কক্সবাজার সৈকতে চালু হলো নারী-শিশুদের সংরক্ষিত এলাকা

সম্প্রতি একজন নারী পর্যটক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠার পর নড়েচড়ে বসেছে কক্সবাজারের প্রশাসন। পর্যটক নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। হোটেল বা গেস্ট হাউজে যেন পর্যটকরা নিরাপদে থাকতে পারেন এ ব্যাপারেও তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। মালিক ও পরিচালকদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন। হোটেল কর্মীদের এসব ব্যাপারে প্রশিক্ষণ এবং সচেতন হওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এবার থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে হোটেল মোটেল জোনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। ইতোমধ্যে ৮০-৮৫ ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা একটি সংরক্ষিত এলাকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ওই সংরক্ষিত এলাকায় স্নান করতে পারবেন নারী ও শিশুরা। সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ৬০০ ফুট দীর্ঘ এ জোন করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ। সৈকতে নামা পর্যটকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

এলাকাটির চতুর্দিকে পতাকা পুঁতে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৬০০ ফুট দীর্ঘ এ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কয়েকজন নারী সদস্য। তারা নতুন এই জোন সম্পর্কে মাইকিং করছেন কিছুক্ষণ পরপর। সৈকতে নামা নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ। অন্যদিকে, ইংরেজি নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজন কক্সবাজারে ২০২১ সালের শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় ও রাতে বিভিন্ন হোটেলের বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এবং বিশাল সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়ে ইংরেজি নতুন বছর ২০২২ সালকে রবণ করতে কক্সবাজারে ইতোমধ্যে ছুটে আসতে শুরু করেছেন।

নারী পর্যটকদের জন্য একটি সংরক্ষিত এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, সৈকতে বেশি ঝুঁকিতে থাকে নারী ও শিশুরা। এবার সেই ঝুঁকি কমবে। পর্যটকদের জন্য আগে থেকেই কাজ করছি। জনবল কম হলেও আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ কর যাচ্ছি।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ সংবাদকে জানান, কক্সবাজার পর্যটন এলাকা নারীবান্ধব করার জন্য সৈকতে নারীদের জন্য একটি সংরক্ষিত এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে নারী পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে সৈকত ভ্রমণ করতে পারবেন। সৈকতে নারীদের নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের বড় একটি অংশে নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের মধ্যেও নারী পুলিশ রয়েছেন।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার সংবাদ জানান, এবারে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে এ পর্যন্ত ৮০-৮৫ ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে কোন আয়োজন হচ্ছে না। তাই এবার কক্সবাজারে পর্যটক আগমন আশানুরূপ হবে না। নতুন বছর ভালোভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ এবার একটি বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। তা হচ্ছে রুমে দুজনের জায়গায় তিনজন, তিনজনের জায়গা চারজন এভাবে প্রতিটি রুমে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হবে না। নিয়ন্ত্রিত মূল্যে সব রুম বুকিং দেয়া হচ্ছে। তিনি কোন দালালের মাধ্যমে হোটেল বুকিং না দেয়ার জন্য পর্যটক অতিথিদের প্রতি অনুরোধ করেন।

এদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, কক্সবাজারে সাড়ে ৪০০ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত যাপন করতে পারেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ সব সময় মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। কক্সবাজারে ৩৫টি পর্যটন জোন রয়েছে। প্রত্যেক জোনে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের চট্টগ্রামের ডিআইজি মো. মোসলেম উদ্দিন সংবাদকে জানান, এবার থার্টিফার্স্ট নাইটসহ পুরো পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে এবং সেভাবে মাঠে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

এদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে আসা নারী পর্যটক ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে নারী পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর হয়ে উঠেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বেধে দেয়া নির্দেশনায় রয়েছে, সব আবাসিক হোটেলে রুম বুকিং করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও জমা দিতে হবে।

আবাসিক হোটেলগুলোয় একটি অভিন্ন আদর্শ কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করতে হবে। প্রতিটি হোটেলে কক্ষ সংখ্যা, মূল্য তালিকা ও খালি কক্ষের সংখ্যা, রেস্তোরাঁয় খাবারের মূল্য তালিকা প্রকাশ্যে প্রদর্শন করতে হবে। প্রতিটি আবাসিক হোটেলে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে অথবা জোরদার করতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ , ২০ পৌষ ১৪২৮ ২৫ জমাদিউল আউয়াল

কক্সবাজার সৈকতে চালু হলো নারী-শিশুদের সংরক্ষিত এলাকা

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

image

কক্সবাজার : নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা -সংবাদ

সম্প্রতি একজন নারী পর্যটক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠার পর নড়েচড়ে বসেছে কক্সবাজারের প্রশাসন। পর্যটক নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। হোটেল বা গেস্ট হাউজে যেন পর্যটকরা নিরাপদে থাকতে পারেন এ ব্যাপারেও তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। মালিক ও পরিচালকদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন। হোটেল কর্মীদের এসব ব্যাপারে প্রশিক্ষণ এবং সচেতন হওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এবার থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে হোটেল মোটেল জোনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। ইতোমধ্যে ৮০-৮৫ ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা একটি সংরক্ষিত এলাকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ওই সংরক্ষিত এলাকায় স্নান করতে পারবেন নারী ও শিশুরা। সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ৬০০ ফুট দীর্ঘ এ জোন করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ। সৈকতে নামা পর্যটকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

এলাকাটির চতুর্দিকে পতাকা পুঁতে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৬০০ ফুট দীর্ঘ এ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কয়েকজন নারী সদস্য। তারা নতুন এই জোন সম্পর্কে মাইকিং করছেন কিছুক্ষণ পরপর। সৈকতে নামা নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ। অন্যদিকে, ইংরেজি নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজন কক্সবাজারে ২০২১ সালের শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় ও রাতে বিভিন্ন হোটেলের বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এবং বিশাল সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়ে ইংরেজি নতুন বছর ২০২২ সালকে রবণ করতে কক্সবাজারে ইতোমধ্যে ছুটে আসতে শুরু করেছেন।

নারী পর্যটকদের জন্য একটি সংরক্ষিত এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, সৈকতে বেশি ঝুঁকিতে থাকে নারী ও শিশুরা। এবার সেই ঝুঁকি কমবে। পর্যটকদের জন্য আগে থেকেই কাজ করছি। জনবল কম হলেও আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ কর যাচ্ছি।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ সংবাদকে জানান, কক্সবাজার পর্যটন এলাকা নারীবান্ধব করার জন্য সৈকতে নারীদের জন্য একটি সংরক্ষিত এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে নারী পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে সৈকত ভ্রমণ করতে পারবেন। সৈকতে নারীদের নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের বড় একটি অংশে নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের মধ্যেও নারী পুলিশ রয়েছেন।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার সংবাদ জানান, এবারে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে এ পর্যন্ত ৮০-৮৫ ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে কোন আয়োজন হচ্ছে না। তাই এবার কক্সবাজারে পর্যটক আগমন আশানুরূপ হবে না। নতুন বছর ভালোভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ এবার একটি বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। তা হচ্ছে রুমে দুজনের জায়গায় তিনজন, তিনজনের জায়গা চারজন এভাবে প্রতিটি রুমে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হবে না। নিয়ন্ত্রিত মূল্যে সব রুম বুকিং দেয়া হচ্ছে। তিনি কোন দালালের মাধ্যমে হোটেল বুকিং না দেয়ার জন্য পর্যটক অতিথিদের প্রতি অনুরোধ করেন।

এদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, কক্সবাজারে সাড়ে ৪০০ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত যাপন করতে পারেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ সব সময় মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। কক্সবাজারে ৩৫টি পর্যটন জোন রয়েছে। প্রত্যেক জোনে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের চট্টগ্রামের ডিআইজি মো. মোসলেম উদ্দিন সংবাদকে জানান, এবার থার্টিফার্স্ট নাইটসহ পুরো পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে এবং সেভাবে মাঠে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

এদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে আসা নারী পর্যটক ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে নারী পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর হয়ে উঠেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বেধে দেয়া নির্দেশনায় রয়েছে, সব আবাসিক হোটেলে রুম বুকিং করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও জমা দিতে হবে।

আবাসিক হোটেলগুলোয় একটি অভিন্ন আদর্শ কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করতে হবে। প্রতিটি হোটেলে কক্ষ সংখ্যা, মূল্য তালিকা ও খালি কক্ষের সংখ্যা, রেস্তোরাঁয় খাবারের মূল্য তালিকা প্রকাশ্যে প্রদর্শন করতে হবে। প্রতিটি আবাসিক হোটেলে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে অথবা জোরদার করতে হবে।