আইন করতে লাগে এক দিন, রাষ্ট্রপতির সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টি

সংবিধান অনুসারে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের দাবি জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টি। দলের নেতারা বলেছেন, ‘অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের আইন প্রণয়ন এক দিনেই হয়েছে। সুতরাং ইসি গঠনে আইন প্রণয়নে এখনো সময় আছে।’ নতুন বছরে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

নতুন ইসি গঠন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে এসব দাবি ও পরামর্শ দেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক ওয়ার্কার্স পার্টি।

দলের সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে সংলাপে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন আনিসুর রহমান মল্লিক, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমেদ বকুল, কামরুল আহসান, আলী আহমেদ এনামুল হক ও নজরুল ইসলাম হাক্কানী।

সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ইসি নিয়ে তিন দফা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ হচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্য যে একই বিষয় নিয়ে তিনবার আসতে হলো।’ তিনি বলেন, ২০১১ সালে ইসি গঠনে তারা আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে একই প্রস্তাব দিয়েছেন। আজও সেই প্রস্তাবই পুনরায় রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হয়েছে।

ইসি গঠনে আস্থাহীনতা দূর করতে হলে আইন করতেই হবে মন্তব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিও মনে করেন, ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন ফরজ হয়ে গেছে।’ ইসি গঠনে আইন প্রণয়ের বিষয় ‘আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য আছে’ মেনন বলেন, রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিতে পারেন। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের মতামত নিতে পারেন। এছাড়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) শামসুল হুদার আমলে আইনের একটি খসড়া তৈরি করাই আছে। ওই খসড়াটি ধরেই আইন প্রণয়ন সম্ভব। তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের আইন এক রাতেই তৈরি করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আপিলসংক্রান্ত সংবিধানের সংশোধনী আনতেও সময় লাগেনি। বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসবে। রাষ্ট্রপতি অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন। সে সময় ইসি গঠনে আইনটি তোলার বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন।

আইনের বিষয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল রাখা যেতে পারে। এতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে এই সাংবিধানিক কাউন্সিল হতে পারে। এই কাউন্সিল সিইসি ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবে।

মেনন জানান, সংলাপে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে বাইরে থেকে এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে। এমনটা হলে সার্চ কমিটি গঠনেও প্রস্তাব দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। এতে তারা বলেছে, সার্চ কমিটি সাংবিধানিক পদাধিকারীদের নিয়ে গঠন করতে হবে। তারা সিইসি ও অন্য কমিশনারদের প্রতিটি পদের জন্য চারজন করে নাম প্রস্তাব করবে। এই তালিকা সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে বাছাই করে সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি সিইসি ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন।

সংলাপকে নাটক বলছে কোন কোন রাজনৈতিক দল। আপনারা কী মনে করেন, এমন প্রশ্ন করা হলে মেনন বলেন, ‘যারা নাটক বলছে, তারা নাটকের বিপরীতে কিছু করে দেখাক।’

সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির মত জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, এটা আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল না। নির্বাচনকালীন সরকার দরকার আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছি। সংবিধানে এর বিকল্প কিছু নেই। সংবিধান সংশোধন করতে গেলে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য লাগবে।’

বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৪ জমাদিউল আউয়াল

আইন করতে লাগে এক দিন, রাষ্ট্রপতির সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সংবিধান অনুসারে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের দাবি জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টি। দলের নেতারা বলেছেন, ‘অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের আইন প্রণয়ন এক দিনেই হয়েছে। সুতরাং ইসি গঠনে আইন প্রণয়নে এখনো সময় আছে।’ নতুন বছরে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

নতুন ইসি গঠন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে এসব দাবি ও পরামর্শ দেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক ওয়ার্কার্স পার্টি।

দলের সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে সংলাপে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন আনিসুর রহমান মল্লিক, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমেদ বকুল, কামরুল আহসান, আলী আহমেদ এনামুল হক ও নজরুল ইসলাম হাক্কানী।

সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ইসি নিয়ে তিন দফা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ হচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্য যে একই বিষয় নিয়ে তিনবার আসতে হলো।’ তিনি বলেন, ২০১১ সালে ইসি গঠনে তারা আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে একই প্রস্তাব দিয়েছেন। আজও সেই প্রস্তাবই পুনরায় রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হয়েছে।

ইসি গঠনে আস্থাহীনতা দূর করতে হলে আইন করতেই হবে মন্তব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিও মনে করেন, ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন ফরজ হয়ে গেছে।’ ইসি গঠনে আইন প্রণয়ের বিষয় ‘আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য আছে’ মেনন বলেন, রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিতে পারেন। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের মতামত নিতে পারেন। এছাড়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) শামসুল হুদার আমলে আইনের একটি খসড়া তৈরি করাই আছে। ওই খসড়াটি ধরেই আইন প্রণয়ন সম্ভব। তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের আইন এক রাতেই তৈরি করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আপিলসংক্রান্ত সংবিধানের সংশোধনী আনতেও সময় লাগেনি। বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসবে। রাষ্ট্রপতি অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন। সে সময় ইসি গঠনে আইনটি তোলার বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন।

আইনের বিষয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল রাখা যেতে পারে। এতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে এই সাংবিধানিক কাউন্সিল হতে পারে। এই কাউন্সিল সিইসি ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবে।

মেনন জানান, সংলাপে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে বাইরে থেকে এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে। এমনটা হলে সার্চ কমিটি গঠনেও প্রস্তাব দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। এতে তারা বলেছে, সার্চ কমিটি সাংবিধানিক পদাধিকারীদের নিয়ে গঠন করতে হবে। তারা সিইসি ও অন্য কমিশনারদের প্রতিটি পদের জন্য চারজন করে নাম প্রস্তাব করবে। এই তালিকা সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে বাছাই করে সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি সিইসি ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন।

সংলাপকে নাটক বলছে কোন কোন রাজনৈতিক দল। আপনারা কী মনে করেন, এমন প্রশ্ন করা হলে মেনন বলেন, ‘যারা নাটক বলছে, তারা নাটকের বিপরীতে কিছু করে দেখাক।’

সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির মত জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, এটা আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল না। নির্বাচনকালীন সরকার দরকার আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছি। সংবিধানে এর বিকল্প কিছু নেই। সংবিধান সংশোধন করতে গেলে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য লাগবে।’