বাঁচাতে গিয়ে এক যুবক নিহত
নীলফামারীর সদর উপজেলার মনসাপাড়া এলাকায় চিলাহাটী থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী মেইল ট্রেনে কাটাপড়ে দুই বোন, এক ভাই ও এক যুবক নিহত হয়েছে। তিন শিশু মনসাপাড়া এলাকার ভ্যানচালক রেজওয়ানের সন্তান। তিন সন্তানের অকাল মৃত্যুতে বার বার মুর্ছা যাচ্ছে বাবা মাসহ পরিবার আর নিকট স্বজনেরা। সংস্কারাধীন রেল সেতুতে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয় প্রতিবেশী যুবক শামীম। নিহত শামীম একই এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
গত বুধবার সকাল ৮টার দিকে মনসাপাড়া এলাকায় রেলসেতুর পাশে একটি ট্রাক্টর থেকে ইট নামাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। এর পাশেই রেলসেতুর অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে একই এলাকার সাত বছরের লিমা, চার বছরের রেশমা ও আড়াই বছরের মোমিনুর ট্রাক্টর থেকে ইট নামানো দেখছিল। এ সময় ইট বোঝাই ট্রাক্টরটি চালু থাকায় তার শব্দে ছুটে আসা ট্রেনের শব্দও শুনতে পায়নি তারা। এমনকি ট্রেনও কোন হর্ন দেয়নি। এ সময় অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা শামীম তাদের বাঁচাতে ঝাঁপ দেয় চলতি ট্রেনের সামনে। ইতোমধ্যে ট্রেনে কাটাপড়ে লিমা ও রেশমা। ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত মোমিনুর ও শামীমকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত শামীমের বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই তিন শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ছেলে মারা গেছে। সে ট্রেনের সামনে গিয়ে শিশু মোমিনুরকে নিয়ে ঝাঁপ দেয়। এ সময় দ্রুতগতির ট্রেনটি তাকে ধাক্কা দিলে সে শিশুটিসহ ছিটকে পড়ে পাশের একটি গর্তে। এতে দুইজনই গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন তাদের বাঁচাতে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন। আমার ছেলে ঝুঁকি নিয়ে তাদের জীবন বাঁচাতে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেয়। তা ভাবতেই আমার শরীর সিউরে উঠছে।
ভ্যানচালক রেজওয়ান কথা বলতে বলতে বার বার মুর্ছা যাচ্চিলেন। মাঝে মধ্যে বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন। তিন সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা। বুক চাপড়ে বলছিলেন, আল্লাহ তুই আমাকে নিয়ে গেলিনা কেন? এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো। আমার তো আর কেউ বাবা বলে ডাকবে না।
নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান বলেন, একই পরিবারের তিন শিশু ও এক যুবকের মৃত্যু মর্মান্তিক। তাদের বাঁচাতে যুবক শামীম যে সাহসিকতা দেখিয়েছে তা জেনে আমি অভিভূত।
বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ৪ জমাদিউল আউয়াল
বাঁচাতে গিয়ে এক যুবক নিহত
জেলা বার্তা পরিবেশক, নীলফামারী
নীলফামারীর সদর উপজেলার মনসাপাড়া এলাকায় চিলাহাটী থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী মেইল ট্রেনে কাটাপড়ে দুই বোন, এক ভাই ও এক যুবক নিহত হয়েছে। তিন শিশু মনসাপাড়া এলাকার ভ্যানচালক রেজওয়ানের সন্তান। তিন সন্তানের অকাল মৃত্যুতে বার বার মুর্ছা যাচ্ছে বাবা মাসহ পরিবার আর নিকট স্বজনেরা। সংস্কারাধীন রেল সেতুতে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয় প্রতিবেশী যুবক শামীম। নিহত শামীম একই এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
গত বুধবার সকাল ৮টার দিকে মনসাপাড়া এলাকায় রেলসেতুর পাশে একটি ট্রাক্টর থেকে ইট নামাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। এর পাশেই রেলসেতুর অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে একই এলাকার সাত বছরের লিমা, চার বছরের রেশমা ও আড়াই বছরের মোমিনুর ট্রাক্টর থেকে ইট নামানো দেখছিল। এ সময় ইট বোঝাই ট্রাক্টরটি চালু থাকায় তার শব্দে ছুটে আসা ট্রেনের শব্দও শুনতে পায়নি তারা। এমনকি ট্রেনও কোন হর্ন দেয়নি। এ সময় অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা শামীম তাদের বাঁচাতে ঝাঁপ দেয় চলতি ট্রেনের সামনে। ইতোমধ্যে ট্রেনে কাটাপড়ে লিমা ও রেশমা। ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত মোমিনুর ও শামীমকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত শামীমের বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই তিন শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ছেলে মারা গেছে। সে ট্রেনের সামনে গিয়ে শিশু মোমিনুরকে নিয়ে ঝাঁপ দেয়। এ সময় দ্রুতগতির ট্রেনটি তাকে ধাক্কা দিলে সে শিশুটিসহ ছিটকে পড়ে পাশের একটি গর্তে। এতে দুইজনই গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন তাদের বাঁচাতে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন। আমার ছেলে ঝুঁকি নিয়ে তাদের জীবন বাঁচাতে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেয়। তা ভাবতেই আমার শরীর সিউরে উঠছে।
ভ্যানচালক রেজওয়ান কথা বলতে বলতে বার বার মুর্ছা যাচ্চিলেন। মাঝে মধ্যে বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন। তিন সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা। বুক চাপড়ে বলছিলেন, আল্লাহ তুই আমাকে নিয়ে গেলিনা কেন? এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো। আমার তো আর কেউ বাবা বলে ডাকবে না।
নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান বলেন, একই পরিবারের তিন শিশু ও এক যুবকের মৃত্যু মর্মান্তিক। তাদের বাঁচাতে যুবক শামীম যে সাহসিকতা দেখিয়েছে তা জেনে আমি অভিভূত।