২০২১ : আলোচিত

নায়িকা পরীমনি : বছরের সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে যাকে নিয়ে তিনি হলেন পরীমনি। বোট ক্লাব কাণ্ড, তার বাসায় র‌্যাবের অভিযান, গ্রেপ্তার হওয়া, জামিন অতঃপর মুক্তি এমন সব ঘটনার জন্য তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে লাইভে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমির বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার কথা বলে সাড়া ফেলেন পরীমনি। এই ঘটনায় মামলা করেন এই চিত্রনায়িকা। এরপর ৪ আগস্ট তার বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যের সঙ্গে তাকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় তিনি ভেতর থেকে দরজা লক করে ফেইবসবুক লাইভ করে তাকে বাঁচানোর আহ্বান করেন পরিচিতজনদের। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয় এবং তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে ৭ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে পরিমনির সদস্যপদ স্থগিত করে শিল্পী সমিতি। তিন দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৩১ আগস্ট তার জামিন মঞ্জুর হয় এবং ২৬ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর পরিমনি মুক্ত হন। জামিন থেকে বের হওয়ার পর তার হাতে লেখা, আদালতে হাজিরা দিতে গেলেও তার হাতের লেখা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। বছরের শেষদিকে জন্মদিন উদযাপন নিয়েও তিনি আলোচিত হন।

নির্বাচন কমিশন

বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থতাসহ নানা কারণে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বছরের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অপর চারজন কমিশনারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির আরও কিছু অভিযোগ এনে ফের রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন দেশের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। একইসঙ্গে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানান তারা। যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন করে কমিশনের বিরুদ্ধেই নানা বক্তব্য তুলে ধরেন। কেউ কেউ তার এভাবে বক্তব্য ‘সাহসী পদক্ষেপ’ বললেও তার সাংবিধানিক পদে থেকে এসব বক্তব্য দেয়ায় এবং বার বার বলায় অনেকেই মনে করেন কমিশনের সঙ্গে তার ভিন্নমত থাকলে তিনি পদত্যাগ করলেই পারেন।

বছর শেষে চতুর্থ ধাপে, ২৬ ডিসেম্বর ইউপি ভোটের দিন পুলিশের গুলিতে তিনজন প্রাণ হারান। ওই ভোটকে ‘আনন্দমুখর ভোট’ বলে মন্তব্য করেন ইসি সচিব। এ ঘটনায় বিরোধী দলের পাশপাশি সাধারণ মানুষের কাছেও ব্যাপক সমালোচিত হয় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান।

সাকিব আল হাসান

খেলার মাঠে তিনি যেমন শীর্ষে থাকেন ঠিক তেমনি সমালোচনা, বিতর্কেও শীর্ষে থাকেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ২০২১ সালে মাঠের খেলার চেয়ে মাঠের বাইরের ঘটনা নিয়েই বেশি আলোচনায় ছিলেন সাকিব আল হাসান। প্রিমিয়ার লীগে ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে একটি এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া না পেয়ে স্ট্যাম্পে লাথি মেড়ে বসেন তিনি। পরের ওভারেই শুভাগত হোমের বোলিংয়ের সময় বৃষ্টি নামলে আম্পায়ার খেলা বন্ধ করার ঘোষণা দিলে সাকিব আবার নিজের হাতে স্টাম্প উপড়ে ফেলেন। শ্রীলঙ্কা সফরে না গিয়ে আইপিএল খেলতে যাওয়া, নিউজিল্যান্ড সফরে ছুটি নেয়ার বিষয়েও আলোচনাতে ছিলেন সাকিব। বর্ষসেরা ওয়ানডে খেলোয়াড়ারের মনোনয়ন পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। এই বছর স্বর্ণের ব্যবসা ও ব্যাংক ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এ ছাড়া এ বছরের শুরুতে তৃতীয় ও প্রথম ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি।

কাদের মির্জা

বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত উক্তি ছিল, ‘দজ্জা টোয়াই হাইতো ন, দজ্জা’ (দরজা খুঁজে পাবে না, দরজা)। গত বছরের শুরু এই উক্তির পর সারা দেশে ব্যাপক আলোচনায় আসেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। এরপর একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনায় পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

বছরজুড়ে ফেইসবুক লাইভে সরব ছিলেন কাদের মির্জা। এর মধ্যে আপন বড় ভাই ওবায়দুল কাদের, তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেছা কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান কামাল, কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী শেখ সেলিম, সুজিত রায় নন্দি, আহমেদ উল্যাহ, স্বপন মাহমুদ, সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী, নিজাম হাজারী, একরামুল করিম চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে বিভিন্ন কথা বলেন। তার এসব কর্থাবার্তা ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। একই সঙ্গে পত্রপত্রিকায়ও গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। তার এ সমালোচনামূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশও হয়। সমাবেশে কাদের মির্জা ও বাদল অনুসারীদের সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। এসব ঘটনার পর ফেইসবুক লাইভে এসে দলে থেকে পদত্যাগ করেন মেয়র কাদের মির্জা। পরে আবার ৪৫ দিন পর নিজে থেকে ঘোষণা দিয়ে দলে ফিরেন তিনি।

ডা. মুরাদ হাসান

অনৈতিক বক্তব্যের জন্য বছরের শেষ দিকে নেতিবাচক আলোচনায় ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। একের পর এক অশালীন বক্তব্য এবং প্রতিহিংসামূলক আচরণের কারণে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারান তিনি। তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে যেদিন পদত্যাগ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেদিন দিনভর আলোচনায় ছিল একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন কথোপকথন। ওই অডিওতে মুরাদ হাসানকে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে। তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ইউটিউবে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের নারী সদস্যকে উদ্দেশ করে অশালীন বক্তব্য দেন, তা কেবল শিষ্টাচারবহির্ভূতই নয় তা ছিল বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন বলে পত্রপত্রিকায় ব্যাপকভাবে সমালোচনার জন্ম দেয়। একাধিক রাজনৈতিক দল, মন্ত্রিপরিষদ থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবিও তোলে। শেষ পর্যন্ত অনৈতিক কথাবার্তা বলার দায় নিয়ে তাকে শুধু মন্ত্রিত্বই নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকেও বাহিষ্কার করা হয়।

সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করার একটি অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র-সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

অডিও ফাঁসের পর মেয়র জাহাঙ্গীর থেকে তা ‘সুপার এডিট’ বলে দাবি করলেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করে দলটি। দল থেকে বহিষ্কারের পর ২৫ নভেম্বর মেয়র পদ হারান আলোচিত এই নেতা। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়া জাহাঙ্গীর আলম দলীয় পদ ও মেয়র হারানোর পর এখন অনেকটা বিচ্ছিন্ন। এক সময়ে তার ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরাও এখন তাকে এড়িয়ে চলছেন।

বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী

এ বছর দেশের সুনাম বয়ে এনেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী। এশিয়ার নোবেল হিসেবে খ্যাত র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের কারণে দেশে অনেকের মুখে মুখে ছিলেন প্রায় সারা বছর। এই পুরস্কার ঘোষণা সময় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘লাখো মানুষের উপকারে টিকার উন্নয়নে তার নিবেদিত ভূমিকার জন্য’ এই পুরস্কার দেয়া হলো।

বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী। কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে টিকা সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করেছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি।

এ পুরস্কার পাওয়ার পর এই খ্যাতনামা বিজ্ঞানী বলেন ‘জনস্বাস্থ্য, উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের মঙ্গলে আমি আমার বাকি জীবন উৎসর্গ করব।’

ফেরদৌসী কাদরীকে নিয়ে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস নিজের ব্লগ গেটস নোটসে লিখেছিলেন, ‘যুগান্তকারী কাজটি জীবনভর করেছেন বাংলাদেশের ইমিউনোলজিস্ট এবং সংক্রামক রোগবিষয়ক গবেষক ফেরদৌসী কাদরী। ২৫ বছর ধরে কলেরা মহামারী থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের টিকা নিয়ে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন মানুষের মধ্যে একজন তিনি।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

বছরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় ছিলেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী নেতা হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছিলন তিনি। তারেক রহমানের সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বিএনপির ওহি লন্ডন থেকেই বেশি আসে। আমি বারবার বলেছি খালেদা জিয়ার যদি মুক্তি চাও, তারেক তুমি ২ বছর চুপচাপ বসে থাকো। পারতো বিলেতে লেখাপড়ায় যুক্ত হয়ে যাও, সেখানে বহুভাবে লেখাপড়া হয়।’

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সমালোচনার পাশাপাশি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তীব্র সমালোচনা করে আলোচনায় আসেন তিনি। ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বেচারা বাড়ির চাকর বাকরের মতো আছে। ভাবছে চাকরি চলে যাবে। তার বক্তব্যে আমার হাসি পেয়েছে।’

বছরজুড়ে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির প্রধান নেতৃত্বের সমালোচনার পাশাপাশি সরকার দলীয় মন্ত্রীদেরও ছেড়ে কথা বলেননি ডা. জাফরুল্লাহ। কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার জেরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে এনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকেরও পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা জন্য সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিএনপি কর্মীদের আশা জুগিয়েছেন প্রবীণ এই বুদ্ধিজীবী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

গত বছরের মতো এবছরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ছিলেন আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, অক্সিজেন সংকট, কোভিড চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা ও সংসদে দেয়া বক্তব্যের জের ধরে নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তুলোধুনো করেছেন সংসদ সদস্যরা। একজন সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লজ্জাহীন উল্লেখ করে তার পদত্যাগও দাবি করেন। এ ছাড়া বছরজুড়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে বেশ সমালোচনা করেন এ বছর। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় মিডিয়া বলে, আমরা এখন ঘরে বসে আছি। মিডিয়া যদি সব সময় শুধু মৃত্যুর খবর, দুঃসংবাদ দিতে থাকে, তাহলে আমাদের যারা তরুণ জেনারেশন আছে, তারা কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাবো।

‘৩৭ লাখ টাকার পর্দা কেনা, ডাক্তারদের ২০ কোটি টাকার খাওয়ার বিল যেখানে একটি কলার দাম ধরা হয়েছিল দুই হাজার টাকা। একটা ডিমের দাম এক হাজার টাকা। এক স্লাইস রুটির দাম তিন হাজার টাকা ধরা হয়েছে যা স্মরণকালের স্বাস্থ্য খাতের চরম দুর্নীতি বলে ধরা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতকে মিনা কার্টুনের সঙ্গে তুলনা করে অনেকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে ব্যঙ্গ করে বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিয়া পাখি দ্বারা চলছে।

সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা

বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমরা (এসকে) সিনহা। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে বছরের বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে তিনি প্রথম বিচারপতি যিনি আদালতের রায়ে দণ্ডিত হয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া ঋণের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ১১ বছর কারাদণ্ড হয়। চলতি বছর ৯ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই রায় দেন। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনকালেও সমধিক আলোচিত ছিলেন এসকে সিনহা। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে তিনি হয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। তবে তার বিদায়টা সুখকর হয়নি। একইভাবে প্রথমবারের মতো মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোন প্রধান বিচারপতি হিসেবে পদত্যাগ করতে হয় তাকে। ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর তিনি এক মাসের ছুটিতে যান। এরপর ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার অনুমতি নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। ছুটি শেষে দেশে ফেরার ঘোষণা দিলেও ১১ নভেম্বর সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রপতি কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান।

শনিবার, ০১ জানুয়ারী ২০২২ , ১৭ পৌষ ১৪২৮ ২৭ জমাদিউল আউয়াল

২০২১ : আলোচিত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

নায়িকা পরীমনি : বছরের সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে যাকে নিয়ে তিনি হলেন পরীমনি। বোট ক্লাব কাণ্ড, তার বাসায় র‌্যাবের অভিযান, গ্রেপ্তার হওয়া, জামিন অতঃপর মুক্তি এমন সব ঘটনার জন্য তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে লাইভে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমির বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার কথা বলে সাড়া ফেলেন পরীমনি। এই ঘটনায় মামলা করেন এই চিত্রনায়িকা। এরপর ৪ আগস্ট তার বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যের সঙ্গে তাকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় তিনি ভেতর থেকে দরজা লক করে ফেইবসবুক লাইভ করে তাকে বাঁচানোর আহ্বান করেন পরিচিতজনদের। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয় এবং তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে ৭ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে পরিমনির সদস্যপদ স্থগিত করে শিল্পী সমিতি। তিন দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৩১ আগস্ট তার জামিন মঞ্জুর হয় এবং ২৬ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর পরিমনি মুক্ত হন। জামিন থেকে বের হওয়ার পর তার হাতে লেখা, আদালতে হাজিরা দিতে গেলেও তার হাতের লেখা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। বছরের শেষদিকে জন্মদিন উদযাপন নিয়েও তিনি আলোচিত হন।

নির্বাচন কমিশন

বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থতাসহ নানা কারণে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বছরের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অপর চারজন কমিশনারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির আরও কিছু অভিযোগ এনে ফের রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন দেশের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। একইসঙ্গে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানান তারা। যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন করে কমিশনের বিরুদ্ধেই নানা বক্তব্য তুলে ধরেন। কেউ কেউ তার এভাবে বক্তব্য ‘সাহসী পদক্ষেপ’ বললেও তার সাংবিধানিক পদে থেকে এসব বক্তব্য দেয়ায় এবং বার বার বলায় অনেকেই মনে করেন কমিশনের সঙ্গে তার ভিন্নমত থাকলে তিনি পদত্যাগ করলেই পারেন।

বছর শেষে চতুর্থ ধাপে, ২৬ ডিসেম্বর ইউপি ভোটের দিন পুলিশের গুলিতে তিনজন প্রাণ হারান। ওই ভোটকে ‘আনন্দমুখর ভোট’ বলে মন্তব্য করেন ইসি সচিব। এ ঘটনায় বিরোধী দলের পাশপাশি সাধারণ মানুষের কাছেও ব্যাপক সমালোচিত হয় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান।

সাকিব আল হাসান

খেলার মাঠে তিনি যেমন শীর্ষে থাকেন ঠিক তেমনি সমালোচনা, বিতর্কেও শীর্ষে থাকেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ২০২১ সালে মাঠের খেলার চেয়ে মাঠের বাইরের ঘটনা নিয়েই বেশি আলোচনায় ছিলেন সাকিব আল হাসান। প্রিমিয়ার লীগে ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে একটি এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া না পেয়ে স্ট্যাম্পে লাথি মেড়ে বসেন তিনি। পরের ওভারেই শুভাগত হোমের বোলিংয়ের সময় বৃষ্টি নামলে আম্পায়ার খেলা বন্ধ করার ঘোষণা দিলে সাকিব আবার নিজের হাতে স্টাম্প উপড়ে ফেলেন। শ্রীলঙ্কা সফরে না গিয়ে আইপিএল খেলতে যাওয়া, নিউজিল্যান্ড সফরে ছুটি নেয়ার বিষয়েও আলোচনাতে ছিলেন সাকিব। বর্ষসেরা ওয়ানডে খেলোয়াড়ারের মনোনয়ন পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। এই বছর স্বর্ণের ব্যবসা ও ব্যাংক ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এ ছাড়া এ বছরের শুরুতে তৃতীয় ও প্রথম ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি।

কাদের মির্জা

বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত উক্তি ছিল, ‘দজ্জা টোয়াই হাইতো ন, দজ্জা’ (দরজা খুঁজে পাবে না, দরজা)। গত বছরের শুরু এই উক্তির পর সারা দেশে ব্যাপক আলোচনায় আসেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। এরপর একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনায় পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

বছরজুড়ে ফেইসবুক লাইভে সরব ছিলেন কাদের মির্জা। এর মধ্যে আপন বড় ভাই ওবায়দুল কাদের, তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেছা কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান কামাল, কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী শেখ সেলিম, সুজিত রায় নন্দি, আহমেদ উল্যাহ, স্বপন মাহমুদ, সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী, নিজাম হাজারী, একরামুল করিম চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে বিভিন্ন কথা বলেন। তার এসব কর্থাবার্তা ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। একই সঙ্গে পত্রপত্রিকায়ও গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। তার এ সমালোচনামূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশও হয়। সমাবেশে কাদের মির্জা ও বাদল অনুসারীদের সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। এসব ঘটনার পর ফেইসবুক লাইভে এসে দলে থেকে পদত্যাগ করেন মেয়র কাদের মির্জা। পরে আবার ৪৫ দিন পর নিজে থেকে ঘোষণা দিয়ে দলে ফিরেন তিনি।

ডা. মুরাদ হাসান

অনৈতিক বক্তব্যের জন্য বছরের শেষ দিকে নেতিবাচক আলোচনায় ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। একের পর এক অশালীন বক্তব্য এবং প্রতিহিংসামূলক আচরণের কারণে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারান তিনি। তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে যেদিন পদত্যাগ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেদিন দিনভর আলোচনায় ছিল একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন কথোপকথন। ওই অডিওতে মুরাদ হাসানকে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে। তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ইউটিউবে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের নারী সদস্যকে উদ্দেশ করে অশালীন বক্তব্য দেন, তা কেবল শিষ্টাচারবহির্ভূতই নয় তা ছিল বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন বলে পত্রপত্রিকায় ব্যাপকভাবে সমালোচনার জন্ম দেয়। একাধিক রাজনৈতিক দল, মন্ত্রিপরিষদ থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবিও তোলে। শেষ পর্যন্ত অনৈতিক কথাবার্তা বলার দায় নিয়ে তাকে শুধু মন্ত্রিত্বই নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকেও বাহিষ্কার করা হয়।

সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করার একটি অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র-সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

অডিও ফাঁসের পর মেয়র জাহাঙ্গীর থেকে তা ‘সুপার এডিট’ বলে দাবি করলেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করে দলটি। দল থেকে বহিষ্কারের পর ২৫ নভেম্বর মেয়র পদ হারান আলোচিত এই নেতা। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়া জাহাঙ্গীর আলম দলীয় পদ ও মেয়র হারানোর পর এখন অনেকটা বিচ্ছিন্ন। এক সময়ে তার ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরাও এখন তাকে এড়িয়ে চলছেন।

বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী

এ বছর দেশের সুনাম বয়ে এনেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী। এশিয়ার নোবেল হিসেবে খ্যাত র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের কারণে দেশে অনেকের মুখে মুখে ছিলেন প্রায় সারা বছর। এই পুরস্কার ঘোষণা সময় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘লাখো মানুষের উপকারে টিকার উন্নয়নে তার নিবেদিত ভূমিকার জন্য’ এই পুরস্কার দেয়া হলো।

বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী। কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে টিকা সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করেছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি।

এ পুরস্কার পাওয়ার পর এই খ্যাতনামা বিজ্ঞানী বলেন ‘জনস্বাস্থ্য, উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের মঙ্গলে আমি আমার বাকি জীবন উৎসর্গ করব।’

ফেরদৌসী কাদরীকে নিয়ে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস নিজের ব্লগ গেটস নোটসে লিখেছিলেন, ‘যুগান্তকারী কাজটি জীবনভর করেছেন বাংলাদেশের ইমিউনোলজিস্ট এবং সংক্রামক রোগবিষয়ক গবেষক ফেরদৌসী কাদরী। ২৫ বছর ধরে কলেরা মহামারী থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের টিকা নিয়ে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন মানুষের মধ্যে একজন তিনি।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

বছরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় ছিলেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী নেতা হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছিলন তিনি। তারেক রহমানের সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বিএনপির ওহি লন্ডন থেকেই বেশি আসে। আমি বারবার বলেছি খালেদা জিয়ার যদি মুক্তি চাও, তারেক তুমি ২ বছর চুপচাপ বসে থাকো। পারতো বিলেতে লেখাপড়ায় যুক্ত হয়ে যাও, সেখানে বহুভাবে লেখাপড়া হয়।’

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সমালোচনার পাশাপাশি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তীব্র সমালোচনা করে আলোচনায় আসেন তিনি। ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বেচারা বাড়ির চাকর বাকরের মতো আছে। ভাবছে চাকরি চলে যাবে। তার বক্তব্যে আমার হাসি পেয়েছে।’

বছরজুড়ে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির প্রধান নেতৃত্বের সমালোচনার পাশাপাশি সরকার দলীয় মন্ত্রীদেরও ছেড়ে কথা বলেননি ডা. জাফরুল্লাহ। কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার জেরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে এনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকেরও পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা জন্য সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিএনপি কর্মীদের আশা জুগিয়েছেন প্রবীণ এই বুদ্ধিজীবী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

গত বছরের মতো এবছরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ছিলেন আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, অক্সিজেন সংকট, কোভিড চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা ও সংসদে দেয়া বক্তব্যের জের ধরে নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তুলোধুনো করেছেন সংসদ সদস্যরা। একজন সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লজ্জাহীন উল্লেখ করে তার পদত্যাগও দাবি করেন। এ ছাড়া বছরজুড়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে বেশ সমালোচনা করেন এ বছর। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় মিডিয়া বলে, আমরা এখন ঘরে বসে আছি। মিডিয়া যদি সব সময় শুধু মৃত্যুর খবর, দুঃসংবাদ দিতে থাকে, তাহলে আমাদের যারা তরুণ জেনারেশন আছে, তারা কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাবো।

‘৩৭ লাখ টাকার পর্দা কেনা, ডাক্তারদের ২০ কোটি টাকার খাওয়ার বিল যেখানে একটি কলার দাম ধরা হয়েছিল দুই হাজার টাকা। একটা ডিমের দাম এক হাজার টাকা। এক স্লাইস রুটির দাম তিন হাজার টাকা ধরা হয়েছে যা স্মরণকালের স্বাস্থ্য খাতের চরম দুর্নীতি বলে ধরা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতকে মিনা কার্টুনের সঙ্গে তুলনা করে অনেকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে ব্যঙ্গ করে বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিয়া পাখি দ্বারা চলছে।

সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা

বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমরা (এসকে) সিনহা। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে বছরের বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে তিনি প্রথম বিচারপতি যিনি আদালতের রায়ে দণ্ডিত হয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া ঋণের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ১১ বছর কারাদণ্ড হয়। চলতি বছর ৯ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই রায় দেন। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনকালেও সমধিক আলোচিত ছিলেন এসকে সিনহা। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে তিনি হয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। তবে তার বিদায়টা সুখকর হয়নি। একইভাবে প্রথমবারের মতো মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোন প্রধান বিচারপতি হিসেবে পদত্যাগ করতে হয় তাকে। ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর তিনি এক মাসের ছুটিতে যান। এরপর ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার অনুমতি নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। ছুটি শেষে দেশে ফেরার ঘোষণা দিলেও ১১ নভেম্বর সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রপতি কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান।