নতুন বই হাতে আনন্দে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

করোনার মহামারীর কারণে এবারও বই উৎসব হয়নি। তবে নতুন বছরের প্রথম দিনে স্কুলে গিয়েই নতুন বই হাতে পেয়ে খুশির উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে শিক্ষার্থীদের মন। শিক্ষার্থীদের এমন আনন্দে অভিভাবকরাও দারুণ খুশি। নতুন বই বিতরণকে ঘিরে গতকাল প্রতিটি স্কুলেই সকাল থেকে ছিল উৎসবের আমেজ। রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকার বাইরেও নতুন বইয়ের ঘ্রাণে শিক্ষার্থীদের মাতোয়ারা হতে দেখা গেছে।

বই হাতে পেয়ে অজানা কবিতা, গল্প আর জ্ঞান-বিজ্ঞানে নিজেদের শাণিত করার অদম্য ইচ্ছায় উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। হাসি-আনন্দে একাকার হয়ে বুকের সঙ্গে দুই হাত দিয়ে মায়ার বাঁধনে নতুন বইগুলো জড়িয়ে রাখছে শিক্ষার্থীরা। তবে অন্যবার শিক্ষার্থীরা যেভাবে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতো এবার তেমনটি ছিল না। মুখে মাস্ক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই নেয় তারা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে অভিভাবকের সঙ্গে বাড়ি ফেরে তারা। বছর শুরুর আগে অনেকেই ধারণা করছিলেন করোনার কারণে নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বছরের প্রথম দিনেই বই হাতে পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।

রংপুরের শালবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসলিমা জানায়, স্কুলে এসেই নতুন বই হাতে তুলে দিলেন স্যার। খুব খুশি লাগছে। নতুন বই পাওয়ার মজাই আলাদা। আম্মু বলেছিল এবার করোনার কারণে সময়মতো হয়তো বই পাবো না। কিন্ত সব শঙ্কা দূর করে প্রথম দিনেই আমরা নতুন বই পেয়েছি। এখন বছরের শুরু থেকেই আমরা পড়ালেখা শুরু করতে পারবো। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার সংবাদকে বলেন, ‘স্কুলে স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, প্রাথমিকের শতভাগ বই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পৌঁছানো হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত মাধ্যমিকের ৯৫ শতাংশ বই পৌঁছে গেছে।

এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইদুর রহমান জানান, জানুয়ারিতে বিদ্যালয় খোলা থাকবে। পাঠদান শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। এর ২০ দিন আগেই মাধ্যমিকের সব বই পৌঁছে যাবে।

তবে বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, এনসিটিবি সব বই পৌঁছানোর কথা বললেও অনেক স্থানে তা পৌঁছেনি। কোথাও কোথাও স্কুল পর্যায়ে বই সংখ্যায় কম দেয়া হয়েছে। তবে এখন যারা স্কুলে যাচ্ছে তারা সবাই বই হাতে পাবে ১ জানুয়ারিতেই। জানা গেছে, এনসিটিবি যেসব মুদ্রনালয়কে বই ছাপার দায়িত্ব দিয়েছে তারা করোনা সংকটের কারণে সময়মতো বই ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে সব বই ছাপা শেষ করতে। তবে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সব বই ছাপা শেষ হয়ে স্কুল পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জানা গেছে, করোনার কারণে প্রায় সব স্কুলেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। এ জন্য স্কুল থেকে দেয়া চাহিদা অনুযায়ী সব দেয়া হয়নি। স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লে আরও বই দেয়া হবে।

এ বছর সারা দেশে চার কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক ও পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় প্রণীত পাঠ্যপুস্তক রয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৩০টি, প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ৬৬ লাখ পাঁচ হাজার ৪৮০টি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য দুই লাখ ১৯ হাজার ৩৬৪ টিসহ মোট ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪টি বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক-পঠন-পাঠন সামগ্রীর মধ্যে আমার বই এবং অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হবে যথাক্রমে ৩৩ লাখ দুই হাজার ৭৪০টি। জেলা-উপজেলা ও থানার জন্য ৫১২টি উপজেলা ও থানায় বাংলা ভার্সনে এবং ৫৬টি জেলায় ইংরেজি ভার্সনের বই বরাদ্দ করা হবে। প্রথম শ্রেণীতে মোট এক কোটি ২৪৯৬ হাজার ৪৯৪টি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা ভার্সনে ৫১২টি উপজেলা ও থানায় এক কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৯টি, ইংরেজি ভার্সনে ৫৬টি জেলায় এক লাখ ১৯ হাজার ৮৯৫টি বই বিতরণ করা হবে। দ্বিতীয় শ্রেণীতে মোট এক কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৯টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে এক কোটি ২০ লাখ ২৩ হাজার ৭৮০ এবং ইংরেজি ভার্সনে এক লাখ ১৯ হাজার ৫২৯টি।

তৃতীয় শ্রেণীতে মোট দুই কোটি ৩৬ লাখ পাঁচ হাজার ১৮৬টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৮টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ২ লাখ ৫ হাজার ৮৩৮টি। চতুর্থ শ্রেণীতে মোট ২ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯৭টি বইয়ের মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৭টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩০টি বই বিতরণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ২ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৫২৩টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ১৯৩টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩০টি।

এছাড়া ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা সম্বলিত মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে পঠন-পাঠন সামগ্রী এবং প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৫টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী) শিশুদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাঠ্যপুস্তক বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, ফেনী, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সরবরাহ করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ১ থেকে ৩ জানুয়ারি, সপ্তম শ্রেণীতে ৪ থেকে ৬ জানুয়ারি, অষ্টম শ্রেণীতে ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি এবং নবম শ্রেণীতে ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে। অর্থাৎ আগামী ১২ দিনের এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৪০০ কোটি ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯১১ কপি বই বিতরণ করা হয়েছে।

রবিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২২ , ১৮ পৌষ ১৪২৮ ২৮ জমাদিউল আউয়াল

নতুন বই হাতে আনন্দে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

কামরাঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নৌকায় শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে ঘরে ফেরার পথে উচ্ছ্বসিত -সোহরাব আলম

করোনার মহামারীর কারণে এবারও বই উৎসব হয়নি। তবে নতুন বছরের প্রথম দিনে স্কুলে গিয়েই নতুন বই হাতে পেয়ে খুশির উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে শিক্ষার্থীদের মন। শিক্ষার্থীদের এমন আনন্দে অভিভাবকরাও দারুণ খুশি। নতুন বই বিতরণকে ঘিরে গতকাল প্রতিটি স্কুলেই সকাল থেকে ছিল উৎসবের আমেজ। রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকার বাইরেও নতুন বইয়ের ঘ্রাণে শিক্ষার্থীদের মাতোয়ারা হতে দেখা গেছে।

বই হাতে পেয়ে অজানা কবিতা, গল্প আর জ্ঞান-বিজ্ঞানে নিজেদের শাণিত করার অদম্য ইচ্ছায় উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। হাসি-আনন্দে একাকার হয়ে বুকের সঙ্গে দুই হাত দিয়ে মায়ার বাঁধনে নতুন বইগুলো জড়িয়ে রাখছে শিক্ষার্থীরা। তবে অন্যবার শিক্ষার্থীরা যেভাবে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতো এবার তেমনটি ছিল না। মুখে মাস্ক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই নেয় তারা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে অভিভাবকের সঙ্গে বাড়ি ফেরে তারা। বছর শুরুর আগে অনেকেই ধারণা করছিলেন করোনার কারণে নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বছরের প্রথম দিনেই বই হাতে পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।

রংপুরের শালবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসলিমা জানায়, স্কুলে এসেই নতুন বই হাতে তুলে দিলেন স্যার। খুব খুশি লাগছে। নতুন বই পাওয়ার মজাই আলাদা। আম্মু বলেছিল এবার করোনার কারণে সময়মতো হয়তো বই পাবো না। কিন্ত সব শঙ্কা দূর করে প্রথম দিনেই আমরা নতুন বই পেয়েছি। এখন বছরের শুরু থেকেই আমরা পড়ালেখা শুরু করতে পারবো। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার সংবাদকে বলেন, ‘স্কুলে স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, প্রাথমিকের শতভাগ বই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পৌঁছানো হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত মাধ্যমিকের ৯৫ শতাংশ বই পৌঁছে গেছে।

এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইদুর রহমান জানান, জানুয়ারিতে বিদ্যালয় খোলা থাকবে। পাঠদান শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। এর ২০ দিন আগেই মাধ্যমিকের সব বই পৌঁছে যাবে।

তবে বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, এনসিটিবি সব বই পৌঁছানোর কথা বললেও অনেক স্থানে তা পৌঁছেনি। কোথাও কোথাও স্কুল পর্যায়ে বই সংখ্যায় কম দেয়া হয়েছে। তবে এখন যারা স্কুলে যাচ্ছে তারা সবাই বই হাতে পাবে ১ জানুয়ারিতেই। জানা গেছে, এনসিটিবি যেসব মুদ্রনালয়কে বই ছাপার দায়িত্ব দিয়েছে তারা করোনা সংকটের কারণে সময়মতো বই ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে সব বই ছাপা শেষ করতে। তবে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সব বই ছাপা শেষ হয়ে স্কুল পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জানা গেছে, করোনার কারণে প্রায় সব স্কুলেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। এ জন্য স্কুল থেকে দেয়া চাহিদা অনুযায়ী সব দেয়া হয়নি। স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লে আরও বই দেয়া হবে।

এ বছর সারা দেশে চার কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক ও পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় প্রণীত পাঠ্যপুস্তক রয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৩০টি, প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ৬৬ লাখ পাঁচ হাজার ৪৮০টি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য দুই লাখ ১৯ হাজার ৩৬৪ টিসহ মোট ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪টি বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক-পঠন-পাঠন সামগ্রীর মধ্যে আমার বই এবং অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হবে যথাক্রমে ৩৩ লাখ দুই হাজার ৭৪০টি। জেলা-উপজেলা ও থানার জন্য ৫১২টি উপজেলা ও থানায় বাংলা ভার্সনে এবং ৫৬টি জেলায় ইংরেজি ভার্সনের বই বরাদ্দ করা হবে। প্রথম শ্রেণীতে মোট এক কোটি ২৪৯৬ হাজার ৪৯৪টি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা ভার্সনে ৫১২টি উপজেলা ও থানায় এক কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৯টি, ইংরেজি ভার্সনে ৫৬টি জেলায় এক লাখ ১৯ হাজার ৮৯৫টি বই বিতরণ করা হবে। দ্বিতীয় শ্রেণীতে মোট এক কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৯টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে এক কোটি ২০ লাখ ২৩ হাজার ৭৮০ এবং ইংরেজি ভার্সনে এক লাখ ১৯ হাজার ৫২৯টি।

তৃতীয় শ্রেণীতে মোট দুই কোটি ৩৬ লাখ পাঁচ হাজার ১৮৬টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৮টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ২ লাখ ৫ হাজার ৮৩৮টি। চতুর্থ শ্রেণীতে মোট ২ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯৭টি বইয়ের মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৭টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩০টি বই বিতরণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ২ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৫২৩টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ১৯৩টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩০টি।

এছাড়া ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা সম্বলিত মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে পঠন-পাঠন সামগ্রী এবং প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৫টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী) শিশুদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাঠ্যপুস্তক বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, ফেনী, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সরবরাহ করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ১ থেকে ৩ জানুয়ারি, সপ্তম শ্রেণীতে ৪ থেকে ৬ জানুয়ারি, অষ্টম শ্রেণীতে ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি এবং নবম শ্রেণীতে ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে। অর্থাৎ আগামী ১২ দিনের এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৪০০ কোটি ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯১১ কপি বই বিতরণ করা হয়েছে।