মাইনুদ্দিনের পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন চাকায় পিষ্ট

‘বাবা আমার পরীক্ষা কিন্তু শেষ। রেজাল্টের পর আমারে কিন্তু বড় একটা কলেজে ভর্তি করাইতে হইব।’ গত সোমবার সকালে বাবা আবদুর রহমান ভান্ডারীকে এ কথা বলেছিলেন সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেয়া ছেলে মাইনুদ্দিন। পরিবার ও মাইনুদ্দিনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে পুলিশ হওয়ার। কিন্তু সকলের সেই লালিত স্বপ্ন বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এখন না ফেরার দেশে স্বপ্নবাজ ছেলেটি। গত সোমবার রাতে রামপুরায় অনাবিল বাস চাপায় নিহত হন তিনি।

গতকাল দুপুরে অস্ফুট স্বরে কথাগুলো বলছিলেন নিহত মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের বাবা আবদুর রহমান। ছেলের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। মা রাশিদা বেগমও দুর্ঘটনার পর থেকে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। মাইনুদ্দিনের কথা, স্বপ্ন আর স্মৃতি পীড়া দেয় তাদের। যেন মুহূর্তের জন্যও মাইনুদ্দিনকে ভুলতে পারছেন না পরিবার, পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীরা। শেষ বারের মতো তার নিথর দেহটি এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, পাড়াপ্রতিবেশী ও স্কুল শিক্ষকরাও।

তার মৃত্যুর প্রতিবাদে ও বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন নিজ প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা পুরো রামপুরা এলাকার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ও নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে ছোট-বড় সব যানের কাগজ, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করছেন। প্রতিবাদে ফুলে ফেঁপে উঠছেন তারা। এদিকে এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় মাইনুদ্দিনকে চাপা দেয়া বাসের চালক সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। বাসের হেলপার চাঁন মিয়াকেও গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তবে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছে।

নিহত মাইনুদ্দিন তার পরিবারের সঙ্গে পূর্ব রামপুরার তিতাস গলিতে থাকতেন। ছোট্ট একটি ঘরে বাবা-মার সঙ্গে মাইনুদ্দিনের বসবাস ছিল। বড় ভাই মনির প্রাইভেটকার চালক। আর বোন স্বামী-সন্তান নিয়ে তিতাস গলিতেই থাকেন। সবার ছোট হওয়ায় খুব আদরে রাখতেন মাইনুদ্দিনকে। বাবা আবদুর রহমান বাসার সামনের গলিতে চা দোকানি। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবার। স্কুল শেষে বাবার চা দোকানে বসে প্রায় বাবাকে সহায়তা করতেন মাইনুদ্দিন। তখন বাবা-পুত্রের সঙ্গে অনেক কথা হতো, ভালো বুঝাপড়াও ছিল তাদের। তাই তো আদরের ছেলেকে মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারছেন না আবদুর রহমান।

আবদুর রহমান বলেন, সকালে ওয় যখন আমাকে ভালো কলেজে ভর্তির কথা কইলো, তখন আমি কইলাম, অবশ্যই বাবা। তরে ভালো কলেজে ভর্তি করুম। দশ ঘর ভাইঙ্গা (সম্পদ বিক্রি করে) হইলেও আমি তরে ভালো কলেজে ভর্তি করুম। তুমি ভালো মতো পড়বা। ভালোভাবে চলাফেরা করবা। রাতে হঠাৎ বাইরে থাইকা একজন আইসা বলল, ভাই তাড়াতাড়ি বাইর হন, মাইনুদ্দিনের অবস্থা ভালা না। গিয়া দেখি ওয়...। কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন আবদুর রহমান। পরক্ষণে কিছু একটা বলতে চেয়েও গলায় আটকে গেল। আবারও কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলেন না। দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকার পর হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। বুক চাপড়িয়ে বললেন, আমার মানিক রতন, কই গেলি রে..। আল্লাহ, ও আল্লাহ রে তুমি আমার পোলাটারে ফিরাইয়া দেও। পুত্রহারা বাবার এমন করুণ দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবার নেত্রকোণে বিন্দু জলের আভাস সহজেই টের পাওয়া গেল। তাকে সান্ত¡না দেয়ার ভাষা যেন কারও জানা নেই। পাশে বসে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলে তাকে সান্ত¡না দেয়ার নিছক চেষ্টা করছিলেন মাইনুদ্দিনের বেয়াইন নূরজাহান।

মঙ্গলবার সকাল পর্যন্তও ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি মা রাশেদা বেগমকে। তাকে বলা হয়েছে মাইনুদ্দিনের শরীর ভালো নয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়েছে। তবে ছেলে হারানোর বিষয়টি ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছেন মা। বাড়িতে চিৎকার করে বলছিলেন, এখন কেন আমার পোলারে ঢাকা মেডিকেল নিয়া যাইব? আমি সব বুঝি, টিভি ছাড় আমি দেখমু আমার পোলা কই।

রাশেদা বেগম আর আবদুর রহমান দম্পতি মিলে তাদের চায়ের দোকানটি পালা করে চালিয়ে নিচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সে দোকানে সোমবার রাত থেকে তালা দেয়া। সবাই মেয়ে জুমার বাসার সামনে বসে আছেন।

দোকানের সামনে দাঁড়াতেই বয়স্ক এক নারী হাত দিয়ে দেখালেন, এই বেঞ্চটায় কাল বিকেলেও বসেছিল ছেলেটা। গোসল-খাওয়ার জন্য দুপুরে বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে ঘণ্টা দুই নিজেই দোকান চালাত। অভাবী সংসারে থেকেও ছেলেটার পড়ালেখা আর খেলাধুলার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। সবার সঙ্গে ডেকে ডেকে হেসে আলাপ করতো বলে ওকে একনামে চেনে সব বয়সী মানুষ। এ দোকানের মুখোমুখি গলিতেই মাইনুদ্দিনদের সেই ভাড়া বাড়ি। অন্য একজন এগিয়ে এসে নিয়ে গেল ওর মায়ের কাছে।

ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথোপকথন নিয়ে তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায় মাইনুদ্দিন। যাওয়ার আগে আমার কাছ থেকে পাঁচ টাকা নেয় বুট খাবে বলে। ওই দিন দুপুরের পর বাসা থেকে বের হয়। বের হতে হতে ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিল, তখন শুনছিলাম উলন যাবে। এরপর রাতে এ ঘটনা শুনি। সেখানে এসে ভিড় জমান পাড়া প্রতিবেশী, মাইনুদ্দিনের সহপাঠী ও শিক্ষকরাও। মাইনুদ্দিন যে স্কুলে পড়েছেন, সেই একরামুন্নেছা স্কুলের শিক্ষিকা শামসুন্নাহার রানু বলেন, পরীক্ষার আগে সম্ভবত ৮/৯ তারিখে এডমিট কার্ড আনতে স্কুলে যায় মাইনুদ্দিন। তখন ব্যস্ততার কারণে তেমন কথা বলা সম্ভব হয়নি। অত্যন্ত ভদ্র ছিল মাইনুদ্দিন। ছাত্র হিসেবেও ভালো ছিল। এরকম ডানপিঠে একটা ছেলে হঠাৎ করে নাই হয়ে যাবে, ভাবতেই পারছি না।

এদিকে মাইনুদ্দিনের মৃত্যুর বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও সড়কে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে বিএএফ শাহীন কলেজ, ইম্পেরিয়াল, একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আবুজর গিফারী, খিলগাঁও আইডিয়াল, ন্যাশনাল আইডিয়াল, কোয়ালিটি কলেজ, নটর ডেম, ঢাকা কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরার দুপাশের সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন। বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে আবুল হোটেল থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এর মধ্যে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপাশ দিয়ে যাওয়া-আসা করা ছোট-বড় সব যানের কাগজ ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করেন তারা। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হলেও তারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা আগ্রহ প্রকাশ করেননি এবং আন্দোলন চালিয়ে যান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ সড়কে বসে স্লোগান দিচ্ছেন, আরেক অংশ গাড়ির কাগজপত্র চেক করছেন। ‘আমার বাবা কাঁদছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে, ছাত্রজনতা ঐক্য গড়ো, নিরাপদ সড়কের দাবি তোলো, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, অ্যাম আই নেক্সট, রাতের আঁধারে শিক্ষার্থী মরে, প্রশাসন ঘুম পাড়ে’ এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো রামপুরা এলাকা। আবুজর গিফারী কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন বলেন, আমরা আমাদের সহপাঠী মাইনুদ্দিনের মৃত্যুর বিচার চাই। সড়কে এভাবে তাজা প্রাণ আমরা আর মেনে নিতে পারবো না। আজ মাইনুদ্দিন, কাল তো আমিও হতে পারি!

এ সময় শিক্ষার্থীরা মাইনুদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার চাওয়া ছাড়া গণপরিবহনে হাফ পাস নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন। দুপুরে শিক্ষার্থীদের কাগজ যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাস্তায় বিআরটিসির একটি বাস ফেলে পালিয়ে গেছেন চালক ও তার সহকারী। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলের কারণে কোন রোগী ও পরীক্ষার্থীর যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সে জন্য জরুরি লেন করে কিছু গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি।

দুপুরে দেখা যায়, আন্দোলন চলাকালীন আশপাশের দোকানি, পাশের বাসার বাসিন্দারা জানালা দিয়ে আন্দোলন দেখছেন। যে স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, রশি দিয়ে সেই স্থানটির চারপাশ অবরুদ্ধ রাখে পুলিশ। সেখানে দাঁড়িয়েও অনেক পথচারীকে ঘটনাস্থলের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ বলছেন, রাতে ছবিতে দেখেছি মাথার মগজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। মনে হয় এগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। এ সময় পাশেই একটি রক্ত মাখা জুতা দেখা যায়। পথচারীদের একজন সেটি দেখিয়ে বলছেন, এই জুতা মাইনুদ্দিনের হবে। দেখেন না, রক্তে ভরা। সাদা ওই একখানা জুতায় রক্তের দাগ জানান দিচ্ছে, কতোটা নির্মমভাবে মৃত্যু হয়েছে মাইনুদ্দিনের।

বেলা পৌনে ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণা দেন খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। নিরাপদ সড়কের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের এ যৌক্তিক আন্দোলন আরও দীর্ঘায়িত করতে আজকের মতো আমরা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি।

আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের একাংশ মাইনুদ্দিনের বাসায় যান। এ সময় মাইনুদ্দিনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে সেখানে নেয়া হয়। তার নিথর দেহ এক নজর দেখতে সেখানে ভিড় জমান আত্মীয় স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী। কান্নায় ভেঙে পড়েন উপস্থিত অনেকেই। দোকানপাট বন্ধ রেখে আশপাশের লোকজন মাইনুদ্দিনের জানাজায় অংশ নেন। এসময় পুরো তিতাস গলি জুড়ে যেন শোকের ছায়া নেমে আসে। বিকেলে মাইনুদ্দিনের ভাগিনা রাকিব জানান, ওখানে (তিতাস গলিতে) জানাজা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষ্মবাড়িয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই দাফন করা হবে।

এদিকে এ ঘটনায় নিহত মাইনুদ্দিনের মা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়া মাইনুদ্দিন নিহত হওয়ার জেরে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।

রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, নিহত শিক্ষার্থীর মা রাশেদা বেগম বাদী হয়ে নিরাপদ সড়ক আইনে একটি মামলা করেন। এ মামলায় অনাবিল পরিবহনের বাসচালক সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন। আর মাইনুদ্দিন নিহত হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। এ মামলায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা বাসচালককে গণধোলাই দেয়, এতে সে আহত হয়।

উত্তেজিত জনতা ৭টি বাসে আগুন আর ৩টি বাস ভাঙচুর করেছে বলে পুলিশ জানালেও ফায়ার সার্ভিস বলছে, তারা মোট ১২টি বাস ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পেয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) হাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে এসে আমরা ১২টি বাস বিধ্বস্ত অবস্থায় পেয়েছি। এর মধ্যে চারটি বাসে ভাঙচুর ও বাকি আটটিতে আগুন দেয়া হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত বাসের হেলপার চাঁন মিয়াকে আটক করেছে র?্যাব-৩। মঙ্গলবার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। র‌্যাব জানিয়েছে, অতিরিক্ত গতির কারণে বাসটি তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তাই প্রথমে মাইনুদ্দিনকে ধাক্কা দেয় বাসটি। ধাক্কার পর ছিটকে পড়ে বাসের নিচেই চাপা পড়ে মারা যান মাইনুদ্দিন। দুর্ঘটনার পর ঢাকা ছেড়ে তার পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

image

সড়কে শিক্ষার্থীর মৃত্যু। পরিবারে শোকের আহাজারি, মা পুলিশের কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, আমার ছেলেতো পুলিশ হতে চেয়েছিল, তার স্বপ্ন ভেঙে দিল যারা তাদের বিচার চাই -সংবাদ

আরও খবর
এক মাসে আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী
হারে শুরু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ
ভোটের সহিংসতায় ৩০ দিনে নিহত ৪৭
কাজ শেষে টেন্ডার
এইচএসসি পরীক্ষা শুরু কাল
শুধু ঢাকা মহানগরীতে অর্ধেক ভাড়া চালুর ঘোষণা

বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১ , ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

মাইনুদ্দিনের পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন চাকায় পিষ্ট

মাসুদ রানা

image

সড়কে শিক্ষার্থীর মৃত্যু। পরিবারে শোকের আহাজারি, মা পুলিশের কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, আমার ছেলেতো পুলিশ হতে চেয়েছিল, তার স্বপ্ন ভেঙে দিল যারা তাদের বিচার চাই -সংবাদ

‘বাবা আমার পরীক্ষা কিন্তু শেষ। রেজাল্টের পর আমারে কিন্তু বড় একটা কলেজে ভর্তি করাইতে হইব।’ গত সোমবার সকালে বাবা আবদুর রহমান ভান্ডারীকে এ কথা বলেছিলেন সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেয়া ছেলে মাইনুদ্দিন। পরিবার ও মাইনুদ্দিনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে পুলিশ হওয়ার। কিন্তু সকলের সেই লালিত স্বপ্ন বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এখন না ফেরার দেশে স্বপ্নবাজ ছেলেটি। গত সোমবার রাতে রামপুরায় অনাবিল বাস চাপায় নিহত হন তিনি।

গতকাল দুপুরে অস্ফুট স্বরে কথাগুলো বলছিলেন নিহত মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের বাবা আবদুর রহমান। ছেলের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। মা রাশিদা বেগমও দুর্ঘটনার পর থেকে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। মাইনুদ্দিনের কথা, স্বপ্ন আর স্মৃতি পীড়া দেয় তাদের। যেন মুহূর্তের জন্যও মাইনুদ্দিনকে ভুলতে পারছেন না পরিবার, পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীরা। শেষ বারের মতো তার নিথর দেহটি এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, পাড়াপ্রতিবেশী ও স্কুল শিক্ষকরাও।

তার মৃত্যুর প্রতিবাদে ও বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন নিজ প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা পুরো রামপুরা এলাকার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ও নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে ছোট-বড় সব যানের কাগজ, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করছেন। প্রতিবাদে ফুলে ফেঁপে উঠছেন তারা। এদিকে এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় মাইনুদ্দিনকে চাপা দেয়া বাসের চালক সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। বাসের হেলপার চাঁন মিয়াকেও গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তবে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছে।

নিহত মাইনুদ্দিন তার পরিবারের সঙ্গে পূর্ব রামপুরার তিতাস গলিতে থাকতেন। ছোট্ট একটি ঘরে বাবা-মার সঙ্গে মাইনুদ্দিনের বসবাস ছিল। বড় ভাই মনির প্রাইভেটকার চালক। আর বোন স্বামী-সন্তান নিয়ে তিতাস গলিতেই থাকেন। সবার ছোট হওয়ায় খুব আদরে রাখতেন মাইনুদ্দিনকে। বাবা আবদুর রহমান বাসার সামনের গলিতে চা দোকানি। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবার। স্কুল শেষে বাবার চা দোকানে বসে প্রায় বাবাকে সহায়তা করতেন মাইনুদ্দিন। তখন বাবা-পুত্রের সঙ্গে অনেক কথা হতো, ভালো বুঝাপড়াও ছিল তাদের। তাই তো আদরের ছেলেকে মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারছেন না আবদুর রহমান।

আবদুর রহমান বলেন, সকালে ওয় যখন আমাকে ভালো কলেজে ভর্তির কথা কইলো, তখন আমি কইলাম, অবশ্যই বাবা। তরে ভালো কলেজে ভর্তি করুম। দশ ঘর ভাইঙ্গা (সম্পদ বিক্রি করে) হইলেও আমি তরে ভালো কলেজে ভর্তি করুম। তুমি ভালো মতো পড়বা। ভালোভাবে চলাফেরা করবা। রাতে হঠাৎ বাইরে থাইকা একজন আইসা বলল, ভাই তাড়াতাড়ি বাইর হন, মাইনুদ্দিনের অবস্থা ভালা না। গিয়া দেখি ওয়...। কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন আবদুর রহমান। পরক্ষণে কিছু একটা বলতে চেয়েও গলায় আটকে গেল। আবারও কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলেন না। দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকার পর হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। বুক চাপড়িয়ে বললেন, আমার মানিক রতন, কই গেলি রে..। আল্লাহ, ও আল্লাহ রে তুমি আমার পোলাটারে ফিরাইয়া দেও। পুত্রহারা বাবার এমন করুণ দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবার নেত্রকোণে বিন্দু জলের আভাস সহজেই টের পাওয়া গেল। তাকে সান্ত¡না দেয়ার ভাষা যেন কারও জানা নেই। পাশে বসে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলে তাকে সান্ত¡না দেয়ার নিছক চেষ্টা করছিলেন মাইনুদ্দিনের বেয়াইন নূরজাহান।

মঙ্গলবার সকাল পর্যন্তও ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি মা রাশেদা বেগমকে। তাকে বলা হয়েছে মাইনুদ্দিনের শরীর ভালো নয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়েছে। তবে ছেলে হারানোর বিষয়টি ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছেন মা। বাড়িতে চিৎকার করে বলছিলেন, এখন কেন আমার পোলারে ঢাকা মেডিকেল নিয়া যাইব? আমি সব বুঝি, টিভি ছাড় আমি দেখমু আমার পোলা কই।

রাশেদা বেগম আর আবদুর রহমান দম্পতি মিলে তাদের চায়ের দোকানটি পালা করে চালিয়ে নিচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সে দোকানে সোমবার রাত থেকে তালা দেয়া। সবাই মেয়ে জুমার বাসার সামনে বসে আছেন।

দোকানের সামনে দাঁড়াতেই বয়স্ক এক নারী হাত দিয়ে দেখালেন, এই বেঞ্চটায় কাল বিকেলেও বসেছিল ছেলেটা। গোসল-খাওয়ার জন্য দুপুরে বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে ঘণ্টা দুই নিজেই দোকান চালাত। অভাবী সংসারে থেকেও ছেলেটার পড়ালেখা আর খেলাধুলার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। সবার সঙ্গে ডেকে ডেকে হেসে আলাপ করতো বলে ওকে একনামে চেনে সব বয়সী মানুষ। এ দোকানের মুখোমুখি গলিতেই মাইনুদ্দিনদের সেই ভাড়া বাড়ি। অন্য একজন এগিয়ে এসে নিয়ে গেল ওর মায়ের কাছে।

ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথোপকথন নিয়ে তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায় মাইনুদ্দিন। যাওয়ার আগে আমার কাছ থেকে পাঁচ টাকা নেয় বুট খাবে বলে। ওই দিন দুপুরের পর বাসা থেকে বের হয়। বের হতে হতে ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিল, তখন শুনছিলাম উলন যাবে। এরপর রাতে এ ঘটনা শুনি। সেখানে এসে ভিড় জমান পাড়া প্রতিবেশী, মাইনুদ্দিনের সহপাঠী ও শিক্ষকরাও। মাইনুদ্দিন যে স্কুলে পড়েছেন, সেই একরামুন্নেছা স্কুলের শিক্ষিকা শামসুন্নাহার রানু বলেন, পরীক্ষার আগে সম্ভবত ৮/৯ তারিখে এডমিট কার্ড আনতে স্কুলে যায় মাইনুদ্দিন। তখন ব্যস্ততার কারণে তেমন কথা বলা সম্ভব হয়নি। অত্যন্ত ভদ্র ছিল মাইনুদ্দিন। ছাত্র হিসেবেও ভালো ছিল। এরকম ডানপিঠে একটা ছেলে হঠাৎ করে নাই হয়ে যাবে, ভাবতেই পারছি না।

এদিকে মাইনুদ্দিনের মৃত্যুর বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও সড়কে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে বিএএফ শাহীন কলেজ, ইম্পেরিয়াল, একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আবুজর গিফারী, খিলগাঁও আইডিয়াল, ন্যাশনাল আইডিয়াল, কোয়ালিটি কলেজ, নটর ডেম, ঢাকা কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরার দুপাশের সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন। বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে আবুল হোটেল থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এর মধ্যে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপাশ দিয়ে যাওয়া-আসা করা ছোট-বড় সব যানের কাগজ ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করেন তারা। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হলেও তারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা আগ্রহ প্রকাশ করেননি এবং আন্দোলন চালিয়ে যান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ সড়কে বসে স্লোগান দিচ্ছেন, আরেক অংশ গাড়ির কাগজপত্র চেক করছেন। ‘আমার বাবা কাঁদছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে, ছাত্রজনতা ঐক্য গড়ো, নিরাপদ সড়কের দাবি তোলো, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, অ্যাম আই নেক্সট, রাতের আঁধারে শিক্ষার্থী মরে, প্রশাসন ঘুম পাড়ে’ এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো রামপুরা এলাকা। আবুজর গিফারী কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন বলেন, আমরা আমাদের সহপাঠী মাইনুদ্দিনের মৃত্যুর বিচার চাই। সড়কে এভাবে তাজা প্রাণ আমরা আর মেনে নিতে পারবো না। আজ মাইনুদ্দিন, কাল তো আমিও হতে পারি!

এ সময় শিক্ষার্থীরা মাইনুদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার চাওয়া ছাড়া গণপরিবহনে হাফ পাস নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন। দুপুরে শিক্ষার্থীদের কাগজ যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাস্তায় বিআরটিসির একটি বাস ফেলে পালিয়ে গেছেন চালক ও তার সহকারী। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলের কারণে কোন রোগী ও পরীক্ষার্থীর যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সে জন্য জরুরি লেন করে কিছু গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি।

দুপুরে দেখা যায়, আন্দোলন চলাকালীন আশপাশের দোকানি, পাশের বাসার বাসিন্দারা জানালা দিয়ে আন্দোলন দেখছেন। যে স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, রশি দিয়ে সেই স্থানটির চারপাশ অবরুদ্ধ রাখে পুলিশ। সেখানে দাঁড়িয়েও অনেক পথচারীকে ঘটনাস্থলের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ বলছেন, রাতে ছবিতে দেখেছি মাথার মগজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। মনে হয় এগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। এ সময় পাশেই একটি রক্ত মাখা জুতা দেখা যায়। পথচারীদের একজন সেটি দেখিয়ে বলছেন, এই জুতা মাইনুদ্দিনের হবে। দেখেন না, রক্তে ভরা। সাদা ওই একখানা জুতায় রক্তের দাগ জানান দিচ্ছে, কতোটা নির্মমভাবে মৃত্যু হয়েছে মাইনুদ্দিনের।

বেলা পৌনে ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণা দেন খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। নিরাপদ সড়কের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের এ যৌক্তিক আন্দোলন আরও দীর্ঘায়িত করতে আজকের মতো আমরা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি।

আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের একাংশ মাইনুদ্দিনের বাসায় যান। এ সময় মাইনুদ্দিনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে সেখানে নেয়া হয়। তার নিথর দেহ এক নজর দেখতে সেখানে ভিড় জমান আত্মীয় স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী। কান্নায় ভেঙে পড়েন উপস্থিত অনেকেই। দোকানপাট বন্ধ রেখে আশপাশের লোকজন মাইনুদ্দিনের জানাজায় অংশ নেন। এসময় পুরো তিতাস গলি জুড়ে যেন শোকের ছায়া নেমে আসে। বিকেলে মাইনুদ্দিনের ভাগিনা রাকিব জানান, ওখানে (তিতাস গলিতে) জানাজা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষ্মবাড়িয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই দাফন করা হবে।

এদিকে এ ঘটনায় নিহত মাইনুদ্দিনের মা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়া মাইনুদ্দিন নিহত হওয়ার জেরে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।

রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, নিহত শিক্ষার্থীর মা রাশেদা বেগম বাদী হয়ে নিরাপদ সড়ক আইনে একটি মামলা করেন। এ মামলায় অনাবিল পরিবহনের বাসচালক সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন। আর মাইনুদ্দিন নিহত হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। এ মামলায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা বাসচালককে গণধোলাই দেয়, এতে সে আহত হয়।

উত্তেজিত জনতা ৭টি বাসে আগুন আর ৩টি বাস ভাঙচুর করেছে বলে পুলিশ জানালেও ফায়ার সার্ভিস বলছে, তারা মোট ১২টি বাস ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পেয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) হাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে এসে আমরা ১২টি বাস বিধ্বস্ত অবস্থায় পেয়েছি। এর মধ্যে চারটি বাসে ভাঙচুর ও বাকি আটটিতে আগুন দেয়া হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত বাসের হেলপার চাঁন মিয়াকে আটক করেছে র?্যাব-৩। মঙ্গলবার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। র‌্যাব জানিয়েছে, অতিরিক্ত গতির কারণে বাসটি তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তাই প্রথমে মাইনুদ্দিনকে ধাক্কা দেয় বাসটি। ধাক্কার পর ছিটকে পড়ে বাসের নিচেই চাপা পড়ে মারা যান মাইনুদ্দিন। দুর্ঘটনার পর ঢাকা ছেড়ে তার পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।