জমিজমা সংক্রান্ত এক মামলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
জমি সংক্রান্ত এক মামলায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ৪ জনের নামে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক সপ্তাহের জন্য এ রুল জারি করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জোনরেল অমিত দশ গুপ্ত।
আবুল কালাম আজাদ জানান, গাজীপুরের সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের একটি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দখলে থাকা ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করেন। তখন হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেন। সেই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আবেদনকারীরা জমি আগের মতো ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার লোকজন ওই জমি নিজের নামে পাওয়ার অব অ্যাটনি আছে বলে ব্যবহারে বাধা দেন। এই অবস্থায় মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ ৪ জনের নামে সম্প্রতি আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে আবেদন করেছেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় গাজীপুরের জয়দেবপুরের বিকেবাড়ী মৌজায় ১৬.৬৬ এক জমি কিনে সেখানে আবাদ করে আসছিলেন ঢাকার গুলশানের বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু ১৯৯৭ সালের ১৪ জানুয়ারি মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস আশরাফ উদ্দিন আহমেদের ওই জমির নামজারি বাতিল করে নোটিস দেয়। তাতে বলা হয় আশরাফ উদ্দিন আহমেদের ভোগদখল কর জমি খাস, অর্পিত ও বন বিভাগের ভূমির অন্তর্ভুক্ত। যে কারণে নামজারি বাতিল করে এ জমি মূল খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে।
পরে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী গেজেটের মাধ্যমে এ জমি তফসিলভুক্ত করা হয়। এর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মামলা করেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল এ জমি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের তফসিলভুক্তি থেকে অবমুক্ত করে আশরাফ উদ্দিন আহমেদের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়।
ট্রাইব্যুনালের এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর সে আপিল খারিজ করে দেয় সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইব্যুনাল। আদালতের ওই আদেশের পর নামজারি সংশোধন করার আবেদন করেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু তা না করায় স্থানীয় ভূমি অফিসের নিষ্কিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন জমির মালিক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর রুলসহ আদেশ দেয়। ওই জমিতে বিবাদীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরবর্তী তিন মাস আশরাফ উদ্দিন আহমেদের শান্তপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে বলা হয় আদেশে।
পরে অন্তর্বর্তী ওই আদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২১ জুন ফের রুলসহ আদেশ দেয় হাইকোর্ট। সে অদেশেও উচ্চ আদালত আশরাফ উদ্দিন আহমেদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু আশরাফ উদ্দিনের অভিযোগ, উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে আলফাজ, হারুনুর রশিদ ওরফে ঠা-ু ও ফজলুল হক গত ১৯ জুন ওই কৃষি খামারে জোর করে ঢুকে খামারের ব্যবস্থাপককে ‘হুমকি’ দেয় এবং ধান কাটতে ‘বাধা দেয়’।
এ বিষয়ে গত ১ জুলাই জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করার পর ১৮ আগস্ট মামলা করেন জমির মালিক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। মামলার তদন্ত শেষে ২৩ অগাস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।
অভিযোগ আমলে নিয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখেন। এরপরও মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ আসামিরা হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে আশরাফ উদ্দিন আহমেদের অভিযোগ। এই প্রেক্ষাপটে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১ , ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
জমিজমা সংক্রান্ত এক মামলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
জমি সংক্রান্ত এক মামলায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ৪ জনের নামে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক সপ্তাহের জন্য এ রুল জারি করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জোনরেল অমিত দশ গুপ্ত।
আবুল কালাম আজাদ জানান, গাজীপুরের সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের একটি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দখলে থাকা ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করেন। তখন হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেন। সেই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আবেদনকারীরা জমি আগের মতো ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার লোকজন ওই জমি নিজের নামে পাওয়ার অব অ্যাটনি আছে বলে ব্যবহারে বাধা দেন। এই অবস্থায় মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ ৪ জনের নামে সম্প্রতি আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে আবেদন করেছেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় গাজীপুরের জয়দেবপুরের বিকেবাড়ী মৌজায় ১৬.৬৬ এক জমি কিনে সেখানে আবাদ করে আসছিলেন ঢাকার গুলশানের বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু ১৯৯৭ সালের ১৪ জানুয়ারি মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস আশরাফ উদ্দিন আহমেদের ওই জমির নামজারি বাতিল করে নোটিস দেয়। তাতে বলা হয় আশরাফ উদ্দিন আহমেদের ভোগদখল কর জমি খাস, অর্পিত ও বন বিভাগের ভূমির অন্তর্ভুক্ত। যে কারণে নামজারি বাতিল করে এ জমি মূল খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে।
পরে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী গেজেটের মাধ্যমে এ জমি তফসিলভুক্ত করা হয়। এর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মামলা করেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল এ জমি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের তফসিলভুক্তি থেকে অবমুক্ত করে আশরাফ উদ্দিন আহমেদের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়।
ট্রাইব্যুনালের এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর সে আপিল খারিজ করে দেয় সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইব্যুনাল। আদালতের ওই আদেশের পর নামজারি সংশোধন করার আবেদন করেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু তা না করায় স্থানীয় ভূমি অফিসের নিষ্কিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন জমির মালিক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর রুলসহ আদেশ দেয়। ওই জমিতে বিবাদীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরবর্তী তিন মাস আশরাফ উদ্দিন আহমেদের শান্তপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে বলা হয় আদেশে।
পরে অন্তর্বর্তী ওই আদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২১ জুন ফের রুলসহ আদেশ দেয় হাইকোর্ট। সে অদেশেও উচ্চ আদালত আশরাফ উদ্দিন আহমেদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু আশরাফ উদ্দিনের অভিযোগ, উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে আলফাজ, হারুনুর রশিদ ওরফে ঠা-ু ও ফজলুল হক গত ১৯ জুন ওই কৃষি খামারে জোর করে ঢুকে খামারের ব্যবস্থাপককে ‘হুমকি’ দেয় এবং ধান কাটতে ‘বাধা দেয়’।
এ বিষয়ে গত ১ জুলাই জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করার পর ১৮ আগস্ট মামলা করেন জমির মালিক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। মামলার তদন্ত শেষে ২৩ অগাস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।
অভিযোগ আমলে নিয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখেন। এরপরও মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ আসামিরা হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে আশরাফ উদ্দিন আহমেদের অভিযোগ। এই প্রেক্ষাপটে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন তিনি।