মুরাদের সংসদ সদস্য পদ : কী হতে পারে

অশালীন ও নারীর প্রতি অবমাননাকর কথা বলে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানোর পর মুরাদ হাসানের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবি তুলেছেন অনেকে। তাদের দাবি নৈতিক স্খলনের দায়ে তার সংসদ সদস্য পদ কেড়ে নেয়া হোক। কোন ব্যক্তি একটি দল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ওই দল থেকে পদত্যাগ করলে বা সংসদে ওই দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। কিন্তু দল যদি কাউকে বহিষ্কার করে সে ক্ষেত্রে কী হবে, সংবিধানে তার উল্লেখ নেই।

কোন ব্যক্তি (সংসদ সদস্য) নৈতিক স্খলনের দায়ে ফৌজদারি অপরাধে দ-িত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হলেও সংবিধান অনুযায়ী তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না।

অভিযুক্ত সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানকে দল থেকে পদত্যাগ করেননি, সংসদে দলের বিপক্ষেও ভোট দেননি। আবার তিনি ফৌজদারি আদালত কর্তৃক দ-িতও হননি। এই পরিপ্রেক্ষিতে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়া না হওয়া নিয়ে কী হবে, বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

তবে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল কিংবা বহিষ্কৃত হলে মুরাদের সংসদ সদস্য পদও হুমকিতে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।

মুরাদ হাসানের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ তবে তার সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান কাদের।

সাত বছর আগে লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। কারণ সংবিধানে তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু নেই। এ বিষয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি ও আইনি ব্যাখ্যা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকী। তবে পরে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই পদত্যাগ করায় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ও ব্যাখ্যা আর জানা যায়নি।

অবশ্য দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকার নজির আছে। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি থেকে নির্বাচিত রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল বিএনপি। তখন আবু হেনার সংসদ সদস্য পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তৎকালীন স্পিকার।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন সংসদ-সদস্যের আসন শূন্য হইবে কিনা, সে সম্পর্কে কোন বিতর্ক দেখা দিলে শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রেরিত হইবে এবং অনুরূপ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে জামালপুর-৪ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন মুরাদ হাসান। তিনি ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক। মুরাদ হাসান এখনো দল থেকে পদত্যাগ করেননি। দলের প্রাথমিক সদস্যপদও এখনো হারাননি। জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় তাকে এই পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন, তার প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির।

বেফাঁস মন্তব্য করে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। সভাপতিম-লীর সদস্য পদের পাশপাশি তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করেছিল আওয়ামী লীগ। দল থেকে বহিষ্কারের পর লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের সুপারিশ করে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) চিঠি দেন স্পিকার। পরে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকীর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল।

ইসিকে দেয়া ব্যাখ্যায় লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের পক্ষে যুক্তি তুলে দলটির তখনকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সই করা সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, প্রার্থী মানে দল কর্তৃক মনোনীত বা স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যক্তি। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নির্বাচনের আগে ও পরে নেই। দলের সকল পদ থেকে বহিষ্কার হওয়ায় বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। যে কারণে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার আইনগত অধিকার হারিয়েছেন।’

তবে লতিফ সিদ্দিকী ইসিকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি কোন আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ও দেউলিয়া ঘোষিত হলে, বিদেশি রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করলে, ফৌজদারি অপরাধে দ-িত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ-িত হলে, প্রজাতন্ত্রের কোন লাভজনক পদে থাকলে এবং ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দল থেকে পদত্যাগ করলে বা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তার সদস্যপদ শূন্য হতে পারে।

লতিফ সিদ্দিকীর যুক্তি ছিল, তার সম্পর্কে আনা অভিযোগ এসবের কোনটিতেই পড়ে না। যে কারণে নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে শুনানির এখতিয়ার নেই। তার অবস্থানের পক্ষে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রসঙ্গ টেনে লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, কোন সদস্য দল থেকে বহিষ্কৃত হলে তার সদস্যপদ বহাল থাকবে এবং সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই দলের সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন।

ইসির শুনানি করার এখতিয়ার নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন লতিফ সিদ্দিকী। রিট খারিজ হলে আপিল বিভাগে যান তিনি। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। অবশেষে ইসির শুনানিতে অংশ নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী জানান, তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন। ইসির শুনানির প্রয়োজন নেই।

শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বক্তব্য দিয়ে নিজেই সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী।

তবে দল থেকে বহিষ্কার করলে মুরাদ কী করবেন, তা জানা যায়নি। গত মঙ্গলবার থেকে তার দেখা সাংবাদিকরা পায়নি। তিনি কোথায় আছেন, তাও কেউ জানেন না। ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মুরাদ হাসান দল (আওয়ামী লীগ) থেকে বহিষ্কার হলেই তার সংসদ সদস্য পদ থাকা না থাকার আইনি বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।’

আরও খবর
শরীয়তপুরে আ’লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত
পলাতকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবি
‘নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তাই সর্বোচ্চ শাস্তি’
সেই রাতে যা ঘটেছিল
রায় কার্যকর হলেই বুঝবো বিচার পেয়েছি আবরারের বাবা-মা
ফোর্বসের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় শেখ হাসিনা
হানাদার বাহিনীর প্রবেশ রুদ্ধ হয়ে যায়
নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন ভাইবোনের মর্মান্তিক মৃত্যু
রায়ে প্রমাণ হয়েছে দেশে আইনের শাসন আছে : আইনমন্ত্রী
খুলনায় মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ, ডিবির এসআই গ্রেপ্তার
হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন নিহত
নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাইকেল শোভাযাত্রা

বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ৪ জমাদিউল আউয়াল

মুরাদের সংসদ সদস্য পদ : কী হতে পারে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

অশালীন ও নারীর প্রতি অবমাননাকর কথা বলে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানোর পর মুরাদ হাসানের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবি তুলেছেন অনেকে। তাদের দাবি নৈতিক স্খলনের দায়ে তার সংসদ সদস্য পদ কেড়ে নেয়া হোক। কোন ব্যক্তি একটি দল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ওই দল থেকে পদত্যাগ করলে বা সংসদে ওই দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। কিন্তু দল যদি কাউকে বহিষ্কার করে সে ক্ষেত্রে কী হবে, সংবিধানে তার উল্লেখ নেই।

কোন ব্যক্তি (সংসদ সদস্য) নৈতিক স্খলনের দায়ে ফৌজদারি অপরাধে দ-িত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হলেও সংবিধান অনুযায়ী তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না।

অভিযুক্ত সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানকে দল থেকে পদত্যাগ করেননি, সংসদে দলের বিপক্ষেও ভোট দেননি। আবার তিনি ফৌজদারি আদালত কর্তৃক দ-িতও হননি। এই পরিপ্রেক্ষিতে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়া না হওয়া নিয়ে কী হবে, বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

তবে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল কিংবা বহিষ্কৃত হলে মুরাদের সংসদ সদস্য পদও হুমকিতে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।

মুরাদ হাসানের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ তবে তার সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান কাদের।

সাত বছর আগে লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। কারণ সংবিধানে তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু নেই। এ বিষয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি ও আইনি ব্যাখ্যা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকী। তবে পরে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই পদত্যাগ করায় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ও ব্যাখ্যা আর জানা যায়নি।

অবশ্য দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকার নজির আছে। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি থেকে নির্বাচিত রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল বিএনপি। তখন আবু হেনার সংসদ সদস্য পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তৎকালীন স্পিকার।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন সংসদ-সদস্যের আসন শূন্য হইবে কিনা, সে সম্পর্কে কোন বিতর্ক দেখা দিলে শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রেরিত হইবে এবং অনুরূপ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে জামালপুর-৪ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন মুরাদ হাসান। তিনি ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক। মুরাদ হাসান এখনো দল থেকে পদত্যাগ করেননি। দলের প্রাথমিক সদস্যপদও এখনো হারাননি। জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় তাকে এই পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন, তার প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির।

বেফাঁস মন্তব্য করে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। সভাপতিম-লীর সদস্য পদের পাশপাশি তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করেছিল আওয়ামী লীগ। দল থেকে বহিষ্কারের পর লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের সুপারিশ করে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) চিঠি দেন স্পিকার। পরে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকীর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল।

ইসিকে দেয়া ব্যাখ্যায় লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের পক্ষে যুক্তি তুলে দলটির তখনকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সই করা সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, প্রার্থী মানে দল কর্তৃক মনোনীত বা স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যক্তি। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নির্বাচনের আগে ও পরে নেই। দলের সকল পদ থেকে বহিষ্কার হওয়ায় বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। যে কারণে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার আইনগত অধিকার হারিয়েছেন।’

তবে লতিফ সিদ্দিকী ইসিকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি কোন আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ও দেউলিয়া ঘোষিত হলে, বিদেশি রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করলে, ফৌজদারি অপরাধে দ-িত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ-িত হলে, প্রজাতন্ত্রের কোন লাভজনক পদে থাকলে এবং ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দল থেকে পদত্যাগ করলে বা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তার সদস্যপদ শূন্য হতে পারে।

লতিফ সিদ্দিকীর যুক্তি ছিল, তার সম্পর্কে আনা অভিযোগ এসবের কোনটিতেই পড়ে না। যে কারণে নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে শুনানির এখতিয়ার নেই। তার অবস্থানের পক্ষে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রসঙ্গ টেনে লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, কোন সদস্য দল থেকে বহিষ্কৃত হলে তার সদস্যপদ বহাল থাকবে এবং সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই দলের সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন।

ইসির শুনানি করার এখতিয়ার নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন লতিফ সিদ্দিকী। রিট খারিজ হলে আপিল বিভাগে যান তিনি। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। অবশেষে ইসির শুনানিতে অংশ নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী জানান, তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন। ইসির শুনানির প্রয়োজন নেই।

শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বক্তব্য দিয়ে নিজেই সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী।

তবে দল থেকে বহিষ্কার করলে মুরাদ কী করবেন, তা জানা যায়নি। গত মঙ্গলবার থেকে তার দেখা সাংবাদিকরা পায়নি। তিনি কোথায় আছেন, তাও কেউ জানেন না। ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মুরাদ হাসান দল (আওয়ামী লীগ) থেকে বহিষ্কার হলেই তার সংসদ সদস্য পদ থাকা না থাকার আইনি বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।’