এক আশ্চর্য ফুল: বিনয় মজুমদার

জোবায়ের মিলন

জীবনানন্দ কালপরবর্তী বাংলা সাহিত্যে কবিতায় বিস্ময়কর সৃষ্টি ও আশ্চর্য জীবন লালনকারী কবির তালিকায় গত শতকের পঞ্চাশের দশকের বিশিষ্ট কবি বিনয় মজুমদারের যা নাম, তা ডিঙ্গিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। এই কবি ও তাঁর কবিতা নিয়ে যুগের জিজ্ঞাসা এখনও চলছে, তখন যেমন চলত; অনেক ক্ষেত্রে তখনের চেয়ে এখন আরও বেশি। বিনয় মজুমদার সময়ের পৃষ্ঠায় যা দিয়ে গেছেন, কবিতার জন্য আস্ত একটি জীবন ম্লান করে যে উজ্জ্বল মাছ ছেড়ে গেছেন বাংলার কাব্যডাঙ্গায় তা এতটাই রকমারি যে, এক মুঠে তা ধরা যায় না, আঁকা যায় না বিনয়ের সমগ্রটা। তাই বিনয়কে নিয়ে যেমন আগ্রহের শেষ হয় না, কৌতূহলও কমে না।

সেই আগ্রহ ও কৌতূহল কার্যেরই সাম্প্রতিক একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার’। বাংলাদেশের কবি ও সম্পাদক এহসান হায়দার এবং পশ্চিমবঙ্গের কবি, শিক্ষক, সম্পাদক স্নিগ্ধদীপ চক্রবর্তীর সম্পাদনায় জীবন-শিল্পের প্রতিমা বিনয় মজুমদারের অভূতপূর্ব কর্ম ও জীবন নিয়ে দুই বাংলার প্রখ্যাত ও বিনয় জীবদ্বশায় সম্পৃক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের স্মৃতি-বিস্মৃতি, কথামালা আর বিশ্লেষণ, নিবেদন নিয়ে এক মলাটের মধ্যে সময়ের বৃহৎ ও সমৃদ্ধ সংকলন বলা যায় এটিকে। বলা যায় বিনয়প্রেমিদের জন্য দুর্লভ গ্রন্থও।

যে কোনো শিল্পী ও শিল্পবিষয়ক আলোচনায় শিল্পী-জীবনের বিচিত্র গতিপথটির কথা সঙ্গতকারণেই আসে সবার আগে। কেননা, শিল্পী তাঁর সময় ও জীবনের অতিরেক হতেই পারেন, কিন্তু ব্যতিরেক সম্ভব নয়। সেকারণেই বিনয় জীবনটি বিশেষ আলোয় উঠে এসেছে গ্রন্থটির সর্বাগ্রে। মোট চারটি পর্বে বিভক্ত জীবনীর প্রথম পর্বে জন্মকথা থেকে শুরু করে বর্ণাঢ্য কর্ম ও বিচিত্র যাপন অধ্যায়ের প্রসঙ্গ-কথা হয়ে অন্তিম দাহ-কোলাহল দিন পর্যন্ত উদ্ধৃত হয়েছে।

কাব্যযোগ্যতায় বিনয় মজুমদারের স্থান, অবস্থান, তাঁর কবিতায় বিষ্ণু দে, জীবনানন্দ বা অন্য কবির কবিতার প্রভাব ও কবিতায় অল্লীলতা, যৌনতা, ছন্দ, মাত্রা, কল্পনা ইত্যাদি বিতর্ক এই কবিকে আঁকড়ে ছিল সবসময়; সেই সাথে অধিকতালে এগিয়ে গেছে ব্যক্তি বিনয় ও কবিতার প্রতি তাঁর বিপ্লবী ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার, প্রত্যক্ষ বিনয়সঙ্গ এবং তাঁকে দেখার নানান দৃষ্টির কথকতা সংবলিত হয়েছে সংকলিত ও সম্পাদিত এই গ্রন্থটিতে। এখানে বিনয়ের ব্যক্তিজীবন, সাহিত্য, কাজের বিভিন্ন দিক নতুনভাবে খুঁড়েছেন দুই বাংলার প্রবীণ ও এক সারি তরুণ কবি, প্রাবন্ধিক। লিখেছেন বিনয়ের বন্ধুরা, সঙ্গীরা, দর্শীরা- যারা একসঙ্গে কফিহাউজ আর কলেজ স্ট্রিটের পথে হেঁটেছেন কিংবা ঠাকুরনগরের ‘বিনোদিনী কুঠি’তে বার বার মিলিত হয়েছেন।

এখানে ‘বিনয় কথকতা’ পর্বে ষাটের দশকের বিশিষ্ট কবি কালীকৃষ্ণ গুহ তাঁর ‘বিনয় মজুমদারের বিরহ বসবাস ও মহাপয়ার’-এ বলছেন, ‘আমাদের মধ্যে তিনি একজন বিশুদ্ধ ও ধ্রুপদী কবি। মন্তব্যটি সর্বত্রভাবে গ্রহণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। অবশ্যই একজন বিশুদ্ধ কবি তিনি। ‘বিশুদ্ধ’ এই অর্থে যে, অনুভূতিলো থেকে যা তিনি পাননি তা লেখেননি। অর্ধশিক্ষিত পাঠকসমাজের জন্য বাগবিস্তার করেননি তিনি। তাঁর কবিতার আঙ্গিক বা গঠনের দিকে চোখ রাখলে তাঁর কবিতার অন্তর্নিহিত যুক্তির দিকে তথা বস্তুনিষ্ঠার দিকটি মনে রাখলে, তাঁর নিরন্তর উপমা বিন্যাসের পদ্ধতিটি মনে রাখলে তাঁর জন্য হয়তো ‘ধ্রুপদী কবি’র স্থানটি নির্ধারিত করা যায়- করে তর্কে জড়ানো যায়।’ আরেকাংশে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘বিনয় তার বিদ্যুৎ চমকের মতন পঙ্ক্তিগুলো লিখে বাংলা কবিতাকে ধন্য করেছে, কিন্তু ক্রমশই জীবন থেকে সরে গেছে সে। তার কবিতা পড়ে আমরা বন্ধুরা বা পাঠকরা আনন্দ পেয়েছি, কিন্তু সে নিজে কী পেয়েছে? কিছুই পায়নি বলতে গেলে। এতটা না-পাওয়া কোনো কবির সাজে না।’ কালীকৃষ্ণ গুহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও সংকলিত হয়েছে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, অমিয় দেব, ঊষাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, আহমদ ছফা, জ্যোতির্ময় দত্ত, মীনাক্ষী দত্ত, শামসুর রাহমান, জয় গোস্বামীসহ বর্তমান সময়ের মৃদুল দাশগুপ্ত, রবিশংকর বল প্রমুখের রচনা।

বিনয় মজুমদারের ক্ষেত্রে কবির জীবনের চেয়ে কবিতাকে আলাদা করা যায় না, কারণ, কবিতাই তাঁর জীবনের শিল্প, জীবনই তার কবিতার অলংকার। কবির সেই জীবনের অধিক-অধিকাংশই স্থান পেয়েছে এই অসাধারণ সংকলনটিতে। ৮২৪ পৃষ্ঠার ঋব্ধ, শ্রমসাধ্য, চমৎকার গ্রন্থটিতে কবির জীবনী, কথকতার পর যোগ হয়েছে শিবেন মজুমদার, হাসির মল্লিকের মতো লেখকের স্মৃতিগদ্য। নিবেদিত কবিতায় সংযোজিত হয়েছে, বিমলচন্দ্র ঘোষ, জয়দেব বসু, ফিরাত চৌধুরী, দেবারতি মিত্র, কুমারেশ চক্রবর্তী, শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তীসহ বেশ কিছু কবিতা। গ্রন্থটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে বিনয়কে নিয়ে চিত্রনাট্য, বিনয় মজুমদার এর সাক্ষাৎকার, বেলাল চৌধুরীর সাথে বিনয়কে নিয়ে আলাপচার, বিনয়ের পাঁচটি আত্মকথন।

পাঠককে নিঃসন্দেহে মুগ্ধ করবে গ্রন্থটিতে যুক্ত হওয়া বিনয় মজুমদারের অপ্রকাশিত কিছু গল্প, গদ্য, কবিতা, ছড়া, লিরেমিক; তাঁর ও তাঁকে লেখা চিঠি, জ্যামিতি, বীজগণিত এবং তাঁর নিজের আঁকা দুর্লভ ছবিগুলো। বিশেষ উবাচ অংশে লিখেছেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, গণেশ বসু, আল মাহমুদ, তানভীর মোকাম্মেল, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। একেবারে শেষাংশে কবির সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী, অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, গণিত গ্রন্থ, বিনয় বিষয়ক গ্রন্থের নাম ও একটি বংশতালিকা পাঠকের জানার থলেটি আরও ভারি করে; সেই সাথে এই সংকলনে যাদের লেখা সংকলিত হয়েছে তাদেরও একটি ক্ষুদ্র পরিচিতি বাড়তি পাওয়া।

দু’তিনটি বানান ভ্রান্তি মার্জনা করলে কবি বিনয় মজুমদারের কাব্য, বিচিত্র জীবন ও সমাজ ভাবনা সূক্ষাতিসূক্ষ জানার জন্য ‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার’ গ্রন্থটি বিনয় মজুমদারের জীবনশিল্পের অনন্য সমগ্রই হয়ে ওঠেনি, হয়ে উঠেছে তারও অধিক; নির্দ্বিধায় বলা যায়।

এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার। সম্পাদক : এহসান হায়দার, স্নিগ্ধাদীপ চক্রবর্তী। প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত। প্রকাশকাল: এপ্রিল ২০২১। প্রকাশক: আশ্রয় প্রকাশন। মূল্য: ১৪৫০ টাকা

বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ৪ জমাদিউল আউয়াল

এক আশ্চর্য ফুল: বিনয় মজুমদার

জোবায়ের মিলন

image

জীবনানন্দ কালপরবর্তী বাংলা সাহিত্যে কবিতায় বিস্ময়কর সৃষ্টি ও আশ্চর্য জীবন লালনকারী কবির তালিকায় গত শতকের পঞ্চাশের দশকের বিশিষ্ট কবি বিনয় মজুমদারের যা নাম, তা ডিঙ্গিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। এই কবি ও তাঁর কবিতা নিয়ে যুগের জিজ্ঞাসা এখনও চলছে, তখন যেমন চলত; অনেক ক্ষেত্রে তখনের চেয়ে এখন আরও বেশি। বিনয় মজুমদার সময়ের পৃষ্ঠায় যা দিয়ে গেছেন, কবিতার জন্য আস্ত একটি জীবন ম্লান করে যে উজ্জ্বল মাছ ছেড়ে গেছেন বাংলার কাব্যডাঙ্গায় তা এতটাই রকমারি যে, এক মুঠে তা ধরা যায় না, আঁকা যায় না বিনয়ের সমগ্রটা। তাই বিনয়কে নিয়ে যেমন আগ্রহের শেষ হয় না, কৌতূহলও কমে না।

সেই আগ্রহ ও কৌতূহল কার্যেরই সাম্প্রতিক একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার’। বাংলাদেশের কবি ও সম্পাদক এহসান হায়দার এবং পশ্চিমবঙ্গের কবি, শিক্ষক, সম্পাদক স্নিগ্ধদীপ চক্রবর্তীর সম্পাদনায় জীবন-শিল্পের প্রতিমা বিনয় মজুমদারের অভূতপূর্ব কর্ম ও জীবন নিয়ে দুই বাংলার প্রখ্যাত ও বিনয় জীবদ্বশায় সম্পৃক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের স্মৃতি-বিস্মৃতি, কথামালা আর বিশ্লেষণ, নিবেদন নিয়ে এক মলাটের মধ্যে সময়ের বৃহৎ ও সমৃদ্ধ সংকলন বলা যায় এটিকে। বলা যায় বিনয়প্রেমিদের জন্য দুর্লভ গ্রন্থও।

যে কোনো শিল্পী ও শিল্পবিষয়ক আলোচনায় শিল্পী-জীবনের বিচিত্র গতিপথটির কথা সঙ্গতকারণেই আসে সবার আগে। কেননা, শিল্পী তাঁর সময় ও জীবনের অতিরেক হতেই পারেন, কিন্তু ব্যতিরেক সম্ভব নয়। সেকারণেই বিনয় জীবনটি বিশেষ আলোয় উঠে এসেছে গ্রন্থটির সর্বাগ্রে। মোট চারটি পর্বে বিভক্ত জীবনীর প্রথম পর্বে জন্মকথা থেকে শুরু করে বর্ণাঢ্য কর্ম ও বিচিত্র যাপন অধ্যায়ের প্রসঙ্গ-কথা হয়ে অন্তিম দাহ-কোলাহল দিন পর্যন্ত উদ্ধৃত হয়েছে।

কাব্যযোগ্যতায় বিনয় মজুমদারের স্থান, অবস্থান, তাঁর কবিতায় বিষ্ণু দে, জীবনানন্দ বা অন্য কবির কবিতার প্রভাব ও কবিতায় অল্লীলতা, যৌনতা, ছন্দ, মাত্রা, কল্পনা ইত্যাদি বিতর্ক এই কবিকে আঁকড়ে ছিল সবসময়; সেই সাথে অধিকতালে এগিয়ে গেছে ব্যক্তি বিনয় ও কবিতার প্রতি তাঁর বিপ্লবী ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার, প্রত্যক্ষ বিনয়সঙ্গ এবং তাঁকে দেখার নানান দৃষ্টির কথকতা সংবলিত হয়েছে সংকলিত ও সম্পাদিত এই গ্রন্থটিতে। এখানে বিনয়ের ব্যক্তিজীবন, সাহিত্য, কাজের বিভিন্ন দিক নতুনভাবে খুঁড়েছেন দুই বাংলার প্রবীণ ও এক সারি তরুণ কবি, প্রাবন্ধিক। লিখেছেন বিনয়ের বন্ধুরা, সঙ্গীরা, দর্শীরা- যারা একসঙ্গে কফিহাউজ আর কলেজ স্ট্রিটের পথে হেঁটেছেন কিংবা ঠাকুরনগরের ‘বিনোদিনী কুঠি’তে বার বার মিলিত হয়েছেন।

এখানে ‘বিনয় কথকতা’ পর্বে ষাটের দশকের বিশিষ্ট কবি কালীকৃষ্ণ গুহ তাঁর ‘বিনয় মজুমদারের বিরহ বসবাস ও মহাপয়ার’-এ বলছেন, ‘আমাদের মধ্যে তিনি একজন বিশুদ্ধ ও ধ্রুপদী কবি। মন্তব্যটি সর্বত্রভাবে গ্রহণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। অবশ্যই একজন বিশুদ্ধ কবি তিনি। ‘বিশুদ্ধ’ এই অর্থে যে, অনুভূতিলো থেকে যা তিনি পাননি তা লেখেননি। অর্ধশিক্ষিত পাঠকসমাজের জন্য বাগবিস্তার করেননি তিনি। তাঁর কবিতার আঙ্গিক বা গঠনের দিকে চোখ রাখলে তাঁর কবিতার অন্তর্নিহিত যুক্তির দিকে তথা বস্তুনিষ্ঠার দিকটি মনে রাখলে, তাঁর নিরন্তর উপমা বিন্যাসের পদ্ধতিটি মনে রাখলে তাঁর জন্য হয়তো ‘ধ্রুপদী কবি’র স্থানটি নির্ধারিত করা যায়- করে তর্কে জড়ানো যায়।’ আরেকাংশে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘বিনয় তার বিদ্যুৎ চমকের মতন পঙ্ক্তিগুলো লিখে বাংলা কবিতাকে ধন্য করেছে, কিন্তু ক্রমশই জীবন থেকে সরে গেছে সে। তার কবিতা পড়ে আমরা বন্ধুরা বা পাঠকরা আনন্দ পেয়েছি, কিন্তু সে নিজে কী পেয়েছে? কিছুই পায়নি বলতে গেলে। এতটা না-পাওয়া কোনো কবির সাজে না।’ কালীকৃষ্ণ গুহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও সংকলিত হয়েছে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, অমিয় দেব, ঊষাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, আহমদ ছফা, জ্যোতির্ময় দত্ত, মীনাক্ষী দত্ত, শামসুর রাহমান, জয় গোস্বামীসহ বর্তমান সময়ের মৃদুল দাশগুপ্ত, রবিশংকর বল প্রমুখের রচনা।

বিনয় মজুমদারের ক্ষেত্রে কবির জীবনের চেয়ে কবিতাকে আলাদা করা যায় না, কারণ, কবিতাই তাঁর জীবনের শিল্প, জীবনই তার কবিতার অলংকার। কবির সেই জীবনের অধিক-অধিকাংশই স্থান পেয়েছে এই অসাধারণ সংকলনটিতে। ৮২৪ পৃষ্ঠার ঋব্ধ, শ্রমসাধ্য, চমৎকার গ্রন্থটিতে কবির জীবনী, কথকতার পর যোগ হয়েছে শিবেন মজুমদার, হাসির মল্লিকের মতো লেখকের স্মৃতিগদ্য। নিবেদিত কবিতায় সংযোজিত হয়েছে, বিমলচন্দ্র ঘোষ, জয়দেব বসু, ফিরাত চৌধুরী, দেবারতি মিত্র, কুমারেশ চক্রবর্তী, শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তীসহ বেশ কিছু কবিতা। গ্রন্থটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে বিনয়কে নিয়ে চিত্রনাট্য, বিনয় মজুমদার এর সাক্ষাৎকার, বেলাল চৌধুরীর সাথে বিনয়কে নিয়ে আলাপচার, বিনয়ের পাঁচটি আত্মকথন।

পাঠককে নিঃসন্দেহে মুগ্ধ করবে গ্রন্থটিতে যুক্ত হওয়া বিনয় মজুমদারের অপ্রকাশিত কিছু গল্প, গদ্য, কবিতা, ছড়া, লিরেমিক; তাঁর ও তাঁকে লেখা চিঠি, জ্যামিতি, বীজগণিত এবং তাঁর নিজের আঁকা দুর্লভ ছবিগুলো। বিশেষ উবাচ অংশে লিখেছেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, গণেশ বসু, আল মাহমুদ, তানভীর মোকাম্মেল, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। একেবারে শেষাংশে কবির সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী, অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, গণিত গ্রন্থ, বিনয় বিষয়ক গ্রন্থের নাম ও একটি বংশতালিকা পাঠকের জানার থলেটি আরও ভারি করে; সেই সাথে এই সংকলনে যাদের লেখা সংকলিত হয়েছে তাদেরও একটি ক্ষুদ্র পরিচিতি বাড়তি পাওয়া।

দু’তিনটি বানান ভ্রান্তি মার্জনা করলে কবি বিনয় মজুমদারের কাব্য, বিচিত্র জীবন ও সমাজ ভাবনা সূক্ষাতিসূক্ষ জানার জন্য ‘এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার’ গ্রন্থটি বিনয় মজুমদারের জীবনশিল্পের অনন্য সমগ্রই হয়ে ওঠেনি, হয়ে উঠেছে তারও অধিক; নির্দ্বিধায় বলা যায়।

এক আশ্চর্য ফুল বিনয় মজুমদার। সম্পাদক : এহসান হায়দার, স্নিগ্ধাদীপ চক্রবর্তী। প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত। প্রকাশকাল: এপ্রিল ২০২১। প্রকাশক: আশ্রয় প্রকাশন। মূল্য: ১৪৫০ টাকা