আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রত্যাখ্যান
শুধু ঢাকা মহানগরীতে শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিতে সম্মত হয়েছে সড়ক পরিবহন মালিকরা। যা আজ থেকে কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
তবে ঢাকা মহানগরীর শর্তসাপেক্ষের এই ‘হাফ’ ভাড়া নেয়ার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের নয় দফা দাবি বাস্তবায়নে আজ সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করা হয়।
গতকাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে বুধবার থেকেই ঢাকা মহানগর এলাকায় বাসে ছাত্রছাত্রীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর হবে। তবে বাসে ‘হাফ’ ভাড়া দেয়া যাবে কেবল সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৮টার মধ্যে। সরকারি ছুটির দিন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ছুটির দিনে ‘হাফ’ ভাড়া দেয়ার সুযোগ থাকবে না।
অর্ধেক ভাড়া দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়া ছবিযুক্ত আইডি কার্ড দেখাতে হবে। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রো এলাকার জন্য কার্যকর হবে, কোনভাবে ঢাকার বাইরের জন্য কার্যকর হবে না। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের ব্যাপারে গত কয়েক দিনে আমরা দফায় দফায় সভা করেছি। ঢাকার ১২০টি পরিবহন কোম্পানির এমডি চেয়ারম্যান ও পাঁচটি পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ছাত্রদের যে দাবি, সে দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তা কার্যকর করার জন্য পহেলা ডিসেম্বর থেকে হাফ ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, ছাত্ররা যেন হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’
কেবল ঢাকার জন্য কেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সেই প্রশ্ন তুলে একজন সাংবাদিক জানতে চান, অন্য শহরেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্য মালিকরা ‘অপেক্ষা’ করছেন কিনা।
উত্তরে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘অর্ধেক ভাড়া নেয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। ছাত্ররা আন্দোলন করুক, তা তারা চান না। ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন এখন থেকে পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়। রাস্তায় এই ধরনের আন্দোলন না করে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে ফেরত যায়।’
তিন দিন আগেও বিআরটিএ এর সঙ্গে বৈঠকে পরিবহন মালিকরা শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে নারাজ ছিলেন, উল্টো ভর্তুকির দাবি তুলেছিলেন। সেই অবস্থান থেকে তারা সরে এসেছেন কিনা তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।
এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘ঢাকা শহরের বাস মালিকরা গরিব মালিক, ৮০ শতাংশই গরিব মালিক। কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক এটাই বাস্তব। অনেক মালিক আছেন যার একটি গাড়ি। সেটা থেকে তাদের পরিবারের খরচ চালাতে হয়, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। ৪০ শতাংশ আছেন যারা চালক থেকে মালিক হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বিবেচনায় করবেন বলে আমরা আশা করি।’
শর্তসাপেক্ষের ‘হাফ’ ভাড়া প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের
তবে মালিক সমিতির এই ঘোষণা প্রত্যাহার করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র কার্যালয়ে সংস্থার চেয়ারম্যানের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। পরে সাংবাদিদের সামনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তাদের নয় দফা দাবিগুলো হলো- নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা, সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি, বৈধ-অবৈধ যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনা, বিআরটিএ’র সব কার্যক্রমে নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সারাদেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ সুনিশ্চিত করা, গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং স্পেস নির্মাণ এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি, স্টেট কলেজের শিক্ষার্থী এনজামুল হক রামিম বলেন, নয় দফা দাবিতে বুধবার সারাদেশে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। তার সঙ্গে সন্তোষজনক আলোচনা হয়নি। আবার তার সঙ্গে কথা হবে।’
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক কবি নজরুল কলেজের ছাত্র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বাস মালিকদের নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ শর্তসাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা আমরা মানছি না। ঢাকার বাইরেও লাখ লাখ শিক্ষার্থী বাসে যাতায়াত করে। শিক্ষার্থীদের অনেকে ভোর ৬টায় উঠে বাসে করে কোচিংয়ে যায়, ক্লাস ধরতে যায়। অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি শেষে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে। তাদের ক্ষেত্রে কি হবে?’
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এর পর থেকেই বাসে আগের মতো অর্ধেক ভাড়া দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। ২৪ নভেম্বর সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। পরদিন পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
এরপর ২৬ নভেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে। সেজন্য ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি বাসে চলাচলে এ সুবিধা পাবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির দিনে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না বলে সেদিন জানান মন্ত্রী।
বেসরকারি বাসেও শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম চালু করতে ২৫ ও ২৭ নভেম্বর পরিবহন মালিকদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেসব বৈঠক শেষ হয়। এ পরিস্থিতির মধ্যেই গত সোমবার রাতে পূর্ব রামপুরার ডিআইটি রোডে অনাবিল বাসের চাপায় প্রাণ যায় মো. মাইনউদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীর, যে এবারই একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি দিয়েছিল।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গ্রিন অনাবিল পরিবহনের বাসটিসহ অন্তত আটটি বাসে তারা আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। বাস চাপায় ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল রামপুরা, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সড়ক পরিবহন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তারা। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তারা।
বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১ , ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৩
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রত্যাখ্যান
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
শুধু ঢাকা মহানগরীতে শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিতে সম্মত হয়েছে সড়ক পরিবহন মালিকরা। যা আজ থেকে কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
তবে ঢাকা মহানগরীর শর্তসাপেক্ষের এই ‘হাফ’ ভাড়া নেয়ার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের নয় দফা দাবি বাস্তবায়নে আজ সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করা হয়।
গতকাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে বুধবার থেকেই ঢাকা মহানগর এলাকায় বাসে ছাত্রছাত্রীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর হবে। তবে বাসে ‘হাফ’ ভাড়া দেয়া যাবে কেবল সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৮টার মধ্যে। সরকারি ছুটির দিন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ছুটির দিনে ‘হাফ’ ভাড়া দেয়ার সুযোগ থাকবে না।
অর্ধেক ভাড়া দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়া ছবিযুক্ত আইডি কার্ড দেখাতে হবে। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রো এলাকার জন্য কার্যকর হবে, কোনভাবে ঢাকার বাইরের জন্য কার্যকর হবে না। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের ব্যাপারে গত কয়েক দিনে আমরা দফায় দফায় সভা করেছি। ঢাকার ১২০টি পরিবহন কোম্পানির এমডি চেয়ারম্যান ও পাঁচটি পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ছাত্রদের যে দাবি, সে দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তা কার্যকর করার জন্য পহেলা ডিসেম্বর থেকে হাফ ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, ছাত্ররা যেন হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’
কেবল ঢাকার জন্য কেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সেই প্রশ্ন তুলে একজন সাংবাদিক জানতে চান, অন্য শহরেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্য মালিকরা ‘অপেক্ষা’ করছেন কিনা।
উত্তরে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘অর্ধেক ভাড়া নেয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। ছাত্ররা আন্দোলন করুক, তা তারা চান না। ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন এখন থেকে পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়। রাস্তায় এই ধরনের আন্দোলন না করে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে ফেরত যায়।’
তিন দিন আগেও বিআরটিএ এর সঙ্গে বৈঠকে পরিবহন মালিকরা শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে নারাজ ছিলেন, উল্টো ভর্তুকির দাবি তুলেছিলেন। সেই অবস্থান থেকে তারা সরে এসেছেন কিনা তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।
এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘ঢাকা শহরের বাস মালিকরা গরিব মালিক, ৮০ শতাংশই গরিব মালিক। কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক এটাই বাস্তব। অনেক মালিক আছেন যার একটি গাড়ি। সেটা থেকে তাদের পরিবারের খরচ চালাতে হয়, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। ৪০ শতাংশ আছেন যারা চালক থেকে মালিক হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বিবেচনায় করবেন বলে আমরা আশা করি।’
শর্তসাপেক্ষের ‘হাফ’ ভাড়া প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের
তবে মালিক সমিতির এই ঘোষণা প্রত্যাহার করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র কার্যালয়ে সংস্থার চেয়ারম্যানের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। পরে সাংবাদিদের সামনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তাদের নয় দফা দাবিগুলো হলো- নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা, সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি, বৈধ-অবৈধ যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনা, বিআরটিএ’র সব কার্যক্রমে নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সারাদেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ সুনিশ্চিত করা, গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং স্পেস নির্মাণ এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি, স্টেট কলেজের শিক্ষার্থী এনজামুল হক রামিম বলেন, নয় দফা দাবিতে বুধবার সারাদেশে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। তার সঙ্গে সন্তোষজনক আলোচনা হয়নি। আবার তার সঙ্গে কথা হবে।’
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক কবি নজরুল কলেজের ছাত্র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বাস মালিকদের নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ শর্তসাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা আমরা মানছি না। ঢাকার বাইরেও লাখ লাখ শিক্ষার্থী বাসে যাতায়াত করে। শিক্ষার্থীদের অনেকে ভোর ৬টায় উঠে বাসে করে কোচিংয়ে যায়, ক্লাস ধরতে যায়। অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি শেষে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে। তাদের ক্ষেত্রে কি হবে?’
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এর পর থেকেই বাসে আগের মতো অর্ধেক ভাড়া দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। ২৪ নভেম্বর সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। পরদিন পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
এরপর ২৬ নভেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে। সেজন্য ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি বাসে চলাচলে এ সুবিধা পাবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির দিনে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না বলে সেদিন জানান মন্ত্রী।
বেসরকারি বাসেও শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম চালু করতে ২৫ ও ২৭ নভেম্বর পরিবহন মালিকদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেসব বৈঠক শেষ হয়। এ পরিস্থিতির মধ্যেই গত সোমবার রাতে পূর্ব রামপুরার ডিআইটি রোডে অনাবিল বাসের চাপায় প্রাণ যায় মো. মাইনউদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীর, যে এবারই একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি দিয়েছিল।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গ্রিন অনাবিল পরিবহনের বাসটিসহ অন্তত আটটি বাসে তারা আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। বাস চাপায় ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল রামপুরা, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সড়ক পরিবহন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তারা। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তারা।