বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তির অডিও ফাঁসের পর রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার সেই মেয়র আব্বাস আলীকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন তাকে দলীয় সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে আব্বাসের বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে উত্তাল রাজশাহী।
গতকাল বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে আব্বাসকে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়। তাকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠায় এই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত।
রাজশাহীর পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজদার রহমান সরকার বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে বিকেলে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আব্বাস আলীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
একই সঙ্গে কেন দলীয় সদস্য পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না- জানতে চেয়ে তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মাজদার রহমান আরও বলেন, বৈঠক শেষে পৌর আহ্বায়কের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের কথা জানিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ আব্বাসের নামে ইস্যু করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হবে। ছাত্র মৈত্রীর নিন্দা
এদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নিয়ে কটূক্তি ও ইসলামী শরিয়ত মতে নয় বলে মন্তব্য করায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর জেলা ও মহানগরের নেতারা।
তারা বলেন, মেয়র আব্বাস চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় কুঠারাঘাত করেছেন।
বুধবার জেলা ও মহানগরের যৌথ সভায় মেয়র আব্বাসের বক্তব্যের নিন্দা প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, মেয়র আব্বাস কাটাখালী এলাকায় জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক। তিনি আওয়ামী লীগ করলেও তার অন্তরে সাম্প্রদায়িকতা লালন করতেন।
একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এ ধরনের বক্তব্য মেনে নেয়া যায় না। তাকে অবিলম্বে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করার দাবি জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি ওহিদুর রহমান ওহি। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠছে রাজশাহী। অধর্তব্য বক্তব্যদানকারী কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে দলটির নেতাকর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মেয়র আব্বাসকে দল থেকে বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে কাটাখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে কাটাখালী বাজারে জড়ো হয়ে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌর এলাকা প্রক্ষিণ করে। মিছিল শেষে সেখানে সমাবেশ করে হয়।
গতকাল সকাল ১০টায় নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে মানববন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধনে মেয়র আব্বাস আলীকে দল থেকে দ্রুত বহিষ্কারসহ তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মেয়র আব্বাস একটি ঘরোয়া বৈঠকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পৌরসভার অংশের উন্নয়ন কাজ নিয়ে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত বক্তব্য দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ প্রতিহতের ঘোষণা দেন তিনি। এ নিয়ে তার ফাঁস হওয়া একটি অডিও রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পাড়ে। অপরদিকে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত বক্তব্যের অভিযোগে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী নগরের রাজপাড়া, বোয়ালিয়া ও চন্দ্রিমা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ তিনটি এজাহার দায়ের হয়েছে। পুলিশ এজাহারগুলো গ্রহণ করে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।
কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী নৌকা প্রতীক নিয়ে দুইবার মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৩
জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তির অডিও ফাঁসের পর রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার সেই মেয়র আব্বাস আলীকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন তাকে দলীয় সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে আব্বাসের বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে উত্তাল রাজশাহী।
গতকাল বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে আব্বাসকে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়। তাকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠায় এই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত।
রাজশাহীর পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজদার রহমান সরকার বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে বিকেলে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আব্বাস আলীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
একই সঙ্গে কেন দলীয় সদস্য পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না- জানতে চেয়ে তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মাজদার রহমান আরও বলেন, বৈঠক শেষে পৌর আহ্বায়কের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের কথা জানিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ আব্বাসের নামে ইস্যু করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হবে। ছাত্র মৈত্রীর নিন্দা
এদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নিয়ে কটূক্তি ও ইসলামী শরিয়ত মতে নয় বলে মন্তব্য করায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর জেলা ও মহানগরের নেতারা।
তারা বলেন, মেয়র আব্বাস চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় কুঠারাঘাত করেছেন।
বুধবার জেলা ও মহানগরের যৌথ সভায় মেয়র আব্বাসের বক্তব্যের নিন্দা প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, মেয়র আব্বাস কাটাখালী এলাকায় জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক। তিনি আওয়ামী লীগ করলেও তার অন্তরে সাম্প্রদায়িকতা লালন করতেন।
একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এ ধরনের বক্তব্য মেনে নেয়া যায় না। তাকে অবিলম্বে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করার দাবি জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি ওহিদুর রহমান ওহি। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠছে রাজশাহী। অধর্তব্য বক্তব্যদানকারী কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে দলটির নেতাকর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মেয়র আব্বাসকে দল থেকে বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে কাটাখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে কাটাখালী বাজারে জড়ো হয়ে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌর এলাকা প্রক্ষিণ করে। মিছিল শেষে সেখানে সমাবেশ করে হয়।
গতকাল সকাল ১০টায় নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে মানববন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধনে মেয়র আব্বাস আলীকে দল থেকে দ্রুত বহিষ্কারসহ তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মেয়র আব্বাস একটি ঘরোয়া বৈঠকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পৌরসভার অংশের উন্নয়ন কাজ নিয়ে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত বক্তব্য দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ প্রতিহতের ঘোষণা দেন তিনি। এ নিয়ে তার ফাঁস হওয়া একটি অডিও রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পাড়ে। অপরদিকে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত বক্তব্যের অভিযোগে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী নগরের রাজপাড়া, বোয়ালিয়া ও চন্দ্রিমা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ তিনটি এজাহার দায়ের হয়েছে। পুলিশ এজাহারগুলো গ্রহণ করে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।
কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী নৌকা প্রতীক নিয়ে দুইবার মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।