রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাচ্ছে না বিএনপি

নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন সেটাকে ‘অর্থহীন’ আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। দলটি জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে অংশ নেবে না।

বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে গত সোমবার রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সভায় অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

সভায় নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিবন্ধনকৃত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যতীত নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়।

সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিবন্ধনকৃত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপের বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যতীত নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়।’

‘গত দুটি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছিল। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে।’

বিজ্ঞপ্তিতে ফখরুল আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেআইনি ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা, অযোগ্যতার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরপর দুটি নির্বাচন কমিশনই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১২ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বলবৎ করে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র বিকাশের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। জনগণ তার ভোটের অধিকার হারিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন কখনোই স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না। বিএনপি বিশ্বাস করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যতিরেকে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোন নির্বাচন কমিশনই অনুষ্ঠান করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন, তার কোন ক্ষমতা নেই পরিবর্তন করার। সেই কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ কোন ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারবে না। বিএনপি অর্থহীন কোন সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।’

নতুন নির্বাচন (ইসি) কমিশন গঠনের লক্ষ্যে পরামর্শ ও আলোচনা করতে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপও করেছেন কয়েকটির দলের সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে আমন্ত্রণের তালিকায় আরও দল রয়েছে। এর মধ্যেই বিএনপি জানিয়ে দিল, তারা রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপে যাবে না।

সংলাপে অংশ নেয়নি বাসদ, যাবে না সিপিবি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের চলমান সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা এতে অংশ নেয়নি।

এদিকে আগামী ৩ জানুয়ারি সিপিবির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের শিডিউল করা থাকলেও সিপিবি এতে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। জানতে চাইলে দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংলাপের বিষয়বস্তু তো নতুন নয়। আমরা ২০১৬ সালেই প্রস্তাব দিয়েছি। যে এজেন্ডা গতবার ছিল, এবারও তাই। তাই নতুন করে আর এ বিষয়ে কথা বলার কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি সংলাপ না করে বরং সংসদের কাছে চিঠি পাঠাতে পারেন, এক মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করতে বলতে পারেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়ে গেছে, এখনও নির্বাচন কমিশন গঠনে কোন আইন করা যায়নি।’

বিএনপি সংলাপে থাকবে বলে আশা : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি সংলাপে না এলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন থেমে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে বিএনপি সংলাপে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। গতকাল রাজধানীতে নিজের সরকারি বাসভবনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘রাষ্ট্রপতির সংলাপ অর্থহীন এবং এই সংলাপে সংকটের সমাধান হবে না’, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এর আগেও নির্বাচন কমিশন গঠনে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে এবারও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। গতবারও বিএনপির তালিকা থেকে একজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেতিবাচক রাজনীতি থেকে সরে এসে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি এগিয়ে আসবে বলে আশা করছি। কেউ সংলাপে আসুক বা না আসুক, নির্বাচন কমিশন গঠন থেমে থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা যাবে না, নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হবে বিএনপি কি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চায়, নাকি বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায়।’

‘সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মিথ্যাচার করছে’, বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার নয়, মিথ্যাচার আর বিএনপি এখন সমার্থক শব্দ। বেগম জিয়ার মামলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তারা মিথ্যাচার আর অপরাজনীতির ওপরই ভরসা করে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘বন্দী বেগম জিয়া অধিকতর শক্তিশালী, এ দর্শন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা (বিএনপি) মুক্তির চেষ্টাও করেনি। আইনগত লড়াইও তেমনটা করেনি, তাদের উদ্দেশ্যমূলক অপরাজনীতির দাবার গুটি হয়েছেন বেগম জিয়া।’

‘বিএনপি নেতারা বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও অতিরাজনীতি করছে। তারা চিকিৎসার চেয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলকেই অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে, বরং শেখ হাসিনাই বেগম জিয়ার প্রতি উদারতা এবং মানবিকতার নজির স্থাপন করেছেন। অথচ সেই কৃতজ্ঞতাবোধও বিএনপিতে নেই।’

তিনি বলেন, ‘আপাদমস্তক অগণতান্ত্রিক এবং লুটপাটের রাজনীতির জনক বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের বুলি ছাড়লেও অন্তরে সাম্প্রদায়িকতা আর সুবিধাবাদ লালন করে। বিএনপিই এদেশকে ধর্মান্ধ, উগ্রবাদী ও সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। বিএনপির বহুদলীয় তামাশা আর ভোটারবিহীন নির্বাচনই দেশকে গণতন্ত্র থেকে ছিটকে দিয়েছিল। সোয়া এক কোটি ভুয়া ভোটার সৃষ্টি করে বিএনপিই গণতন্ত্রের কবর রচনা করতে চেয়েছিল।’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ , ২০ পৌষ ১৪২৮ ২৫ জমাদিউল আউয়াল

রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাচ্ছে না বিএনপি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন সেটাকে ‘অর্থহীন’ আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। দলটি জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে অংশ নেবে না।

বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে গত সোমবার রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সভায় অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

সভায় নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিবন্ধনকৃত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যতীত নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়।

সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিবন্ধনকৃত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপের বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যতীত নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়।’

‘গত দুটি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছিল। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে।’

বিজ্ঞপ্তিতে ফখরুল আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেআইনি ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা, অযোগ্যতার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরপর দুটি নির্বাচন কমিশনই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১২ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বলবৎ করে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র বিকাশের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। জনগণ তার ভোটের অধিকার হারিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন কখনোই স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না। বিএনপি বিশ্বাস করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যতিরেকে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোন নির্বাচন কমিশনই অনুষ্ঠান করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন, তার কোন ক্ষমতা নেই পরিবর্তন করার। সেই কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ কোন ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারবে না। বিএনপি অর্থহীন কোন সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।’

নতুন নির্বাচন (ইসি) কমিশন গঠনের লক্ষ্যে পরামর্শ ও আলোচনা করতে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপও করেছেন কয়েকটির দলের সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে আমন্ত্রণের তালিকায় আরও দল রয়েছে। এর মধ্যেই বিএনপি জানিয়ে দিল, তারা রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপে যাবে না।

সংলাপে অংশ নেয়নি বাসদ, যাবে না সিপিবি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের চলমান সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা এতে অংশ নেয়নি।

এদিকে আগামী ৩ জানুয়ারি সিপিবির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের শিডিউল করা থাকলেও সিপিবি এতে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। জানতে চাইলে দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংলাপের বিষয়বস্তু তো নতুন নয়। আমরা ২০১৬ সালেই প্রস্তাব দিয়েছি। যে এজেন্ডা গতবার ছিল, এবারও তাই। তাই নতুন করে আর এ বিষয়ে কথা বলার কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি সংলাপ না করে বরং সংসদের কাছে চিঠি পাঠাতে পারেন, এক মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করতে বলতে পারেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়ে গেছে, এখনও নির্বাচন কমিশন গঠনে কোন আইন করা যায়নি।’

বিএনপি সংলাপে থাকবে বলে আশা : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি সংলাপে না এলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন থেমে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে বিএনপি সংলাপে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। গতকাল রাজধানীতে নিজের সরকারি বাসভবনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘রাষ্ট্রপতির সংলাপ অর্থহীন এবং এই সংলাপে সংকটের সমাধান হবে না’, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এর আগেও নির্বাচন কমিশন গঠনে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে এবারও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। গতবারও বিএনপির তালিকা থেকে একজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেতিবাচক রাজনীতি থেকে সরে এসে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি এগিয়ে আসবে বলে আশা করছি। কেউ সংলাপে আসুক বা না আসুক, নির্বাচন কমিশন গঠন থেমে থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা যাবে না, নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হবে বিএনপি কি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চায়, নাকি বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায়।’

‘সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মিথ্যাচার করছে’, বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার নয়, মিথ্যাচার আর বিএনপি এখন সমার্থক শব্দ। বেগম জিয়ার মামলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তারা মিথ্যাচার আর অপরাজনীতির ওপরই ভরসা করে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘বন্দী বেগম জিয়া অধিকতর শক্তিশালী, এ দর্শন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা (বিএনপি) মুক্তির চেষ্টাও করেনি। আইনগত লড়াইও তেমনটা করেনি, তাদের উদ্দেশ্যমূলক অপরাজনীতির দাবার গুটি হয়েছেন বেগম জিয়া।’

‘বিএনপি নেতারা বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও অতিরাজনীতি করছে। তারা চিকিৎসার চেয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলকেই অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে, বরং শেখ হাসিনাই বেগম জিয়ার প্রতি উদারতা এবং মানবিকতার নজির স্থাপন করেছেন। অথচ সেই কৃতজ্ঞতাবোধও বিএনপিতে নেই।’

তিনি বলেন, ‘আপাদমস্তক অগণতান্ত্রিক এবং লুটপাটের রাজনীতির জনক বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের বুলি ছাড়লেও অন্তরে সাম্প্রদায়িকতা আর সুবিধাবাদ লালন করে। বিএনপিই এদেশকে ধর্মান্ধ, উগ্রবাদী ও সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। বিএনপির বহুদলীয় তামাশা আর ভোটারবিহীন নির্বাচনই দেশকে গণতন্ত্র থেকে ছিটকে দিয়েছিল। সোয়া এক কোটি ভুয়া ভোটার সৃষ্টি করে বিএনপিই গণতন্ত্রের কবর রচনা করতে চেয়েছিল।’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।