টঙ্গীতে র‌্যাবের অভিযানের পর গ্যারেজ শ্রমিকের মৃত্যু

টঙ্গীতে এক ব্যক্তির বাসায় মাদকের সন্ধানে অভিযান চালায় র?্যাব-১-এর সদস্যরা। এরপর ওই দিন রাতেই হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি। স্বজনদের অভিযোগ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আসাদকে বিনা দোষে র?্যাব সদস্যরা নির্যাতন চালিয়ে মেরে ফেলেছে। এলাকাবাসী বলছেন, নিহত আসাদুল ইসলাম আসাদ ভালো মানুষ ছিলেন। টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি জাবেদ মাসুদ রোববার রাতে জানান, নিহত আসাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কি-না তারা খুঁজে দেখছেন। তবে এ পর্যন্ত তারা আসাদের বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ কোন কিছুই পাননি।

গাড়ির গ্যারেজ শ্রমিক আসাদ মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানার ভাসাইল গ্রামের মৃত আবদুল হাইয়ের ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন এরশাদনগর ৫নং ব্লকে পরিবার নিয়ে বাস করতেন। তার এ বাসাতেই মাদকের সন্ধানে শনিবার বিকেলে অভিযান চালায় র?্যাব-১-এর সদস্যরা।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক নুসরাত বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই আসাদের মৃত্যু হয়েছে। জরুরি বিভাগে নুসরাতের পালার পরবর্তী দায়িত্বরত চিকিৎসক বদরুন নেছা বলেন, ‘আমি পরে ডিউটিতে এসে হাসপাতালের খাতায় যা লেখা দেখলাম, তাতে বুঝা যাচ্ছে ওই ব্যক্তি হার্ট

অ্যাটাকে মারা গেছেন।’

লাশের টঙ্গী থানার সুরতহাল প্রতিবেদনকারী এসআই স্বজল বলেন, নিহতের ডানের পায়ের হাঁটুর নিচে আঘাতের চিহ্ন ও বুকের বাম পাশে কালো দাগ ছিল।

থানায় র‌্যাবের দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এরশাদনগর ৫নং ব্লকে অভিযানকালে দৌড়ে পালানোর সময় আসাদুল ইসলামকে আটক করা হয়। এ সময় তার দেহে তল্লাশি চালিয়ে ৬০৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার বাসায় আরও চার হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট রয়েছে। আসাদুল পালানোর চেষ্টা করলে র?্যাব সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার শয়ন কক্ষের খাট ও দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হয়। পরে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ধস্তাধস্তিকালে র?্যাব সদস্য সরোয়ার হোসেন ও হুমায়ুন কবির আহত হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।’

গতকাল দুপুরে নিহতের এরশাদনগরের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের সদস্যদের মাঝে চলছে শোকের মাতম। নিহত আসাদের মা মমতাজ বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের কোন দোষ নাই। আসাদের এক ছেলে এক মেয়ে। দুই জনই লেখাপড়া করে। আমার ছেলে কোন অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত না। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন।’

নিহতের একমাত্র বোন প্রতিবন্ধী আফিয়া আক্তার লাকি বলেন, ‘আমার ভাই মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় গাড়ির গ্যারেজ চালাতো। এরপর সেখান থেকে গাজীপুর মহানগরের গাছা বড়বাড়ি এসে গ্যারেজ দেয়। করোনার কারণে সেই গ্যারেজটিও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ছুটা কাজ (যখন যে কাজ পাওয়া যায়) করে বহু কষ্টে সংসার চালাতেন। আমার ভাইকে মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে ধরার কোন কারণ নাই। র?্যাবের কাছে যদি তেমন তথ্য প্রমাণ থাকতো তাহলে আমার ভাইয়ের একটা হাত বা একটা পা কেটে নিয়ে যেত। তবুতো আমার ভাইকে এক নজর দেখতে পারতাম।’

স্থানীয়রা জানান, আসাদ ‘নিতান্তই ভালো’ লোক ছিলেন। তবে আসাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় বা খালা শাশুড়ি লাইলি মাদক কারবারে জড়িত বলে তাদের অভিযোগ। লাইলি বেশ কয়েকবার মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেছে। তবে লাইলির সঙ্গে আসাদদের কোন যোগাযোগ নেই।

টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে আসাদের লাশ দেখতে এসে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ সময় তারা দোষী র?্যাব সদস্যদের বিচার দাবি করেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ এলাকায় পৌঁছালে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ জানান, ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (নং-১) রেকর্ড করা হয়েছে।

সোমবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২২ , ১৯ পৌষ ১৪২৮ ২৯ জমাদিউল আউয়াল

টঙ্গীতে র‌্যাবের অভিযানের পর গ্যারেজ শ্রমিকের মৃত্যু

প্রতিনিধি, টঙ্গী (গাজীপুর)

টঙ্গীতে এক ব্যক্তির বাসায় মাদকের সন্ধানে অভিযান চালায় র?্যাব-১-এর সদস্যরা। এরপর ওই দিন রাতেই হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি। স্বজনদের অভিযোগ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আসাদকে বিনা দোষে র?্যাব সদস্যরা নির্যাতন চালিয়ে মেরে ফেলেছে। এলাকাবাসী বলছেন, নিহত আসাদুল ইসলাম আসাদ ভালো মানুষ ছিলেন। টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি জাবেদ মাসুদ রোববার রাতে জানান, নিহত আসাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কি-না তারা খুঁজে দেখছেন। তবে এ পর্যন্ত তারা আসাদের বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ কোন কিছুই পাননি।

গাড়ির গ্যারেজ শ্রমিক আসাদ মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানার ভাসাইল গ্রামের মৃত আবদুল হাইয়ের ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন এরশাদনগর ৫নং ব্লকে পরিবার নিয়ে বাস করতেন। তার এ বাসাতেই মাদকের সন্ধানে শনিবার বিকেলে অভিযান চালায় র?্যাব-১-এর সদস্যরা।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক নুসরাত বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই আসাদের মৃত্যু হয়েছে। জরুরি বিভাগে নুসরাতের পালার পরবর্তী দায়িত্বরত চিকিৎসক বদরুন নেছা বলেন, ‘আমি পরে ডিউটিতে এসে হাসপাতালের খাতায় যা লেখা দেখলাম, তাতে বুঝা যাচ্ছে ওই ব্যক্তি হার্ট

অ্যাটাকে মারা গেছেন।’

লাশের টঙ্গী থানার সুরতহাল প্রতিবেদনকারী এসআই স্বজল বলেন, নিহতের ডানের পায়ের হাঁটুর নিচে আঘাতের চিহ্ন ও বুকের বাম পাশে কালো দাগ ছিল।

থানায় র‌্যাবের দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এরশাদনগর ৫নং ব্লকে অভিযানকালে দৌড়ে পালানোর সময় আসাদুল ইসলামকে আটক করা হয়। এ সময় তার দেহে তল্লাশি চালিয়ে ৬০৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার বাসায় আরও চার হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট রয়েছে। আসাদুল পালানোর চেষ্টা করলে র?্যাব সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার শয়ন কক্ষের খাট ও দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হয়। পরে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ধস্তাধস্তিকালে র?্যাব সদস্য সরোয়ার হোসেন ও হুমায়ুন কবির আহত হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।’

গতকাল দুপুরে নিহতের এরশাদনগরের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের সদস্যদের মাঝে চলছে শোকের মাতম। নিহত আসাদের মা মমতাজ বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের কোন দোষ নাই। আসাদের এক ছেলে এক মেয়ে। দুই জনই লেখাপড়া করে। আমার ছেলে কোন অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত না। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন।’

নিহতের একমাত্র বোন প্রতিবন্ধী আফিয়া আক্তার লাকি বলেন, ‘আমার ভাই মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় গাড়ির গ্যারেজ চালাতো। এরপর সেখান থেকে গাজীপুর মহানগরের গাছা বড়বাড়ি এসে গ্যারেজ দেয়। করোনার কারণে সেই গ্যারেজটিও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ছুটা কাজ (যখন যে কাজ পাওয়া যায়) করে বহু কষ্টে সংসার চালাতেন। আমার ভাইকে মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে ধরার কোন কারণ নাই। র?্যাবের কাছে যদি তেমন তথ্য প্রমাণ থাকতো তাহলে আমার ভাইয়ের একটা হাত বা একটা পা কেটে নিয়ে যেত। তবুতো আমার ভাইকে এক নজর দেখতে পারতাম।’

স্থানীয়রা জানান, আসাদ ‘নিতান্তই ভালো’ লোক ছিলেন। তবে আসাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় বা খালা শাশুড়ি লাইলি মাদক কারবারে জড়িত বলে তাদের অভিযোগ। লাইলি বেশ কয়েকবার মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেছে। তবে লাইলির সঙ্গে আসাদদের কোন যোগাযোগ নেই।

টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে আসাদের লাশ দেখতে এসে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ সময় তারা দোষী র?্যাব সদস্যদের বিচার দাবি করেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ এলাকায় পৌঁছালে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ জানান, ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (নং-১) রেকর্ড করা হয়েছে।