বিএনপির আনুষ্ঠানিক অনুপস্থিতিতে বিভক্ত তৃণমূল আ’লীগ

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিদ্রোহ বাড়ছে; বাড়ছে নৌকা প্রতীকে প্রার্থীদের পরাজয়। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে আওয়ামী লীগে। এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পরাজয় ধাপে ধাপে বেড়েই চলেছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয় ছিল শতকরা ৭৩.৪৮ ভাগ। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ৫৮.২৭ ভাগ, তৃতীয় ধাপে ৫২.৯২ ভাগ এবং চতুর্থ ধাপে এই হার নেমে এসেছে ৪৯.৭৪ ভাগে। এবারের ইউপি নির্বাচন ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন আরও দুই ধাপের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বাকি রয়েছে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের ভোটে নৌকা প্রতীক জয় পেয়েছিল ২৬৭০ ইউপিতে। বিএনপি ৩৭২ ইউপিতে আর স্বতন্ত্র প্রার্র্থীরা ৮৮০ ইউপিতে জয় পায়।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মতে, দলীয়ভাবে বিএনপি এই বর্জন করায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন করার আগ্রহ বেড়ে গেছে। সবাই নৌকা প্রতীক পেতে চান। ‘মিলবে প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতা, নৌকা পেলেই পাস’, এমন ধারণায় একেক ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সব স্তরের নেতাকর্মীরা।

কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, কে যোগ্য আর কে অযোগ্য; যথাযথ বাছ-বিচার ছাড়াই করা হচ্ছে তালিকা। বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন করে মনোনয়ন পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। বেশির ভাগ ইউপিতে এমন অভিযোগ উঠেছে।

ইউপি নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও এটা নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। দলের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র বলছে, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন তৃণমূল পর্যায়ে বিভেদ প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি দলীয় প্রার্থীর বিজয়ের হারও কাক্সিক্ষত নয় বলে তারা মনে করছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনের এই ফলাফল তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমনটি মনে করেন না।

সংবাদকে তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থীকে হারানোর জন্য বিএনপি-জামায়াত এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আবার বিদ্রোহী হলেও তারা যেহেতু আওয়ামী লীগেরই, তাদের প্রতি দলের অনেকের পরোক্ষ সমর্থন থাকে। এসব কারণে দলীয় প্রার্থীরা অনেক জায়গায় পরাজিত হয়েছেন।

কিন্তু এতে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না বলে দাবি তার। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তৃণমূলের এই নির্বাচন তো ক্ষমতা পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। তৃণমূলে বিদ্রোহী হলেও সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। জাতীয় নির্বাচনে এই বিরোধিতা থাকবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে। গত রোববার সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেই চতুর্থ ধাপে দেশের ৮৩৬টি ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান তিনজন। বিভিন্ন ইউপিতে সংঘর্ষে ১১ জন গুলিবিদ্ধ ও শতাধিক মানুষ আহত হন। কেন্দ্র দখল, সিল মারাসহ নানা অনিয়মের কারণে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোট বন্ধ রাখায় কিছু ইউপির ফলাফল স্থগিত করা হয়।

এই ধাপে ভোটের আগেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৮ ইউপিতে নৌকার প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। তাদেরসহ চেয়ারম্যান পদে ৭৯৬টি ইউপির ফল অনানুষ্ঠানিক প্রকাশ করে ইসি। এর মধ্যে নৌকা ৩৯৬ এবং স্বতন্ত্র ৩৯০টি ইউপিতে বিজয়ী হয়। তবে ভোটাভুটির ফলাফলে (বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদে) নৌকা ৩৪৮টি ইউপিতে বিজয়ী হয়। স্বতন্ত্র প্রার্র্থীরা জয় পায় ৩৯০ ইউপিতে।

নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চতুর্থ ধাপে অন্তত ২৮টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ১২০টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি নৌকার প্রার্থীরা। ১১০টি ইউপিতে তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন তারা।

দিনাজপুরের ২১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের অন্তত ৬ প্রার্থী জামানত হারান। জেলার কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী পাঁচ বারের চেয়ারম্যান শরিফউদ্দিন আহমেদও জামানত হারান। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিদুল ইসলাম মাস্টার সাংবাদিকদের বলেন, তৃণমূলের ভোট নিয়ে প্রার্থীর নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠালেও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে শরিফকে। তিনি বয়জ্যেষ্ঠ মানুষ। তাই এই দশা হয়েছে।

রাঙামাটি জেলার ১০ ইউপির মধ্যে মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ফরিদপুরে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ১০টি ইউপির ৯টিতে হেরেছেন নৌকার প্রার্থীরা। এর মধ্যে পাঁচটি ইউপিতে নৌকার প্রার্থীরা জামানত খুইয়েছেন।

গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসনের ১৫টি ইউনিয়নের ১৪টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলাও নৌকার প্রার্থীদের করুণ অবস্থা দেখা গেছে।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শাহনেওয়াজ রুমেল ৬৭ ভোট পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিজয় হলেও বাকি ৩টিতে ভরাডুবি হয়েছে। এর মধ্যে শাহনেওয়াজ চিরিংগা ইউপির ৯টি ওয়ার্ডের সবকটি মিলিয়ে সর্বমোট ৬৭ ভোট পেয়েছেন।

এর আগে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে চকরিয়ার কৈয়ার বিল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জান্নাতুল বকেয়া রেখা ৯৯ ভোট পেয়ে সারা দেশে আলোচনায় এসেছিলেন। এইবার তাকেও হার মানিয়ে রেকর্ড ৬৭ ভোট পেয়ে গড়েছেন নতুন রেকর্ড!

এদিকে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৪৯৬ ভোটের মধ্যে নৌকার প্রার্থী হাসিনা বেগম পেয়েছেন ৯৩ ভোট।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউপিতে নৌকার প্রার্থী এসএম আনিছুজ্জামান নৌকা প্রতীক নিয়ে মাত্র ১১৮ ভোট পেয়েছেন। ইউপির মোট ভোটার ২০ হাজার ৬৮৯ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতা সংবাদকে বলেন, জনপ্রিয়তা যাচাই না করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তৃণমূল থেকে পাঠানো নামের তালিকা উপেক্ষা করা হয়েছে। আবার যখন বিদ্রোহী প্রার্থী বেড়ে গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে নানা চেষ্টা করেও বিদ্রোহ দমন করা যায়নি। কারণ, প্রায় প্রতিটি এলাকায় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। প্রত্যেকে নিজেদের লোক জনপ্রতিনিধি বানাতে চায়। তারা এক হলে, সহযোগিতা করলে বিদ্রোহ দমন করা যেত।

দলীয় প্রতীকে ভোট না হলে এই সমস্যা হতো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এত সংখ্যক বিদ্রোহীর জয় দলের জন্য শুভ নয়। কারণ আগামীতে তৃণমূলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমস্যায় পড়বে কেন্দ্র।

বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ , ২০ পৌষ ১৪২৮ ২৫ জমাদিউল আউয়াল

দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন

বিএনপির আনুষ্ঠানিক অনুপস্থিতিতে বিভক্ত তৃণমূল আ’লীগ

ফয়েজ আহমেদ তুষার

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিদ্রোহ বাড়ছে; বাড়ছে নৌকা প্রতীকে প্রার্থীদের পরাজয়। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে আওয়ামী লীগে। এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পরাজয় ধাপে ধাপে বেড়েই চলেছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয় ছিল শতকরা ৭৩.৪৮ ভাগ। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ৫৮.২৭ ভাগ, তৃতীয় ধাপে ৫২.৯২ ভাগ এবং চতুর্থ ধাপে এই হার নেমে এসেছে ৪৯.৭৪ ভাগে। এবারের ইউপি নির্বাচন ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন আরও দুই ধাপের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বাকি রয়েছে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের ভোটে নৌকা প্রতীক জয় পেয়েছিল ২৬৭০ ইউপিতে। বিএনপি ৩৭২ ইউপিতে আর স্বতন্ত্র প্রার্র্থীরা ৮৮০ ইউপিতে জয় পায়।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মতে, দলীয়ভাবে বিএনপি এই বর্জন করায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন করার আগ্রহ বেড়ে গেছে। সবাই নৌকা প্রতীক পেতে চান। ‘মিলবে প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতা, নৌকা পেলেই পাস’, এমন ধারণায় একেক ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সব স্তরের নেতাকর্মীরা।

কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, কে যোগ্য আর কে অযোগ্য; যথাযথ বাছ-বিচার ছাড়াই করা হচ্ছে তালিকা। বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন করে মনোনয়ন পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। বেশির ভাগ ইউপিতে এমন অভিযোগ উঠেছে।

ইউপি নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও এটা নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। দলের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র বলছে, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন তৃণমূল পর্যায়ে বিভেদ প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি দলীয় প্রার্থীর বিজয়ের হারও কাক্সিক্ষত নয় বলে তারা মনে করছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনের এই ফলাফল তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমনটি মনে করেন না।

সংবাদকে তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থীকে হারানোর জন্য বিএনপি-জামায়াত এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আবার বিদ্রোহী হলেও তারা যেহেতু আওয়ামী লীগেরই, তাদের প্রতি দলের অনেকের পরোক্ষ সমর্থন থাকে। এসব কারণে দলীয় প্রার্থীরা অনেক জায়গায় পরাজিত হয়েছেন।

কিন্তু এতে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না বলে দাবি তার। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তৃণমূলের এই নির্বাচন তো ক্ষমতা পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। তৃণমূলে বিদ্রোহী হলেও সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। জাতীয় নির্বাচনে এই বিরোধিতা থাকবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে। গত রোববার সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেই চতুর্থ ধাপে দেশের ৮৩৬টি ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান তিনজন। বিভিন্ন ইউপিতে সংঘর্ষে ১১ জন গুলিবিদ্ধ ও শতাধিক মানুষ আহত হন। কেন্দ্র দখল, সিল মারাসহ নানা অনিয়মের কারণে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোট বন্ধ রাখায় কিছু ইউপির ফলাফল স্থগিত করা হয়।

এই ধাপে ভোটের আগেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৮ ইউপিতে নৌকার প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। তাদেরসহ চেয়ারম্যান পদে ৭৯৬টি ইউপির ফল অনানুষ্ঠানিক প্রকাশ করে ইসি। এর মধ্যে নৌকা ৩৯৬ এবং স্বতন্ত্র ৩৯০টি ইউপিতে বিজয়ী হয়। তবে ভোটাভুটির ফলাফলে (বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদে) নৌকা ৩৪৮টি ইউপিতে বিজয়ী হয়। স্বতন্ত্র প্রার্র্থীরা জয় পায় ৩৯০ ইউপিতে।

নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চতুর্থ ধাপে অন্তত ২৮টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ১২০টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি নৌকার প্রার্থীরা। ১১০টি ইউপিতে তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন তারা।

দিনাজপুরের ২১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের অন্তত ৬ প্রার্থী জামানত হারান। জেলার কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী পাঁচ বারের চেয়ারম্যান শরিফউদ্দিন আহমেদও জামানত হারান। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিদুল ইসলাম মাস্টার সাংবাদিকদের বলেন, তৃণমূলের ভোট নিয়ে প্রার্থীর নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠালেও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে শরিফকে। তিনি বয়জ্যেষ্ঠ মানুষ। তাই এই দশা হয়েছে।

রাঙামাটি জেলার ১০ ইউপির মধ্যে মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ফরিদপুরে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ১০টি ইউপির ৯টিতে হেরেছেন নৌকার প্রার্থীরা। এর মধ্যে পাঁচটি ইউপিতে নৌকার প্রার্থীরা জামানত খুইয়েছেন।

গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসনের ১৫টি ইউনিয়নের ১৪টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলাও নৌকার প্রার্থীদের করুণ অবস্থা দেখা গেছে।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শাহনেওয়াজ রুমেল ৬৭ ভোট পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিজয় হলেও বাকি ৩টিতে ভরাডুবি হয়েছে। এর মধ্যে শাহনেওয়াজ চিরিংগা ইউপির ৯টি ওয়ার্ডের সবকটি মিলিয়ে সর্বমোট ৬৭ ভোট পেয়েছেন।

এর আগে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে চকরিয়ার কৈয়ার বিল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জান্নাতুল বকেয়া রেখা ৯৯ ভোট পেয়ে সারা দেশে আলোচনায় এসেছিলেন। এইবার তাকেও হার মানিয়ে রেকর্ড ৬৭ ভোট পেয়ে গড়েছেন নতুন রেকর্ড!

এদিকে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৪৯৬ ভোটের মধ্যে নৌকার প্রার্থী হাসিনা বেগম পেয়েছেন ৯৩ ভোট।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউপিতে নৌকার প্রার্থী এসএম আনিছুজ্জামান নৌকা প্রতীক নিয়ে মাত্র ১১৮ ভোট পেয়েছেন। ইউপির মোট ভোটার ২০ হাজার ৬৮৯ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতা সংবাদকে বলেন, জনপ্রিয়তা যাচাই না করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তৃণমূল থেকে পাঠানো নামের তালিকা উপেক্ষা করা হয়েছে। আবার যখন বিদ্রোহী প্রার্থী বেড়ে গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে নানা চেষ্টা করেও বিদ্রোহ দমন করা যায়নি। কারণ, প্রায় প্রতিটি এলাকায় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। প্রত্যেকে নিজেদের লোক জনপ্রতিনিধি বানাতে চায়। তারা এক হলে, সহযোগিতা করলে বিদ্রোহ দমন করা যেত।

দলীয় প্রতীকে ভোট না হলে এই সমস্যা হতো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এত সংখ্যক বিদ্রোহীর জয় দলের জন্য শুভ নয়। কারণ আগামীতে তৃণমূলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমস্যায় পড়বে কেন্দ্র।