পাহাড় কি শান্তিতে আছে?

রাজিব শর্মা

পার্বত্য শান্তিচুক্তির চব্বিশটি বসন্ত পার হয়ে গেল, বড় দীর্ঘ সময়। আদৌ কি পার্বত্য এলাকা শান্তিতে আছে? শান্তিতে কি আছে প্রাণপ্রিয় মানুষগুলো?

পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই যুগ পার হয়ে গেলেও এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়নি। আর সে কারণে আদিবাসীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা চান দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা। আদিবাসীরা মনে করেন, মৌলিক অধিকার বঞ্চিত পাহাড়ি জনগোষ্ঠী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। একদিকে চরম দারিদ্র্য আর অন্যদিকে অব্যাহতভাবে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে মাথা গোঁজার ঠাঁই আদি ভিটা হারানো তাদের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেশা, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হওয়াসহ অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আদিবাসী সম্প্রদায়। যুগ যুগ ধরে তারা নানাভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত। এখনও হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। ক্রমেই অধিকার হারা নিঃস্ব মানুষে পরিণত হচ্ছে। তারা আজ নিজ দেশে পরবাসী ও উদ্বাস্তু। জুম্ম জনগোষ্ঠীর মুক্তির সনদ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের অধিকার আর গৌরব ফিরিয়ে দিলেই শুধু তারা না মের বেঁচে থাকার কোন একটা পথ পেতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষে সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) চুক্তি স্বাক্ষর করেন। আদিবাসী নেতাদের মতে, পাহাড়িদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল এই চুক্তি। যদিও এখন অনেক পাহাড়ি নেতাই মনে করেন চুক্তি করে তারা কিছুই পায়নি, বরং তাদের স্বাধীকারের যে আন্দোলন সংগ্রাম ছিল তাও স্তিমিত করে দেয়া হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর এই ‘টেবিল টেকনোক্র্যাসি’ পাহাড়িরা বুঝে উঠতে পারেনি।

শান্তিচুক্তিতে যা আছে : পাহাড়ি জনগণের দীর্ঘদিনের সশস্ত্র আন্দোলনের ফসল পার্বত্য শান্তিচুক্তি। আদিবাসীদের ভাষায়, এই চুক্তি তাদের অধিকার রক্ষার চুক্তি। আদিবাসীদের জীবন বৈচিত্র্য, ভাষা-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, নিজস্ব রীতিনীতি রক্ষাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ঐতিহাসিক সনদ। দেশের সংবিধানের আওতায় রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সব নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির প্রস্তাবনায় উল্লেখ রয়েছে।

চুক্তিটি মন্ত্রিপরিষদে পাস হয় ২২ ডিসেম্বর। ক) সাধারণ, খ) পার্বত্য জেলা পরিষদ, গ) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং ঘ) পুনর্বাসন, সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন ও অন্য বিষয়াবলী শিরোনামে চার খ-ে বিভক্ত এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি ও এই বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট আইন, বিধানাবলী ও রীতিসমূহ প্রণয়ন, পরিবর্তন, সংশোধন ও সংযোজন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করে বিশেষ শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন, প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী, অভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তু ও জনসংহতির সদস্যদের পুনর্বাসন, ৬টি সেনানিবাস ছাড়া সেনা, এপিবি, আনসার ও ভিডিপির সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার।

পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন, প্রথা ও পদ্ধতি অনুসারে ভূমি কমিশনের ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি, ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির পর ভূমি জরিপ, অস্থানীয়দের ভূমির ইজারা বাতিল। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন এবং একজন আদিবাসীকে মন্ত্রী পদে নিয়োগদান। জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা। জনসংহতি সমিতির সদস্যদের অস্ত্র জমাদান। সব ধরনের চাকরিতে পাহাড়িদের অগ্রাধিকার প্রদান, আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ। চুক্তি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, পুলিশ (স্থানীয়), কৃষি ও বন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য সংস্কৃতি, যুবকল্যাণ ও আদিবাসী আইন, রীতি বা প্রথা ও সামাজিক বিচারসহ ৩৩ বিষয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা পরিষদকে। সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় পরিষদের মধ্যে সমন্বয় করার দায়িত্ব থাকে আঞ্চলিক পরিষদের।

চুক্তির পর রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ সংশোধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন, ১৯৯৮ ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কার্যবিধিমালা ১৯৯৮ প্রণীত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৯৯৯ সালের ১২ মে। ২৭ মে অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের যাত্রা শুরু হয়।

গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক বিশাল সম্পদ। পাহাড়ি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন জাতিসত্তাও আমাদের এক বিশাল ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য ও সম্পদকে যদি আমরা নিজেরা রক্ষা করতে না চাই, বরং সেই সম্পদকে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিতে তাদের ভুল কৌশলের প্রেসক্রিপশনের পথে হেঁটে উন্নয়ন কার্যক্রমের নামে যত যজ্ঞ চালানো হোক না কেন, তা প্রকৃতপক্ষে পাহাড়কে শান্ত করায় কোন কাজে লাগবে না। বরং দিনদিন শান্ত পাহাড় আরও অশান্ত হয়ে ওঠার নানা উপাদানে একটা সমস্যার মস্তজট পাকিয়েছে। ভুল কৌশলে সেই মস্তজট খুলতে চাওয়া হবে আরো বড় ধরনের ঝুঁকি। এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশ কোন পথে যায়।

পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যত শিগগির সম্ভব শুভ উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা, নির্যাতন, তার বিরুদ্ধে সরকারকে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর এসব হামলা, নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, উচ্ছেদ এসবের যথাযথ বিচার করতে হবে। দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে লোক দেখানো কৌশল বা অস্থায়ী কোন কৌশলই পার্বত্য এলাকায় শান্তি ফেরাতে পারবে না। পাহাড়ে শান্তি টেকসই হবে না। মনে রাখতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ।

[লেখক : সংবাদকর্মী, অনলাইন অ্যাক্টিভিটিস্ট]

বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ৪ জমাদিউল আউয়াল

পাহাড় কি শান্তিতে আছে?

রাজিব শর্মা

পার্বত্য শান্তিচুক্তির চব্বিশটি বসন্ত পার হয়ে গেল, বড় দীর্ঘ সময়। আদৌ কি পার্বত্য এলাকা শান্তিতে আছে? শান্তিতে কি আছে প্রাণপ্রিয় মানুষগুলো?

পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই যুগ পার হয়ে গেলেও এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়নি। আর সে কারণে আদিবাসীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা চান দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা। আদিবাসীরা মনে করেন, মৌলিক অধিকার বঞ্চিত পাহাড়ি জনগোষ্ঠী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। একদিকে চরম দারিদ্র্য আর অন্যদিকে অব্যাহতভাবে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে মাথা গোঁজার ঠাঁই আদি ভিটা হারানো তাদের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেশা, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হওয়াসহ অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আদিবাসী সম্প্রদায়। যুগ যুগ ধরে তারা নানাভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত। এখনও হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। ক্রমেই অধিকার হারা নিঃস্ব মানুষে পরিণত হচ্ছে। তারা আজ নিজ দেশে পরবাসী ও উদ্বাস্তু। জুম্ম জনগোষ্ঠীর মুক্তির সনদ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের অধিকার আর গৌরব ফিরিয়ে দিলেই শুধু তারা না মের বেঁচে থাকার কোন একটা পথ পেতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষে সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) চুক্তি স্বাক্ষর করেন। আদিবাসী নেতাদের মতে, পাহাড়িদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল এই চুক্তি। যদিও এখন অনেক পাহাড়ি নেতাই মনে করেন চুক্তি করে তারা কিছুই পায়নি, বরং তাদের স্বাধীকারের যে আন্দোলন সংগ্রাম ছিল তাও স্তিমিত করে দেয়া হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর এই ‘টেবিল টেকনোক্র্যাসি’ পাহাড়িরা বুঝে উঠতে পারেনি।

শান্তিচুক্তিতে যা আছে : পাহাড়ি জনগণের দীর্ঘদিনের সশস্ত্র আন্দোলনের ফসল পার্বত্য শান্তিচুক্তি। আদিবাসীদের ভাষায়, এই চুক্তি তাদের অধিকার রক্ষার চুক্তি। আদিবাসীদের জীবন বৈচিত্র্য, ভাষা-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, নিজস্ব রীতিনীতি রক্ষাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ঐতিহাসিক সনদ। দেশের সংবিধানের আওতায় রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সব নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির প্রস্তাবনায় উল্লেখ রয়েছে।

চুক্তিটি মন্ত্রিপরিষদে পাস হয় ২২ ডিসেম্বর। ক) সাধারণ, খ) পার্বত্য জেলা পরিষদ, গ) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং ঘ) পুনর্বাসন, সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন ও অন্য বিষয়াবলী শিরোনামে চার খ-ে বিভক্ত এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি ও এই বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট আইন, বিধানাবলী ও রীতিসমূহ প্রণয়ন, পরিবর্তন, সংশোধন ও সংযোজন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করে বিশেষ শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন, প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী, অভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তু ও জনসংহতির সদস্যদের পুনর্বাসন, ৬টি সেনানিবাস ছাড়া সেনা, এপিবি, আনসার ও ভিডিপির সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার।

পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন, প্রথা ও পদ্ধতি অনুসারে ভূমি কমিশনের ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি, ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির পর ভূমি জরিপ, অস্থানীয়দের ভূমির ইজারা বাতিল। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন এবং একজন আদিবাসীকে মন্ত্রী পদে নিয়োগদান। জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা। জনসংহতি সমিতির সদস্যদের অস্ত্র জমাদান। সব ধরনের চাকরিতে পাহাড়িদের অগ্রাধিকার প্রদান, আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ। চুক্তি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, পুলিশ (স্থানীয়), কৃষি ও বন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য সংস্কৃতি, যুবকল্যাণ ও আদিবাসী আইন, রীতি বা প্রথা ও সামাজিক বিচারসহ ৩৩ বিষয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা পরিষদকে। সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় পরিষদের মধ্যে সমন্বয় করার দায়িত্ব থাকে আঞ্চলিক পরিষদের।

চুক্তির পর রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ সংশোধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন, ১৯৯৮ ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কার্যবিধিমালা ১৯৯৮ প্রণীত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৯৯৯ সালের ১২ মে। ২৭ মে অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের যাত্রা শুরু হয়।

গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক বিশাল সম্পদ। পাহাড়ি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন জাতিসত্তাও আমাদের এক বিশাল ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য ও সম্পদকে যদি আমরা নিজেরা রক্ষা করতে না চাই, বরং সেই সম্পদকে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিতে তাদের ভুল কৌশলের প্রেসক্রিপশনের পথে হেঁটে উন্নয়ন কার্যক্রমের নামে যত যজ্ঞ চালানো হোক না কেন, তা প্রকৃতপক্ষে পাহাড়কে শান্ত করায় কোন কাজে লাগবে না। বরং দিনদিন শান্ত পাহাড় আরও অশান্ত হয়ে ওঠার নানা উপাদানে একটা সমস্যার মস্তজট পাকিয়েছে। ভুল কৌশলে সেই মস্তজট খুলতে চাওয়া হবে আরো বড় ধরনের ঝুঁকি। এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশ কোন পথে যায়।

পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যত শিগগির সম্ভব শুভ উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা, নির্যাতন, তার বিরুদ্ধে সরকারকে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর এসব হামলা, নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, উচ্ছেদ এসবের যথাযথ বিচার করতে হবে। দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে লোক দেখানো কৌশল বা অস্থায়ী কোন কৌশলই পার্বত্য এলাকায় শান্তি ফেরাতে পারবে না। পাহাড়ে শান্তি টেকসই হবে না। মনে রাখতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ।

[লেখক : সংবাদকর্মী, অনলাইন অ্যাক্টিভিটিস্ট]