ময়লার গাড়িচাপায় নটর ডেমের ছাত্র নিহত

প্রতিবাদে অবরোধ শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈম হাসান (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত নাঈম নটর ডেম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে সহপাঠী মৃত্যুর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা নিহত সহপাঠী নাঈম হাসানের পরিবারের ভরণপোষণের দাবি জানান।

পরে গুলিস্তানে সড়ক অবরোধে থাকা নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে যান শিক্ষকরা। এরপর বিকেল ৫টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক) মশিউর রহমান জানান, শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।

শিক্ষার্থীরা দায়ী চালকের শাস্তির দাবি তোলেন। তারা সেøাগান দিচ্ছিলেন- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে- তুই কেন বাইরে’।

এরপর নটর ডেম কলেজের ফাদার এন্থনি সুশান্ত গোমেজ, পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ভিনসেন্ট তিতাস রোজারিও এবং শহিদুল হাসান পাঠান ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা আশ্বস্ত করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান। মুকিত নামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ফাদার আমাদের জানিয়েছেন- মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আজকের মতো সড়ক ছেড়ে চলে গেলাম। নাঈম বড় হয়ে তার পরিবারকে ভরণপোষণ করতো, কিন্তু এভাবে তাকে হত্যা করা হলো। নাঈমের কী দোষ ছিল। দোষ হলো সড়কের।

কামরাঙ্গীরচর ঝাউলাহাটিতে নিজ বাড়িতে তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কাজিরখিল গ্রামে। দুই ভাইয়ের মধ্যে নাঈম ছিলেন ছোট। বায়তুল মোকাররমের দিকে যাওয়া সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ি মোড় ঘুরতেই তাকে চাপা দেয়।

ছেলে হারানোর বেদনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহাজারি করতে থাকেন নাঈম হাসানের বাবা। নাঈমের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার বাবা শাহ আলম। কাঁদতে কাঁদতে বলেন- “আমার থাইকা বিদায় নিয়া আইলো কলেজে যাইব, দুনিয়ার থাইকাই চইলা গেল, সোনার টুকরা পোলা আমার।” শাহ আলম নীলক্ষেতে বইয়ের ব্যবসা করেন।

পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ওই গাড়ি চালক রাসেল খানকে আটক করে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ডিএসসিসি। গতকাল দুপুরের দিকে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়। ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সিতওয়াত নাঈমকে। অপর দুই সদস্য হলেন মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস (উপসচিব) ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আনিছুর রহমান। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সেই ময়লার গাড়ির চালক রাসেল করপোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত কোনও চালক নন। তিনি একসময় ডিএসসিসি’র ক্লিনার হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করতেন। এখন তার সেই ক্লিনারের চাকরিটিও নেই। ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, তিন বছর আগে রাসেল যখন ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন, তখন তিনি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি চালাতেন। এরপর তার চাকরি চলে গেলেও গাড়ি চালানো বন্ধ হয়নি।

বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৩

ময়লার গাড়িচাপায় নটর ডেমের ছাত্র নিহত

প্রতিবাদে অবরোধ শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নিহত হয় সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি চাপায়। প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান এলাকায় সড়ক অবরোধ করে -সংবাদ

রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈম হাসান (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত নাঈম নটর ডেম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে সহপাঠী মৃত্যুর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা নিহত সহপাঠী নাঈম হাসানের পরিবারের ভরণপোষণের দাবি জানান।

পরে গুলিস্তানে সড়ক অবরোধে থাকা নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে যান শিক্ষকরা। এরপর বিকেল ৫টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক) মশিউর রহমান জানান, শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।

শিক্ষার্থীরা দায়ী চালকের শাস্তির দাবি তোলেন। তারা সেøাগান দিচ্ছিলেন- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে- তুই কেন বাইরে’।

এরপর নটর ডেম কলেজের ফাদার এন্থনি সুশান্ত গোমেজ, পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ভিনসেন্ট তিতাস রোজারিও এবং শহিদুল হাসান পাঠান ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা আশ্বস্ত করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান। মুকিত নামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ফাদার আমাদের জানিয়েছেন- মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আজকের মতো সড়ক ছেড়ে চলে গেলাম। নাঈম বড় হয়ে তার পরিবারকে ভরণপোষণ করতো, কিন্তু এভাবে তাকে হত্যা করা হলো। নাঈমের কী দোষ ছিল। দোষ হলো সড়কের।

কামরাঙ্গীরচর ঝাউলাহাটিতে নিজ বাড়িতে তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কাজিরখিল গ্রামে। দুই ভাইয়ের মধ্যে নাঈম ছিলেন ছোট। বায়তুল মোকাররমের দিকে যাওয়া সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ি মোড় ঘুরতেই তাকে চাপা দেয়।

ছেলে হারানোর বেদনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহাজারি করতে থাকেন নাঈম হাসানের বাবা। নাঈমের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার বাবা শাহ আলম। কাঁদতে কাঁদতে বলেন- “আমার থাইকা বিদায় নিয়া আইলো কলেজে যাইব, দুনিয়ার থাইকাই চইলা গেল, সোনার টুকরা পোলা আমার।” শাহ আলম নীলক্ষেতে বইয়ের ব্যবসা করেন।

পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ওই গাড়ি চালক রাসেল খানকে আটক করে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ডিএসসিসি। গতকাল দুপুরের দিকে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়। ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সিতওয়াত নাঈমকে। অপর দুই সদস্য হলেন মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস (উপসচিব) ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আনিছুর রহমান। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সেই ময়লার গাড়ির চালক রাসেল করপোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত কোনও চালক নন। তিনি একসময় ডিএসসিসি’র ক্লিনার হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করতেন। এখন তার সেই ক্লিনারের চাকরিটিও নেই। ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, তিন বছর আগে রাসেল যখন ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন, তখন তিনি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি চালাতেন। এরপর তার চাকরি চলে গেলেও গাড়ি চালানো বন্ধ হয়নি।