানিয়ে দেয়-

সব ভেদবুদ্ধিহীন টাচ ফোন। যাপনের আনাড়ি ক্ষত

ক্লাসরুম টু কিচেন টু ঊর্ধ্ব বাহু। আর কিছু নয়।

জয়নুল, নজরুল, হরিপদ পোদ্দার যথাক্রমে অথবা

তাত্ত্বিক হিসেব না কষেও বলা চলে- বিপরীতক্রমে

ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাঁটা। সেবন্তী, কাঁটা বেঁধা

অভিসারী রাধা তুমি নও! জেনে নাও সেই বিত্তান্ত...

বর্ষণে হেমন্ত

প্রণব মজুমদার

এ কেমন হেমন্ত তুমি?

ভেজা শীতে কাবু হয়ে যাও।

ফসলের মাঠ ভেসে যায়;

জোয়ারের মতো হিম জলে।

নুয়ে পড়ে পাকা ধান শীষ,

হলুদ মাঠ মলিন।

আকাশ দেয়নি তো আলোক,

রবির তাপ পড়েনি গায়ে।

বরষায় মাটি হয়ে যায়

কিষাণের ধান গোলাঘর!

মন সুখে হেঁটে চলি মাঠে

হেমন্ত মায়ায় সরবে!

অগ্রহায়ণের রাতেই

প্রথম আলো দেখেছিলাম।

মানুষ খুঁজি না আর

সঙ্গীতা ইয়াসমিন

এ পথে একা হাঁটছি অনন্তকাল,

মনুষ্যবিহীন দ্বীপে খুঁজি মানুষেরই ধাম।

কত ক্রোশ পাড়ি দিই, দেখি সারি সারি লাশ;

নেই মানুষের নাম,

এ পাড়ে একলা বসবাস-

একাই ডিঙাই সংস্কারের বেড়ি-দেয়াল

নিয়মের দিঘল নদী।

প্রেম চেয়ে, আলো চেয়ে, বিড়ম্বিত নিভৃতচারী।

একই কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করি বার বার,

একই মন্ত্র-পুরাতন যোগী, পুরোনো শপথে।

জীবন ছেনে ঘেঁটে জেনেছি-

আলোর উৎসে ঘুমায় অন্ধকারের ভ্রুণ।

সত্যও হাঁটে না স্থির বিন্দুতে,

সত্য মিথ্যের আজন্ম দ্বৈরথে

পড়ে থাকে মুক্তক ছন্দ প্রিয়তর কবিতা-

কোথাও ছিল কি কেউ তেমন সহজিয়া?

মানুষেরই হাটে দেখা হয়েছিল একবার।

তারপর নেমেছে অদ্ভুত আঁধার;

মুখোশের আড়ালে চেনা মুখচ্ছবি যাদের

বিদঘুটে, বিকলাঙ্গ, ফসিল শবাধারের

মানুষেরই দামে বিকিয়েছে বার বার-

তাই মানুষ খুঁজি না আর!

নতুন খাতা

এনাম রাজু

শেষ যেখানে রেখে গিয়েছো ঠিক সেখানেই

দিনের পর দিন পেরিয়ে বছর, যুগ।

চোখের সামনেই মেলে দিয়েছো বটগাছটি

কতো মানুষের সুখ দুঃখের সাথি হয়েছে

এই আমারই পায়ের নিচে কতো ঘাস অস্বাভাবিকভাবে

নিজের অধিকার আদায়ের নেশায় জেগেছে

কাকরোলের গাছ কতোবার নিজের স্থান পরিবর্তন করেছে

শুধু আমি এখানেই দাঁড়িয়ে কালের সাক্ষী হয়ে

কয়েক বছর ধরে তোমার ফেরার পথ চেয়ে।

হয়তো কোনো এক সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে

ফিরে এসে বলবে প্রকৃত ভালোবাসার পরীক্ষা প্রতীক্ষায়।

কথা-কামানের পুলসিরাত

ইলিয়াস বাবর

ধরো, দাঁড়িয়ে আছি কামানের সামনে

মেদবহুল পেট উজিয়ে সিনাটা টান টান করে-

অত বড় সাহসী আমি নই; বীজ গণিতের

‘মনে করি’র মতো এটাও মনে করা!

এখন কামানের সামনে যাওয়াই ছহি

একেবারেই চুকে যায় হিসেব

এতসব তামাশার ভেতর বাড়ে পণ্যদাম

আর কিস্তি করে কমে মানুষের আয়ু!

লজ্জারও মাথা থাকে হেঁট হবার

ওসব তোমার নেই, তোমাদের হবে না ওসব

কামানের চেয়ে ক্ষুধা বড়, বিপ্লবের চেয়ে পুত্রমুখ!

ভুলে যাওয়া একদম স্বাস্থ্যকর

ওতে গিলতে হয় না গ্যাসের বড়ি

কামানের ছায়ায় দাঁড়াবো বলে কলেমা জপি

অথচ দাঁড় করিয়ে দিলে কথার সামনেই!

বাটখারা ধরো, পৃথিবী পরিমাণ করুক

কামানের চেয়ে কথার ওজন কত বেশি...

বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৩

সাময়িকী কবিতা

তারিখের অঙ্ক

প্রাণজি বসাক

তারিখ বদলে গেলে কেউ কেউ ছিঁড়ে ফেলে

আয়ুহীন ক্যালেন্ডারের পাতা

পরবর্তী মাসের পাতাটি পতপত করে দেয়ালে

প্রতিদিন কত না হিসেবের অঙ্ক রাত জাগে

জেগে থাকে উনিশ-কুড়ি শেষ রাতের আলাপে

মুখোমুখি প্রশস্ত মাঠ কথা বলে শেষ বেলায়

কখনও মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে যাও

মুখ ফুটে বলো না একটিও কথা

না-বলা কথারা সঙ্গ ছাড়ে না

মাঠপ্রান্তে শীর্ণকায় নদীর কাছে যাও

জলের আয়নায় দেখ জীবনের ক্যালেন্ডার

ভাঙা চাঁদ ভাসে- একটিও পাতা বাকি নেই আর

আমার সময়

কুমার দীপ

আমার সময়

বুনো শূকরের মতো চষে বেড়াচ্ছে সমস্ত পৃথিবীকে;

তার পক্ষপাত

অশ্রু, রক্ত, মৃত্যু আর সীমাহীন বিনষ্টির দিকে।

আমার সময়

ধূর্ত বহুরূপী; কোনোভাবেই তার রঙ যায় না ধরা

যেখানেই থাকে

নিপুণ অভিনয়ে ধরে রাখে মোহন পরম্পরা।

আমার সময়

ক্ষমতা-ভৃত্য; ক্ষমতার গন্ধ যদি মেলে

মুক্তকচ্ছ হয়ে ছোটে

পুরাতন স্মৃতি, পুরানো বন্ধনগুলো ফেলে।

আমার সময়

অন্ধকারের নেকড়ে; ছোটে উদ্ধত থাবা নিয়ে

আলো হাতে যে এগোতে চায়

পায়ে বেড়ি বাঁধে, মুখ বাঁধে নিষেধের ফিতে দিয়ে

আমার সময়

দুর্বিনীত; বুনো জানোয়ার

প্রবল পশুত্ব ব্যতীত কোনো কিছুতে

কোথাও পরোয়া নেই তার।

অনেকেই ওকে ছেড়ে দিয়েছেন অবাধ প্রান্তরে

কেউ কেউ স্রোতের শ্যাওলা, অনুগমনে ধন্য;

উজানে আগ্রহী যে দু-একজন

পৃথিবী তাদের কাছে হয়ে ওঠে জান্তব অরণ্য।

ভয়াবহ চোরাবালি বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এই সময়

আমার নয়; আমারই মতো দেখতে অন্য কারো

এই সময়টাকে হ্যাঁচকা টানে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে

নতুন কোনো সময়- আনতে কি কেউ পারো?

পরাস্ত ফসিল

মনজুর শামস

চাতক

আরেক নাম পাপিয়া

এ দেশে বেড়াতে আসে দগদগে গ্রীষ্মে

আকাশের ছাদ ঘেঁষে ওদের দলবেঁধে উড়তে দেখে

পোড়-খাওয়া ঝানু চাষি স্বস্তিতে বুঝে যায়- এবার নামবে বৃষ্টি

কদিন পর সত্যি সত্যি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে, গাছ ভেজে, মাটি ভেজে

আর চাতক, বা নজরুলের বড় আদরের পাপিয়া বুকে বিয়েবাড়ির বাদ্যি বাজাতে বাজাতে

উড়ে উড়ে, উড়ে উড়ে, উড়ে উড়ে রসগোল্লার মতো গপাগপ খেতে থাকে গোল গোল বৃষ্টির ফোঁটা

তো সে চাতক পাখিই বলি, বা পাপিয়া, নয়তো বৃষ্টির পূর্বাভাস- এবারো এসেছিল পিপাসা-তাড়নায়

সাদা বুক, কালো পিঠ, কালো ঝুঁটি, কালো ডানা- রাগী মুখে ঘুরে ঘুরে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছিল

লাল পিঁপড়ে, কালো পিঁপড়ে, শুঁয়োপোকা, ঘাসফড়িং, লতাগুল্মের পেলব কচিপাতা

শুধু জল পড়ছিল না পেটে- পিপাসায় বুক যাচ্ছিল ফেটে, কর্কশ হচ্ছিল স্বর

তবুও জল পানের উপায় ছিল না; পায়াভারী মেঘ গলে বাতাসের চতুর্মুখী

চাপে গোল হওয়া বৃষ্টির জল পেলেও ঠোঁটে চোষার উপায় ছিল না-

আসলে তা যে ছিল আবিশ্ব ঘায়ে ঘায়ে পিষ্ট মানবতার পরাস্ত

ফসিল

চিহ্ন কিংবা ক্ষত

সিদ্ধার্থ অভিজিৎ

কাল রাতে নানাবিধ সরল অঙ্ক শেষে

তুমি পায়ের ছাপে এঁকে গেলে ছাপমালা

পেলব মাটির সংসারে। ধূলিকণা ব্যস্ততায় তৎপর।

আঁতুরে-ঘ্রাণ মাখা কুহেলিকা

বিনা বাঁধায় জয় করে নিল পদ্মার বুক।

অগ্রিম অভিবাদন শেষে পরিণতি হলো বেয়াড়া...

নবান্নের দেশে জয়নুলের কেন প্রয়োজন হলো!

হিসেব মেলে না হরিদার। হর্নে কুকুর ঘোরে।

খই-মুড়কির অন্তর্ভেদী সাদা দাঁত জয়োল্লাসে বিক্ষিপ্ত।

কিসের উল্লাস? করোটির সনাতনী বিকেল জানিয়ে দেয়-

সব ভেদবুদ্ধিহীন টাচ ফোন। যাপনের আনাড়ি ক্ষত

ক্লাসরুম টু কিচেন টু ঊর্ধ্ব বাহু। আর কিছু নয়।

জয়নুল, নজরুল, হরিপদ পোদ্দার যথাক্রমে অথবা

তাত্ত্বিক হিসেব না কষেও বলা চলে- বিপরীতক্রমে

ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাঁটা। সেবন্তী, কাঁটা বেঁধা

অভিসারী রাধা তুমি নও! জেনে নাও সেই বিত্তান্ত...

বর্ষণে হেমন্ত

প্রণব মজুমদার

এ কেমন হেমন্ত তুমি?

ভেজা শীতে কাবু হয়ে যাও।

ফসলের মাঠ ভেসে যায়;

জোয়ারের মতো হিম জলে।

নুয়ে পড়ে পাকা ধান শীষ,

হলুদ মাঠ মলিন।

আকাশ দেয়নি তো আলোক,

রবির তাপ পড়েনি গায়ে।

বরষায় মাটি হয়ে যায়

কিষাণের ধান গোলাঘর!

মন সুখে হেঁটে চলি মাঠে

হেমন্ত মায়ায় সরবে!

অগ্রহায়ণের রাতেই

প্রথম আলো দেখেছিলাম।

মানুষ খুঁজি না আর

সঙ্গীতা ইয়াসমিন

এ পথে একা হাঁটছি অনন্তকাল,

মনুষ্যবিহীন দ্বীপে খুঁজি মানুষেরই ধাম।

কত ক্রোশ পাড়ি দিই, দেখি সারি সারি লাশ;

নেই মানুষের নাম,

এ পাড়ে একলা বসবাস-

একাই ডিঙাই সংস্কারের বেড়ি-দেয়াল

নিয়মের দিঘল নদী।

প্রেম চেয়ে, আলো চেয়ে, বিড়ম্বিত নিভৃতচারী।

একই কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করি বার বার,

একই মন্ত্র-পুরাতন যোগী, পুরোনো শপথে।

জীবন ছেনে ঘেঁটে জেনেছি-

আলোর উৎসে ঘুমায় অন্ধকারের ভ্রুণ।

সত্যও হাঁটে না স্থির বিন্দুতে,

সত্য মিথ্যের আজন্ম দ্বৈরথে

পড়ে থাকে মুক্তক ছন্দ প্রিয়তর কবিতা-

কোথাও ছিল কি কেউ তেমন সহজিয়া?

মানুষেরই হাটে দেখা হয়েছিল একবার।

তারপর নেমেছে অদ্ভুত আঁধার;

মুখোশের আড়ালে চেনা মুখচ্ছবি যাদের

বিদঘুটে, বিকলাঙ্গ, ফসিল শবাধারের

মানুষেরই দামে বিকিয়েছে বার বার-

তাই মানুষ খুঁজি না আর!

নতুন খাতা

এনাম রাজু

শেষ যেখানে রেখে গিয়েছো ঠিক সেখানেই

দিনের পর দিন পেরিয়ে বছর, যুগ।

চোখের সামনেই মেলে দিয়েছো বটগাছটি

কতো মানুষের সুখ দুঃখের সাথি হয়েছে

এই আমারই পায়ের নিচে কতো ঘাস অস্বাভাবিকভাবে

নিজের অধিকার আদায়ের নেশায় জেগেছে

কাকরোলের গাছ কতোবার নিজের স্থান পরিবর্তন করেছে

শুধু আমি এখানেই দাঁড়িয়ে কালের সাক্ষী হয়ে

কয়েক বছর ধরে তোমার ফেরার পথ চেয়ে।

হয়তো কোনো এক সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে

ফিরে এসে বলবে প্রকৃত ভালোবাসার পরীক্ষা প্রতীক্ষায়।

কথা-কামানের পুলসিরাত

ইলিয়াস বাবর

ধরো, দাঁড়িয়ে আছি কামানের সামনে

মেদবহুল পেট উজিয়ে সিনাটা টান টান করে-

অত বড় সাহসী আমি নই; বীজ গণিতের

‘মনে করি’র মতো এটাও মনে করা!

এখন কামানের সামনে যাওয়াই ছহি

একেবারেই চুকে যায় হিসেব

এতসব তামাশার ভেতর বাড়ে পণ্যদাম

আর কিস্তি করে কমে মানুষের আয়ু!

লজ্জারও মাথা থাকে হেঁট হবার

ওসব তোমার নেই, তোমাদের হবে না ওসব

কামানের চেয়ে ক্ষুধা বড়, বিপ্লবের চেয়ে পুত্রমুখ!

ভুলে যাওয়া একদম স্বাস্থ্যকর

ওতে গিলতে হয় না গ্যাসের বড়ি

কামানের ছায়ায় দাঁড়াবো বলে কলেমা জপি

অথচ দাঁড় করিয়ে দিলে কথার সামনেই!

বাটখারা ধরো, পৃথিবী পরিমাণ করুক

কামানের চেয়ে কথার ওজন কত বেশি...