নতুন বছর আসে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে

মাহমুদুল হাছান

বর্তমানে গ্রেগরিয়ান বা ইংরেজি ক্যালেন্ডার মেনেই চলে বিশ্ববাসীর সব হিসাব ও কর্মকা-। আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় ইংরেজি নতুন বছর, যাকে অভিবাদন জানাতে আমরা হ্যাপি নিউ ইয়ার বলি।

ইংরেজি নতুন বছর উদ্্যাপনের ধারণাটি আসে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। আবার অনেকের মতে, রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে। পরে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। এটিই জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস হলেন প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি নামকরণ করা হয়।

এ গেলো যিশুর জন্মের আগের কথা। যিশুখ্রিস্ট্রের জন্মের পর তার জন্মের বছর গণনা করে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এই ক্যালেন্ডারের নতুন সংস্কার করেন, যা গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কার্যত দিনপঞ্জি হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে নিউইয়ার পালনের শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে নিউ ইয়ার ইভ। এদিন নতুন বছরের অ?াগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।

বিভিন্ন দেশে নিউ ইয়ার বা নতুন বছরের এ দিনটি পাবলিক হলিডে হিসেবে উদ্যাপিত হয়। প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা এক মিনিট থেকেই শুরু হয় নতুন বছর উদ্যাপনের উন্মাদনা। আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আতশবাজির আলোকছটা। আধুনিক বিশ্বে অ?ান্তর্জাতিক নিউ ইয়?ার ডে সার্বজনীন একটি ঐতিহ্যে রূপান্তরিত হয়েছে।

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও বর্তমানে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। ৩১ ডিসেম্বর ও বছরের শুরুর দিন আয়োজন করা হয় বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট, পার্টি ইত্যাদি। এছাড়াও টেলিভিশন, রেডিও ও বিনোদন মাধ্যমগুলোতে থাকে বিশেষ আকর্ষণ।

নতুন বছর আসে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে। করোনা প্যান্ডেমিক কালেই কেটে গেলো ২০২০ ও ২০২১ সাল, আবার ২০২২ সালেও কোভিডের উত্তাপ কমতে না কমতেই ওমিক্রনের বাষ্প উড়তে শুরু করেছে। তবে মানুষ এখন চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সব ধররের ঝুঁকিকেই তারা নিউ নরমাল জেনে অর্থনৈতিক ও শিক্ষা-সাংস্কৃতিক কর্মকা- অব্যাহত রাখতে উদ্যোমী ভূমিকা পালন করে চলেছে।

বাঙালি জাতি আমোদ-প্রমোদ, স্বাদ-আহ্লাদ ও উৎসব-অনুষ্ঠান উদ্যাপনে বেশ আগ্রহী একটি জাতি। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশেই বেশি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ দেশে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের একত্রে বসবাস থাকার কারণে ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনায় সবার জাতীয় উৎসব উদ্্যাপন করতে হয়। বিদেশি সংস্কৃতির মধ্যে ইংরেজি নববর্ষকে আমাদের দেশের মানুষ পশ্চিমা দেশগুলোর মতোই থার্টিফাস্ট নাইট উদ্যাপনের মাধ্যমে সূচনা করে থাকে। আতশবাজি, বেলুন, ফানুশ, নানা রঙের আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

নিউ ইয়ার পালনের হিড়িক বা প্রবণতা মূলত তারুণ্য নির্ভর। নতুন বছরে নিয়ম করে বাইরে খাওয়া, মেসেজিং, উপহার দেয়া থেকে এর যাবতীয় ইভেন্টে তরুণদেরই দেখা যায় সামনের সারিতে। আলো ঝলমলে সুসজ্জিত শহরে মধ্যরাতে বন্ধুদের সঙ্গে খোলা জিপে কিংবা জ্যাকেট গায়ে বাইকে চড়ে শহরময় ঘুরে বেড়ানোর যে স্বাধীনতা, যে আনন্দ, তাতে তরুণদের অধিকারই প্রধান। বয়স্করা যেহেতু সাবধানী, তাই তাদের দৌড় খুব বেশি হলে রুফটপ রেস্টুরেন্টের খোলা আকাশ। সামনে পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব এবং সুস্বাদু খাদ্য-পানীয়।

এ দিনটিকে উদ্যাপন করতে গিয়ে তরুণদের মাঝে উন্মাদনা দেখা যায় তা কি আসলে আমাদের দেশের সুষ্ঠু সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই? এ নিয়ে অনেক গুণী ও বুদ্ধিজীবীদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় সুস্থ সংস্কৃতির অংশ হতে পারে।

ভিনদেশি বা অন্যদের সংস্কৃতি চর্চা আমরা করতেই পারি, কিন্তু তা যেন আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে বিপণœ করে না তোলে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।

শুভ নববর্ষ। ২০২২ সাল সবার জন্য হোক আনন্দের আর পূর্ণতার বছর।

[লেখক : প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল]

শনিবার, ০১ জানুয়ারী ২০২২ , ১৭ পৌষ ১৪২৮ ২৭ জমাদিউল আউয়াল

নতুন বছর আসে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে

মাহমুদুল হাছান

বর্তমানে গ্রেগরিয়ান বা ইংরেজি ক্যালেন্ডার মেনেই চলে বিশ্ববাসীর সব হিসাব ও কর্মকা-। আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় ইংরেজি নতুন বছর, যাকে অভিবাদন জানাতে আমরা হ্যাপি নিউ ইয়ার বলি।

ইংরেজি নতুন বছর উদ্্যাপনের ধারণাটি আসে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। আবার অনেকের মতে, রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে। পরে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। এটিই জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস হলেন প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি নামকরণ করা হয়।

এ গেলো যিশুর জন্মের আগের কথা। যিশুখ্রিস্ট্রের জন্মের পর তার জন্মের বছর গণনা করে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এই ক্যালেন্ডারের নতুন সংস্কার করেন, যা গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কার্যত দিনপঞ্জি হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে নিউইয়ার পালনের শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে নিউ ইয়ার ইভ। এদিন নতুন বছরের অ?াগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।

বিভিন্ন দেশে নিউ ইয়ার বা নতুন বছরের এ দিনটি পাবলিক হলিডে হিসেবে উদ্যাপিত হয়। প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা এক মিনিট থেকেই শুরু হয় নতুন বছর উদ্যাপনের উন্মাদনা। আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আতশবাজির আলোকছটা। আধুনিক বিশ্বে অ?ান্তর্জাতিক নিউ ইয়?ার ডে সার্বজনীন একটি ঐতিহ্যে রূপান্তরিত হয়েছে।

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও বর্তমানে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। ৩১ ডিসেম্বর ও বছরের শুরুর দিন আয়োজন করা হয় বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট, পার্টি ইত্যাদি। এছাড়াও টেলিভিশন, রেডিও ও বিনোদন মাধ্যমগুলোতে থাকে বিশেষ আকর্ষণ।

নতুন বছর আসে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে। করোনা প্যান্ডেমিক কালেই কেটে গেলো ২০২০ ও ২০২১ সাল, আবার ২০২২ সালেও কোভিডের উত্তাপ কমতে না কমতেই ওমিক্রনের বাষ্প উড়তে শুরু করেছে। তবে মানুষ এখন চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সব ধররের ঝুঁকিকেই তারা নিউ নরমাল জেনে অর্থনৈতিক ও শিক্ষা-সাংস্কৃতিক কর্মকা- অব্যাহত রাখতে উদ্যোমী ভূমিকা পালন করে চলেছে।

বাঙালি জাতি আমোদ-প্রমোদ, স্বাদ-আহ্লাদ ও উৎসব-অনুষ্ঠান উদ্যাপনে বেশ আগ্রহী একটি জাতি। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশেই বেশি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ দেশে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের একত্রে বসবাস থাকার কারণে ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনায় সবার জাতীয় উৎসব উদ্্যাপন করতে হয়। বিদেশি সংস্কৃতির মধ্যে ইংরেজি নববর্ষকে আমাদের দেশের মানুষ পশ্চিমা দেশগুলোর মতোই থার্টিফাস্ট নাইট উদ্যাপনের মাধ্যমে সূচনা করে থাকে। আতশবাজি, বেলুন, ফানুশ, নানা রঙের আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

নিউ ইয়ার পালনের হিড়িক বা প্রবণতা মূলত তারুণ্য নির্ভর। নতুন বছরে নিয়ম করে বাইরে খাওয়া, মেসেজিং, উপহার দেয়া থেকে এর যাবতীয় ইভেন্টে তরুণদেরই দেখা যায় সামনের সারিতে। আলো ঝলমলে সুসজ্জিত শহরে মধ্যরাতে বন্ধুদের সঙ্গে খোলা জিপে কিংবা জ্যাকেট গায়ে বাইকে চড়ে শহরময় ঘুরে বেড়ানোর যে স্বাধীনতা, যে আনন্দ, তাতে তরুণদের অধিকারই প্রধান। বয়স্করা যেহেতু সাবধানী, তাই তাদের দৌড় খুব বেশি হলে রুফটপ রেস্টুরেন্টের খোলা আকাশ। সামনে পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব এবং সুস্বাদু খাদ্য-পানীয়।

এ দিনটিকে উদ্যাপন করতে গিয়ে তরুণদের মাঝে উন্মাদনা দেখা যায় তা কি আসলে আমাদের দেশের সুষ্ঠু সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই? এ নিয়ে অনেক গুণী ও বুদ্ধিজীবীদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় সুস্থ সংস্কৃতির অংশ হতে পারে।

ভিনদেশি বা অন্যদের সংস্কৃতি চর্চা আমরা করতেই পারি, কিন্তু তা যেন আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে বিপণœ করে না তোলে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।

শুভ নববর্ষ। ২০২২ সাল সবার জন্য হোক আনন্দের আর পূর্ণতার বছর।

[লেখক : প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল]