নারী জাগরণের পথিকৃৎ

সাবরিনা ওবায়েদ আনিকা

ঊনবিংশ শতাব্দীর ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে নারীকে মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যে মহীয়সী নারী ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন, তিনি হলেন বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন। তার জন্ম ও মৃত্যু উভয়ই ৯ ডিসেম্বর। ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী জাগরণ উন্মোচনবিষয়ক শিক্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্যাপনের মাধ্যমে এই মহীয়সী নারীকে বিশেষভাবে সম্মান প্রদর্শন করে স্মরণ করা হয়।

বিংশ শতাব্দীর সূচনাকালে রোকেয়ার যখন উত্থান, তখনও বাঙালি-মুসলমান নারী ছিল অন্ধকারে, পুরো বাঙালি মুসলমান সমাজই ছিল অন্ধকারে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশ থেকে থেকে শুরু হয়েছিল বাঙালি মুসলমানের বহুবিলম্বিত জাগরণ। সেই জাগরণের মধ্যে রোকেয়া নারীকেও অন্তর্ভুক্ত করে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রোকেয়া ছিলেন উন্মুক্ত মনের মানুষ। ফলে বাঙালি-মুসলমান নারীর মধ্যেই আবদ্ধ থাকেননি, দেশ-কাল-জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সমগ্রভাবে নারীর জাগরণ আকাক্সক্ষা করেছেন। তাই আমরা সামগ্রিকভাবে বলতে

রোকেয়া তার নারীবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন মতিচূর প্রবন্ধসংগ্রহের প্রথম (১৯০৪) ও দ্বিতীয় খণ্ডে (১৯২২)। সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫), পদ্মরাগ (১৯২৪), অবরোধবাসিনী (১৯৩১) ইত্যাদি তার সৃজনশীল রচনা। তার সুলতানার স্বপ্নকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার আগে তার লেখাগুলো নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

তার প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন। তার রচনা দিয়ে তিনি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, ধর্মের নামে নারীর প্রতি অবিচার রোধ করতে চেয়েছেন। শিক্ষা আর পছন্দানুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড়া যে নারী মুক্তি আসবে না-তা বলেছেন।

রোকেয়া অলঙ্কারকে দাসত্বের প্রতীক বিবেচনা করেছেন। নারীদের অলঙ্কার ত্যাগ করে আত্মসম্মানবোধে উজ্জীবিত হয়ে আর্থ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে সচেষ্ট হতে আহ্বান জানিযেছেন।

১৯৩২ সালে তার অকালমৃত্যুর পরেও বাঙালি তাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছে-অনুষ্ঠান করে, নিবেদিত কবিতা লিখে, জীবনী লিখে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমে বেগম রোকেয়া যে আলোড়ন জাগিয়েছিলেন শতাব্দীর শেষেও তার তরঙ্গের ওঠানামা প্রত্যক্ষ করছি আমরা।

[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ৪ জমাদিউল আউয়াল

নারী জাগরণের পথিকৃৎ

সাবরিনা ওবায়েদ আনিকা

image

ঊনবিংশ শতাব্দীর ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে নারীকে মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যে মহীয়সী নারী ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন, তিনি হলেন বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন। তার জন্ম ও মৃত্যু উভয়ই ৯ ডিসেম্বর। ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী জাগরণ উন্মোচনবিষয়ক শিক্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্যাপনের মাধ্যমে এই মহীয়সী নারীকে বিশেষভাবে সম্মান প্রদর্শন করে স্মরণ করা হয়।

বিংশ শতাব্দীর সূচনাকালে রোকেয়ার যখন উত্থান, তখনও বাঙালি-মুসলমান নারী ছিল অন্ধকারে, পুরো বাঙালি মুসলমান সমাজই ছিল অন্ধকারে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশ থেকে থেকে শুরু হয়েছিল বাঙালি মুসলমানের বহুবিলম্বিত জাগরণ। সেই জাগরণের মধ্যে রোকেয়া নারীকেও অন্তর্ভুক্ত করে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রোকেয়া ছিলেন উন্মুক্ত মনের মানুষ। ফলে বাঙালি-মুসলমান নারীর মধ্যেই আবদ্ধ থাকেননি, দেশ-কাল-জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সমগ্রভাবে নারীর জাগরণ আকাক্সক্ষা করেছেন। তাই আমরা সামগ্রিকভাবে বলতে

রোকেয়া তার নারীবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন মতিচূর প্রবন্ধসংগ্রহের প্রথম (১৯০৪) ও দ্বিতীয় খণ্ডে (১৯২২)। সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫), পদ্মরাগ (১৯২৪), অবরোধবাসিনী (১৯৩১) ইত্যাদি তার সৃজনশীল রচনা। তার সুলতানার স্বপ্নকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার আগে তার লেখাগুলো নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

তার প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন। তার রচনা দিয়ে তিনি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, ধর্মের নামে নারীর প্রতি অবিচার রোধ করতে চেয়েছেন। শিক্ষা আর পছন্দানুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ ছাড়া যে নারী মুক্তি আসবে না-তা বলেছেন।

রোকেয়া অলঙ্কারকে দাসত্বের প্রতীক বিবেচনা করেছেন। নারীদের অলঙ্কার ত্যাগ করে আত্মসম্মানবোধে উজ্জীবিত হয়ে আর্থ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে সচেষ্ট হতে আহ্বান জানিযেছেন।

১৯৩২ সালে তার অকালমৃত্যুর পরেও বাঙালি তাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছে-অনুষ্ঠান করে, নিবেদিত কবিতা লিখে, জীবনী লিখে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমে বেগম রোকেয়া যে আলোড়ন জাগিয়েছিলেন শতাব্দীর শেষেও তার তরঙ্গের ওঠানামা প্রত্যক্ষ করছি আমরা।

[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]