নিজেকেই দায়ী করলেন মোমিনুল

পাকিস্তানের কাছে সিরিজের প্রথম টেস্ট হারের জন্য টপ অর্ডার এবং নিজের রান না পাওয়াকে দায়ী করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক। তিনি জানান, প্রথম টেস্ট হারের জন্য এটি পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড পাওয়া সত্বেও ৮ উইকেটে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।

ম্যাচে  প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর লিটন দাসের সেঞ্চুরি এবং অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ৯১ রানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। এরপর বল হাতে বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ১১৬ রানে ৭ উইকেট নেন। এতে প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ৪৪ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।

তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আবারো ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এবার একাই লড়াই করেন লিটন দাস। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর ৫৯ রান করেন তিনি।

টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১টি সেঞ্চুরির সাতটিই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে করেছেন মোমিনুল। তবে এ ম্যাচে ৬ ও ০ রান করেন তিনি।

পঞ্চম দিনে মাত্র দুই ঘন্টায় ম্যাচ শেষ হবার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল বলেন, ‘দুই দলের টপ-অর্ডারের পারফরমেন্সেই এ ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। দুই ইনিংসেই আমরা ৪০ রানে ৪ উইকেট হারাই। কিন্তু তাদের ওপেনাররা দুই ইনিংসেই ১শ রানের জুটি গড়েছিলো। মুশফিক-লিটন ভালো ব্যাটিং করেছে। প্রথম ইনিংসে তাইজুল ৭ উইকেট নিয়েছে। কিন্তু দল হিসেবে আমরা ভালো করতে পারিনি। আমরা বোলারদের ভালো সুযোগ করে দিতে পারিনি। টপ-অর্ডার ক্লিক করলে  বোলাররা আমাদের জয়ের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারত।’ টেস্ট জয়ের জন্য দল হিসেবে খেলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন  বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো দল শুধু ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের উপর নির্ভর করতে পারে না। যে কোন টেস্ট জিততে হলে আমাদের ইউনিট হিসেবে খেলতে হবে। টেস্টে আমাদের একটা সুযোগ ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেটাকে পুঁজি করতে পারিনি।’

টপ-অর্ডারের সঙ্গে নিজের ব্যর্থতাকেও দায়ী করছেন মোমিনুল।  তিনি বলেন, ‘টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে ম্যাচে ফিরে আসা সব সময়ই কঠিন। আমি জানি, এটি বারবার ঘটছে। তবে আমাদের এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি- টপ অর্ডারের সঙ্গে আমারও দায় আছে।’ অভিজ্ঞতার দিক থেকে পাকিস্তানের বোলার বা ব্যাটাররা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের চেয়ে কোন অংশে এগিয়ে ছিলেন না। আসলে বেশিরভাগ পাকিস্তানি খেলোয়াড়ই বাংলাদেশের খেলোয়াদের চেয়ে কম টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু তারপরও দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ব্যক্তিগত দক্ষতা ফুটে উঠেছে।

শাহিন শাহ আফ্রিদির মতো বোলার গতি এবং আগ্রাসন দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশি পেসাররা পাকিস্তানি ব্যাটারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি।

পাকিস্তানের  হয়ে অভিষেক হওয়া ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক এ ম্যাচে জোড়া হাফ-সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু বাংলাদেশের ওপেনারদের কোন পারফরমেন্সই ছিল না। অথচ বেশ কয়েকটি টেস্ট খেলেছেন তারা।

মোমিনুল জানান, সব দিক দিয়ে আরও দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং সুশৃংখল  হতে হবে। তিনি বলেন, ‘তাদের দক্ষতা আছে, তারা পরিশ্রম করেছে। কিন্তু আমরা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে  পারিনি। তারপরও আমরা প্রথম ইনিংসে লিড পেয়েছি। যা আমরা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। আমাদের সুশৃংখল হতে হবে। পরের টেস্টে আমাদের সেরা খেলা খেলতে হবে।’

অধিনায়ক মোমিনুল হক আজ ম্যাচ শেষে জানান, দক্ষতায় তো বটেই বাংলাদেশি পেসাররা পিছিয়ে আছেন অভিজ্ঞতায়ও। তাঁর মতে, বেশি বেশি দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ না খেলার অভিজ্ঞতাই আসলে মূল সমস্যা, ‘আমার মনে হয়, ফ্ল্যাট উইকেটে কিভাবে বোলিং করতে হয়, সেটি জানা খুবই জরুরি। কোচরা আরও ভালো বলতে পারবেন আমার চেয়ে, তবে বিদেশে বোলিং করা একরকম, দেশে করা আরেক রকম। আমি মনে করি, বেশি করে চার দিনের ম্যাচ খেলা উচিত আমাদের বোলারদের।’

সবশেষে মোমিনুল পেসারদের মানসিকতায় বদল আনারই পরামর্শ দিয়েছেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের পেসারদের ব্যাপারটা পুরোপুরি মানসিক। তাদের জানতে হবে, তারা কোন জায়গায় শক্তিশালী, কোন জায়গায় দুর্বল, কোন জায়গায় কাজ করতে হবে, এটা জানা খুবই দরকার।’

বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১ , ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

নিজেকেই দায়ী করলেন মোমিনুল

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

পাকিস্তানের কাছে সিরিজের প্রথম টেস্ট হারের জন্য টপ অর্ডার এবং নিজের রান না পাওয়াকে দায়ী করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক। তিনি জানান, প্রথম টেস্ট হারের জন্য এটি পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড পাওয়া সত্বেও ৮ উইকেটে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।

ম্যাচে  প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর লিটন দাসের সেঞ্চুরি এবং অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ৯১ রানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। এরপর বল হাতে বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ১১৬ রানে ৭ উইকেট নেন। এতে প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ৪৪ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।

তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আবারো ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এবার একাই লড়াই করেন লিটন দাস। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর ৫৯ রান করেন তিনি।

টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১টি সেঞ্চুরির সাতটিই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে করেছেন মোমিনুল। তবে এ ম্যাচে ৬ ও ০ রান করেন তিনি।

পঞ্চম দিনে মাত্র দুই ঘন্টায় ম্যাচ শেষ হবার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল বলেন, ‘দুই দলের টপ-অর্ডারের পারফরমেন্সেই এ ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। দুই ইনিংসেই আমরা ৪০ রানে ৪ উইকেট হারাই। কিন্তু তাদের ওপেনাররা দুই ইনিংসেই ১শ রানের জুটি গড়েছিলো। মুশফিক-লিটন ভালো ব্যাটিং করেছে। প্রথম ইনিংসে তাইজুল ৭ উইকেট নিয়েছে। কিন্তু দল হিসেবে আমরা ভালো করতে পারিনি। আমরা বোলারদের ভালো সুযোগ করে দিতে পারিনি। টপ-অর্ডার ক্লিক করলে  বোলাররা আমাদের জয়ের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারত।’ টেস্ট জয়ের জন্য দল হিসেবে খেলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন  বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো দল শুধু ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের উপর নির্ভর করতে পারে না। যে কোন টেস্ট জিততে হলে আমাদের ইউনিট হিসেবে খেলতে হবে। টেস্টে আমাদের একটা সুযোগ ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেটাকে পুঁজি করতে পারিনি।’

টপ-অর্ডারের সঙ্গে নিজের ব্যর্থতাকেও দায়ী করছেন মোমিনুল।  তিনি বলেন, ‘টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে ম্যাচে ফিরে আসা সব সময়ই কঠিন। আমি জানি, এটি বারবার ঘটছে। তবে আমাদের এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি- টপ অর্ডারের সঙ্গে আমারও দায় আছে।’ অভিজ্ঞতার দিক থেকে পাকিস্তানের বোলার বা ব্যাটাররা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের চেয়ে কোন অংশে এগিয়ে ছিলেন না। আসলে বেশিরভাগ পাকিস্তানি খেলোয়াড়ই বাংলাদেশের খেলোয়াদের চেয়ে কম টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু তারপরও দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ব্যক্তিগত দক্ষতা ফুটে উঠেছে।

শাহিন শাহ আফ্রিদির মতো বোলার গতি এবং আগ্রাসন দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশি পেসাররা পাকিস্তানি ব্যাটারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি।

পাকিস্তানের  হয়ে অভিষেক হওয়া ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক এ ম্যাচে জোড়া হাফ-সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু বাংলাদেশের ওপেনারদের কোন পারফরমেন্সই ছিল না। অথচ বেশ কয়েকটি টেস্ট খেলেছেন তারা।

মোমিনুল জানান, সব দিক দিয়ে আরও দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং সুশৃংখল  হতে হবে। তিনি বলেন, ‘তাদের দক্ষতা আছে, তারা পরিশ্রম করেছে। কিন্তু আমরা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে  পারিনি। তারপরও আমরা প্রথম ইনিংসে লিড পেয়েছি। যা আমরা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। আমাদের সুশৃংখল হতে হবে। পরের টেস্টে আমাদের সেরা খেলা খেলতে হবে।’

অধিনায়ক মোমিনুল হক আজ ম্যাচ শেষে জানান, দক্ষতায় তো বটেই বাংলাদেশি পেসাররা পিছিয়ে আছেন অভিজ্ঞতায়ও। তাঁর মতে, বেশি বেশি দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ না খেলার অভিজ্ঞতাই আসলে মূল সমস্যা, ‘আমার মনে হয়, ফ্ল্যাট উইকেটে কিভাবে বোলিং করতে হয়, সেটি জানা খুবই জরুরি। কোচরা আরও ভালো বলতে পারবেন আমার চেয়ে, তবে বিদেশে বোলিং করা একরকম, দেশে করা আরেক রকম। আমি মনে করি, বেশি করে চার দিনের ম্যাচ খেলা উচিত আমাদের বোলারদের।’

সবশেষে মোমিনুল পেসারদের মানসিকতায় বদল আনারই পরামর্শ দিয়েছেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের পেসারদের ব্যাপারটা পুরোপুরি মানসিক। তাদের জানতে হবে, তারা কোন জায়গায় শক্তিশালী, কোন জায়গায় দুর্বল, কোন জায়গায় কাজ করতে হবে, এটা জানা খুবই দরকার।’