আড়াই মাসেও তদন্তে অগ্রগতি নেই

শঙ্কা কাটছে না ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর

চলতি ২০২১ সালে রংপুরে দুটি চাঞ্চল্যকর আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটেছে। একটি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় করিমপুর কসবা মাঝিপাড়া ও দক্ষিণ মাঝিপাড়ায় হিন্দু বাড়িঘরে তান্ডব চালিয়ে ৩৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ মালামাল লুট এবং মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে এক যুবককে আটক করে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে পিটিয়ে হত্যা ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার থানায় হামলা ভাঙচুরসহ ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটেছে। দুটি ঘটনাই সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হলেও হিন্দু বাড়িতে তান্ডবের ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলার কোনটিতেই পুলিশ দীর্ঘ আড়াই মাসেও চার্জশিট দিতে পারেনি। ফলে চাঞ্চল্যকর এ মামলাগুলো বিশেষ আদালতে বিচার হওয়ার ঘোষণা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে হিন্দু মাঝিপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

অন্যদিকে চলতি বছরের ২ নভেম্বর রাতে রংপুরের হারাগাছ এলাকার নতুন বাজার পাকার মাথা এলাকায় পুলিশের নির্যাতনে তাজুল ইসলাম নামে এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারাগাছ পৌর এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৬০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা হারাগাছ থানায় হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশ দাবি করেছিল, মৃত তাজুল ইসলাম একজন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে পুলিশ আটক করলে সে হাট অ্যাটাকে মারা গেছে। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি বলে পুলিশ দাবি করেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে নিহত তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি মামলা অন্যটি থানায় হামলা ভাঙচুরসহ তান্ডবের মামলা। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করায় ঘটনা তদন্তে রংপুর জেলা জজকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। জেলা জজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলে জানা গেছে।

প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা বড়করিমপুর কসবা মাঝিপাড়ায় গত ১৭ অক্টোবর রাতে। দক্ষিণ মাঝিপাড়া কসবা গ্রামের প্রশান্ত চন্দ্রের ছেলে পরেশ চন্দ্র ফেইসবুকে পবিত্র কাবা শরীফ নিয়ে একটি ধর্মীয় অবমাননাকর স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রদান করে। তার দেয়া স্ট্যাটাস শেয়ার করে তারই বন্ধু আল আমিন ও উজ্জল। মহূর্তের মধ্যে এটি ভাইরাল হলে পুরো পীরগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরই জের ধরে ১৭ অক্টোবর রাতে কয়েক শতাধিক মানুষ মাঝিপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে কমপেক্ষ ৩৫টি বাড়ি পুড়ে ভস্মীভূত হয়। এ ছাড়া হামলা করে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। দুবৃর্ত্তরা আগুন দেয়ার পর বিভিন্ন বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে গরু-ছাগল আসবাবপত্রসহ নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সংখ্যালঘুদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দেশব্যাপী বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সিপিবি, গণফোরাম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীসহ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটায়। স্থানীয় প্রশাসন হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত দুই গ্রামের সবার জন্য তিন বেলা করে বেশ কয়েকদিন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের বাড়িঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। প্রচুর আর্থিক সহায়তা পান তারা। তার পরেও আবারো হামলার আশঙ্কায় এখনো শঙ্কা কাটেনি তাদের।

মামলা ও গ্রেপ্তার

পীরগঞ্জে তান্ডবের ঘটনার পর অবমাননাকর স্ট্যাটাস প্রদানকারী পরেশ চন্দ্রকে পুলিশ জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থেকে গ্রেপ্তার করে, একইভাবে তার দুই বন্ধু আল আমিন ও উজ্জলকেও গ্রেপ্কার করে পুলিশ। তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তান্ডবের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। প্রথম দিনেই ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৮ অক্টোবর পুলিশ পার্শ¦বর্তী গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি থানা শিবির নেতা সৈকত মন্ডল ও রবিউলকে গ্রেপ্তার করে তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। ২৫ অক্টোবর ছাত্রলীগ কারমাইকেল কলেজ শাখার নেতা সৈকত মন্ডল ও তার সহযোগী রবিউলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মন্ডল তান্ডবের নেতৃত্ব দিয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ সৈকত মন্ডলকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি প্রদান করে এবং কারমাইকেল কলেজ ছাত্র লীগের কমিটি বাতিল করে দেয়। তান্ডবের ঘটনায় ৪টি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ঘটনার জন্য ১টি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গ্রেপ্তার ও রিমান্ড

পীরগঞ্জে তান্ডবের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বেশির ভাগ গ্রেফপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৪ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এখনও গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।

নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ

হিন্দুপাড়ায় তান্ডবের ঘটনায় পুলিশ অন্তত ২০ জন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, এদের বেশির ভাগই ঘটনার সময় ছিল না। তাদের বাড়ি থেকে ধরে এনে এই মামলায় চালান দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর কাছে নিরীহ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করার অভিযোগ এনে জনপ্রতিনিধিরা লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন।

পুলিশের বক্তব্য ও সর্বশেষ অবস্থা

সার্বিক বিষয়ে জানতে পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেষ চন্দ্র মন্ডলের সঙ্গে গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখনো তদন্ত চলছে, মামলার চার্জশিট দেয়ার এখনও সময় হয়নি। কারণ তদন্ত শেষ হয়নি। কোন নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ , ১৬ পৌষ ১৪২৮ ২৬ জমাদিউল আউয়াল

পীরগঞ্জে হিন্দুপাড়ায় হামলা-আগুন

আড়াই মাসেও তদন্তে অগ্রগতি নেই

শঙ্কা কাটছে না ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

চলতি ২০২১ সালে রংপুরে দুটি চাঞ্চল্যকর আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটেছে। একটি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় করিমপুর কসবা মাঝিপাড়া ও দক্ষিণ মাঝিপাড়ায় হিন্দু বাড়িঘরে তান্ডব চালিয়ে ৩৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ মালামাল লুট এবং মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে এক যুবককে আটক করে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে পিটিয়ে হত্যা ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার থানায় হামলা ভাঙচুরসহ ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটেছে। দুটি ঘটনাই সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হলেও হিন্দু বাড়িতে তান্ডবের ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলার কোনটিতেই পুলিশ দীর্ঘ আড়াই মাসেও চার্জশিট দিতে পারেনি। ফলে চাঞ্চল্যকর এ মামলাগুলো বিশেষ আদালতে বিচার হওয়ার ঘোষণা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে হিন্দু মাঝিপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

অন্যদিকে চলতি বছরের ২ নভেম্বর রাতে রংপুরের হারাগাছ এলাকার নতুন বাজার পাকার মাথা এলাকায় পুলিশের নির্যাতনে তাজুল ইসলাম নামে এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারাগাছ পৌর এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৬০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা হারাগাছ থানায় হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশ দাবি করেছিল, মৃত তাজুল ইসলাম একজন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে পুলিশ আটক করলে সে হাট অ্যাটাকে মারা গেছে। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি বলে পুলিশ দাবি করেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে নিহত তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি মামলা অন্যটি থানায় হামলা ভাঙচুরসহ তান্ডবের মামলা। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করায় ঘটনা তদন্তে রংপুর জেলা জজকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। জেলা জজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলে জানা গেছে।

প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা বড়করিমপুর কসবা মাঝিপাড়ায় গত ১৭ অক্টোবর রাতে। দক্ষিণ মাঝিপাড়া কসবা গ্রামের প্রশান্ত চন্দ্রের ছেলে পরেশ চন্দ্র ফেইসবুকে পবিত্র কাবা শরীফ নিয়ে একটি ধর্মীয় অবমাননাকর স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রদান করে। তার দেয়া স্ট্যাটাস শেয়ার করে তারই বন্ধু আল আমিন ও উজ্জল। মহূর্তের মধ্যে এটি ভাইরাল হলে পুরো পীরগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরই জের ধরে ১৭ অক্টোবর রাতে কয়েক শতাধিক মানুষ মাঝিপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে কমপেক্ষ ৩৫টি বাড়ি পুড়ে ভস্মীভূত হয়। এ ছাড়া হামলা করে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। দুবৃর্ত্তরা আগুন দেয়ার পর বিভিন্ন বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে গরু-ছাগল আসবাবপত্রসহ নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সংখ্যালঘুদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দেশব্যাপী বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সিপিবি, গণফোরাম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীসহ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটায়। স্থানীয় প্রশাসন হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত দুই গ্রামের সবার জন্য তিন বেলা করে বেশ কয়েকদিন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের বাড়িঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। প্রচুর আর্থিক সহায়তা পান তারা। তার পরেও আবারো হামলার আশঙ্কায় এখনো শঙ্কা কাটেনি তাদের।

মামলা ও গ্রেপ্তার

পীরগঞ্জে তান্ডবের ঘটনার পর অবমাননাকর স্ট্যাটাস প্রদানকারী পরেশ চন্দ্রকে পুলিশ জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থেকে গ্রেপ্তার করে, একইভাবে তার দুই বন্ধু আল আমিন ও উজ্জলকেও গ্রেপ্কার করে পুলিশ। তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তান্ডবের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। প্রথম দিনেই ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৮ অক্টোবর পুলিশ পার্শ¦বর্তী গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি থানা শিবির নেতা সৈকত মন্ডল ও রবিউলকে গ্রেপ্তার করে তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। ২৫ অক্টোবর ছাত্রলীগ কারমাইকেল কলেজ শাখার নেতা সৈকত মন্ডল ও তার সহযোগী রবিউলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মন্ডল তান্ডবের নেতৃত্ব দিয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ সৈকত মন্ডলকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি প্রদান করে এবং কারমাইকেল কলেজ ছাত্র লীগের কমিটি বাতিল করে দেয়। তান্ডবের ঘটনায় ৪টি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ঘটনার জন্য ১টি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গ্রেপ্তার ও রিমান্ড

পীরগঞ্জে তান্ডবের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বেশির ভাগ গ্রেফপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৪ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এখনও গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।

নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ

হিন্দুপাড়ায় তান্ডবের ঘটনায় পুলিশ অন্তত ২০ জন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, এদের বেশির ভাগই ঘটনার সময় ছিল না। তাদের বাড়ি থেকে ধরে এনে এই মামলায় চালান দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর কাছে নিরীহ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করার অভিযোগ এনে জনপ্রতিনিধিরা লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন।

পুলিশের বক্তব্য ও সর্বশেষ অবস্থা

সার্বিক বিষয়ে জানতে পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেষ চন্দ্র মন্ডলের সঙ্গে গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখনো তদন্ত চলছে, মামলার চার্জশিট দেয়ার এখনও সময় হয়নি। কারণ তদন্ত শেষ হয়নি। কোন নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।