ভারতের লোকসভায় কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাস

অবশেষে ভারতের লোকসভায় পাস হলো বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। গতকাল হট্টগোল ও বিরোধী আইনপ্রণেতাদের প্রবল হইচইয়ের মধ্যে কণ্ঠভোটে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের এ বিলটি পাস হয়। কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার দাবিতে শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই হই-হট্টগোল শুরু করেন ভারতের বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারা। একপর্যায়ে ওয়েলে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখান তারা।

ওই পরিস্থিতিতে সংসদের দুই কক্ষেই অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার। পরে ফের অধিবেশন শুরু হতেই ‘কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল-২০২১’ পেশ করেন ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। অন্যদিকে বিরোধীরা কৃষি আইনের ওপর আলোচনার যে দাবি করেছিল, তা খারিজ করে দেয় সরকারপক্ষ। এদিকে এখনও দিল্লি সীমানায় বসে রয়েছেন আন্দোলনরত কৃষকরা। সম্প্রতি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিষয়ে মৌখিক ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি ছিল, পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিক প্রত্যাহার না হওয়ার পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। এ পরিস্থিতিতে সোমবারই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল রাজ্যসভায় পেশ করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ভারতের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

এদিকে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল রাজ্যসভায় পেশ হবে। ২৫ দিন ধরে চলবে ভারতের এ শীতকালীন অধিবেশন। এতে ৩০টির মতো বিল উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অধিবেশনের শুরুর দিনে পাস হলো বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল।

এর আগে, ১৯ নভেম্বর বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত প্রায় এক বছর ধরে ওই আইন নিয়ে আন্দোলন করছিলেন কৃষকরা। বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে কৃষক বিক্ষোভ শুরু হয়। কৃষকদের আন্দোলন বিক্ষোভে ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও। তবুও রাজপথ ছাড়েননি কৃষকরা। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে তবে বিষয়টির সুরাহা হয়নি। করোনা মহামারির মধ্যেও নিজেদের চেষ্টায় আন্দোলন চালিয়ে গেছেন কৃষকরা।

উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনটি কৃষি বিলে সংশোধন করে আইনে পরিণত করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্তানে ওই আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। বিশেষত, পাঞ্জাবে সেই বিক্ষোভের তীব্রতা ছিল অনেক বেশি। রাজ্যজুড়ে রাস্তা অবরোধ, রেললাইন অবরোধসহ নানা আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানায় কৃষক সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, নতুন আইনের ফলে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা।

কৃষকরা দাবি করেছিলেন, বিতর্কিত ওই আইনের ফলে ফসল নিয়ে তাদের দরাদরির ক্ষমতা কমে যাবে, প্রচলিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হবেন তারা। পাশাপাশি, বেসরকারি এবং বড় সংস্থাগুলোর কাছে কৃষিপণ্য মজুত রাখার রাস্তাও উন্মুক্ত হবে। যদিও সেসময় মোদি সরকারের পাল্টা দাবি ছিল, নতুন কৃষি আইনে কোনোভাবেই কৃষকরা বঞ্চনার শিকার হবেন না। এমএসপি ব্যবস্থাও কার্যকর থাকবে। তবে আন্দোলনের কারণে শেষমেশ সেই বিতর্কিত আইন বাতিল করতে বাধ্য হলো দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে দেখা

দিলেন না মোদি

ভারতের সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ। অধিবেশন চলবে ১৯ দিন। এ অধিবেশন সামনে রেখে গতকাল অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে হাজির ছিলেন না দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এ বিষয়টা নিয়েই এখন তার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তার বিরোধীরা। মোদির পক্ষে অবশ্য সাফাই গেয়ে বলা হচ্ছে, সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি কোনো ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে না।

এমন এক সময় এ অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে যার মাত্র দিন কয়েক আগেই ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলে রাজি হয়েছে মোদি সরকার। গতকালের বৈঠকে কৃষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ও উঠে আসে।

বিরোধীদের পক্ষে থেকে কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া একটি ঘটনার জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির বরখাস্তও দাবি করা হয়। রাজ্যসভায় বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, কংগ্রেস ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের পাশাপাশি তিনটি কৃষি বিল প্রত্যাহার এবং কোভিড ম্যানেজমেন্টের মতো বিষয় তুলেছিল। তিনিও সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগে এই ধরনের কোনো বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীরা না এলেও নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হাওয়ার পরে নিজে উপস্থিত থেকেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদিই এই ঐতিহ্যের শুরু করেছিলেন। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর এবারের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমিচীন নয়। তবে নরেন্দ্র মোদির এই অনুপস্থিতি ঘিরে দলের ভেতরেই প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।

image

ভারতে বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের পর আনন্দ উল্লাস করছে দেশটির কৃষকরা -এনডিটিভি

আরও খবর
ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হতে দেবে না যুক্তরাজ্য-ইসরায়েল
ডেল্টার চেয়েও বেশি রূপবদল করেছে ওমিক্রন
ওমিক্রনের উপসর্গ কী

মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১ , ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

ভারতের লোকসভায় কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাস

image

ভারতে বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের পর আনন্দ উল্লাস করছে দেশটির কৃষকরা -এনডিটিভি

অবশেষে ভারতের লোকসভায় পাস হলো বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। গতকাল হট্টগোল ও বিরোধী আইনপ্রণেতাদের প্রবল হইচইয়ের মধ্যে কণ্ঠভোটে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের এ বিলটি পাস হয়। কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার দাবিতে শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই হই-হট্টগোল শুরু করেন ভারতের বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারা। একপর্যায়ে ওয়েলে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখান তারা।

ওই পরিস্থিতিতে সংসদের দুই কক্ষেই অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার। পরে ফের অধিবেশন শুরু হতেই ‘কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল-২০২১’ পেশ করেন ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। অন্যদিকে বিরোধীরা কৃষি আইনের ওপর আলোচনার যে দাবি করেছিল, তা খারিজ করে দেয় সরকারপক্ষ। এদিকে এখনও দিল্লি সীমানায় বসে রয়েছেন আন্দোলনরত কৃষকরা। সম্প্রতি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিষয়ে মৌখিক ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি ছিল, পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিক প্রত্যাহার না হওয়ার পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। এ পরিস্থিতিতে সোমবারই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল রাজ্যসভায় পেশ করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ভারতের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

এদিকে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল রাজ্যসভায় পেশ হবে। ২৫ দিন ধরে চলবে ভারতের এ শীতকালীন অধিবেশন। এতে ৩০টির মতো বিল উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অধিবেশনের শুরুর দিনে পাস হলো বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল।

এর আগে, ১৯ নভেম্বর বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত প্রায় এক বছর ধরে ওই আইন নিয়ে আন্দোলন করছিলেন কৃষকরা। বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে কৃষক বিক্ষোভ শুরু হয়। কৃষকদের আন্দোলন বিক্ষোভে ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও। তবুও রাজপথ ছাড়েননি কৃষকরা। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে তবে বিষয়টির সুরাহা হয়নি। করোনা মহামারির মধ্যেও নিজেদের চেষ্টায় আন্দোলন চালিয়ে গেছেন কৃষকরা।

উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনটি কৃষি বিলে সংশোধন করে আইনে পরিণত করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্তানে ওই আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। বিশেষত, পাঞ্জাবে সেই বিক্ষোভের তীব্রতা ছিল অনেক বেশি। রাজ্যজুড়ে রাস্তা অবরোধ, রেললাইন অবরোধসহ নানা আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানায় কৃষক সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, নতুন আইনের ফলে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা।

কৃষকরা দাবি করেছিলেন, বিতর্কিত ওই আইনের ফলে ফসল নিয়ে তাদের দরাদরির ক্ষমতা কমে যাবে, প্রচলিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হবেন তারা। পাশাপাশি, বেসরকারি এবং বড় সংস্থাগুলোর কাছে কৃষিপণ্য মজুত রাখার রাস্তাও উন্মুক্ত হবে। যদিও সেসময় মোদি সরকারের পাল্টা দাবি ছিল, নতুন কৃষি আইনে কোনোভাবেই কৃষকরা বঞ্চনার শিকার হবেন না। এমএসপি ব্যবস্থাও কার্যকর থাকবে। তবে আন্দোলনের কারণে শেষমেশ সেই বিতর্কিত আইন বাতিল করতে বাধ্য হলো দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে দেখা

দিলেন না মোদি

ভারতের সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ। অধিবেশন চলবে ১৯ দিন। এ অধিবেশন সামনে রেখে গতকাল অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে হাজির ছিলেন না দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এ বিষয়টা নিয়েই এখন তার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তার বিরোধীরা। মোদির পক্ষে অবশ্য সাফাই গেয়ে বলা হচ্ছে, সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি কোনো ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে না।

এমন এক সময় এ অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে যার মাত্র দিন কয়েক আগেই ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলে রাজি হয়েছে মোদি সরকার। গতকালের বৈঠকে কৃষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ও উঠে আসে।

বিরোধীদের পক্ষে থেকে কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া একটি ঘটনার জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির বরখাস্তও দাবি করা হয়। রাজ্যসভায় বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, কংগ্রেস ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের পাশাপাশি তিনটি কৃষি বিল প্রত্যাহার এবং কোভিড ম্যানেজমেন্টের মতো বিষয় তুলেছিল। তিনিও সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগে এই ধরনের কোনো বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীরা না এলেও নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হাওয়ার পরে নিজে উপস্থিত থেকেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদিই এই ঐতিহ্যের শুরু করেছিলেন। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর এবারের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমিচীন নয়। তবে নরেন্দ্র মোদির এই অনুপস্থিতি ঘিরে দলের ভেতরেই প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।