এক মাসে আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ‘ডেল্টা’ ধরনের চেয়ে অধিক ‘সংক্রামক’ ওমিক্রন ঠেকাতে ইতোমধ্যে দেশের সবকটি বন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কঠোর পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে সরকার। দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত ‘ওমিক্রন’ ঠেকাতে দেশটি থেকে আসা নাগরিকদের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ গত এক মাসে আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে আসা ২৪০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

ওমিক্রন নিয়ে গতকাল দুপুরে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করা হয়। সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিং করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ডেল্টার চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’। এই ধরনটির সংক্রমণ রোধে সরকার সতর্ক অবস্থানে আছে।

মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় গত এক মাসে ২৪০ জন লোক এসেছে সাউথ আফ্রিকা থেকে। তাদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করার চেষ্টা আমরা করছি। কিন্তু আফসোসের বিষয়, তারা সবাই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছে। ঠিকানাও ভুল দিয়েছে।’

সীমান্তে কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করা হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘সব জেলায় চিঠি দেয়া হবে। সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠান সীমিত করতে হবে।’

আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আসলেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন

‘আফ্রিকা মহাদেশ’ থেকে নাগরিকদের দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি আসে তাহলে ১৪ দিনের কঠোর কোয়ারেন্টিন অবশ্যই মানতে হবে। কর্তৃপক্ষকে বলবো, বিদেশ থেকে যারা আসবে, তাদের যেন মনিটরিং করা হয়।’

যেসব দেশে করোনাভাইরাসের ‘ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, এবার বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনায় সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো থেকে যারা আসবে, তারা যেন না আসে, সে ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করবো। কোন ফ্লাইট যেন না থাকে। ওখান থেকে যারাই আসুক, তারা যেন কোয়ারেন্টিনে থাকে। সেটা হোম কোয়ারেন্টিন নয়, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন। এ ব্যাপারে ম্যানেজমেন্ট শক্ত হতে হবে। আমরা চাই সেনাবাহিনী সেই কোয়ারেন্টিন ম্যানেজ করবে।’

‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হওয়া দেশগুলো থেকে ‘আগত’ ব্যক্তিকে নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘পরীক্ষায় রিপোর্ট পজেটিভ এলে তাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। কোয়ারেন্টিনের খরচ তাকেই বহন করতে হবে। কেউ খরচ বহন করতে না পারলে সেটা বিবেচনা করা হবে।’

মন্ত্রী জানান, ইউরোপের দেশগুলোয় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে। সেসব দেশ থেকে যারা আসবে তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে।

এ পর্যন্ত ১৫-২০টি দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেসব দেশের বিষয়ে আমরা আলাদাভাবে দেখব। তাদের পরীক্ষার বিষয়টা জোরদার করব। প্রয়োজন হলে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করব।’

এর আগে ২৯ নভেম্বর আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং, জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা এবং পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁয় ভিড় এড়ানোসহ ১৫ নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আদেশে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথোসহ যেসব দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে।

৬০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকার বুস্টার ডোজ

সরকার দেশের ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভারতসহ আশপাশের কয়েকটি দেশ বুস্টার ডোজ দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও কাজ করছি। এটা নিয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত হবে।’ ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ নিয়ম চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আগে আমাদের সেøাগান ছিল ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ এখন থেকে ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ চালু করতে যাচ্ছি আমরা। আজকে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেব।’

এ পর্যন্ত ১০ কোটি ডোজ টিকাদান

দেশে ইতোমধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, এর মধ্যে প্রথম ডোজ প্রায় ছয় কোটি ও দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে চার কোটির কাছাকাছি।

দেশে শিক্ষার্থী ও বস্তিবাসীদের টিকা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সব পর্যায়েই টিকা দেয়া হচ্ছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে, এখনও অনেকে টিকা নেননি এবং তাদের টিকা নেয়ার আগ্রহও কম।

মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকায় যে পর্যায়ে আশা করেছিলাম সে পর্যায়ে যেতে পারিনি। ৭-৮ লাখ টিকা দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম আরও বেশি দেয়া হবে। চেষ্টা করছি যাতে এটা বাড়ানো যায়। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ছিলেন, তাদের বলেছি আপনারাও আমাদের সহযোগিতা করুন।’

এ ছাড়া বৈঠকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব রোধে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, সোয়াজিল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরতদের বাড়িতে টাঙানো হলো লাল পতাকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ওমিক্রন মোকাবেলায় সতর্ক রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সামাজিক সংক্রমণ রোধে সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরত প্রবাসীদের বাড়িতে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। গতকাল কসবা, নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরত ৭ প্রবাসীর বাড়িতে গিয়ে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়। তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়।

জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. একরাম উল্লাহ জানান, সোমবার আফ্রিকা থেকে আগতদের তালিকা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে। তালিকায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৭ জন প্রবাসী রয়েছেন, যারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছেন। সামাজিক সংক্রমণ রোধে আগতদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগতদের কোন উপসর্গ থাকলে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আওতায় আনা হবে। এছাড়াও আখাউড়া স্থলবন্দরে বিভিন্ন সতর্কতা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

জেলা করোনা কমিটির একটি সূত্র জানায়, আগত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৭ নাগরিকের বাড়িতে প্রাথমিক নিরাপত্তা পদক্ষেপ হিসেবে লাল পতাকা টানিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন এ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সকল যাত্রী পারাপারে ও কঠোরভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সাউথ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরেন কসবার ৫জন, বাঞ্চারামপুরের ১ জন ও নবীনগরের ১জন।

উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত জেলায় ১২ হাজার ৪১৬ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ১৮০ জনের।

ওমিক্রন : ভারতের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বাদ

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধে ভারতের করা ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এর আগে গতকাল ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত হালনাগাদ তালিকায় বাংলাদেশের নাম বাদ দেয় ভারত। হালনাগাদ তালিকাটি দেশটির মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশ হিসেবে ভারত তালিকাভুক্ত করার ঠিক একদিন পরই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভ্রমণ তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে গতকাল সেটি হালনাগাদ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত রোববার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওমিক্রন আক্রান্ত একজন রোগী ভারতের প্রবেশ করেন। মহারাষ্ট্রের এই ব্যক্তির ঘটনাটি প্রচারের পরপরই ভারত সরকার বাংলাদেশসহ প্রায় অনেকগুলো দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করে।

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় এখন পর্যন্ত কোন দেশই বাংলাদেশকে রাখেনি। তবে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি সারা পৃথিবীতেই ব্যাপক সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশও ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা অধিদপ্তরও (ডিজিএইচএস) ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য একটি নির্দেশিকা ঘোষণা করেছে।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন এই গাইডলাইন অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে ইউরোপের সব দেশ এবং যুক্তরাজ্য। বাকি দেশগুলো হলো দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, বতসোয়ানা, চীন, মরিশাস, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, সিঙ্গাপুর, হংকং ও ইসরায়েল।

ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত দিকনির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের আরটি-পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ হলে কোয়ারেন্টিনে এবং পজেটিভ হলে কঠোর আইসোলেশনে থাকতে হবে। ভারতে আগমনের ক্ষেত্রে যাত্রীদের অবশ্যই তাদের নিজস্ব খরচে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দিতে হবে এবং তাদের ভারত ছেড়ে যাওয়া বা অন্য আরেকটি সংযোগকারী ফ্লাইটে উঠার আগে তাদের টেস্টের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

যদি পরীক্ষায় নেগেটিভ আসে, তাহলে সে যাত্রীকে ৭ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টিন অনুসরণ করতে হবে এবং ভারতে পৌঁছানোর অষ্টম দিনে আবারও পরীক্ষা করাতে হবে। এ ছাড়া টেস্টে নেগেটিভ হলে সে যাত্রীদের পরবর্তী ৭ দিনের জন্য স্বাস্থ্যের বিষয়ে নিজস্ব পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। তবে এ ধরনের যাত্রীরা যদি টেস্টে পজেটিভ হয়, তাহলে সেটা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কি-না সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিনোমিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। ভারতের কনসোর্টিয়াম ল্যাবরেটরি নেটওয়ার্কে এবং তাদের আলাদা আইসোলেশন সুবিধায় রাখা হবে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংসহ তাদের নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা করানো হবে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ হলে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের সাত দিনের হোম কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে। ভারতে পৌঁছানোর অষ্টম দিনের মাথায় আবারও করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। এ পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এলে পরবর্তী সাত দিন যাত্রীদের স্বেচ্ছা স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এ ধরনের যাত্রীরা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হলে সেটি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কি-না তা জানার জন্য তাদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। এ সময় তাদের পৃথক আইসোলেশন স্থাপনায় রাখা হবে এবং স্টান্ডার্ড প্রোটোকল অনুযায়ী তাদের চিকিৎসা এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং করবে কর্তৃপক্ষ।

করোনা পজেটিভ যাত্রীদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন অথবা হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। সে সময় রাজ্য সরকারের করোনা প্রোটোকল অনুযায়ী করোনা পজেটিভ রোগীদের কঠোর কোয়ারেন্টিন বিধি মেনে চলতে হবে।

আগের সব ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় সম্ভাব্য অতি-সংক্রামক ওমিক্রন গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, বতসোয়ানা, ব্রিটেন, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ইসরায়েল, ইতালি, নেদারল্যান্ডস এবং স্কটল্যান্ডে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।

শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা করোনাভাইরাসের বি.১.১.৫২৯ রূপটিকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ‘এই ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতার মাত্রা বোঝার জন্য কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। এক ব্যক্তির দেহ থেকে অন্যের দেহে কোন ভাইরাস যত সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেই ভাইরাস তত বেশি সংক্রামক। করোনাভাইরাসের ডেল্টা এবং অন্য রূপের তুলনায় ওমিক্রন বেশি সংক্রামক কি-না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা এই রূপকে ধরতে সক্ষম বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। কোভিডের বিভিন্ন টিকার ওপর এই ভাইরাসের প্রভাব কতটা তা জানার জন্য কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা।

বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১ , ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

‘ওমিক্রন’ উদ্বেগ বেড়েই চলেছে

এক মাসে আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ‘ডেল্টা’ ধরনের চেয়ে অধিক ‘সংক্রামক’ ওমিক্রন ঠেকাতে ইতোমধ্যে দেশের সবকটি বন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কঠোর পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে সরকার। দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত ‘ওমিক্রন’ ঠেকাতে দেশটি থেকে আসা নাগরিকদের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ গত এক মাসে আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে আসা ২৪০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

ওমিক্রন নিয়ে গতকাল দুপুরে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করা হয়। সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিং করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ডেল্টার চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’। এই ধরনটির সংক্রমণ রোধে সরকার সতর্ক অবস্থানে আছে।

মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় গত এক মাসে ২৪০ জন লোক এসেছে সাউথ আফ্রিকা থেকে। তাদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করার চেষ্টা আমরা করছি। কিন্তু আফসোসের বিষয়, তারা সবাই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছে। ঠিকানাও ভুল দিয়েছে।’

সীমান্তে কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করা হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘সব জেলায় চিঠি দেয়া হবে। সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠান সীমিত করতে হবে।’

আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আসলেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন

‘আফ্রিকা মহাদেশ’ থেকে নাগরিকদের দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি আসে তাহলে ১৪ দিনের কঠোর কোয়ারেন্টিন অবশ্যই মানতে হবে। কর্তৃপক্ষকে বলবো, বিদেশ থেকে যারা আসবে, তাদের যেন মনিটরিং করা হয়।’

যেসব দেশে করোনাভাইরাসের ‘ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, এবার বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনায় সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো থেকে যারা আসবে, তারা যেন না আসে, সে ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করবো। কোন ফ্লাইট যেন না থাকে। ওখান থেকে যারাই আসুক, তারা যেন কোয়ারেন্টিনে থাকে। সেটা হোম কোয়ারেন্টিন নয়, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন। এ ব্যাপারে ম্যানেজমেন্ট শক্ত হতে হবে। আমরা চাই সেনাবাহিনী সেই কোয়ারেন্টিন ম্যানেজ করবে।’

‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হওয়া দেশগুলো থেকে ‘আগত’ ব্যক্তিকে নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘পরীক্ষায় রিপোর্ট পজেটিভ এলে তাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। কোয়ারেন্টিনের খরচ তাকেই বহন করতে হবে। কেউ খরচ বহন করতে না পারলে সেটা বিবেচনা করা হবে।’

মন্ত্রী জানান, ইউরোপের দেশগুলোয় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে। সেসব দেশ থেকে যারা আসবে তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে।

এ পর্যন্ত ১৫-২০টি দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেসব দেশের বিষয়ে আমরা আলাদাভাবে দেখব। তাদের পরীক্ষার বিষয়টা জোরদার করব। প্রয়োজন হলে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করব।’

এর আগে ২৯ নভেম্বর আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং, জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা এবং পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁয় ভিড় এড়ানোসহ ১৫ নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আদেশে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথোসহ যেসব দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে।

৬০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকার বুস্টার ডোজ

সরকার দেশের ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভারতসহ আশপাশের কয়েকটি দেশ বুস্টার ডোজ দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও কাজ করছি। এটা নিয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত হবে।’ ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ নিয়ম চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আগে আমাদের সেøাগান ছিল ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ এখন থেকে ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ চালু করতে যাচ্ছি আমরা। আজকে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেব।’

এ পর্যন্ত ১০ কোটি ডোজ টিকাদান

দেশে ইতোমধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, এর মধ্যে প্রথম ডোজ প্রায় ছয় কোটি ও দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে চার কোটির কাছাকাছি।

দেশে শিক্ষার্থী ও বস্তিবাসীদের টিকা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সব পর্যায়েই টিকা দেয়া হচ্ছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে, এখনও অনেকে টিকা নেননি এবং তাদের টিকা নেয়ার আগ্রহও কম।

মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকায় যে পর্যায়ে আশা করেছিলাম সে পর্যায়ে যেতে পারিনি। ৭-৮ লাখ টিকা দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম আরও বেশি দেয়া হবে। চেষ্টা করছি যাতে এটা বাড়ানো যায়। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ছিলেন, তাদের বলেছি আপনারাও আমাদের সহযোগিতা করুন।’

এ ছাড়া বৈঠকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব রোধে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, সোয়াজিল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরতদের বাড়িতে টাঙানো হলো লাল পতাকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ওমিক্রন মোকাবেলায় সতর্ক রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সামাজিক সংক্রমণ রোধে সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরত প্রবাসীদের বাড়িতে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। গতকাল কসবা, নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরত ৭ প্রবাসীর বাড়িতে গিয়ে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়। তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়।

জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. একরাম উল্লাহ জানান, সোমবার আফ্রিকা থেকে আগতদের তালিকা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে। তালিকায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৭ জন প্রবাসী রয়েছেন, যারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছেন। সামাজিক সংক্রমণ রোধে আগতদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগতদের কোন উপসর্গ থাকলে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আওতায় আনা হবে। এছাড়াও আখাউড়া স্থলবন্দরে বিভিন্ন সতর্কতা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

জেলা করোনা কমিটির একটি সূত্র জানায়, আগত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৭ নাগরিকের বাড়িতে প্রাথমিক নিরাপত্তা পদক্ষেপ হিসেবে লাল পতাকা টানিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন এ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সকল যাত্রী পারাপারে ও কঠোরভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সাউথ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরেন কসবার ৫জন, বাঞ্চারামপুরের ১ জন ও নবীনগরের ১জন।

উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত জেলায় ১২ হাজার ৪১৬ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ১৮০ জনের।

ওমিক্রন : ভারতের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বাদ

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধে ভারতের করা ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এর আগে গতকাল ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত হালনাগাদ তালিকায় বাংলাদেশের নাম বাদ দেয় ভারত। হালনাগাদ তালিকাটি দেশটির মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশ হিসেবে ভারত তালিকাভুক্ত করার ঠিক একদিন পরই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভ্রমণ তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে গতকাল সেটি হালনাগাদ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত রোববার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওমিক্রন আক্রান্ত একজন রোগী ভারতের প্রবেশ করেন। মহারাষ্ট্রের এই ব্যক্তির ঘটনাটি প্রচারের পরপরই ভারত সরকার বাংলাদেশসহ প্রায় অনেকগুলো দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করে।

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় এখন পর্যন্ত কোন দেশই বাংলাদেশকে রাখেনি। তবে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি সারা পৃথিবীতেই ব্যাপক সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশও ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা অধিদপ্তরও (ডিজিএইচএস) ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য একটি নির্দেশিকা ঘোষণা করেছে।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন এই গাইডলাইন অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে ইউরোপের সব দেশ এবং যুক্তরাজ্য। বাকি দেশগুলো হলো দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, বতসোয়ানা, চীন, মরিশাস, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, সিঙ্গাপুর, হংকং ও ইসরায়েল।

ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত দিকনির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের আরটি-পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ হলে কোয়ারেন্টিনে এবং পজেটিভ হলে কঠোর আইসোলেশনে থাকতে হবে। ভারতে আগমনের ক্ষেত্রে যাত্রীদের অবশ্যই তাদের নিজস্ব খরচে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দিতে হবে এবং তাদের ভারত ছেড়ে যাওয়া বা অন্য আরেকটি সংযোগকারী ফ্লাইটে উঠার আগে তাদের টেস্টের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

যদি পরীক্ষায় নেগেটিভ আসে, তাহলে সে যাত্রীকে ৭ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টিন অনুসরণ করতে হবে এবং ভারতে পৌঁছানোর অষ্টম দিনে আবারও পরীক্ষা করাতে হবে। এ ছাড়া টেস্টে নেগেটিভ হলে সে যাত্রীদের পরবর্তী ৭ দিনের জন্য স্বাস্থ্যের বিষয়ে নিজস্ব পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। তবে এ ধরনের যাত্রীরা যদি টেস্টে পজেটিভ হয়, তাহলে সেটা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কি-না সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিনোমিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। ভারতের কনসোর্টিয়াম ল্যাবরেটরি নেটওয়ার্কে এবং তাদের আলাদা আইসোলেশন সুবিধায় রাখা হবে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংসহ তাদের নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা করানো হবে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ হলে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের সাত দিনের হোম কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে। ভারতে পৌঁছানোর অষ্টম দিনের মাথায় আবারও করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। এ পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এলে পরবর্তী সাত দিন যাত্রীদের স্বেচ্ছা স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এ ধরনের যাত্রীরা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হলে সেটি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কি-না তা জানার জন্য তাদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। এ সময় তাদের পৃথক আইসোলেশন স্থাপনায় রাখা হবে এবং স্টান্ডার্ড প্রোটোকল অনুযায়ী তাদের চিকিৎসা এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং করবে কর্তৃপক্ষ।

করোনা পজেটিভ যাত্রীদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন অথবা হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। সে সময় রাজ্য সরকারের করোনা প্রোটোকল অনুযায়ী করোনা পজেটিভ রোগীদের কঠোর কোয়ারেন্টিন বিধি মেনে চলতে হবে।

আগের সব ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় সম্ভাব্য অতি-সংক্রামক ওমিক্রন গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, বতসোয়ানা, ব্রিটেন, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ইসরায়েল, ইতালি, নেদারল্যান্ডস এবং স্কটল্যান্ডে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।

শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা করোনাভাইরাসের বি.১.১.৫২৯ রূপটিকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ‘এই ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতার মাত্রা বোঝার জন্য কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। এক ব্যক্তির দেহ থেকে অন্যের দেহে কোন ভাইরাস যত সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেই ভাইরাস তত বেশি সংক্রামক। করোনাভাইরাসের ডেল্টা এবং অন্য রূপের তুলনায় ওমিক্রন বেশি সংক্রামক কি-না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা এই রূপকে ধরতে সক্ষম বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। কোভিডের বিভিন্ন টিকার ওপর এই ভাইরাসের প্রভাব কতটা তা জানার জন্য কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা।