সর্বোচ্চ রপ্তানির মাইলফলকে দেশ ডিসেম্বরে প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে আগে কখনও এত রপ্তানি হয়নি। আর এই মাসে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। রপ্তানি আয়ে রেকর্ড দিয়ে ২০২১ সাল শেষ করলো বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্যসমাপ্ত ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা।

ডিসেম্বরে গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি। এর আগে একক মাসে সর্বোচ্চ আয় এসেছিল গত অক্টোবরে, ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাবে প্রায় ২৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন (২ হাজার ৪৬৯ কোটি ৮৫ কোটি) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বছরে প্রথম মাস জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় ছিল ৩৪৩ কোটি ডলার, এপ্রিলে ৩১৩ কোটি ডলার, জুলাইয়ে ৩৪৮ কোটি, অক্টোবরে ৪৭২ কোটি ও সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি হয় ৫০০ কোটি ডলারের।

রপ্তানি আয় প্রায় প্রতি বছরই বাড়ে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারে কমই। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার মধ্যেও দারুণ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি যতটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে আয় করছে দেশ।

ছয় মাসের রপ্তানি আয় এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। তবে এই সুবাতাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, যদি করোনার এই নতুন ধরনের প্রভাবে আবারও দেশে দেশে লকডাউন শুরু হয়, তাহলে রপ্তানি বাণিজ্যেও আগের মতো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ইপিবির হালনাগাদ তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা, টাকার হিসাবে যা ২ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ ছয় মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক ছাড়াও কৃষি প্রক্রিয়াজাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ও হস্তশিল্প রপ্তানি বেড়েছে। ফলে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে সাড়ে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ০২ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের কৃষি পণ্য, ৭১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ৫৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে এসেছে ১০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।

সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল

সর্বোচ্চ রপ্তানির মাইলফলকে দেশ ডিসেম্বরে প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে আগে কখনও এত রপ্তানি হয়নি। আর এই মাসে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। রপ্তানি আয়ে রেকর্ড দিয়ে ২০২১ সাল শেষ করলো বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্যসমাপ্ত ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা।

ডিসেম্বরে গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি। এর আগে একক মাসে সর্বোচ্চ আয় এসেছিল গত অক্টোবরে, ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাবে প্রায় ২৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন (২ হাজার ৪৬৯ কোটি ৮৫ কোটি) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বছরে প্রথম মাস জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় ছিল ৩৪৩ কোটি ডলার, এপ্রিলে ৩১৩ কোটি ডলার, জুলাইয়ে ৩৪৮ কোটি, অক্টোবরে ৪৭২ কোটি ও সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি হয় ৫০০ কোটি ডলারের।

রপ্তানি আয় প্রায় প্রতি বছরই বাড়ে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারে কমই। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার মধ্যেও দারুণ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি যতটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে আয় করছে দেশ।

ছয় মাসের রপ্তানি আয় এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। তবে এই সুবাতাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, যদি করোনার এই নতুন ধরনের প্রভাবে আবারও দেশে দেশে লকডাউন শুরু হয়, তাহলে রপ্তানি বাণিজ্যেও আগের মতো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ইপিবির হালনাগাদ তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা, টাকার হিসাবে যা ২ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ ছয় মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক ছাড়াও কৃষি প্রক্রিয়াজাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ও হস্তশিল্প রপ্তানি বেড়েছে। ফলে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে সাড়ে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ০২ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের কৃষি পণ্য, ৭১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ৫৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে এসেছে ১০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।