শেষ রক্ষা হয়নি টাইগারদের

পাকিস্তান ইনিংস ও ৮ রানে জয়ী

ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ ম্যাচের সেরাত্রয়ী সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাসের লড়াই শেষ পর্যন্ত কোনো কাজেই লাগলো না । ফলো অনে নেমে ঢাকা টেস্টের শেষ দিন ইনিংস পরাজয়ের ৮ রান দূরে ২০৫ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশ হেরে গেছে ইনিংস ও ৮ রানের বড় ব্যবধানে।

টাইগাররা আর মাত্র কয়েক ওভার টিকে থাকতে পারলেই ম্যাচটা বেঁচে যেতো। কিন্তু সাকিব আল হাসান সাজিদ খানের বলে আউট হয়ে যেতেই সব প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। ৬৩ রান করে আউট হন সাকিব আল হাসান। মিরাজ ১৪ রান করে ফিরে যান। এরপরের ব্যাটাররা শুধু আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি বোলারদের সামনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারেননি কেউ।

বৃষ্টির কারণে টেস্টের অর্ধেকের বেশি সময় খেলা হয়নি। প্রথম দিন ৩৩ ওভারের খেলা হয়নি, দ্বিতীয় হয়েছে মাত্র ৩৮ বল। তৃতীয় দিন পুরোটাই চলে যায় বৃষ্টির পেটে। চতুর্থ দিনও খেলা শুরু করতে বিলম্ব হয়। পুরোপুরি খেলা হলো কেবল পঞ্চম দিনে।

চোখ বন্ধ করেই এই ম্যাচটি ড্র করা যেতো। কিন্তু এমন ম্যাচটাতেই কি না ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়বরণ করতে হলো বাংলাদেশকে! তাও শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত লড়াই করার পর! মুশফিক, লিটন আর সাকিবের লড়াই আরও কিছুক্ষণ লম্বা হলেই নিশ্চিত ম্যাচটি বাঁচিয়ে ফেলতে পারতো বাংলাদেশ।

অথচ, শেষ ২৪ মিনিট কিংবা অন্তত ৫-৬ ওভারও যদি টেনে নিয়ে যেতে পারতো টাইগাররা! পাকিস্তানের করা ৩০০ রান পার করতে পারতো বাংলাদেশ! ম্যাচটা বেঁচে যেতো। কিন্তু সে কাজটুকুও শেষের ব্যাটাররা করতে পারেননি। অকাতরে উইকেট দিয়ে এসেছেন।

গতকাল শেরেবাংলায় শেষ দিনে বাংলাদেশ মোট ১৩ উইকেট হারায়। টেস্টের শেষ দিনে এক দলের এতগুলো উইকেটের পতন এই প্রথম। কৃতিত্বটা লেখা হলো পাকিস্তানের স্পিনার সাজিদের নামে। তিনি প্রথম ইনিংস ৮টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নেন।

চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে যেভাবে একের পর এক উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, তাতেই পরাজয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ৭ উইকেটে ৭৬ রানে দিন শেষ করে তারা। সাকিব আল হাসান উইকেটে ছিলেন ২৩ রান নিয়ে। তাইজুল ছিলেন শূন্য রানে।

পঞ্চম ও শেষ দিনের শুরুতেই একে একে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাকিব আউট হন ৩৩ রানে। বাকিরা কোনও রানই করতে পারেননি। যেখানে আর ২৪ রান করতে পারলেই ফলো অন এড়ানো সম্ভব ছিল, সেখানে আগের দিনের সঙ্গে মাত্র ১১ রান যোগ করেই, ৮৭ রানে অলআউট বাংলাদেশ।

ফলোঅনে পড়ার পর ম্যাচ বাঁচাতে যখন ব্যাটারদের কাছ থেকে প্রতিরোধ, দৃঢ়তা- আশা করা হয়েছিল, তখন টপ অর্ডার ব্যাটাররা দিলেন চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়। শাহিন আফ্রিদি, হাসান আলি কিংবা সাজিদ খানদের সামনে টিকতে পারেননি তারা। ২ রানে সাদমান ইসলাম, ৬ রানে মাহমুদুল হাসান জয়, ৬ রানে নাজমুল হোসেন শান্ত, ৭ রানে আউট হন মুমিনুল হক।

এরপর মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাস মিলে প্রতিরোধ গড়েন। দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৭৩ রানের জুটি। এই দু’জনের ব্যাটে ম্যাচ বাঁচানোর স্বপ্ন জেগে ওঠে। দলীয় ৯৮ রানের মাথায় আউট হন লিটন দাস। ৮১ বল মোকাবিলায় তিনি করেন ৪৫ রান।

এরপর মুশফিকুর রহিম আর সাকিব আল হাসান মিলে গড়েন আরও একটি জুটি। এই জুটির স্থায়িত্ব মাত্র ৪৯ রানের। ১৪৭ রানের মাথায় পড়ে ৬ষ্ঠ উইকেট। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট হয়ে যান মুশফিক। এ সময় তিনি ব্যাট করছিলেন ৪৮ রান নিয়ে।

মুশফিক-লিটন ফিরে যেতে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করলেও প্রয়োজনীয় সময়টুকু টিকে থাকতে পারেননি সাকিব। ১৩০ বল খেলে ৬৩ রানে আউট হয়ে যান তিনি। মিরাজ আউট হন ১৪ রান করে। তাইজুল ইসলাম করেন ৫ রান। খালেদ আহমেদ ৭ বলে কোন রান করতে পারেননি। এবাদত হোসেন খেলেন ১৩ বল। তিনিও কোন রান করতে পারেননি।

পাকিস্তানি স্পিনার সাজিদ খান দ্বিতীয় ইনিংসেও ছিলেন বিধ্বংসী। নেন ৪ উইকেট। আগের ইনিংসে নিয়েছেন ৮ উইকেট। মোট ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হলেন তিনি। ২টি করে উইকেট নেন শাহিন আফ্রিদি এবং হাসান আলি। ১টি উইকেট নেন বাবর আজম।

বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ৪ জমাদিউল আউয়াল

শেষ রক্ষা হয়নি টাইগারদের

পাকিস্তান ইনিংস ও ৮ রানে জয়ী

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

টি-২০ ও টেস্ট সিরিজের ট্রফি নিয়ে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম - বিসিবি

ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ ম্যাচের সেরাত্রয়ী সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাসের লড়াই শেষ পর্যন্ত কোনো কাজেই লাগলো না । ফলো অনে নেমে ঢাকা টেস্টের শেষ দিন ইনিংস পরাজয়ের ৮ রান দূরে ২০৫ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশ হেরে গেছে ইনিংস ও ৮ রানের বড় ব্যবধানে।

টাইগাররা আর মাত্র কয়েক ওভার টিকে থাকতে পারলেই ম্যাচটা বেঁচে যেতো। কিন্তু সাকিব আল হাসান সাজিদ খানের বলে আউট হয়ে যেতেই সব প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। ৬৩ রান করে আউট হন সাকিব আল হাসান। মিরাজ ১৪ রান করে ফিরে যান। এরপরের ব্যাটাররা শুধু আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি বোলারদের সামনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারেননি কেউ।

বৃষ্টির কারণে টেস্টের অর্ধেকের বেশি সময় খেলা হয়নি। প্রথম দিন ৩৩ ওভারের খেলা হয়নি, দ্বিতীয় হয়েছে মাত্র ৩৮ বল। তৃতীয় দিন পুরোটাই চলে যায় বৃষ্টির পেটে। চতুর্থ দিনও খেলা শুরু করতে বিলম্ব হয়। পুরোপুরি খেলা হলো কেবল পঞ্চম দিনে।

চোখ বন্ধ করেই এই ম্যাচটি ড্র করা যেতো। কিন্তু এমন ম্যাচটাতেই কি না ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়বরণ করতে হলো বাংলাদেশকে! তাও শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত লড়াই করার পর! মুশফিক, লিটন আর সাকিবের লড়াই আরও কিছুক্ষণ লম্বা হলেই নিশ্চিত ম্যাচটি বাঁচিয়ে ফেলতে পারতো বাংলাদেশ।

অথচ, শেষ ২৪ মিনিট কিংবা অন্তত ৫-৬ ওভারও যদি টেনে নিয়ে যেতে পারতো টাইগাররা! পাকিস্তানের করা ৩০০ রান পার করতে পারতো বাংলাদেশ! ম্যাচটা বেঁচে যেতো। কিন্তু সে কাজটুকুও শেষের ব্যাটাররা করতে পারেননি। অকাতরে উইকেট দিয়ে এসেছেন।

গতকাল শেরেবাংলায় শেষ দিনে বাংলাদেশ মোট ১৩ উইকেট হারায়। টেস্টের শেষ দিনে এক দলের এতগুলো উইকেটের পতন এই প্রথম। কৃতিত্বটা লেখা হলো পাকিস্তানের স্পিনার সাজিদের নামে। তিনি প্রথম ইনিংস ৮টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নেন।

চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে যেভাবে একের পর এক উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, তাতেই পরাজয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ৭ উইকেটে ৭৬ রানে দিন শেষ করে তারা। সাকিব আল হাসান উইকেটে ছিলেন ২৩ রান নিয়ে। তাইজুল ছিলেন শূন্য রানে।

পঞ্চম ও শেষ দিনের শুরুতেই একে একে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাকিব আউট হন ৩৩ রানে। বাকিরা কোনও রানই করতে পারেননি। যেখানে আর ২৪ রান করতে পারলেই ফলো অন এড়ানো সম্ভব ছিল, সেখানে আগের দিনের সঙ্গে মাত্র ১১ রান যোগ করেই, ৮৭ রানে অলআউট বাংলাদেশ।

ফলোঅনে পড়ার পর ম্যাচ বাঁচাতে যখন ব্যাটারদের কাছ থেকে প্রতিরোধ, দৃঢ়তা- আশা করা হয়েছিল, তখন টপ অর্ডার ব্যাটাররা দিলেন চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়। শাহিন আফ্রিদি, হাসান আলি কিংবা সাজিদ খানদের সামনে টিকতে পারেননি তারা। ২ রানে সাদমান ইসলাম, ৬ রানে মাহমুদুল হাসান জয়, ৬ রানে নাজমুল হোসেন শান্ত, ৭ রানে আউট হন মুমিনুল হক।

এরপর মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাস মিলে প্রতিরোধ গড়েন। দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৭৩ রানের জুটি। এই দু’জনের ব্যাটে ম্যাচ বাঁচানোর স্বপ্ন জেগে ওঠে। দলীয় ৯৮ রানের মাথায় আউট হন লিটন দাস। ৮১ বল মোকাবিলায় তিনি করেন ৪৫ রান।

এরপর মুশফিকুর রহিম আর সাকিব আল হাসান মিলে গড়েন আরও একটি জুটি। এই জুটির স্থায়িত্ব মাত্র ৪৯ রানের। ১৪৭ রানের মাথায় পড়ে ৬ষ্ঠ উইকেট। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট হয়ে যান মুশফিক। এ সময় তিনি ব্যাট করছিলেন ৪৮ রান নিয়ে।

মুশফিক-লিটন ফিরে যেতে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করলেও প্রয়োজনীয় সময়টুকু টিকে থাকতে পারেননি সাকিব। ১৩০ বল খেলে ৬৩ রানে আউট হয়ে যান তিনি। মিরাজ আউট হন ১৪ রান করে। তাইজুল ইসলাম করেন ৫ রান। খালেদ আহমেদ ৭ বলে কোন রান করতে পারেননি। এবাদত হোসেন খেলেন ১৩ বল। তিনিও কোন রান করতে পারেননি।

পাকিস্তানি স্পিনার সাজিদ খান দ্বিতীয় ইনিংসেও ছিলেন বিধ্বংসী। নেন ৪ উইকেট। আগের ইনিংসে নিয়েছেন ৮ উইকেট। মোট ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হলেন তিনি। ২টি করে উইকেট নেন শাহিন আফ্রিদি এবং হাসান আলি। ১টি উইকেট নেন বাবর আজম।