জাওয়াদ’র বৃষ্টিতে কৃষকের সর্বনাশ

গোপালগঞ্জে বীজ আলুর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে বিএডিসির বীজ আলু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে আলু ক্ষেতে পানি জমে রোপণ করা আলু বীজ পঁচে গেছে। এতে কৃষকরে অন্তত ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব বীজ থেকে চারা গজাবে না। এখান থেকে বীজ আলু উৎপাদিত হবে না। বীজ আলুর আবাদ করে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। এখন কৃষকের হাতে আলু বীজ ও সার নেই । বিএডিসি তাদের বীজ আলু ও সার দিলে তারা ফের আলুর আবাদ করে ঘুঁরে দাড়াতে পারবে বলে জানিয়েছে।

গোপালগঞ্জ বিএডিসি আফস সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছর জেলার ২শ’ একর জমিতে বীজ আলু উৎপাদন করে আসছে চুক্তিভিত্তিক কৃষকরা। তারা বছরে ১ হাজার ২শ’ ২০ টন আলুবীজ উৎপান করেন। এসব বীজ আলু দেশের বিভিন্ন জেলার আলু চাষে ব্যবহৃত হয়। এতে দেশের হাজার হাজার কৃষক উপকৃত হন। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৩০ একর জমিতে বীজ আলুর আবাদ হয়েছে। বাকি ৭০ একর জমিতে বীজআলু রোপণের কাজ চলছে। গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে রোপণ করা ৮০ একর জমির বীজ আলু পঁচে কৃষকের অন্তত ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর ইউনিয়নের পূর্ব নিজড়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন মোল্লা বলেন, বিএডিসির চুক্তিভিত্তিক কৃষক হিসেবে গত ৮ বছর ধরে বীজ আলু উৎপাদন করে আসছি। আলু বীজ ও সার গোপালগঞ্জ বিএডিসি অফিস থেকে আমাকে দিয়েছে। আমি ৩-৪ দিন আগে আমার ৫ একর জমিতে আলু রোপণ শেষ করেছি। বৃষ্টিতে আলু ক্ষেত ডুবে রোপণ করা বীজ আলু পঁচে গেছে। জমি আবাদে আমার অন্তত ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ধার দেনা করে আমি আলু রোপণ করেছিলান। বৃষ্টি আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।

গোপালগঞ্জ বিএডিসির উপ-পরিচালক দীপঙ্কর রায় বলেন, আমরা ভিত্তিবীজ দিয়ে বীজ আলু উৎপাদন করি। গোপালগঞ্জের বীজ আলুর সুনাম রয়েছে সারাদেশে। দু’দিনের বৃষ্টিতে বীজ আলু উৎপাদনকারী কিছু কৃষকের ক্ষেতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য আমরা কাজ করছি।

শ্রীনগরে হাজার হেক্টর আলু সরিষা জমি পানির নিচে

প্রতিনিধি, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ)

দুদিনের টানা বর্ষণে শ্রীনগরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর আলু ও সরিষা জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সদ্য রোপণ করা এসব জমির আলু বীজ ও সরিষা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে বোর ধানের বীজতলা।

গতবছর আলুর দাম না থাকায় চাষিরা লোকসানে পড়েছিল। এ বছর লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে এই ধারণা থেকে তারা জমি, স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রেখে চড়া সুধে ঋণ নিয়ে আলু চাষের জন্য পুঁজি সংগ্রহ করে। কিন্তু শুরুতেই এত বড় ধাক্কা সামলে উঠ বেশিরভাগ চাষির জন্য দুরূহ হয়ে যাবে।

গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের সালেপুর, বীরতারা, মাশাখোলা, আটপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব দেউলভোগসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র।

আলুর জমির ওপরে বৃষ্টির পানি জমে নৌকা চলার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেককে দেখা গেছে সেচ দিয়ে জমির পানি সরানোর বৃথা চেষ্টা করছে।

কামাল শেখ নামের এক আলু চাষি জানান, ভেবে ছিলাম এবছর দাম ভাল পেলে গতবছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু শুরুতেই এমন হয়ে গেল। তিনি প্রায় ৭ বিঘা জমিতে তিনি আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে সার-বীজ-শ্রমিক ও জমির দামের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় লাখ। এখন জমির পানি নেমে গেলেও সার-বীজ-শ্রমের পেছনে নতুন করে খরচ হবে।

শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার শান্তনা রাণী জানান, এই বছর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে ২ হাজার ২শ হেক্টর। এরই মধ্যে সরকারি হিসেবে প্রায় ৬শ ২০ হেক্টর জমিতে আলু বপন করা হয়েছে। পুরোটাই এখন পানির নীচে। সরিষা আবাদ করা হয়েছে ৪শ ৬৫ হেক্টর জমিতে। এর পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। সাথে বোর ধানের বীজ তলাও নষ্ট হচ্ছে। পানি না সরে যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।

ফরিদপুরে পেঁয়াজসহ তলিয়ে ২০ হাজার হেক্টর রবি ফসল

প্রতিনিধি, ফরিদপুর

ফরিদপুরে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে চলতি মৌসুমী ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ, দানা পেঁয়াজের ক্ষেত, হালি ঁেপয়াজের বীজতলাসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ফসলের ক্ষেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রাথমিক ভাবে জেলায় চলতি মৌসুমের ২০ হাজার ১০১ হেক্টর ফসলের জমি বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

কালোসোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী (কৃষপদক প্রপ্ত) চাষি শাহীদা বেগম জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপক ভাবে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জন্য পেঁয়াজের ভাল্ব (পেঁয়াজ) জমিতে রোপন করা হয়েছে। অনেক জমির পেঁয়াজ গজিয়ে সবজু আকার ধারণ করেছে, অনেক জমির পেঁয়াজ গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে। আবার অনেক জমিতে সবেমাত্র রোপন করা হয়েছে। হঠাৎ করে বৃষ্টিতে এসব জমিতে পানি জমে গেছে।

দ্রুত পানি সরে না গেলে আমার ৩৫ বিঘা জমিতে রোপনকৃত পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে। আমি কয়েক কয়েক লাখ টাকার ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেছি। আর বৃষ্টি না হলে এবং দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান কিছুটা কমে আসবে। ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে ফরিদপুরে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। বৃষ্টির পানি স্থায়ী হলে পেঁয়াজে পচন ধরার আশঙ্কা করছে চাষিরা।

জেলা সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ও অম্বিকাপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের ক্ষেত এবং দানা পেঁয়াজের ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে। চাষিরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশি। জেলার অধিকাংশ ক্ষেত থেকে চাষীরা আগামী সপ্তাহ খানিকের পেঁয়াজ তুলার কাজ শুরু করবে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাব। ক্ষেতে পানি জমে থাকায় নামতে পারছে না চাষী। জেলায় শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজ নয়, ক্ষেত তলিয়েছে রশুন, আলু ও সরিষার। অসময়ের বৃষ্টিতে সরিষার ফুল ঝড়ে গেছে। আলু ক্ষেতের ডুবে যাওয়ায় গাছে পচন শুরু হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হযরত আলী জানান, দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার ফলে বৃষ্টিতে জেলার ২০ হাজার ১০১ হেক্টর জমিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব কৃষকদের এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া জন্য অন্য ফসলের প্রণোদনা দিতে।

মহেশখালীর পান

বরজে কোটি

টাকার ক্ষতি

প্রতিনিধি, কক্সবাজার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নœচাপের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ায় গত ৩ দিন ধরে শীতকালে অকাল বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার পানিতে ডুবে গেছে কক্সবাজারের মহেশখালীর সমতল ভূমিতে চাষাবাদ করা বেশকিছু নিচু এলাকা মৌসুমী পানের বরজ। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকির মুখে পড়েছে পান চাষ। ফলে পানচাষিরা কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৃষ্টি থেমে পানি নেমে গেলে রোদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য রোপিত এসব পান বরজে পঁচন ধরে ব্যাপক মোড়ক দেখা দেবে বলে পানচাষীদের আশঙ্কা। গত তিনদিনের বর্ষণে উপজেলার বড় মহেশখালী, কালারমারছড়া, হোয়ানক, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের নিচু এলাকার মৌসুমী পান চাষে বেশ কিছু পান বরজ জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে।

মহেশখালী উপজেলার ছোটমহেশখালী ইউনিয়নের লম্বাঘোনা গ্রামের বাণিজ্যিকভাবে পেশাদার মৌসুমী পানচাষি ফরিদুল আলম জানান, তিনি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে ১৫০ ভার পান বরজ করেছেন। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো তার খরচ হয়। মহেশখালীতে তার মতো আরও শত শত সৌখিন পানচাষি রয়েছে যারা তার মতো মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করে পান চাষ করে থাকেন। অভিজ্ঞ পান চাষিরা জানান, শীতে অকাল বর্ষণে পান চাষ ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। নিচু এলাকার জন্য জমিতে মৌসুমী পান চাষ বৃষ্টির জন্য অত্যন্ত স্পর্শ কাতর একটি ফসল।

বাগেরহাটের ৭৫০ হেক্টর পাকা ধান সবজির ক্ষতি

প্রতিনিধি, বাগেরহাট

বিরামহীন বৃষ্টিতে বাগেরহাট জেলার প্রায় সাড়ে ৭শ হেক্টর জমির পাকা ধান, বীজতলা ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ধান ঝড়ে পড়েছে। পচন ধরেছে বোরো ইরি ধানের বীজতলা। হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতকালীন বিপুল পরিমাণ সবজির শিকড় পচে গেছে। অনাকক্সিক্ষত ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে বাগেরেহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৫০ হেক্টর পাকা আমন ধান আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ২০৭ হেক্টর বোরোর বীজতলা, ১৬১ হেক্টর খেসারি, ১৩৭ হেক্টর সরিষা ক্ষেত, গমের বীজতলা ১৭ হেক্টর, ৩৫ হেক্টর শীতকালীন সবজি খেত ও ৩০ হেক্টর মসুর ডাল খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে টাকার অঙ্কে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি এই ক্ষতির পরিমাণ দিগুণের থেকেও বেশি। জেলার সব থেকে উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার আমড়াগাছিয়া গ্রামের বাদশা খলিফা বলেন, আমরা যারা কৃষক, আমাদের সব শেষ। মোটাধান কেটে মাঠে রেখে দিয়েছিলাম। চারদিনের বর্ষায় সব শেষ হয়ে গেল। বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার মহিবুল্লাহ বলেন, আমাদের বাৎসরিক আয়ের একটা বড় শীতকালীন সবজি। কয়েকদিন পরেই লাল শাক, বেগুন, মূলা, পাতা কফি, ফুল কপি ও ওল কপির বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে শিকড় পচে গেছে। রোদ পেলে বেশিরভাগ সবজি ঢলে পড়বে। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, টানা বর্ষণে পাকা ধান, ধানের বীজতলা, গমের বীজতলা, শীতকালীণ সবজি ও বেশকিছু রবি শস্যের খেত আক্রান্ত হয়েছে। মূলত ঃ টাকার অংকে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, কতজন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আরও সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে।

বাসাইলে সরিষার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের বাসাইলে টানা দুই দিনের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে সরিষার কাটুই পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষকরা। আর অসময়ের এই বৃষ্টিতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে কৃষকরা। টাঙ্গাইলের বাসাইলে বৃষ্টিতে সরিষার আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরিষা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির ফলে অনেক জমির সরিষা চারা গাছ পরে গেছে। নিচু জমিতে পানি জমেছে। যে জমিতে সরিষার চারা গাছ বেশি সেই সব জমির সরিষা চারা গাছ পরে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চার হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চলতি রবি মৌসুমে এ পর্যন্ত উপজেলায় পাঁচ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে।

বাসাইল কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের জিকাতলী পাড়া গ্রামের চাষি ফনিন্দ্র ম-ল বলেন, আমি এ বছর ৪শ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। অসময়ে বৃষ্টির ফলে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। বৃষ্টির জন্য জমির সরিষার চারা গাছ পরে গেছে। যদি রোদ উঠে তাহলে ক্ষতি কম হবে। যে জমিতে ফুল আসছে সেই জমির ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।

একই এলাকার খুশি মোহন সরকার বলেন, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। আমি এ বছর একশ’ ৫০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। জমির সরিষা চারা গাছগুলো বৃষ্টির জন্য পরে গেছে।

বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনিন আক্তার জানান, বাসাইলে ৫ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। কৃষকরা গত বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় জমিতে সরিষার ফুল এসেছে। যে বৃষ্টি হয়েছে, এই বৃষ্টিতে সরিষার কোনো সমস্যা হবে না। যদি রোদ উঠে সরিষার ক্ষতি হবে না। এছাড়া জমিতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকলে সরিষার ক্ষতি হবে না। আর যদি জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

ভাণ্ডারিয়ায় পাকা আমনের ক্ষতি

প্রতিনিধি, ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর)

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাসের কারণে চলতি আমন মৌসুমে আমন খেতের ধানগাছগুলো নুয়ে পড়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে উপজেলার আমন ধানের খেত ছাড়াও মৌসুমী রবি শস্য খেসারি ডালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

গত তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে আমন ধানগাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। নুয়ে পড়া গাছগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে রয়েছে। এছাড়া বৃষ্টিতে রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিয়ালকাঠি গ্রামের কৃষক মনির গাজী জানান, ‘বৃষ্টিতে অনেক ধান হেলে পড়েছে। অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে যাবে এবং রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষি কাজ করে লোকসানে আছি। তবে এবার আমনের ধান দেখে লোকসানের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। ঝড়বৃষ্টির কারণে চাষাবাদের খরচের ধারদেনা কাটিয়ে লাভের মুখ দেখা যাবে না। বর্গাচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০ শতক জমিতে খেসারি, করোল্লা ও ঢেড়শসহ বিভিন্ন বীজ কিনে চাষ করেছিলাম। বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পৌরসভাসহ উপজেলার বাকি পাঁচ ইউনিয়নে ৯ হাজার ৪শত হেক্টর জমিতে আমন ধান, প্রায় ৪শত হেক্টর রবি শস্য এবং ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে খেসারি চাষ করা হয়েছে। আবাদ করা রবি শস্য অসময়ে বৃষ্টির কারণে প্রায় ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দমকা হাওয়ার কারণে আমন ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়লেও তেমন কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে ডালের আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। আমরা উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের সব সময় কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছি।

বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ৪ জমাদিউল আউয়াল

জাওয়াদ’র বৃষ্টিতে কৃষকের সর্বনাশ

image

গোপালগঞ্জ : ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের ৩ দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া বীজ আলু ক্ষেত পরিদর্শন করছেন কৃষকসহ কৃষি কর্মকর্তারা -সংবাদ

গোপালগঞ্জে বীজ আলুর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে বিএডিসির বীজ আলু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে আলু ক্ষেতে পানি জমে রোপণ করা আলু বীজ পঁচে গেছে। এতে কৃষকরে অন্তত ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব বীজ থেকে চারা গজাবে না। এখান থেকে বীজ আলু উৎপাদিত হবে না। বীজ আলুর আবাদ করে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। এখন কৃষকের হাতে আলু বীজ ও সার নেই । বিএডিসি তাদের বীজ আলু ও সার দিলে তারা ফের আলুর আবাদ করে ঘুঁরে দাড়াতে পারবে বলে জানিয়েছে।

গোপালগঞ্জ বিএডিসি আফস সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছর জেলার ২শ’ একর জমিতে বীজ আলু উৎপাদন করে আসছে চুক্তিভিত্তিক কৃষকরা। তারা বছরে ১ হাজার ২শ’ ২০ টন আলুবীজ উৎপান করেন। এসব বীজ আলু দেশের বিভিন্ন জেলার আলু চাষে ব্যবহৃত হয়। এতে দেশের হাজার হাজার কৃষক উপকৃত হন। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৩০ একর জমিতে বীজ আলুর আবাদ হয়েছে। বাকি ৭০ একর জমিতে বীজআলু রোপণের কাজ চলছে। গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে রোপণ করা ৮০ একর জমির বীজ আলু পঁচে কৃষকের অন্তত ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর ইউনিয়নের পূর্ব নিজড়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন মোল্লা বলেন, বিএডিসির চুক্তিভিত্তিক কৃষক হিসেবে গত ৮ বছর ধরে বীজ আলু উৎপাদন করে আসছি। আলু বীজ ও সার গোপালগঞ্জ বিএডিসি অফিস থেকে আমাকে দিয়েছে। আমি ৩-৪ দিন আগে আমার ৫ একর জমিতে আলু রোপণ শেষ করেছি। বৃষ্টিতে আলু ক্ষেত ডুবে রোপণ করা বীজ আলু পঁচে গেছে। জমি আবাদে আমার অন্তত ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ধার দেনা করে আমি আলু রোপণ করেছিলান। বৃষ্টি আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।

গোপালগঞ্জ বিএডিসির উপ-পরিচালক দীপঙ্কর রায় বলেন, আমরা ভিত্তিবীজ দিয়ে বীজ আলু উৎপাদন করি। গোপালগঞ্জের বীজ আলুর সুনাম রয়েছে সারাদেশে। দু’দিনের বৃষ্টিতে বীজ আলু উৎপাদনকারী কিছু কৃষকের ক্ষেতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য আমরা কাজ করছি।

শ্রীনগরে হাজার হেক্টর আলু সরিষা জমি পানির নিচে

প্রতিনিধি, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ)

দুদিনের টানা বর্ষণে শ্রীনগরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর আলু ও সরিষা জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সদ্য রোপণ করা এসব জমির আলু বীজ ও সরিষা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে বোর ধানের বীজতলা।

গতবছর আলুর দাম না থাকায় চাষিরা লোকসানে পড়েছিল। এ বছর লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে এই ধারণা থেকে তারা জমি, স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রেখে চড়া সুধে ঋণ নিয়ে আলু চাষের জন্য পুঁজি সংগ্রহ করে। কিন্তু শুরুতেই এত বড় ধাক্কা সামলে উঠ বেশিরভাগ চাষির জন্য দুরূহ হয়ে যাবে।

গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের সালেপুর, বীরতারা, মাশাখোলা, আটপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব দেউলভোগসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র।

আলুর জমির ওপরে বৃষ্টির পানি জমে নৌকা চলার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেককে দেখা গেছে সেচ দিয়ে জমির পানি সরানোর বৃথা চেষ্টা করছে।

কামাল শেখ নামের এক আলু চাষি জানান, ভেবে ছিলাম এবছর দাম ভাল পেলে গতবছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু শুরুতেই এমন হয়ে গেল। তিনি প্রায় ৭ বিঘা জমিতে তিনি আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে সার-বীজ-শ্রমিক ও জমির দামের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় লাখ। এখন জমির পানি নেমে গেলেও সার-বীজ-শ্রমের পেছনে নতুন করে খরচ হবে।

শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার শান্তনা রাণী জানান, এই বছর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে ২ হাজার ২শ হেক্টর। এরই মধ্যে সরকারি হিসেবে প্রায় ৬শ ২০ হেক্টর জমিতে আলু বপন করা হয়েছে। পুরোটাই এখন পানির নীচে। সরিষা আবাদ করা হয়েছে ৪শ ৬৫ হেক্টর জমিতে। এর পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। সাথে বোর ধানের বীজ তলাও নষ্ট হচ্ছে। পানি না সরে যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।

ফরিদপুরে পেঁয়াজসহ তলিয়ে ২০ হাজার হেক্টর রবি ফসল

প্রতিনিধি, ফরিদপুর

ফরিদপুরে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে চলতি মৌসুমী ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ, দানা পেঁয়াজের ক্ষেত, হালি ঁেপয়াজের বীজতলাসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ফসলের ক্ষেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রাথমিক ভাবে জেলায় চলতি মৌসুমের ২০ হাজার ১০১ হেক্টর ফসলের জমি বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

কালোসোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী (কৃষপদক প্রপ্ত) চাষি শাহীদা বেগম জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপক ভাবে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জন্য পেঁয়াজের ভাল্ব (পেঁয়াজ) জমিতে রোপন করা হয়েছে। অনেক জমির পেঁয়াজ গজিয়ে সবজু আকার ধারণ করেছে, অনেক জমির পেঁয়াজ গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে। আবার অনেক জমিতে সবেমাত্র রোপন করা হয়েছে। হঠাৎ করে বৃষ্টিতে এসব জমিতে পানি জমে গেছে।

দ্রুত পানি সরে না গেলে আমার ৩৫ বিঘা জমিতে রোপনকৃত পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে। আমি কয়েক কয়েক লাখ টাকার ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেছি। আর বৃষ্টি না হলে এবং দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান কিছুটা কমে আসবে। ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে ফরিদপুরে দুদিনের টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। বৃষ্টির পানি স্থায়ী হলে পেঁয়াজে পচন ধরার আশঙ্কা করছে চাষিরা।

জেলা সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ও অম্বিকাপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের ক্ষেত এবং দানা পেঁয়াজের ক্ষেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে। চাষিরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশি। জেলার অধিকাংশ ক্ষেত থেকে চাষীরা আগামী সপ্তাহ খানিকের পেঁয়াজ তুলার কাজ শুরু করবে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাব। ক্ষেতে পানি জমে থাকায় নামতে পারছে না চাষী। জেলায় শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজ নয়, ক্ষেত তলিয়েছে রশুন, আলু ও সরিষার। অসময়ের বৃষ্টিতে সরিষার ফুল ঝড়ে গেছে। আলু ক্ষেতের ডুবে যাওয়ায় গাছে পচন শুরু হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হযরত আলী জানান, দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার ফলে বৃষ্টিতে জেলার ২০ হাজার ১০১ হেক্টর জমিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব কৃষকদের এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া জন্য অন্য ফসলের প্রণোদনা দিতে।

মহেশখালীর পান

বরজে কোটি

টাকার ক্ষতি

প্রতিনিধি, কক্সবাজার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নœচাপের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ায় গত ৩ দিন ধরে শীতকালে অকাল বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার পানিতে ডুবে গেছে কক্সবাজারের মহেশখালীর সমতল ভূমিতে চাষাবাদ করা বেশকিছু নিচু এলাকা মৌসুমী পানের বরজ। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকির মুখে পড়েছে পান চাষ। ফলে পানচাষিরা কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৃষ্টি থেমে পানি নেমে গেলে রোদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য রোপিত এসব পান বরজে পঁচন ধরে ব্যাপক মোড়ক দেখা দেবে বলে পানচাষীদের আশঙ্কা। গত তিনদিনের বর্ষণে উপজেলার বড় মহেশখালী, কালারমারছড়া, হোয়ানক, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের নিচু এলাকার মৌসুমী পান চাষে বেশ কিছু পান বরজ জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে।

মহেশখালী উপজেলার ছোটমহেশখালী ইউনিয়নের লম্বাঘোনা গ্রামের বাণিজ্যিকভাবে পেশাদার মৌসুমী পানচাষি ফরিদুল আলম জানান, তিনি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে ১৫০ ভার পান বরজ করেছেন। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো তার খরচ হয়। মহেশখালীতে তার মতো আরও শত শত সৌখিন পানচাষি রয়েছে যারা তার মতো মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করে পান চাষ করে থাকেন। অভিজ্ঞ পান চাষিরা জানান, শীতে অকাল বর্ষণে পান চাষ ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। নিচু এলাকার জন্য জমিতে মৌসুমী পান চাষ বৃষ্টির জন্য অত্যন্ত স্পর্শ কাতর একটি ফসল।

বাগেরহাটের ৭৫০ হেক্টর পাকা ধান সবজির ক্ষতি

প্রতিনিধি, বাগেরহাট

বিরামহীন বৃষ্টিতে বাগেরহাট জেলার প্রায় সাড়ে ৭শ হেক্টর জমির পাকা ধান, বীজতলা ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ধান ঝড়ে পড়েছে। পচন ধরেছে বোরো ইরি ধানের বীজতলা। হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতকালীন বিপুল পরিমাণ সবজির শিকড় পচে গেছে। অনাকক্সিক্ষত ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে বাগেরেহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৫০ হেক্টর পাকা আমন ধান আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ২০৭ হেক্টর বোরোর বীজতলা, ১৬১ হেক্টর খেসারি, ১৩৭ হেক্টর সরিষা ক্ষেত, গমের বীজতলা ১৭ হেক্টর, ৩৫ হেক্টর শীতকালীন সবজি খেত ও ৩০ হেক্টর মসুর ডাল খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে টাকার অঙ্কে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি এই ক্ষতির পরিমাণ দিগুণের থেকেও বেশি। জেলার সব থেকে উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার আমড়াগাছিয়া গ্রামের বাদশা খলিফা বলেন, আমরা যারা কৃষক, আমাদের সব শেষ। মোটাধান কেটে মাঠে রেখে দিয়েছিলাম। চারদিনের বর্ষায় সব শেষ হয়ে গেল। বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার মহিবুল্লাহ বলেন, আমাদের বাৎসরিক আয়ের একটা বড় শীতকালীন সবজি। কয়েকদিন পরেই লাল শাক, বেগুন, মূলা, পাতা কফি, ফুল কপি ও ওল কপির বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে শিকড় পচে গেছে। রোদ পেলে বেশিরভাগ সবজি ঢলে পড়বে। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, টানা বর্ষণে পাকা ধান, ধানের বীজতলা, গমের বীজতলা, শীতকালীণ সবজি ও বেশকিছু রবি শস্যের খেত আক্রান্ত হয়েছে। মূলত ঃ টাকার অংকে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, কতজন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আরও সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে।

বাসাইলে সরিষার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের বাসাইলে টানা দুই দিনের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে সরিষার কাটুই পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষকরা। আর অসময়ের এই বৃষ্টিতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে কৃষকরা। টাঙ্গাইলের বাসাইলে বৃষ্টিতে সরিষার আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরিষা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির ফলে অনেক জমির সরিষা চারা গাছ পরে গেছে। নিচু জমিতে পানি জমেছে। যে জমিতে সরিষার চারা গাছ বেশি সেই সব জমির সরিষা চারা গাছ পরে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চার হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চলতি রবি মৌসুমে এ পর্যন্ত উপজেলায় পাঁচ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে।

বাসাইল কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের জিকাতলী পাড়া গ্রামের চাষি ফনিন্দ্র ম-ল বলেন, আমি এ বছর ৪শ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। অসময়ে বৃষ্টির ফলে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। বৃষ্টির জন্য জমির সরিষার চারা গাছ পরে গেছে। যদি রোদ উঠে তাহলে ক্ষতি কম হবে। যে জমিতে ফুল আসছে সেই জমির ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।

একই এলাকার খুশি মোহন সরকার বলেন, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। আমি এ বছর একশ’ ৫০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। জমির সরিষা চারা গাছগুলো বৃষ্টির জন্য পরে গেছে।

বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনিন আক্তার জানান, বাসাইলে ৫ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। কৃষকরা গত বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় জমিতে সরিষার ফুল এসেছে। যে বৃষ্টি হয়েছে, এই বৃষ্টিতে সরিষার কোনো সমস্যা হবে না। যদি রোদ উঠে সরিষার ক্ষতি হবে না। এছাড়া জমিতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকলে সরিষার ক্ষতি হবে না। আর যদি জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

ভাণ্ডারিয়ায় পাকা আমনের ক্ষতি

প্রতিনিধি, ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর)

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাসের কারণে চলতি আমন মৌসুমে আমন খেতের ধানগাছগুলো নুয়ে পড়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে উপজেলার আমন ধানের খেত ছাড়াও মৌসুমী রবি শস্য খেসারি ডালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

গত তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে আমন ধানগাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। নুয়ে পড়া গাছগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে রয়েছে। এছাড়া বৃষ্টিতে রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিয়ালকাঠি গ্রামের কৃষক মনির গাজী জানান, ‘বৃষ্টিতে অনেক ধান হেলে পড়েছে। অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে যাবে এবং রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষি কাজ করে লোকসানে আছি। তবে এবার আমনের ধান দেখে লোকসানের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। ঝড়বৃষ্টির কারণে চাষাবাদের খরচের ধারদেনা কাটিয়ে লাভের মুখ দেখা যাবে না। বর্গাচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০ শতক জমিতে খেসারি, করোল্লা ও ঢেড়শসহ বিভিন্ন বীজ কিনে চাষ করেছিলাম। বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পৌরসভাসহ উপজেলার বাকি পাঁচ ইউনিয়নে ৯ হাজার ৪শত হেক্টর জমিতে আমন ধান, প্রায় ৪শত হেক্টর রবি শস্য এবং ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে খেসারি চাষ করা হয়েছে। আবাদ করা রবি শস্য অসময়ে বৃষ্টির কারণে প্রায় ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দমকা হাওয়ার কারণে আমন ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়লেও তেমন কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে ডালের আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। আমরা উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের সব সময় কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছি।