খালেদা জিয়ার আবার রক্তক্ষরণ হচ্ছে : ফখরুল

‘দুর্ভাগ্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যখন কারাগারে ছিলেন ও পরবর্তীকালে পিজি হাসপাতালে ছিলেন তখন তার কোন চিকিৎসাই হয়নি। যে কারণে আজকে এই সংকটময় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমি গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সব চিকিৎসকরা সেখানে ছিলেন। তিনি আবার সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছেন। আবার তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’ গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘চিকিৎসকরা খুব পরিষ্কার করে বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষা করার জন্য তাকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন। কিন্তু সরকার প্রথম থেকেই এই বিষয়ে একটা নেতিবাচক অবস্থান নিয়ে তার চিকিৎসা সুবিধা দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, আপনাদের মনে থাকার কথা- তিনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত সুস্থ অবস্থায় হেঁটে কারাগারে গিয়েছিলেন। এই কয়েক বছরে ওই কারাগারে থাকার ফলে এবং পিজিতে তার কোন চিকিৎসা না হওয়ায় আজকে এমন অবস্থা হয়েছে। তিনি গত ২৬ দিন ধরে আইসিইউতে আছেন। প্রতি মুহূর্তে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা মনিটরিং করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘এটার কারণটা কী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করতে তাদের এতটা অনীহা কি জন্যে? আমরা অনেকবার চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছি। তিনি যখন পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন, তখনও তাকে একইভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। বারবার বলার পর যখন বোর্ড করা হয়েছে, সেই বোর্ডেও তার সুচিকিৎসা হয়নি।’

পরবর্তীকালে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যখন সেখানে যান তাদের সুপারিশে তাকে পিজিতে নিয়ে আসা হয়। তখন অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই অনীহার কারণ হচ্ছে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তারা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারণ একটাই যে, তিনি হচ্ছেন একমাত্র রাজনীতিক যিনি এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলেন, যিনি এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি হচ্ছেন একমাত্র রাজনীতিক যিনি এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য তার সমস্ত জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ)’র সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট নেত্রী রোকেয়া চৌধুরী বেবী, কামরুন্নাহার লিপি, শেখ আমজাদ আলী, মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির নেতা এসএম বায়েজিদ আহমেদ প্রমুখ।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়েছেন ৫ দলের নেতারা

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাক্ষাৎ চেয়েছেন পাঁচটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।

দল পাঁচটি হলো, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ জাতীয় দল ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব বরাবর গত ২৫ নভেম্বর তারা আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, ‘আপনি বাংলাদেশের সাংবিধানিক অভিভাবক এবং সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। মানুষের কষ্টে আপনি বিচলিত হন, দেশবাসীর চিন্তা ও স্বপ্নকে আপনি লালন করেন এবং আপনি একজন সুহৃদ ব্যক্তি। এই প্রেক্ষাপটে আপনার বরাবর আমাদের বিনীত ও আন্তরিক আবেদন হলো, আপনার শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও আমাদের সাক্ষাতের সময় দান করে বাধিত করবেন।’

এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এর আগে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যদি কার্যকরী কোন কিছু না হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। আমাদের পক্ষ থেকে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে আবেদন করেছেন।

এর আগে দল পাঁচটির নেতারা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে তার সচিবালয়ের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেন। তারা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আবেদন জানান।

বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ৪ জমাদিউল আউয়াল

খালেদা জিয়ার আবার রক্তক্ষরণ হচ্ছে : ফখরুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

‘দুর্ভাগ্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যখন কারাগারে ছিলেন ও পরবর্তীকালে পিজি হাসপাতালে ছিলেন তখন তার কোন চিকিৎসাই হয়নি। যে কারণে আজকে এই সংকটময় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমি গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সব চিকিৎসকরা সেখানে ছিলেন। তিনি আবার সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছেন। আবার তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’ গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘চিকিৎসকরা খুব পরিষ্কার করে বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষা করার জন্য তাকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন। কিন্তু সরকার প্রথম থেকেই এই বিষয়ে একটা নেতিবাচক অবস্থান নিয়ে তার চিকিৎসা সুবিধা দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, আপনাদের মনে থাকার কথা- তিনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত সুস্থ অবস্থায় হেঁটে কারাগারে গিয়েছিলেন। এই কয়েক বছরে ওই কারাগারে থাকার ফলে এবং পিজিতে তার কোন চিকিৎসা না হওয়ায় আজকে এমন অবস্থা হয়েছে। তিনি গত ২৬ দিন ধরে আইসিইউতে আছেন। প্রতি মুহূর্তে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা মনিটরিং করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘এটার কারণটা কী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করতে তাদের এতটা অনীহা কি জন্যে? আমরা অনেকবার চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছি। তিনি যখন পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন, তখনও তাকে একইভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। বারবার বলার পর যখন বোর্ড করা হয়েছে, সেই বোর্ডেও তার সুচিকিৎসা হয়নি।’

পরবর্তীকালে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যখন সেখানে যান তাদের সুপারিশে তাকে পিজিতে নিয়ে আসা হয়। তখন অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই অনীহার কারণ হচ্ছে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তারা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারণ একটাই যে, তিনি হচ্ছেন একমাত্র রাজনীতিক যিনি এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলেন, যিনি এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি হচ্ছেন একমাত্র রাজনীতিক যিনি এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য তার সমস্ত জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ)’র সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট নেত্রী রোকেয়া চৌধুরী বেবী, কামরুন্নাহার লিপি, শেখ আমজাদ আলী, মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির নেতা এসএম বায়েজিদ আহমেদ প্রমুখ।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়েছেন ৫ দলের নেতারা

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাক্ষাৎ চেয়েছেন পাঁচটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।

দল পাঁচটি হলো, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ জাতীয় দল ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব বরাবর গত ২৫ নভেম্বর তারা আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, ‘আপনি বাংলাদেশের সাংবিধানিক অভিভাবক এবং সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। মানুষের কষ্টে আপনি বিচলিত হন, দেশবাসীর চিন্তা ও স্বপ্নকে আপনি লালন করেন এবং আপনি একজন সুহৃদ ব্যক্তি। এই প্রেক্ষাপটে আপনার বরাবর আমাদের বিনীত ও আন্তরিক আবেদন হলো, আপনার শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও আমাদের সাক্ষাতের সময় দান করে বাধিত করবেন।’

এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এর আগে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যদি কার্যকরী কোন কিছু না হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। আমাদের পক্ষ থেকে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে আবেদন করেছেন।

এর আগে দল পাঁচটির নেতারা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে তার সচিবালয়ের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেন। তারা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আবেদন জানান।